somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাননীয় আদালত, দয়া করে আমাদের পবিত্র সংবিধান হতে ঐ অসাংবিধানিক অনুচ্ছেদগুলো অপসারণের উদ্যোগ নিন

২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।” ঠিক পরের অর্থাৎ ২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।” সংবিধানের এ অনুচ্ছেদ দুটোর মর্মার্থ অনুধাবনের জন্য কোন সংবিধান বিশেষজ্ঞ বা বড় আইনজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। বাঙলা ভাষাটা স্বাভাবিক বুঝেন এমন মানুষও অনুধাবন করতে পারেন এর মাধ্যমে দেশের সংবিধান আইনগত অধিকারের ক্ষেত্রে এ রাষ্ট্রের সকল মানুষকে বিবেচনা করেছে শুধুমাত্র নাগরিক হিসেবে এবং এ হিসেবে সবাই সমান।

ব্যক্তির ধর্ম, শ্রেনী, বর্ণ, গোষ্ঠী এক্ষেত্রে কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। কেবলমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সংবিধানের ৫১ (১ ও ২) অনুচ্ছেদ বলে তার দায়িত্ব পালন সময়কালে আদালতের কার্যধারা হতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞ আদালতের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে সংবিধানের ২৭ এবং ২৮(১) অনুচ্ছেদগুলো কতোটা সঠিক তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৮/১০/২০১২) ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল (অবঃ) হারুন-অর-রশিদকে দুদক এর দায়ের করা অবৈধ অর্থ হস্তান্তরের দুই মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের বেঞ্চ জামিন প্রদান করে। মাননীয় আদালত তার বিবেচনায় জামিনের যোগ্য মনে করলে যেকোন নাগরিককে জামিন দিতে পারেন। এটা নিয়ে অনুযোগের কোন সুযোগ নেই। কিন্তু বিচারপতিদ্বয় যে বিবেচনায় জেনারেল হারুন সাহেবকে জামিন দিয়েছেন সেটাই তর্কের বিষয়। জেনারেল হারুনকে জামিন দেয়ার কারণ হিসেবে আদালত বলেছেন, “তার কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে। এছাড়া তিনি সাবেক সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। সর্বোপরি তার ব্যক্তিগত স্ট্যাটাস বিবেচনা করেই আদালত তাকে জামিন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” (সুত্র: বিডি নিউজ 24)

মাননীয় আদালত, সংবিধানের কোথাও কিন্তু লেখা নেই যে একজন মুক্তিযোদ্ধা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলে আইনে তিনি কোন বাড়তি সুবিধা পাবেন। আইন সবার জন্যই সমান। এটাতে কোন সন্দেহ নেই যে জেনারেল হারুন মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এজন্য দেশের অন্য সবার মতো আমিও তাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা কোনক্রমেই তার অনৈতিক কাজের ঢাল হতে পারে না। বরঞ্চ এটা সাধারণের মাঝে আরো বেশি হতাশার সৃষ্টি করে যখন তারা দেখেন জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান হিসেবে বিবেচিত কোন মুক্তিযোদ্ধা অনৈতিক কাজে জড়িত হচ্ছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি নৈতিকতা আশা করেন। প্রসঙ্গক্রমে এখানে বলতে পারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যে সমস্ত নরপিশাচেরা হত্যা করেছিল তাদের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কেউ কেউ খেতাবও পেয়েছিলেন। তাই বলে রাষ্ট্র কি সেই কলঙ্কিত কর্মের জন্য তাদের ক্ষমা করে দিবে? কখনই নয়। বরং রাষ্ট্র বা জাতির এ কারণে লজ্জা পাওয়া উচিত যে, সেই পৈশাচিক কর্মের শাস্তি দিতে রাষ্ট্রকে এতোটা দীর্ঘ সময় নিতে হয়েছে। কাজেই জেনারেল হারুন-কে জামিন দেয়ার সময়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধা এমনটা উল্লেখ করে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘মুক্তিযোদ্ধা’ এ মহান শব্দ দুটোকে প্রকারান্তরে খাটোই করা হয়েছে।

জেনারেল হারুন-কে জামিন দেয়ার সময়ে আদালত সেনাপ্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়েছে। আদালত এমনটাও বলেছে যে, বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে তার দেশত্যাগের (পালানোর) সম্ভাবনা নেই। বিনয়ের সাথে বলতে চাই সংবিধানের কোথাও কিন্তু এমনটা বলা নাই যে, প্রাক্তন সেনাপ্রধান আইনী বিষয়ে বাড়তি কোন সুবিধা পাবেন। আর দেশত্যাগের বিষয়টি আলোচনার আগে আমি খোদ বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কয়েকদিন আগের একটি বক্তব্যকে সামনে আনব। নিজের লেখা একটা বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করতে গিয়ে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আইনী জটিলতা এড়ানোর জন্য আমেরিকায় অবস্থানকারী ১/১১ এর সেই বিখ্যাত সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ তার দেশের সব সম্পত্তি বিক্রি করে চিরতরে দেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কাজেই সেনাপ্রধান হলেই তিনি আইনী জটিলতা এড়াতে দেশত্যাগ করবেন না এমন ধারণাটি বোধ হয় সঠিক নয়। এক্ষেত্রে বরং উল্টোটাই ঠিক যে, বিশিষ্ট নাগরিকদেরই আইনী মারপ্যাঁচ এড়াতে দেশ ছাড়ার সম্ভাবনা বেশি। চুনোপুটি অপরাধীরা ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্যের কারণে দেশ ছাড়তে পারে না।

আদালত তার ব্যক্তিগত স্ট্যাটাসকেও জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছেন। শুধু গুরুত্ব নয়, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু সংবিধানে এমনটা কোথাও নেই যে, ব্যক্তিগত স্ট্যাটাসের কারণে আইনী বিষয়ে কেউ বাড়তি সুবিধা পাবেন। বরঞ্চ বলা আছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। ব্যক্তিগত স্ট্যাটাসের কারণে আইনে কেউ বাড়তি সুবিধা না পেলেও এই স্ট্যাটাস ব্যবহার করে কেউ অনৈতিক সুবিধা নিলে সেটা শাস্তিযোগ্য। জেনারেল হারুন-কে তার পদমর্যাদা বা স্ট্যটাসের কারণেই ডেসটিনিতে তাকে মাসে দশ লাখ টাকা বেতন দেয়া হত। এক্ষেত্রে ডেসটিনি শুধুমাত্র তার ব্যক্তিত্বকে ব্যবহার করেছেন এবং হারুন সাহেব সুবিধার বিনিময়ে এতে সায়ও দিয়েছেন। ডেসটিনির কারণে তিনি ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম’ এর মতো একটি মহান সংগঠনকে ছেড়েছেন। সংগঠনটি তিনি এমন সময়ে ছেড়েছেন যখন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে (সূত্রঃ শুনানীকালে অ্যাটর্নির জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য)। শুধু তাই নয় ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম’ এর সদস্য সচিব থাকাকালীন সময়ে তিনি ঐ সংগঠনের পরিচয়ে ডেসটিনি কর্মকর্তাদের নিয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর সাথে দেখা করার প্রয়াস নিয়েছিলেন। এটা পরিস্কার পদমর্যাদার অনৈতিক ব্যবহার।

জেনারেল হারুন-কে জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালত যে বিষয়গুলো বিবেচনা করেছে তা সংবিধানের ২৭ এবং ২৮(১) অনুচ্ছেদের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এক্ষেত্রে হয় বিজ্ঞ আদালত সংবিধান লংঘন করেছেন না হয় সংবিধানের ঐ অনুচ্ছেদগুলো অসাংবিধানিক। সংবিধান একটি নির্জীব বই মাত্র। সে কখনও নিজে থেকে বলতে পারে না যে, তাকে লংঘন করা হয়েছে। একেক ব্যক্তি সময়ে সময়ে সুবিধামতো একই বিষয়ে সংবিধানের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। তবে সংবিধানের ব্যাখ্যাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচার বিভাগ যেহেতু ঐ অনুচ্ছেদের নির্দেশনাগুলো ইগনোর করেছেন তাতে এটা স্পষ্ট এবং অফিসিয়ালি প্রতিষ্ঠিত যে, সংবিধানের ২৭ এবং ২৮(১) অনুচ্ছেদ দুটো অসাংবিধানিক।

আশা করি এখন মাননীয় আদালত আমাদের পবিত্র সংবিধান থেকে ঐ অসাংবিধানিক ২৭ এবং ২৮ (১) অনুচ্ছেদগুলো অপসারণে উদ্যোগ নিবেন এবং এগুলোর স্থলে সেনাপ্রধান এবং বিশিষ্টজনদের জন্য এক আইন এবং সাধারণ নাগরিকদের জন্য অন্য আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন।
১৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×