###ইদ
ইদ কাটিল। বানান বিশেষজ্ঞগণও প্রস্থান করিলেন।
ইদ উপলক্ষে ফেসবুকে বানান বিশেষজ্ঞদের আবির্ভাব ঘটিয়াছিল। তাহারা সহসা বাংলা একাডেমির বাংলা বানানের নিয়মের বিরোধী হইয়া উঠিল।
দুঃখের বিষয় তাহারা জানিলও না যে 'ইদ' বানানটি বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের পরিমার্জিত সংস্করণ(২০০০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত) এ ছিল।[এর চেয়ে পুরাতন সংস্করণ আমার কাছে নেই। কাজেই তা নিয়ে আমি মন্তব্য করব না।]
কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের স্বরবর্ণ অংশের ভূমিকার(যা লিখেছিলেন মুহম্মদ এনামুল হক, লেখা হয়েছিল ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে) একটি অংশে বলা হইয়াছে, "... আর একটি প্রধান সংস্কার হইল- তদ্ভব, দেশী(দেশি), বিদেশী(বিদেশি) শব্দের বেলায় মনুষ্যেতর জীব, বস্তু, গুণ, ভাব ও কর্ম-বাচক শব্দের এবং দ্বিরাবৃত্ত শব্দের শেষে কেবল 'ই' হবে-'ঈ' হবে না, যেমন কাঠবিড়ালি... অথচ এখনও আমরা বাড়ী, গাড়ী,... প্রভৃতির শেষে 'ঈ'-কার দেদার ব্যবহার করিয়া চলিয়াছি।"
... কাজেই বলা চলে 'ইদ' শব্দটি বাংলা একাডেমির অভিধানে অনেক আগেই ছিল। আমরা যদি জীবনে একবারও বাংলা একাডেমির অভিধান না খুলি, তবে অহেতুক পাণ্ডিত্য দেখাই কেন?
আর যাহারা সহসা আরবি বিশেষজ্ঞ হইয়াছিলেন, তাহাদিগকে বলি- আরবিতে এক আলিফ, তিন আলিফ এবং চার আলিফ টান রহিয়াছে। আমার জানামতে বাংলায় এমন কোনো প্রতীক(বর্ণ) নেই যা তিন আলিফ এবং চার আলিফ টান বর্ণনা করে। এমনকি আমার বিশ্বাস খোদ IPA(International Phonetic Alphabet) তেও তিন আলিফ এবং চার আলিফ টান নেই।
আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তারিক মনজুর স্যার 'ই'-এর IPA সমতুল লিখেন 'i' এবং প্রশ্ন করেন 'ঈ' এর IPA সমতুল কী হবে? আমি তখন উত্তর দিয়েছিলাম 'i:' হবে। যারা IPA সম্পর্কে অবগত, তারা অবশ্যই জানেন ':' এর ন্যায় প্রতীকটি কী বোঝায়। এটি মূলত পূর্বের ধ্বনিটিকে দীর্ঘায়িত করে। তখন তারিক মনজুর স্যার বলেছিলেন 'ঈ' এর IPA 'i'-ই হবে। কেননা বাংলায় আমরা দীর্ঘ উচ্চারণ করি না।
কেউ কেউ বাংলা একাডেমিকে ব্যঙ্গ করে 'বাংলা আকাদেমি' লিখেছেন। তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া উত্তম- 'বাংলা আকাদেমি' পশ্চিমবঙ্গের।[বি. দ্র. : বাংলা একাডেমি এবং বাংলা আকাদেমি যে দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান যারা বাংলা বানানের নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন, তা উত্তর দিয়ে একদা এই অধম 'বানান বীর' হয়েছিল।]
আর যারা 'ইদ' বানানে বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র খুঁজে পান, তাদেরকে বলি ফেসবুকে যে ধর্ম নিয়ে লিখছেন, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা কিন্তু বিধর্মী(ইহুদি)। www এর আবিষ্কারক ছিলেন টিম বার্নার্স লি ও সার্ন(CERN)। CERN যা নিয়ে গবেষণা করে তা অনেকক্ষেত্রেই ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী। সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের ধর্মীয় বিষয় লিখছি এমন এক জায়গায় যার আবিষ্কারকেরা ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজে ব্যস্ত!!!
ফেসবুক লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






