somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠান্তর | হারুকি মুরাকামির 'হিয়ার দা উইন্ড সিং'

২৪ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গল্পটার শুরু হয় এই লাইন দিয়ে—নিখুঁত লেখা বলে কিছু নেই, যেমন নেই নিখুঁত হতাশা বলে কিছু। সুতরাং আপনি যখন তা শুরু করতে যাচ্ছেন—সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে একটা এলোমেলো আখ্যান সম্পর্কে—এবসলিউট সাহিত্য নিয়ে আপনি যদি খুঁতখুঁতে থাকেন এ বই আপনার জন্য নয় বরং এ গল্প তাদের জন্য যারা রাত তিনটায় ফ্রিজ খুলে দেখে খাওয়ার মত কিছু সেখানে আছে কিনা।

উপন্যাসের মূলচরিত্র এক নামহীন যুবক—ছুটি কাটাতে এসেছে নিজ শহরে—তার অল্প কিছু কাজ: ঘুমানো, খাওয়া আর 'জে' নামের এক বৃদ্ধের বারে বসে বিয়ার গেলা। এখানে তার সঙ্গী হচ্ছে র‍্যাট নামের প্রায় সমবয়সি আরও এক যুবক। র‍্যাটের সাথে গল্পের নায়ক নানান বিচিত্র গল্প করে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক- জাহাজে করে কোথাও যাচ্ছি হঠাৎ জাহাজ ডুবে গেল। একটা কাঠের টুকরো ধরে আমি ভেসে আছি এমন সময় ভাসতে ভাসতে কাছে চলে এল এক রূপবতী নারী—এরপর এক কেস বিয়ারও চলে আসবে ভেসে ভেসে—আমি আর সেই সুন্দরি মেয়ে বিয়ারের ক্যান খালি করে যাব একের পর এক আর করবো গল্প। ভাসতে ভাসতে আমরা ডাঙ্গা পেয়ে যাব একসময়। বহুদিন বাদে আবার দেখা হবে আমাদের, তখন একসাথে আমরা বারে যাব ফের আর শুধু বিয়ারই গিলে যাব বোতলের পর বোতল।

মূলত পুরো গল্পটাই এই একের পর এক বিয়ারের বোতল খালি করার, র‍্যাটের বই পাঠ আর উপন্যাস লিখবার, ডেরেক হার্টফিল্ড নামের এক অজানা আমেরিকান লেখকের যে কিনা একদিন আত্মহত্যা করেছিল এম্পায়ার এস্টেট বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে—তার বুকে জড়ানো ছিল হিটলারের একটা পোর্ট্রেট আর হাতে একটা ছাতা! এর সাথে যোগ হবে উপন্যাসের যে ন্যারেটর তার বিচিত্র যৌনজীবনের স্মৃতি—অতঃপর এক নারীর প্রেমে পড়ে যাওয়া—এই এলোমেলো আখ্যানের মাঝ দিয়েই আদতে পাঠক পেয়ে যাবেন জীবনের এক দার্শনিক চেহারা। যেখানে আমাদের বলা হয় সব কিছু পূর্ব-নির্ধারিত অথচ আমরা কি পাচ্ছি আর হারাচ্ছি এ সম্পর্কে বুঝে উঠবার ক্ষমতা এক জীবনে আমাদের মেলেনা।

প্রখ্যাত জাপানি ঔপোন্যাসিক হারুকি মুরাকামির প্রথম বই এটি—প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে—বলা হয় এটি র‍্যাট ট্রিলোজির প্রথম বই। ১৯৮০'তে প্রকাশিত হয় 'পিনবল, ১৯৭৩' এবং ১৯৮১ সালে 'আ ওয়াইল্ড শিপ চেজ'—তিনটি উপন্যাসের মুখ্য চরিত্রে আছে র‍্যাট নামের উদাসিন যুবকটি, যে নিজেও একজন উপন্যাসিক হতে চায়। গুঞ্জো, জাপানের সবচে' নাম করা সাহিত্য পত্রিকাগুলোর একটা—বই হিসেবে বেরুবার আগে হিয়ার দা উইন্ড সিং এখানে তরুণ ঔপোন্যাসিকের পান্ডুলিপি হিসেবে ছাপা হলেই মূলত উপন্যাসটির বিচিত্র ন্যারেটিভ নিয়ে জাপানে হৈচৈ পড়ে যায় যদিও মুরাকামি পরবর্তিকালে এ বই সম্পর্কে বলেছেন, তারকাছে এটা এমেচারিশ কাজ—নিজের মত অনুসারে মুরাকামির গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরু হয় মূলত ট্রিলোজির শেষ বই 'আ ওয়াল্ডশিপ চেজ' থেকে। প্রথম বই সম্পর্কে জগৎবিখ্যাত লেখকদের অনেকেই ওই এমেচারিশ শব্দটা ব্যবহার করলেও জগতের তাবত পাঠকের কাছে তাদের প্রথম বইগুলোও একেকটা বিস্ময়। সেদিক থেকে 'হিয়ার দা উইন্ড সিং' পড়তে পড়তেও আমরা ওই বিস্ময় টের পাই—অবাক লাগেনা এ লেখকের হাতেই পরবর্তিতে বেরিয়েছে কাফকা অন দা শোর কিংবা দা উইন্ডাপ বার্ড ক্রনিকলস'র মত মহৎ উপন্যাস।

পাদটিকা: জিয়া হাশানের বাংলা ভাষান্তরে 'শোনো বাতাসের সুর' পড়ে এই হল আমার মতামত। লেখকের প্রথম উপন্যাস দিয়েই তাকে পাঠ শুরু করা গেল—এই ভেবেও আনন্দ পাওয়া যায়। অনুবাদ সাবলিল হলেও কিছু কিছু যায়গায় বিরক্ত হয়েছি শব্দের ব্যাবহারে, যেমন ফ্রেঞ্চ শব্দটা অনুবাদক কখনও ফ্রান্স লিখলেন, আবার লিখলেন ফ্রেন্স—কোথাও চলতি ঢাকাইয়া ট্রেন্ডের শব্দও থিমের গভীরতা হালকা করবার অপচেষ্টা করেছে, তবু সব মিলিয়ে ঝরঝরে লেগেছে ভাষান্তরিকের কাজ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×