somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু কথা না বলাই থেকে যায়...

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

M. A. Jalil Anonto (এম. এ. জলিল অনন্ত)-এর একটা সাক্ষাৎকার দেখলাম Independent TV-তে । এর আগে আরেকটা ঈদের অনুষ্ঠানে হাস্যকর উচ্চারণে ইংরেজী বলে আমাদের মন কাড়তে সক্ষম হয়েছিলেন । তাকে নিয়ে ব্যাক্তিগতভাবে আমিও বেশ হাসি-ঠাট্টা করেছি । তার কথা বলা, উচ্চারণ,''আর ইউ পোম গানা'',''ইউ ইট বাংলাদেশী ফুড''-এই জাতীয় কথা হাজার ঝামেলার মধ্যে বেশ আনন্দ দিয়েছে বলা বাহুল্য । গত দুইদিন ধরে অনন্ত সাহেবের দুইটা সিনেমা দেখলাম । একটি হচ্ছে ''খোঁজ-দ্যা সার্চ'' এবং অন্যটি হচ্ছে ''দ্যা স্পীড'' । সিনেমা দেখেছি, গভীর রাতে প্রাণ খুলে হেসেছি,এই লোকটার পিন্ডি চটকে খানিকটা স্বর্গসুখ লাভ করেছি । কিন্তু ঘটনা ঘটলো গত শনিবার । ব্যাপারটা চোখ খুলে দেবার মত,এবং পুরো ঘটনাটি আমাকে আসলে লজ্জাই দিয়েছে ।

গত শনিবারে হার্ডফোর্ডশায়ারে গিয়েছিলাম আমার এক ভাতিজার বিয়ে খেতে । ভাতিজা ব্রিটিশ বাঙালী,শিক্ষিত এক যুবক । তার বিয়ে হচ্ছে এক ইংলিশ মেয়ের সাথে । স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রহ ছিলো দেখবার যে বাংলাদেশী ছেলে এবং ইংলিশ মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানটা কেমন হয় । যাকে বলে বিরাট আয়োজন । ফাইভ স্টার হোটেলে-এ এক ভয়াবহ অর্থ ব্যায়ের অনুষ্ঠান । আমন্ত্রিতদের দুই অংশে ভাগ করে ফেলা যায় । এক অংশ ইংলিশ আরেক অংশ বাংলাদেশী । এই বাংলাদেশী অংশে আবার রয়েছে ব্রিটিশ বাংলাদেশী যারা জন্মের অনেক পরে এখানে এসে সিটিজেন হয়েছেন,এখানে জন্ম নেয়া ব্রিটিশ বাংলাদেশী । আর ৪ থেকে ৫ জন ছিলেন পাকিস্তানী,আফ্রিকান এবং ভারতীয় ।

ডিনার পর্ব শুরু হল বিরাট হলঘরে । হলঘরের এক পাশে ৫ জন মেয়ে বিরাট বিরাট ভায়োলিন আর সামনে নোট নিয়ে বিভিন্ন সুর বাজিয়ে যাচ্ছেন । প্রথমে মন দিয়ে শুনিনি । একটু ভালো করে শুনে প্রথম গানটার সুর ধরে ফেললাম । Kal Ho Na Ho এর মিউজিক। এরপর যত শুনি তত বেশী চমকে যাই। একে একে বেজে উঠলো হিন্দি সিনেমার সব পরিচিত গান গুলো । এদেশের মেয়েদের হাত ধরে ধরে বেজে উঠলো হিন্দি ছায়াছবির সুর ঝংকার । মনটা এত খারাপ হলো, বলার মত না । মনে হচ্ছিলো,একটা বাংলা গানের সুরও কি হতে পারত না এই বিয়েতে ? আসলে বাংলা গানের চেয়েও এই ছেলে মেয়েরা বেড়ে উঠেছে হিন্দি গানের প্রভাবে,সারাটি জীবন ইংল্যান্ডে থেকেও ।

ঠিক তখনই আমার মনে পড়লো নায়ক অনন্তের কথা । এই ভঙ্গুর ও সম্পূর্নভাবে ঝুঁকিপূর্ণ একটা ইন্ড্রাস্ট্রিতে এই ছেলেটি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে । খরচ সাশ্রয় করেছে নিজে ও স্ত্রীকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে,অপরিচিত ছেলে মেয়েদের কাস্ট করে । মন দিয়েছে ভালো প্রিন্ট, ভালো একশন তৈরীর দিকে । নিজের প্রতিই এক ধরনের খারাপ লাগা শুরু হয়ে গেলো । কত মক করেছি অনন্তকে নিয়ে । আর "ইউ পোম গানা, ইউ ইট বাংলাদেশী ফুড" বলে ফেসবুকে কত ইয়ার্কি করেছি । অথচ একবারও ভাবিনি যে,এই ছেলেটি বাংলাদেশি সিনেমাকে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেবার জন্য এই রাস্তায় নেমেছে । অথচ আমরাই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে রক্তাক্ত করেছি । সে নিজেই স্বীকার করেছে তার উচ্চারণ,অভিনয় খারাপ,এই দিকে তাকে ভালো করতে হবে । তারপরেও আমরা আসলে তাকে ছাড় দেই নি । আমরা চাই এখন,এই মুহুর্তেই । আমরা কি এই ছেলেটিকে উৎসাহ দিয়ে পারিনা তার থেকে ভালো কাজটি,তার সর্বশ্রেষ্ঠ পারফরমেন্স বের করে আনতে ? হিন্দী ছবি আজকের এই অবস্থানে কি একদিনে এসেছে ?

আমরা আসলে এমনটাই করি সব সময় । নিজেদেরকেই নিজেরা মারি,নিজেদেরকেই নিজেরা খোঁচাই,হত্যা করি । একজন ভারতীয়কেও আমি দেখিনি যে তারা তাদের হাস্যকর অভিনেতা (যেমন গোবিন্দ),অভিনেত্রীদের নিয়ে এইভাবে সারাদিন ফেসবুকে লেগে থাকে ? এমনকি বুয়েটের আন্দোলনের মত এত জরুরী একটি বিষয়েও আমরা অনন্তকে মক করতে ছাড়িনি, বুলি (bully) করতে ছাড়িনি । আমরা এতই মারাত্নক এক জাতি । আমাদের আর কোনো শত্রুর দরকার নেই । নিজেরাই আমরা নিজেদের পিন্ডি চটকাবার জন্য যথেষ্ঠ ।

আর এই সুযোগেই আমাদের বাচ্চাদের মনে ঢুকেছে Doremon,Chammak Challo,shila ki jawani আর যতসব গারবেজ। কে জানে একদিন আমাদের মৃত দেহ সৎকারের সময় বেজে উঠবে করুন কোনো হিন্দি ছবির গান । সেদিন আর খুব বেশী দূরে নয় ।

সংগৃহীত ও পরিমার্জিত ।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×