somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

#বুক_রিভিউ

১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গেরিলা_থেকে_সম্মুখ_যুদ্ধে (১ম ও ২য় খন্ড)
লেখকঃ মাহবুব আলম
প্রকাশনীঃ সাহিত্য প্রকাশ

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক কলম সৈনিক তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ হতে অনেক গল্প,উপন্যাস কিংবা প্রবন্ধ লিখেছেন।কেউবা মুক্তিযুদ্ধের সময় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হবার দরুন ডিপ্লোম্যাটিক দিক নিয়ে লিখেছেন আবার কেউ কেউ নিয়মিত বাহিনীর নেতৃত্ব দেবার অভিজ্ঞতা হতে সম্মুখ সমরের নানা দিক তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। তবে অধিকাংশ বইয়ে রাজধানী কেন্দ্রিক মুক্তিযুদ্ধের চিত্র উঠে এসেছে। রাজধানীর বাহিরে গ্রাম-গঞ্জের বিশেষ করে উওর বঙ্গের মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চিত্র গুটিকয়েক বইয়ে উঠে এসেছে। "গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে "র মাধ্যমে লেখক সেই চরম উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলোর দুঃসাহসিক অভিযানের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। এখানকার অধিকাংশ বর্ণনা, দিন,তারিখ লেখকের নিজের "ওয়ার ফিল্ড ডায়েরি" হতে নেয়া। এখানকার বর্ণনার ক্ষেত্রে লেখক চেষ্টা করছেন যথাসাধ্য নির্মোহ থাকতে। তাই তো তিনি দু'দশক ধরে লিখেছেন '৭১ এর উত্তাল দিনগুলোতে প্রত্যক্ষ করা সেইসব রক্তিম দিনগুলোর স্মৃতিকথা। "গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে'র প্রথম খন্ডে যুদ্ধ প্রস্তুতি, যুদ্ধ যাত্রা এবং গেরিলা যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধ যাত্রা এবং হাইড আউট প্রথম খন্ডে। আগস্ট'৭১ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন এবং গেরিলা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাতে। দ্বিতীয় খন্ডে রয়েছে হাইড আউট-২, হাইড আউট-৩ এবং সম্মুখ যুদ্ধ পর্ব।

গল্পের শুরুতেই আছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ শিবির 'মুরতি 'ক্যাম্পের ৩ হাজার ফুট উঁচুতে উওরাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা প্রশিক্ষণ নেবার বর্ণনা.... তারপর 'মুরতি' ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ শেষে চাউল হাটি ইউনিট বেসের ভাটপাড়ায় ক্যাম্প স্থাপন।২৭ জুন প্রথম অপারেশন যাত্রার মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া গেরিলা যুদ্ধ এগিয়ে চলে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত নানা প্রতিকুল অবস্থার মধ্যদিয়ে। উঠে এসেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে থেকে এসব অপারেশনের প্রতিদিনকার জীবন্ত চিত্র,সাথে যোগ করেছেন নিজেদের নিয়মিত বাহিনীর কমান্ডিং অফিসারের অধীনে থেকে যুদ্ধ করতে না পারার আফসোস.. ....সাথে অকপটে তুলে ধরেছেন প্রবাসি সরকারের সমন্বয়হীনতার কথা যদিও শেষের দিকে লেখকের এই অপ্রাপ্তিটা আর স্থায়ী হয় নি.....
লেখক তার প্রতিটি অপারেশন সহ প্রত্যাহিক জীবন-যাপনের সীমাহীন কষ্ট কিংবা প্রাপ্তির বর্ণনা এমনভাবে তুলে ধরেছেন যার মাধ্যমে পাঠকেরা নিজের অজান্তেই হয়ে উঠে গেরিলা যুদ্ধের একেকজন সদস্য।
প্রতিটা পাঠক যেন পঞ্চগড়,তালমা,ভেতরগর,সোনারবান,নালাগঞ্জ কিংবা অমরখানা,জগদল হাট অপারেশনে কাধেঁ স্টেনগান উচিয়ে বন জঙ্গল কিংবা পাটক্ষেতের ভেতর দিয়ে যুদ্ধ অবতীর্ণ হয়। ম্যাগাজিন ভরা,ব্রাশ ওপেন করা,সেন্ট্রি মোতায়েন, রেকি করা, পেট্রল ডিউটি, রিট্রিট,ক্যামোফ্লেজ কিংবা হাইড আউটের মাঝে একেকজন পাঠক যেন নিজেদের কে হারিয়ে ফেলে অহিদার, পিন্টু, গোলাম গউস কিংবা কমান্ডার মাহবুবের মাঝে। কিছুক্ষনের জন্য হলেও টাইম মেশিনে করে যেন নিয়ে যায় যুদ্ধ দিনের উত্তাল দিনগুলোতে।

বাদ_যায়_নি_love_&_war. হাউড আউটের চরম মানসিক উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলোতেও উঠে এসেছে হুড তোলা রিকশায় শাদা ওড়না উড়িয়ে গর্বিত ভঙ্গিমায় বসে থেকে কারমাইকেল কলেজে যাওয়া মরাল গ্রীবার সেই তরুনীর কথা। যাকে পরর্বতীতে লেখক শরনার্থী শিবিরে খুঁজে পেয়েছিলেন....কিন্তু মুহূর্তে উপলব্ধি করেন "জীবন যেখানে যুদ্ধ আর গোলাবারুদের ভেতরে আবর্তিত হবে,যেখানে মৃত্যু একটা সাধারণ ঘটনা,জীবন যেখানে ছকে বাঁধা অঙ্কের মতো,সেখানে ভালো লাগা আর ভালোবাসা থাকতে নেই,মায়া-মমতা আর স্নেহ প্রীতি থাকতে নেই। আমরা এখন এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি আর সেই কঠিন সত্য যুদ্ধ আর মৃত্যুর বাস্তবতা,গোলাবারুদের গন্ধ, রক্ত আর মৃত্যুর আর্তনাদ।বিভৎসতা আর নিষ্ঠুরতা"
এতোটা নির্মোহ স্মৃতিকথা আর যুদ্ধের বাস্তবতা একসময় চুড়ান্ত পরিনতির দিকে নিয়ে যায়....হঠাৎই ওয়াটকি সেটে ভেসে আসে ক্যাপ্টেন শাহরিয়ারের গলা,
টু ফোর ওয়ান।
টু ফোর ওয়ান। ক্যান ইউ হিয়ার মি? ওভার।
কংগ্রাচুলেশন মাহবুব!! বিরাট সুখবর।
আজ বিকেলে ঢাকা রেসকোর্সে পাকবাহিনী সারেন্ডার করেছে।ওভার।
এরপর ফ্রন্ট জুড়ে বাঙ্কার আর ট্রেঞ্চগুলোতে শুরু হয় বহ্ন্যুৎসব।
সারাটা রাত এভাবেই কেটে যায়। ভোরের আকাশ ফিকে হয়ে এলে ডায়েরির শেষপাতা এসে যায় এভাবে...
১৭ ই ডিসেম্বর, '৭১
"অবশেষে ভোর হলো।স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ভোর।এমন ভোর মানুষের জীবনে ক'টা আসে? সূর্য উঠছে। ওটা ১০ লাখ শহীদের রক্তে রাঙানো। অনান্য দিনের চেয়ে সূর্যটা তাই বুঝি অনেক লাল।
এবার ঘরে ফেরার পালা.....
."
পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ
মুক্তি যুদ্ধে ছাত্র -জনতা -দিনমজুর-চাষী বা সাধারন মানুষের অংশগ্রহণে গেরিলা তৎপরতা নিয়ে এরকম নির্মোহ আর ছোট ছোট অথচ হৃদয় নাড়িয়ে দেওয়া মত ঘটনা,যেমন সম্মুখযুদ্ধে ট্রেঞ্চে তরকারি নেবার ভান্ড না থাকলে কোমরের গামছা কিংবা মাথার হেলমেট উল্টিয়ে তরকারি নেবার মত অবর্ণনীয় সব প্রতিকুলতা আর লেখকের বন্ধু সহকারী কমান্ডার পিন্টুর রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং হিউমার বইটিকে দিয়েছে অন্য মাত্রা। মুক্তিযুদ্ধের উওাল সময়গুলোর মানসিক চাপ সহ্য করে শত সীমাবদ্ধতা পাড়ি দিয়ে চুড়ান্ত বিজয় হওয়া পর্যন্ত ঘটনার দিনলিপি সমেত এই বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য দলিল হিসাবেই থাকবে আমাদের প্রজন্মের কাছে।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:২১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×