![]()
প্রথমেই সবাইকে ঈদের ১৩তম দিনের শুভেচ্ছা
ঈদ শেষ সেই কবেই, তারপরও ঈদ নিয়ে লিখতে বসলাম আজ। টিভি চ্যানেল গুলো ঈদের আট-দশ দিন পরও ঈদের অনুষ্ঠান দেখাতে পারলে আমি পোস্ট দিতে পারবো না কেন?
০১ সেলিব্রেটি সমাজ
আমার ঈদ গুলো হয় খুবই সাদামাটা। সকাল বেলা বাবার সাথে নামাজ পড়ে মোড়ের দোকানে বসে চা-বিড়ি খেয়েই কাটিয়ে দিই দুপুর পর্যন্ত। তো এরকমই বসে ছিলাম লাকী ভাইয়ের মিষ্টি পানের দোকানে, হাতে গোল্ডলিফ মুখে শাহী মিষ্টি পান! হঠাৎ এক ইঁচড়ে পাকা ছোট ভাই এসে সালাম করে সালামী চেয়ে বসলো। অযথাই ১০০টা টাকা জলে গেল! এর মধেই সে মহা উৎসাহে বললো,
: ভাই, খবর কি? আপনাকে তো খুঁজেই পাওয়া যায় না! থাকেন কৈ!
: থাকি কৈ মানে?
: কেন? ফেইসবুকে? কত মানুষ দেখি, আপনাকে তো দেখাই যায় না!
: আমি আসলে অসামাজিক প্রাণীতো, তাই সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কম যাই।
: কি যে বলেন না ভাই! আমি তো ফেইসবুকে সব সেলিব্রেটিদের সাথে ওঠা-বসা করি। ওদের স্ট্যাটাস ছাড়া লাইক/কমেন্ট করিই না!
: ওরা তোর স্ট্যাটাসে লাইক/কমেন্ট দেয়?
: আরে নাহ্! ওরা দিবে কেন? ওরা তো সেলিব্রেটি! অবশ্য আমার বন্ধুরা দেয়।
: তাহলে তোরও উচিত তোর বন্ধুদের স্ট্যাটাসে লাইক/কমেন্ট দেওয়া!
: ধুর্! তাই হয় নাকি! ওরা তো সব মদন!
: তাহলে মদনদেরকে ফ্রেন্ডলিস্টে রেখেছিস কেন? আনফ্রেন্ড করে ফেল!
: আনফ্রেন্ড করলে সমস্যা!
: কেন?
: আমার ফ্রেন্ডলিস্ট ফাঁকা হয়ে যাবে!
: কেন? তোর সেলিব্রেটি সমাজ?
: আরে....আমি তো ওদের ফলোয়ার! ওরা কি এত সহজে আমার মতো পাবলিকের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করবে!
: ও আচ্ছা! এতক্ষণে বুঝলাম তুইও একটা মদন! যা ভাগ ব্যাটা!
০২ মাঝ খানে সিগারেটের ফাও প্যাচাল
দুপুরের দিকে বাসায় যেয়ে দেখি একগাদা গেস্ট। তো তাদেরকে সময় দিতে দিতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেল টেরই পাইনি! বাসা একটু ফাঁকা হতে বারান্দায় যেয়ে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলাম, কিন্তু লাইটারটা খুজে পাচ্ছিলাম না! ছোট বোনকে রান্না ঘর থেকে ম্যাচ আনতে বললাম। তো সে কিছুক্ষণ পর ম্যাচটা হাতে দিয়ে বললো,
: ভাইয়া, সিগারেট খাও কেন? এটা তো খারাপ!
: হুম, জানি।
: তাহলে ছেড়ে দাও!
: ছেড়ে দিয়েছিলাম তো দুপুর বেলা! তুই আমাকে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন সিগারেট খেতে দেখেছিস?
: না, তা দেখিনি। কিন্তু এখন খাচ্ছো কেন?
: তুই জানিস, প্রতিবছর ধূমপানের কারনে শত শত মানুষ মরে যাচ্ছে!
[এই কথা শুনে বোন মুখ ঝামটা দিয়ে বললো]
: তুমি আসলেই একটা মাগুর!
০৩ ঈদে মাগুরের চিড়িয়াখানা দর্শন
ঈদের পর দিন বিকালে বউ, মেয়ে আর ছোট বোনকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি রাজশাহী শহীদ কামরুজ্জামান চিড়িয়াখানায়। মজার ব্যাপার হলো আমার বাবাও মহা আনন্দে নাতনীর হাত ধরে আমাদের সাথে রওনা হলেন! চিড়িয়াখানা অনেক দিন পর চকচকে করা হয়েছে। পশুপাখিদের থাকার নতুন নতুন ঘর, সাজানো গোছানো পরিবেশ। অন্যান্য পশুপাখি সেরকম না থাকলেও কোন এক অদ্ভূত কারনে বানরের কোন অভাব নাই! তবে বানর গুলো কেমন যেন মুখ চিমসে বসে আছে! আমার বউ মুখে একগাল হাসি নিয়ে বললো,
: দেখছো, তোমার আত্মীয়-স্বজনরা কেমন মন খারাপ করে বসে আছে?
: হুম, সেটা তো দেখছিই। তবে বুঝে পাচ্ছি না ঈদের সময় আমার শ্বশুরবাড়ীর আত্মীয়-স্বজন এই খাঁচায় কি করছে!
এই কথা বলার পর আমি আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকার রিস্ক নিলাম না। সোজা রওনা দিলাম গাধার খাঁচার দিকে। যেয়ে দেখি আমার বোন আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে আর ২টা গাধা সমানে চিৎকার করে যাচ্ছে! আমি বোনকে বললাম,
: ওরে ওখানে কি করছিস? সরে আয়, সরে আয়! তোকে খাঁচার বাইরে দেখে ওরা প্রতিবাদ করছে!!
: কেন?
: আরে বাবা, গাধা হয়েও তুই দিব্যি খাঁচার বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিস এটা দেখে ওদের হিংসা হবে না!
এরপর গেলাম বনের রাজা সিংহের খাঁচার দিকে। সিংহ দেখে প্রথমে চিনতেই পারছিলাম না ওটা বিড়াল না সিংহ! না খেয়ে, অসুখে পুরাই কাহিল অবস্থা! তো আমার মেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
: বাবা, ওটা সিংগ?
: না বাবা, ওটা বিড়াল।
[এই কথা শুনে আমার বাবা ক্ষেপে গিয়ে বললেন]
: ফাইজলামীর একটা সীমা আছে! নিজে তো কিছুই ঠিক মতো শিখিসনি আবার এখন মেয়েটাকেও উল্টা-পাল্টা শেখাচ্ছিস! কবে বড় হবি তুই??
নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে "কবে বড় হবো" এটা ভাবতে ভাবতে রওনা হলাম বাসার উদ্দেশ্যে। বাসায় এসে দেখি মা মন খারাপ করে বসে আছে! ঘটনা কি জিজ্ঞেস করতেই বললো,
: তোরা সবাই মিলে চিড়িয়াখানা গেলি আমাকে নিয়ে গেলি না!
: তুমি যেয়ে কি করতে? তোমার কি আর বয়স আছে!
[জবাব শুনে মা রেগে-মেগে বললো]
: হ্যাঁ, আমার তো বয়স শেষ হয়ে গেছে! আর তোর বাবা কচি খোকা! আর কয়েকদিন পর তোর মেয়ের সাথে স্কুলে ভর্তি করে দিস!
যাই হোক, বাসায় আসার সময় মায়ের অতি পচ্ছন্দনীয় থাই সুপ এনেছিলাম। সেটা দিয়ে শেষ পর্যন্ত মায়ের অভিমান ভাঙানো গেছে এতেই খুশি।
এবারের ঈদটা বেশ আনন্দেই কাটলো, আশা করি আপনাদেরও আনন্দময় সময় কেটেছে। সবাইকে বিগত ঈদের বিলম্ব শুভেচ্ছা এবং আগামী ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




