somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উদাসীর কিছু উত্তর আর কিছু সাইকিক প্রমান-২: উল্টা পাল্টা কথা কইলে লোকে পাগল বলে!

২৫ শে মে, ২০০৯ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম অংশ

প্রথম পর্বে আমরা দুটো ব্যাপার দেখেছি। ব্যাপার দুটো থেকে আমি বেশ সুনির্দিস্ট সিদ্ধান্তে আসি।
১) যা দেখি সব কিছুই আপেক্ষিক। এমন নয় যে আমি পরম সত্যটাই দেখি, আমি যেটা দেখি সেটা আমার মস্তিস্কে বহু বছরে ধারনকৃত উপাত্ত থেকে গৃহিত সিদ্ধান্তের ফলাফল
২) মস্তিস্কের নিউরণ গুলো নির্দিস্ট একটা সংকেতে চলতে পছন্দ করে এবং ইচ্ছে করলেই এটাকে প্রভাবিত করে ইচ্ছে মতো চালিত করা যায় তার স্নায়ুতান্ত্রিক কার্যক্রমকে।

কিন্তু এ দুটো সিদ্ধান্ত থেকে আমি কোনো ডেফিনিট উত্তর পাই নি। আমি উত্তর খুজতে থাকি সেই ক্লাস সেভেন থেকে। প্রশ্নটা এমন ভাবে আমাকে আন্দোলিত করেছিলো আমি টানা এক মাস আমার চন্ঞ্চলতা ভুলে মাঠে বসে থাকতাম উদাস মনে। আকাশে চেয়ে থাকতাম, খুজতে চাইতাম নীলে সাদা কালোর বাইরে দেখা যায় কি না অপার্থিব কোনো রং। মনে পরে একবার চোখ দিয়ে পানি বইছিলো কোনো এক বিকেলে। মাথাটায় যত সব আজে বাজে চিন্তায় প্রচন্ড হতাশ ছিলাম। এমন সময় পাশে এসে বসলো একটি মেয়ে, শ্যামলা গড়নের কিন্তু খুব সুন্দর। বললো," কি হয়েছে তোমার?" আমি না তাকিয়েই বললাম,"কিছু না, কিছু রং খুজে পাচ্ছি না।" মেয়েটা একটু হেসে বললো," গোল্লাছুট খেলবে, আমাদের দলে একজন কম।"
: কিভাবে খেলে এটা? আমি তো খেলতে পারি না।
: খুব সোজা, একবার দেখলেই পারবে।
ও হাত টা ধরে নিয়ে গেলো মাঠের এক কোণায়। অনুভব করলাম এই প্রথম খুব অপরিচিত সুন্দর একটা মেয়ে আমার হাত ধরেছে। দেখলাম ওখানে সবাই মেয়ে। আমিই একা ছেলে, একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে। খেললাম, হেরে গেলো আমার দল। আমি বার বার ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম বলে সবাই আমাকে ছুয়ে যাচ্ছিলো, আর আমার জন্য আমার দল হারছিলো। আমি তখনই উত্তর জেনে যাই আমার প্রশ্নের কিন্তু তখনও আমি শিওর ছিলাম না আমার উত্তর সঠিক ছিলো কি না, তখন এটাও জানতাম না এই মেয়েটির নাম রিপা আর এর জন্যই আমার জীবনের পরবর্তী ১০ টি বছর এলোমেলো হয়ে যাবে।

আসেন কিছু কেস স্টাডি করি:

কেস ১:

সাইকোলজিতে একটা রোগ আছে এপিলেপ্সি। বলা হয় এটা নাকি ধর্মযাজকদের রোগ। একটা সাধারন উদাহরন দেই (অসাধারন উদাহরন দিতে গেলে পরে মার খেতে হবে আমার) আফ্রিকায় যদি কারো ঝোকের মাথায় উল্টাপাল্টা কথা বলা লোক পায় তাহলে বলা হয় তার উপর পূর্ব পুরুষের আত্না ভর করেছে। তখন সে আবোল তাবোল কিছু বলতে থাকে যেগুলোকে তার সহযোগীরা ক্লু হিসেবে ধরে নেয়। তখন সে হয়ে যায় তাদের ধর্মযাজক বা ওহী প্রদানকারী কেস্ট বিস্টু কেউ, নেশায় মত্ত কেউ।

আমাদের দেশেও এরকম রোগীর সংখ্যা পাওয়া যাবে। দেখা যাবে সুস্হ সবল একজন মানুষ হঠাৎ কাপাকাপি শুরু করছে, উল্টাপাল্টা বকা শুরু করছে। কেউ কেউ বলে ভূতের আছড়, কেউ কেউ বলে বা পায়ের বুড়া আঙ্গুল নাকের পয়েন্টে এক হয়ে গেছে বলে আত্না বের হয়ে আসতে চাইছে।
আসলেই কি তাই? এ রোগটা হচ্ছে মাথার নিউরনের মধ্যে ইলেক্ট্রিক সিগন্যালের আদান প্রদানে ধারাবাহিক ভাবে অস্বাভাবিকতা শুরু হলে এরকম উদ্ভট আচার আচরণ শুরু হয়ে যায়। এর চিকিৎসা আছে, হিপনোটিক, লোকাল এ্যানেসথেশিয়ার মাধ্যমে ছোট্ট একটা সিজার অথবা নির্দিস্ট মানের মেডিকেশন। কাজ হয় তবে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অপেক্ষাকৃত বেশী দেখা যায় অনুন্নত দেশে এবং দরিদ্রতম দেশে এ রোগের হার সবচেয়ে বেশী।
আপনার আশে পাশে কেউ যদি এমন থাকে তাহলে দয়া করে তাকে পীর দরবেশ ঝাড় ফুক না দিয়ে উপযুক্ত মেডিকেশন আর চিকিৎসার ব্যাবস্হা করুন না হলে মৃত্যুও ঘটে যেতে পারে অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারনে!

কেস ২:

একটা পিচ্চি মেয়ে মার্থা, হঠাৎ শোনা গেলো সে নাকি আয়নায় ঢুকে যেতে পারে। আয়নায় ঢুকে বেশ কয়েকদিন থাকা কোনো ব্যাপার না। মেয়েটিকে পরীক্ষা করে দেখা হলো, জিজ্ঞেস করলে সব আধ্যাত্ববাদ নিয়ে কথা বলায় চারিদিকে তার নাম ছড়িয়ে পড়লো। মেয়েটি নাকি অন্যদের প্রভাবিত করতে পারতো। আর তাই বাড়তে থাকলো তার ভক্তদের সংখ্যা তার উপর রচিত হলো গার্ল ইন দ্যা মিরর নামের একটা হিট বই। এবিসি চ্যানেলে প্রচারিত হলো তার উপর এক ঘন্টার অনুষ্ঠান। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো পাপ কি?
সে বললো: ঈশ্বরের অন্ধকার রূপ।

তার কয়েক বছর পর একটা বই বের হলো মার্থা ডিসাইট। এখানে বলা হলো পুরা ঘটনাই ফ্রড।

এর বেশী কিছু জানা যায়নি, কারন তার কিছুদিন পর মেয়েটির হদিস কেউ পায়নি। এমন কি খুজে পায়নি তার কোনো দেহ। তার রূম খুজে দেখা হলো তার আয়নাটা কাপড়ে ঢাকা আর মার্থার মা কিছুদিন পর শেষ দেখতে পান আয়নায় তাকে বিদায় জানাচ্ছে। হাইপার ডিল্যুশন বা স্কিজোফ্রোনিয়া? উত্তর নাই।

কেস ৩:

ইউরি গেলার নামের এক ইসরাইলি ভদ্রলোক আছেন যিনি নিজেকে সাইকিক বলে পরিচয় দেন। তিনি নাকি চামচের দিকে তাকিয়ে বাকা করে ফেলতেন, আবার কারো চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনের কথা সব বলে দিতে পারতেন। শুধু তাই না তিনি ভবিষ্যত দেখতে পারেন, মানুষকে বাধ্য করতেন তার মতো চিন্তা করার। তাকে নিয়ে অনেক গবেষনা হয়, এবং এখনও তাকে নিয়ে অনেক গবেষনা চলছে। কেউ সদুত্তর দিতে পারেনি। স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ল্যাবে হাইফাই সব ইনস্ট্রুমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়েও কোনো পদার্থবিদ এর কারন খুজে পাননি, শুধু কুৎসা রটানো ছাড়া!
বিখ্যাত সমালোচক জেমস রান্ডি অবশ্য তাকে ভুল প্রমান করতে দুটো বইও লিখে ফেলেছেন কিন্তু এতে তাকে কিছুটা বিপর্যস্ত করলেও মিথ্যা প্রমান করার মতো শক্ত যুক্তি খাড়া করাতে পারেন নি।

কেমন লাগে বলেনতো কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে বলে দিলো আপনার ইমেইল এ্যাড্রেসের পাসওয়ার্ড!

কেস ৪:

নস্ত্রাদামুসের কথা কে না জানি, তাকে কি পরিচয় করিয়ে দেবার দরকার আছে? তার লেখা দ্যা প্রেফেসিস নিয়ে এখনও কথা হয়। কারন এখনও অনেক ঘটনা তার হেয়ালী কথার সাথে হুবহু মিলে যায়। কিভাবে সে ১৫ শতকে বসে একবিংশ শতকের গুলো লিখে গেছেন হেয়ালী ভাবে খোদা মালুম। হতে পারে সে বার বার ঝড়ে বক মেরেছেন।

কেস ৫:

কখনও কি আপনার এমন হয়েছে, মনে করুন একটা কফিশপে বসে আছেন। কফির ধোয়া উড়ছে, আর ধোয়ার ওপারে বসে আছে আপনার বান্ধবী। সে হঠাৎ হাতে হাত রাখলো, বললো চোখে চোখ তাকিয়ে," ভালোবাসি।"
হঠাৎ আপনি চমকে উঠলেন, কারন ঠিক এ ঘটনাই আপনি দেখেছেন স্বপ্নে খুব ছোটবেলায়, ঠিক এই মেয়েটিকেই ঠিক এই জায়গায়। স্বপ্নেও সে এ কথাটাই বলেছিলো, আপনি চমকেছেন এটাও দেখেছেন?

একটু ভাবুন, কখনো এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে যেটা আপনি স্বপ্নে দেখে ফেলেছেন ৬-৭ বছর আগে?

একটু ভাবুন, আমার পরবর্তী অংশের জন্য এটা খুব দরকার!



চলবে.....
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০০৯ সকাল ১০:১৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×