আসুন একটা সংবাদ পড়ি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
মহান স্বাধীনতার জন্য জীবন গেলেও হতভাগ্যই রয়ে গেছে ওরা ২২ জন। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হলেও ওই ২২ জনের খোঁজ ৪০ বছরেও কেউ রাখেননি। বগুড়ার শাবরুল হিন্দুপাড়ার নিহত ওই ২২ জনের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের জগদ্দল পাথরের মতো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে শোকাবহ সেইস্মৃতি। বগুড়া শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে বর্তমানে শাহজাহানপুর উপজেলার শাবরুল হিন্দুপাড়া গ্রাম। এ পাড়ায় যুগ যুগ ধরে হিন্দু-মুসলমান সৌহার্দের দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে এ পাড়ার ৪৩ হিন্দু পরিবারের প্রায় ৪০০ মানুষ দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কোনো এক সকালে বাড়ি থেকে পরিবার-পরিজন একযোগে বের হয়ে প্রথমে পার্শ্ববর্তী শাতরুখা গ্রামে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে আদমদীঘির কুন্দুগ্রাম হয়ে গুপিনাথপুর পাহারপুর দেওনাহাট ও ইশবপুর হয়ে ক্লান্ত শরীরে জয়পুরহাটের মঙ্গলবাড়ীতে পৌঁছতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাজাকার ও পাক হানাদারদের প্রচ- গুলির মুখে পড়ে। এলোপাতাড়ি গুলিতে একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যে যার মতো ভারত সীমান্ত চিঙ্গিসপুরের দিকে রওনা দেয়। এ ঘটনায় সেখানে মারা যায় শাবরুল গ্রামের মুকুল চন্দ্র দেবনাথ (১৭), কাষ্টু চন্দ্র (২০), গৌড়চন্দ্র দেবনাথ (৪৫) ও তার দুই ভাই নিতাই চন্দ্র দেবনাথ (৫০), বিশেশ্বর চন্দ্র দেবনাথ (৪০), শিরিশ চন্দ্র (৪০), পুলিন চন্দ্র দেবনাথ (৬০), নরিনী চন্দ্র দেবনাথ (৬০), অমূল্য দেবনাথ (২৫), শরতলাল সাধু (৭০), বিনয় চন্দ্র সাহা (১৮), বেল্লো মঙ্গল দেবি (৩৫), নিভা রানী (১৫), নিবারণ চন্দ্র মালী (৫০), ব্রজেন্দ্রনাথ মালী (৪৫), ভবনী চন্দ্র দাস (৫০), বিশ্বনাথ দাস (১৮) এবং রংপুর কলেজ রোডের বাসিন্দা ও সে সময় শাবরুল বসবাসকারী স্বপন চক্রবর্তী ও তার দুই ভাইসহ ২২ জন। গুরুতর আহত হয়ে শাবরুল গ্রামের প্রহ্বলাদ সাহাসহ কয়েকজন বেঁচে আছেন এখনো। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষই নিম্নবিত্ত ছিল। বর্তমানেও তারা অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই জীবনযাপন করছে এবং তাদের দুস্বপ্নের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। এই গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র সাহা (৭০), হেম চন্দ্র দেবনাথ (৭৮), অভয় চন্দ্র সাহা (৭২) ও রামপদ মালী (৬৮) কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, স্বাধীনতার এতো বছর পরও যুদ্ধে নিহত হওয়া তাদের পরিবার পরিজনদের সাহায্য সহযোগিতা তো দূরের কথা কেউ কখনো খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি। নিহতদের স্মরণে তৈরি হয়নি কোনো স্মৃতিচিহ্ন। এসব বৃদ্ধ আরো জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তারা যখন সহায সম্বল হারিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে এসে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তখন প্রায় শতাধিক গ্রামবাসী তাদের সংসদ সদস্য বগুড়ার চোপিনগরে এ কে এম মুজিবর রহমানের কাছে যান। কিন্তু সে সময় মুজিবর রহমান তাদের বিমুখ করেন এবং জানান, দেশের এই পরিস্থিতিতে তার করার কিছুই নেই। তবে সেদিন আগত গ্রামবাসীকে মুড়ি খাওয়ার জন্য তিনি ৫০০ টাকা দেন। এরপর অনেকের কাছেই যান তারা। যেমন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, তখনকার ডিসি, এসপিসহ সংসদ সদস্য, এমনকি রাষ্ট্রের কাছেও তারা সাহায্যের আবেদন করেন। কিন্তু কোনো সুফল অদ্যাবিধ তারা পাননি। তাদের প্রত্যাশা তারা সবাই প্রায় জন্ম থেকেই আর্থিক দৈন্যদশায় থেকে বর্তমানে বৃদ্ধকাল অতিবাহিত করছেন। মৃত্যুর আগে যদি তাদের হারানো স্বজনদের জন্যে সরকারিভাবে কিছু করা হতো তবে তারা মানসিকভাবে শান্তি পেতেন। এ ছাড়াও তাদের স্বজনদের হত্যাকারী পাক-হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দোস রাজাকার আল-বদরসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি যদি তারা মৃত্যুর আগে দেখে যেতে পারতেন তবে তাদের সারা জীবনের দরিদ্রতার কষ্ট, স্বজন হারানোর কষ্ট অনেকাংশেই লাঘব হতো।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হাদিকে গুলি করলো কে?
হাদিকে গুলি করলো কে?

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইতিহাসের সেরা ম্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।