somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বকাপ, পর্যায় এর পরিবর্তন আর একটি লুমান্তিক স্বপ্নকল্পনার অপমৃত্যু :(

১০ ই জুন, ২০১০ রাত ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাক , তাহলে চলে এলো ২০১০ বিশ্বকাপ!
গত মাস থেকে কলিগদের একজন আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিন / দেশ এইসব নিয়ে , আর হাসাহাসি শুরু হয় না জানা নিয়ে। বুঝি বড় হয়েছি অনেকটা , আগ্রহ ও কমেছে অনেকখানি।

চার বছর পরে বসে বিশ্বকাঁপানো এই আসরটা। একটা খুবই মজার ব্যাপার খেয়াল করি সবসময়। একেকটি বিশ্বকাপ মানে জীবনের একেকটি পর্যায়।
একেকটি বিশ্বকাপের স্মৃতি মানে একেকটা সময়ের ফ্রেম।

১৯৯০ এর বিশ্বকাপ এ আমাদের জ্ঞানত প্রথম বিশ্বকাপ। পড়তাম প্রাইমারিতে, তখন ছিলাম আর্জেন্টাইন সমর্থক (এখন মূলত ব্রাজিল, অমূলত আর্জেন্টিনা ! :) ) এখনো মনে আছে ইটের বিশাল স্তুপের উপর আর্জেন্টিনার পতাকা তুলতে গিয়ে হাত পা ছড়ে একাকার হবার কথা, মোল্লাপাড়ার বাসায়। খেলা দেখার সাথে সাথে খেলোয়াড়দের ছবির ভিউকার্ড জমানো...আহ , কি মজা।আর্জেন্টিনা সেইবার ফাইনালে হারলো পশ্চিম জার্মানীর কাছে...:(

১৯৯৪ এর বিশ্বকাপে আমরা ক্লাস এইটে। বেশ বড়ো হয়েছি, খেলাও বুঝি, তাই এইবার থেকেই সাপোর্ট ব্রাজিল। ফিরে এসেছিলাম কলোনিতে। খেলাধুলা ধুন্ধুমার এইসব এর জন্য কলোনির চাইতে ভাল কোন এলাকা নাই নিঃসন্দেহে! রাতে দিনে মিছিল (ছেলেদের না শুধু, বূড়োদের ও), পতাকা আর কলোণির বিশাল তিনটা মাঠে দিনরাত বিভিন্ন দলের নামে খেলা। আহ! ম্যারোডোনার ড্রাগ নিয়ে বিদায়ে সেইবার আর্জেন্টাইন সমর্থকদের কান্না :) আমরা অবশ্যি বিজয় মিছিল বের করেছিলাম ব্রাজিল কাপ নেবার পর , আমবাগান থেকে পলোগ্রাউন্ড। আমার ধারণা ব্রাজিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মাত্রাতিরিক্ত রেষারেষি এই বিশ্বকাপের পর থেকেই শুরু হয়!

১৯৯৮ তে স্কুল পেরিয়ে কলেজে পড়ি। আইস ফ্যাক্টরি রোডের গলিতে ধুন্ধুমার এক খেলা দেখা , ১৪/১৫ জন মিলে। মনে আছে ফাইনাল দেখেছিলাম গ্রামের বাড়ীতে, ঝড় থাকায় বিটিভি আসছিলো না। তাই প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে অন্য এক বাড়ীতে যাওয়া, সেখানে ভারতীয় ডিডি চ্যানেলে ফাইনাল দেখা। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ওইদিকে ডিডি দেখা যেত। রোনালদো এর হঠা'' অসুস্থ হয়ে যাওয়া আর তিন গোল খেয়ে ফ্রান্সের কাছে হারের পর, আমরা ব্রাজিল সমর্থকরা ঝোড়ো বৃষ্টিতে ও পুকুরঘাটে রাত চারটায় বসে থাকার কথা মনে পড়ে। তারুণ্য। আবেগ দুঃখ সুখ সবই তীব্র বোধ হতো।

২০০২ এ চলে এসেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাসা ও চলে এসেছে আসাদগঞ্জে। অনেকটাই চুপেচাপে আব্বু-আম্মু-ভাইরা মিলে খেলা দেখা। ক্যাম্পাসে গেলে আড্ডা আড্ডা আর আড্ডা। এবারো ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন।

২০০৬ এ ক্যাম্পাস জীবন শেষ। লোটা-কম্বল নিয়ে কামলা খাটার জন্য নিজের প্রিয় শহরটি ছেড়ে ঢাকায় এসেছি। ডেরা বেঁধেছি পান্থপথে।অচেনা শহরে ক্লাসমেট আর ফ্ল্যাটমেটরাই ভরসা। উদ্বোধনী রাতের কথা ভুলবো না, রামপুরায় ডলারের বাসার ছারপোকাদের আতিথেয়তা ভোলা নিতান্তই অসম্ভব :( কলাবাগান মাঠের বড়ো স্ক্রীনে খেলা দেখতে যাওয়া সবাই মিলে গভীর রাতে। খেলা দেখে হেঁটে হেঁটে পান্থপথের বাসায় ফেরা। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেও খেলা দেখা, বাক-বিতন্ডা হাউকাউ পুরো গ্যালারি এনভায়রনমেন্ট! ব্রাজিলের পুরনো পথের কাঁটা ফ্রান্স কোয়ার্টারেই পানসে করে দিলো ব্রাজিলকে বিদায় দিয়ে।

২০১০ বিশ্বকাপ চলে এলো। এইবারই প্রথম ব্যাত্যয় ঘটলো। গত চারবছরে তেমন কোনো পরিবর্তন নাই, অন্তত 'পর্যায়' বলার মত কিছু নাই।পেট দু ইঞ্ছি বেড়েছে, কর্মস্থল পরিবর্তিত - এইগুলাকে কি পর্যায় মাপের পরিবর্তন বলা যায়। আহা, কত আশা ছিলো-'জণারণ্যে নিঃসঙ্গ পথিক' এর নিঃসঙ্গতা কিছুটা হলেও গুছবে। 'পার্টনার' কে নিয়ে এই বিশ্বকাপটা দেখবো। আমি ব্রাজিল , পার্টনার আর্জেন্টিনা সমর্থক হলে আরো ভালো,গুঁতোগুঁতি ক্ষেপাক্ষেপি ভাল জমতো। আর্জেন্টিনা তো প্রথম রাউন্ডেই কাত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আরো মজা হত। আর্জেন্টিনার পতাকা দিয়ে চোখ মুছার রুমাল বানিয়ে দেয়া যেতো।
[ কি লুমান্তিক স্বপ্নকল্পনা!!! কি আর করমু , মাথা আউলাইছে।]

আম্মাজান অফিশিয়াল ডিক্লেয়ারই দিলো কয়েকদিন আগে। আরে বিশ্বকাপ এর ও তো বাছাই-প্রস্তুতি পর্ব পার হয়ে আসতে দুই বছর সময় লাগে, আমার জন্য সময়হীন উপায়হীন এই ঘোষণা রীতিমতো নিষ্ঠুরতা!!

বিশ্বকাপ এলো, পর্যায় এলো না!! ;(

(ইহা একটি আবজাব মুখপুস্তিকা নোট। পাত্থর আমার লেখা না দিবার বর্ষপূর্তি করার কথা কইসিলো, বর্ষপূর্তি করুম না, তাই সামু-র কিছু জায়গা নষ্ট করলাম। দিরং হইলে আমি কিছু জানি না, পাত্থর রে মাইনাসান :) )
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১০ রাত ১:১১
৩১টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×