somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আর্তি

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আশুলিয়ায় তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকান্ডে পুলিশি হিসাবমতে নিহত হল ১১১ জন গার্মেন্টস কর্মী । একইদিনে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভার চাপা পড়ে নিহত ১১ জন । আমি জানি, অজস্র টিভি চ্যানেল আর খবরের কাগজের সৌজন্যে সেসবের অনেক বিস্তারিত আমার চাইতে অনেক বেশিই জানেন আপনারা । আমি এও জানি, আমার মতই আপনারা এটাও জানেন যে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চাইতে অনেক বেশি । আপনারা ভাবছেন, এসব তো আমরা জানিই, ঘটনার এতদিন পর এসে এসব বলছি কেনো । আমি আসলে খবরের ব্যাপারে অনেকটাই নিরামিষাশী, দুনিয়াতে যাই ঘটুক খেলার পাতা ছাড়া বেশিরভাগই আমার নাকের তলা দিয়ে যায় । আগে সব নিউজই কমবেশী পড়তাম, এখন আর পড়ি না । আমার এই সোনার দেশে বিশটি অগাস্ট কাটিয়ে আমি অন্তত এতটুকু বুঝেছি, প্রথম আলোর প্রথম পাতায়ে এই নিউজগুলো অহরহই পাবো আমি । অন্য দেশগুলোতে মানুষ মরে না তা বলব না আমি, হয়ত আমাদের চাইতে অনেক বেশিই মরে (যুদ্ধপিড়ীত দেশগুলোকে হিসাবে ধরবেন না)। কিন্তু আপনি কি বলতে পারেন, জীবন এতটা সস্তায়ে আর কোথায়ে বিকোয় । চট্টগ্রামের ঘটনাস্থলের খুব কাছেই আমার এক বন্ধুর বাসা। তার কাছে জেনেছি, নির্মানাধীণ এই ফ্লাইওভারের নিচে প্রতি বিকালেই শ'খানেক মানুষ বসে আড্ডা দিত। বেশীরভাগই ওখানকার বিভিন্ন মেসের বাসিন্দা, শ্রমজীবী পথচারী । ঘটনার দিনও অনেককেই বসে থাকতে দেখেছিল ও । এটা বিশ্বাস করতে পারলে আমার সত্যিই খুব ভালো লাগবে যে, ওই ১১ জন দুর্ভাগা ছাড়া বাকি সবাই ফ্লাইওভার ভেঙ্গে পরার আগেই সরে গেছে ওখান থেকে। শখের বসে গাঁজায়ে দম নিয়েছিলাম একবার, তাই সরকারের বিবৃতি আমি বিশ্বাস করেছি । বিরোধীদল দেশকে অস্থির করে তুলে সরকারকে বিপাকে ফেলতেই এটা ঘটিয়েছে, এখানে সরকারের টেন্ডারবাজি অথবা ঠীকাদারি দুর্নীতির কোনো হাত নেই । গনতন্ত্র আসার পর থেকে এদেশে 'বিরোধীদল' শব্ধটি সরকারের দুর্নীতির 'কেষ্ট বেটা' হয়েই আসছে, এটাও আমি বুঝিনা। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে এদেশে সবার টনক নড়ে, বঊ পালালে বুদ্ধি বাড়ে টাইপ বেকুব জামাইদের মত। এইচ এস সি বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষার আগের দিন আমাদের পরীক্ষার্থী মহলে চাউর হয়ে গিয়েছিল, গাদা গাদা রচনা মুখস্ত না করে " পোশাক শিল্প " রচনাটা পড়লেই হবে, এটা আসবেই । আমার আগে পড়া না থাকায়ে কয়েক বই ঘেঁটে পড়তে গিয়ে বুঝতে পারলাম এদেশে পোশাক শিল্পের অবদান। সত্তিকার অর্থেই সেদিনের আগে আমি জানতাম না, আমাদের রপ্তানি খাতে এখন নাম্বার ওয়ান এই পোশাক শিলপই । দেখতেই পাচ্ছেন, আমি আসলেই আপ-টু-ডেট না । কবে সেই ছোটোবেলায় পড়েছিলাম "সোনালী আঁশের" কথা, সেটাকেই এতদিন জেনে আসছিলাম প্রধান রপ্তানিকৃ্ত দ্রব্য হিসেবে। যে পোশাকশিল্প আমাদের রপ্তানির প্রধান উৎস, আগুনে পূড়ে এত পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানির পর আমাদেরকে জানানো হচ্ছে আমাদের গার্মেন্টসগুলোর ৬০ ভাগেরই নেই ন্যুনতম অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। আমাদের প্রানগুলো এতোটাই মূল্যহী্ন । আমি নিরামিষাশী মানুষের তাতে কি, যে লাইনে পড়ছি গার্মেন্টসের আগুনে পূড়ে মরার সম্ভাবনা নেই । আগে কখনো কিছু বলিনি, এখন এসব বলতে আসার কোন মানে হয় না, বলতামও না । কিন্তু আজকে টিভি ছেড়ে গার্মেন্টস কর্মীদের উপর পুলিশি অ্যাকশনের নমুনা দেখে রক্ত চড়ে গেলো মাথায়ে । বেজন্মাগুলো নির্বিকার ভাবে মেয়েদের উপর লাঠিচার্জ করছে। এমন একটা দুর্ঘটনার পর সপ্তাহ না ঘুরতে শ্রমিকদের মধ্যে অতি অল্পতেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক, তার উপর এখনো এখানে ওখানে লাগছে আগুন লাগছে, সেই আতঙ্ক থেকেই ঘটছে আহত হবার মত ঘটনা । এত কিছুর মধ্যে হীয়ন অ্যাপারেলস তাদের ১০০ শ্রমিক ছাঁটাই করলো, তাদের প্রাপ্য বেতন ভাতাদি পরিশোধ না করেই। এজন্য যদি আন্দোলন না হয় তাহলে আন্দোলন শব্ধটা কি শুধুমাত্র ক্ষমতার গদি দখলের জন্যই। মালিকপক্ষ বেতন ভাতাদি দিতে অপারগতা জানিয়েছে, সরকার যদি কোন ভুমিকা রাখতেই নাই পারে কেনো পুলিশ দিয়ে এই প্রহসনটা করছে। আমরা এদেশের নাগরিকরা যারা দেশটাকে ভালোবেসে দেশের দুর্বলতাকে একপাশে সরিয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছি তারা আর কিছু না হোক অন্তত এটুকু কি আশা করতে পারি না যে, আমি আগুনে পুড়ে মরব কিন্তু আমার ভাই,বাবা, বোনকে আপনারা এভাবে মারবেন না, প্লিজ।।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৫১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×