‘ওরে খোকন কাজী, তুই আমার জেসমিনের কিডনি নিলি, বাল্ব নিলি, তুই আমারে দেখতি পালিনি।’ নিহত জেসমিনের মা জোহরা বেগম কবরের ওপর পড়ে আহাজারি করে এ কথা বলছিলেন। জন্ম হলে মৃত্যু হবে চিরন্তন সত্য। কিন্তু দরিদ্র ঘরে জন্ম গ্রহণ করা এতিম, অসহায় জেসমিনের মৃত্যুটি এমন হওয়ার কথা নয়। দরিদ্র ঘরে জন্ম কি তার পাপ ছিল? যে বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা, ওই বয়সে স্কুলে না গিয়ে তাকে যেতে হলো কাজের মেয়ে হয়ে ঢাকায় স্থানীয় খোকন কাজীর মেয়ে-জামাইয়ের বাসায়। কিন্তু জেসমিন জানতো না ওই বিত্তশালীরা তাকে হত্যা করে কিডনি হৃদযন্ত্রের ভাল্ব ও প্রয়োজনীয় সবকিছু কেড়ে নেবে। অসহায় হতদরিদ্র ও এতিম জেসমিনের মা ও একমাত্র বোনের করুণ আর্তনাদে বেরিয়ে পড়ে জেসমিন হত্যার অজানা কাহিনী। যদিও লাশের মূল্য লাখ টাকা দিয়ে ধামাচাপা দেয়ার পাঁয়তারা করা হয়েছে, কিন্তু নিহত জেসমিনের মা ও বোন এর সুষ্ঠু বিচার চাওয়া থেকে পিছিয়ে যাননি এতটুকুও।
পাইকগাছার এতিম, হতদরিদ্র জেসমিনকে সুকৌশলে কাজের মেয়ে করে নেয়া হয়েছিল ঢাকার একটি বিত্তশালীর বাসায়। বাসাটি ছিল গদাইপুর গ্রামের কাজী নাজিরুল ইসলাম ওরফে খোকন কাজীর জামাই ও মেয়ের। কে জানতো তাদের কিডনি ও হৃদযন্ত্রের ভাল্ব প্রয়োজন। ৬ মাস একসঙ্গে থাকার পর গত ৩১ জুলাই জেসমিনের ছিল পৃথিবীর আলো-বাতাস ভোগ করার শেষ দিন। গৃহকর্তা মাহফুজুর রহমান ও গৃহিণী মিতা অসহায় জেসমিনকে ঘরের ভেতর তালাবদ্ধ করে অভুক্ত অবস্থায় রেখে চলে যায় ঘরের বাইরে। ওরা জানতো না জেসমিন ল্যান্ডফোন ব্যবহার করতে জানে। তাহলে হয়তো ঘটনাটি এমনিভাবে জানাজানি হতো না। ওই দিন সকালে জেসমিন ল্যান্ডফোনে সবকিছু জানিয়েছিল তার চাচা শফির মোবাইলে। সে বলেছিল যত সব ঘটনা। খোকন কাজীর নিজস্বজনের কিডনি ও হৃদযন্ত্রের ভাল্ব প্রয়োজন। না পেলে তাদের জীবন বিপন্ন হওয়ার খুবই আশঙ্কা। দ্রুত কাজ সারতে জেসমিনের কিডনি ও হৃদযন্ত্রের ভাল্ব নেওয়া শেষ হয় বলে জানা যায়। ১ আগস্ট জেসমিন গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে নাটক সাজিয়ে কাউকে না জানিয়ে ময়নাতদন্ত শেষে দুর্গন্ধময় ক্ষতবিক্ষত লাশটি নিয়ে আসে খোকন কাজীর বড়ো জামাতা মিলন ও যশোরের দুই ব্যক্তি। খাটিয়া থেকে লাশ নামানোর সঙ্গে সঙ্গে করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়। মুহূর্তে ফুঁসে ওঠে গোটা এলাকা। আটক রাখে বহনকারী মিলন, মহিজুর, রুহুল ইসলামকে। সুষ্ঠু বিচারের আশায় শত শত লোক জেসমিনের করুণ মৃত্যু মেনে না নিতে পেরে জীবন্ত জেসমিনকে ফিরিয়ে দাও দাবিতে লাশটি রেখে আসে খোকন কাজীর বাড়িতে, যা নিয়ে এলাকায় তুলকালাম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অপরদিকে বিষয়টি ফয়সালা করতে মাঠে নামে কতিপয় দালাল । দর কষাকষির একপর্যায়ে ১ লাখ ৬ হাজার টাকায় বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত, পড়িত চুক্তি হয়। শর্ত থাকে মামলা হবে না। থাকবে না কোনো দাবি-দাওয়া। কিন্তু অবুঝ মায়ের মন তা কি মানে? সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ডুকরে চিৎকার করে আর্তনাদ করতে থাকেন। কবরের ওপর আহাজারি ও আত্মচিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। এ সময় তার মুখে একটি কথা, ‘ওরে খোকন কাজী, তুই আমার জেসমিনের কিডনি নিলি, বাল্ব নিলি, তুই আমারে দেখতি পালিনি।’
আলোচিত ব্লগ
হাদিকে গুলি করলো কে?
হাদিকে গুলি করলো কে?

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইতিহাসের সেরা ম্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।