somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেসি কি আর কোন বিশ্বকাপে খেলবেন না ?

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ফুটবল গ্রেট ব্রাজিলের পেলে প্রথমে অস্বীকৃতি জানিয়েও পরে নিজের শেষ বিশ্বকাপ (১৯৭০) খেলেন ৩০ বছর বয়সে। আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা নিজের শেষ বিশ্বকাপ (১৯৯৪) খেলেন ৩৩ বছর বয়সে। গত দেড় দশকের মধ্যে দলের মারদাঙ্গা স্ট্রাইকার-উইঙ্গাররা আরও দ্রুত অবসরে যাচ্ছেন অথবা বয়সের ভারে বাদ পড়ছেন। যেমন ব্রাজিলের ‘দ্য ফেনোমেনন’ রোনালদো ২৯ বছর বয়সে নিজের শেষ বিশ্বকাপ (২০০৬) খেলেন, তার স্বদেশী রিভালদো ৩০ বছর বয়সে খেলেন শেষ বিশ্বকাপ (২০০২), একই দলের রিকার্দো কাকা ২৮ বছর বয়সে (২০১০ বিশ্বকাপ), রোনালদিনহো ২৬ বছর বয়সে (২০০৬ বিশ্বকাপ), ফ্রান্সের জিনেদিন জিদানে ৩৩ বছর বয়সে (২০০৬ বিশ্বকাপ), আর্জেন্টিনার জুয়ান রিকুয়েলমে ২৭ বছর বয়সে (২০০৬ বিশ্বকাপ) এবং জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা ৩৭ বছর বয়সে খেলেছেন (২০১৪) নিজের সর্বশেষ বিশ্বকাপ। আর্জেন্টাইন বিস্ময়বালক লিওনেল মেসি ২৭ বছর বয়সে তার তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলেছেন। ২০১৮ বিশ্বকাপে মেসির বয়স হবে প্রায় ৩১ বছর। বয়সের ভার কাটিয়ে মেসি কি খেলবেন পরবর্তী বিশ্বকাপ, ব্রাজিলে অধরা বিশ্বকাপটা কি ছুঁয়ে দিতে পারবেন রাশিয়ায়...?

শৈশবে যখন দুর্দান্ত রকমের সব ড্রিবলিংয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে জালে বল জড়িয়ে উদযাপন করতেন, তখন ক্লাবের তত্ত্বাবধায়ক কিংবা মাঠের দর্শকরা চোখ কপালে তুলে, ভ্রু কুঁচকে ভাবতেন, কে এ! দেখতে ‘মানবশিশু’, কিন্তু ফুটবলীয় কারিকুরি ‘দেবশিশু’র মতো। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিস্ময়ের মাত্রা বাড়াতেই থাকেন সেই ‘মানবরূপী’ ‘দেবশিশু’। একদা আর্জেন্টিনার নিউওয়েল’স ওল্ড বয়েজ ক্লাবের সে ‘মানবশিশু’রূপী ‘দেবশিশু’কে নিজেদের শিবিরে ভিড়িয়ে ফেলে সৌভাগ্যবান স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা।



তারপরের গল্প- গল্প নয় রূপকথার গল্প- সবার জানা। মানুষ দিয়ে সম্ভব এমন সব কীর্তি গড়েছেন ওই ক্ষুদে জাদুকর! তার জাদুকরি কারিকুরি এতো বেশি বিস্ময়কর ছিল যে, স্যার আলেক্স ফার্গুসনের মতো লিজেন্ড ফুটবল কোচরাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘একে থামানো অসম্ভব, এরকম ক্ষ্যাপাটে ফুটবলার পুরো কোচিং জীবনে দেখিনি’। কোনো কোনো ফুটবল লিজেন্ড বা গুরু আরও অবাক হয়ে বলেছেন, ‘এ বিস্ময়বালক ভিনগ্রহ থেকে আসা কোনো দেবশিশু’!

ক্লাব মাতাতে থাকা বিস্ময়বালক এর মধ্যে জন্মভূমি আর্জেন্টিনার হয়েও গড়তে থাকেন অসাধারণ সব কীর্তি। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ী ম্যারাডোনার ফুটবল থেকে অবসরের পর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জেতাটা যখন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছিল, তখন বিস্ময়বালকের আবির্ভাবের পর অনেকে ‘ম্যারাডোনা’র ক্লোন মনে করতে থাকেন তাকে। বাম পায়ের বিস্ময়কর সব জাদুতে সেই ধারণাই যেন জোরালো করে যাচ্ছিলেন ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ, ২০০৭ সালের কোপা আমেরিকা, ২০০৮ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক, ২০১০ সালের বিশ্বকাপ এবং ২০১১ সালের কোপা আমেরিকা খেলা ক্ষুদে জাদুকর।



জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সেই বিস্ময়বালক (৯৩ ম্যাচে ৪২ গোল করে) অনেক আগেই ম্যারাডোনাকে (৯১ ম্যাচে ৩৭ গোল) ছাড়িয়ে গেলেও দুয়োধ্বনিও উঠতে থাকে পরিণত হয়ে ওঠা জাদুকর কেবল ক্লাবের জন্যই ‘ভিনগ্রহী’, দেশের জন্য ‘সাধারণ মানুষ’।

জাদুকর সেসব শোনেন, কিন্তু উত্তর দেন না, কেবল ‘মাঠে জবাব’ দেওয়ার অপেক্ষায় থাকেন।

কিন্তু সমালোচকদের মতো মাঠও বৈরিতা দেখাতে থাকে। সেই বৈরী আচরণ দেখেছিলেন ২০০৬ সালের জার্মানি বিশ্বকাপে। সেবার অবশ্য ততোটা পরিণত ছিলেন না, কোয়ার্টার ফাইনালে সাইড বেঞ্চে বসেই বিশ্বকাপ থেকে দলের বিদায়ের (স্বাগতিকদের বিপক্ষে) দৃশ্য দেখেছেন।



২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি নজরে ছিলেন তিনি। গোল না পেলেও আড়ালি নৈপুণ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত দলকে টেনে আনেন। তবে এবারও সেই জার্মান দেওয়ালে চাপা তার দল। আর্জেন্টিনাকে সেরা আটের লড়াইয়ে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে জার্মানি। সেবারের ব্যর্থতার পর অবশ্য ক্ষুদে জাদুকর আশ্বাস দেন, ‘আমি আবার ফিরবো, ফিরবো আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে’। তার আশ্বাসে ফের আশায় বুক বাঁধে আর্জেন্টিনা।

এবারের বিশ্বকাপের ‍আয়োজক প্রতিবেশী ব্রাজিল বলে আর্জেন্টাইনদের প্রত্যাশার মাত্রা আরও বেশি বেড়ে যায়। বিশেষত দলের নেতৃত্বে সেই জাদুকরের মতো ফুটবলার রয়েছেন বলে তাদের প্রত্যাশা ছিল, অন্তত এবার ছিয়াশি পরবর্তী সময়ের শিরোপা খরা কাটাতে পারবেন প্রিয় ফুটবলাররা।

দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্রুপ পর্ব-নকআউট পর্ব থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্ত অনেকটা নিজেই টেনে এনেছেন দলকে। এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই জাদুকরের দুর্দান্ত ফর্ম এ ‍আসরকে ‘তার’ বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছিল।



আর্জেন্টাইনদের পাশাপাশি ফুটবলের অনেক রথি-মহারথিও কল্পনায় বিস্ময়বালকের হাতেই বিশ্বকাপ দেখতে পাচ্ছিলেন।

পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলে দলকে ফাইনালের মহারণে নিয়ে আসা জাদুকরের বাম পায়ের জাদুতেই আর্জেন্টিনা তৃতীয় শিরোপা জিততে যাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছিল।

কিন্তু পারলেন না, গত রোববারের দুঃস্বপ্নের রাতে নিজের ‘ভিনগ্রহী’ ড্রিবলিংয়ে মাতিয়ে পারলেন না দেশকে আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে দিতে, সমালোচকদের কড়া জবাব দিতে। পারলেন না দেশবাসীকে শিরোপা উপহার দিয়ে ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যেতে। {চার বিশ্বকাপে (১৯৮২, ৮৬, ৯০, ৯৪) ২১ ম্যাচ খেলা ম্যারাডোনা ৮ গোল ও ৮ অ্যাস্টিস্টে দলকে জিতিয়েছেন ছিয়াশির বিশ্বকাপ এবং নব্বইয়ে পৌঁছে দেন ফাইনালে। অপর দিকে, তিন বিশ্বকাপে (২০০৬, ১০, ১৪) ১৫ ম্যাচ খেলা ক্ষুদে জাদুকর ৫ গোল এবং ৩ অ্যাসিস্ট করেও দেশকে একবারের জন্য বিশ্বকাপ জেতাতে পারেননি।}



ফাইনাল শেষে মাঠ ত্যাগ করলেন পরাজিত সেনাপতির মতো। ২০১০ বিশ্বকাপ শেষে ‘আবার ফিরবেন’ আশ্বাস দিলেও এবার আর এমন কোনো কথা বললেন না! ক্ষুদে জাদুকর ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠে নামার ব্যাপারে আর কোনো আশার বাণী শোনালেন না! তাহলে?

বাস্তবতা বলছে, হয়তো আর ফিরছেনই না বিস্ময়বালক!

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, গত দুই দশকের লিজেন্ড উইঙ্গার-স্ট্রাইকারদের অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা ত্রিশ বছরের খানিক আগে-পিছে। তাহলে ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন জন্মগ্রহণ করা ক্ষুদে জাদুকরের বয়স ২০১৮ সালের জুনে কতো দাঁড়াচ্ছে? প্রায় ৩১ বছর!



হরমোনজনিত জটিলতায় ভোগা বিস্ময়বালককে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের আশ্বাস দিয়েই ক্লাবে ভিড়িয়েছিল বার্সেলোনা। সেই শারীরিক জটিলতার ছাপ সাতাশেই স্পষ্ট হতে শুরু করেছে আর্জেন্টাইন মহাতারকার। ফাইনালে স্লায়ুচাপে বমিই করে ফেলেছিলেন। এর আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘তিনি গা বাঁচিয়ে খেলেন’; সমর্থকরা তো আর জানে না, জন্মগতভাবেই খানিকটা দুর্বলতা রয়েছে তার।

চার বছর পর বয়স আরও বাড়লে শারীরিক জটিলতাও কি বার্সার ক্ষুদে জাদুকরকে চেপে ধরবে না? এতোসব ভেবেই কি বিস্ময়বালক ২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের মতো এবার আর বলেননি, ‘আমি ফিরবো’!



বিস্ময়বালক যদি আর পরের বিশ্বকাপে না খেলতে পারেন তবে আর্জেন্টিনার কী হবে? হয়তো নতুন ম্যারাডোনা অথবা নতুন কোনো বিস্ময়বালকের অপেক্ষায় থাকবে, হয়তো ‘কেউ’ আসবে, অথবা ‘না’!

কিন্তু মহাকাল? মহাকাল কি প্রকৃতির ওপর আক্ষেপ প্রকাশ করে যাবে না, জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালে ‍অনেক সুযোগ থাকার পরও ‘লিওনেল মেসি’ নামে সেই বিস্ময়বালককে তার বুকে ঠাঁই করার একটি সুযোগও দেওয়া হয়নি বলে...!
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×