somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এইসব আবোল-তাবোল- দুই (অনুভূতিহীন যাপিত জীবন, অবসর ও অপসৃয়মান সম্পর্ক)

১২ ই জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনুভূতিহীন যাপিত জীবন।

ইদানীং সবকিছু কেমন জানি অনুভূতিহীন লাগে, কোনো কিছুই আর কোনো অর্থ বহ্ন করছে না, প্রাত্যহিক বাস্তবতার মত সব মনে হয়। প্রতিদিনই যেমন খাই, ঘুমাই তেমনই। অথচ নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, চাকরি ঠিক্মত চলছে, চাপ বেড়েছে একটু, শরীর ভালো মোটামুটি (পেট বেড়েছে যদিও এক ইঞ্চি! ), বন্ধুদের সাথে আড্ডা-ফাড্ডা হাঁ হুঁতাশ ও চলছে ভালো। কিন্তু জানিনা কেন এইরকম লাগছে।
মনে হয় ঠিক অস্তিত্বের কোনো সংকট নেই এই মূহুর্তে ,তাই।মোটামুটি গত সাত আট বছর ধরেই টানাপোড়ন আর সংগ্রামে চলছিলো জীবন, স্পন্দিত অনুরণিত। যা ছিলো, সবগুলোকে খুব নির্লিপ্তভাবে গ্রহন করতে শিখে গিয়েছি...। প্রতিমূহুর্তে কিছু না কিছু সংকট না থাকা খারাপ, মানুষের জীবনকে বড্ডো ম্যাড়ম্যাড়ে করে দেয়।



এই জীবনেই পাচ্ছি অবসর...।

সব্বাই দেখি চাকরি – বাকরির ব্যাস্ততা নিয়ে হাঁ হুতাশই করে, ভবিষ্যত নিয়ে তো আরো বেশী। আমি করি না। ইউনি জীবন টা চরম আনন্দে কাটিয়েছি, আবার চরম ব্যাস্ততায়। কোনোদিন রাত নটার আগে বাসা বা হলে ফেরা হয়নি, শুক্র শনিবার ছিলো আমার ‘ওভারলোডেড ডে’। শখে নয় , প্রয়োজনেই আমি একটা উচ্চমাধ্যমিক ব্যাচ (পরে ও/এ লেভেলের ব্যাচ ও) পড়াতাম... আমার ব্যাক্তিগত জীবন অনেকটাই নিয়ে নিয়েছিলো তা। শুধু একই পরিবারের মত একটা ক্লাস ছিলো, এখনো আছে বলেই ওই জীবনটা ছিলো আনন্দময়। আমাদের ক্লাসকে আমরা বলতাম ‘সিএসই৯৯ ফ্যামিলি’... ক্লাস বলতাম না। স্যাররাও ওই নামেই ডাকতেন।

এখন কামলা খাটতে মাঝে মাঝেই ১৮ ঘন্টার ও বেশী অফিস করি, রাত জাগি, ছুটির দিনগুলোতও মাঝে মাঝে দৌড়াতে হয়, চব্বিশ ঘন্টা দুটো ফোন অন করে রেখে যেকোন সময় ছুটতে হয়... তাও ভাবি অনেক অবসর। অনেক শুক্র-শনিবার ইচ্ছামত এগারোটা পর্যন্ত ঘুমাতে পারি, অনেক দিনই অন্তঃত সাতটার মাঝে ফিরতে পারি... টানা বারোদিন ছুটি নিয়ে ঘোরাঘুরি আর আলস্যে গা ভাসিয়ে ও দিতে পারি... খারাপ কি, অবসর নয় কি?


ওদু পাগলা চলে গেলো আটলান্টিকের ওপারে...।
বৃহঃস্পতিবারের রোদ মরে যাওয়া বিকেলে আমরা দশজন সরু গলি দিয়ে হাঁটছি। এর আগের ঘন্টাগুলো হা হা হি হি , চরম হাসাহাসি। কেন তাও জানি। আসলে সবাই নিজেকে নির্মোক করে রাখতে চায়, এই সময়টুকু।

ওদু পাগলা চলে গেলো আটলান্টিকের ওপারে...। ওয়াহিদ, বিবর্তনের ধাপে ধাপে আমার দেয়া এই নামটি, যেটি তাকে ক্যাম্পাসবিখ্যাত করে দিয়েছিলো আজ চলে গেলো। সপ্তাহখানিক আগেই ওর বউয়ের, যে ও আমাদের সহপাঠিনী, চলে যাবার ঠিক পরের সপ্তাহে ওর ভিসা- এডমিশান হয়ে যাওয়াটা স্ট্যান্ট এর মতই ছিলো, অনেকটা স্বস্তির ও আমাদের জন্য।
সেই ওদু পাগলা , যে প্রথম বর্ষে হলে চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে আমাদের ভাষন(!) দিত, ক্যাম্পাসের কুকুরগুলারে যে শিঙ্গারা খাইয়ে মজা পেত, গানস-এন্ড-রোজেস বাজিয়ে যে জানালার কাঁচ ফাটিয়ে ফেলেছিলো, সেই 'এনিগ্ম্যাটিক ওদু পাগলা'; আর সিগারেটের ছাইয়ে আমার পান্থপথের ডেরা নোংরা করবে না, অনেকদিন পর পর হঠাৎ হঠাৎ ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করবে না, 'দোস্ত কেমন আছস'!
জীবন তো এইই , বয়ে যায় , নিয়ে যায়, ছুঁয়ে যায়।

সম্পর্কগুলো কি সবসময়ই অপসৃয়মান?...।
এই প্রশ্নটা দিনমান ভাবাচ্ছে। কেন জানি বন্ধুরা, অনুভবের মানুষগুলো একটু একটু দূরে সরছে, হিসেবী হচ্ছে। দেয়ালটা কিছুটা তো থাকবেই, কর্মজীবনে সংসারজীবনে ঢোকার জন্য। কিন্তু দেয়ালটা অনতিক্রম্য এর দিকে যাবে কেন, তাই ভাবি? অপসৃয়মানতার একটা বড় কারণ মনে হয় আমার অভিমানাহত হবার প্রবল প্রবনতা।
নাহলে প্রিয় বন্ধুরা মনপ্রাণ খুলে গল্প করার চাইতে শীতের ঘুমেই বেশী কাতর, প্রিয় বন্ধুদের একজন বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ীতে তার প্রথম রেঁধে খাওয়ানোর নিমন্ত্রণেই যায় ভুলে, একসময় সামর্থ্য ছিলো খুব অল্প , তাই পান্থপথের তেহারী কত্তো মজা করে খেতাম, ইদানীং বন্ধুদের ভালো খাওয়াবো বলেও পাই না(!); এই ভাবে সব আসে কেন?
নাকি মনে হয় আমিই একটু বেশী নষ্টালজিক, সময়ের পিছনে, সময়ের সাথে এটাই ঠিক, কে জানে?
ক্ষমাপ্রার্থনা , দুঃখপ্রকাশ এইসব বন্ধুদের মাঝে বড্ডো ক্লীব মনে হয়, স্মরণ করি।

নিতান্তই ব্যাক্তিগত কথন, সময় নষ্ট করার জন্য কেউ বিরক্ত হলে মাইনাস গ্রহণযোগ্য। :(



(এস্ট্রোনমিক্যাল ক্লক এর ছবিটি প্রাগের টাউন স্কয়ার থেকে তোলা , ভ্লাটিস্লাভ নদীর অদূরে... @ সেপ্টেম্বর,২০০৮)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:২৩
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×