somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"জয় চেরনোবগ"

২১ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইউরোপের অনেক রেস্টুরেন্টের বারে ফানবোর্ডে লেখা থাকে "ড্রিংক বিয়ার সেভ ওয়াটার"। এই লেখাটা প্রথমবার দেখে বেশ হাসি আসলেও বারটেন্ডার যখন বললো আফ্রিকার অনেক দেশে বিশুদ্ধ পানির দাম বীয়ারের চেয়ে বেশী, তখন হতাশা পেয়ে বসে। যেকোনো পরিমানের এলকোহলই হোক, যকৃত কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সেসব দেশে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য হলেও সবাইকে বীয়ার পান করে বাঁচতে হবে। তারা কৈশোর থেকেই এলকাহলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আমরা যেখানে কেটো ডায়েটের নামে একটা বীয়ার পান করলে ৭ টা পাউরুটির সমান কিলোক্যালোরী গ্রহন করবো এই ভয়ে তার ধারে কাছে যাই না, সেখানে কালো দরিদ্র মানুষগুলো নিজের জীবন বাচাতে বীয়ার তথা এলকোহলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।

একটা সময় মনে হতো আর কতটা ক্ষতি হলে মনে হবে অনেক হয়েছে, এখন আমাদের থামা উচিত। সমাজ থেকে সকল কলুষিত চিন্তা ভাবনা, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। শুনেছি বিশ্বের ৮০ টি শহরে যুবক যুবতীরা মিছিল করে রাস্তা বন্ধ করছে শুধু একটা দাবী নিয়ে, পৃথিবীর জলবায়ু রক্ষা করতে হবে। অথচ নেতাদের কথাবার্তা শুনলে ছোটবেলার আজব একটা চিন্তার কথা মনে পড়ে যায়।

তখন বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই লম্বা ছুটিতে নানু বাসা চলে যেতাম। সকাল বেলা উঠেই সুবর্ন বাসে উঠে ঢাকার দিকে যাত্রা করা, দৌলতদিয়ার ঘাটে লঞ্চ ধরা, পদ্মার থৈ থৈ ঢেউয়ে ভয় লাগলেও একটা রোমাঞ্চ অনুভব করতাম নানু বাড়ি যাচ্ছি। আমি আবার সাতার জানতাম না। পদ্মার প্রমত্তা ঢেউ আমার মনে ভয় জাগাতো, ভাবতাম এটাই বুঝি শেষ যাত্রা আমার। কিন্তু দেখো! তারপরও দিব্যি বেচে আছি। পদ্মা এখন দেখতে কুমার নদীর মতো মজা কোনো খাল। সে যাই হোউক, ঢাকায় এলে নানুকে দেখতাম বিশাল একটা এলুমিনিয়ামের ট্রেতে চালের খুঁত বাছতেন। মামারা ছিলো যৌথ পরিবার, তার ওপর দু তিনজন বিয়ে করে সবাই একসাথেই থাকতো, সে এক বিশাল হুলস্থুল ব্যাপার স্যাপার। নানু কাজের মেয়েদের নিয়ে দিনের একটা বড় অংশ কাটাতেন চাল বাছতে বাছতে। ছুটির সময় সব কাজিনরা এলে বাসা পুরো গরম হয়ে যেতো। নানু সব পিচকি পাচকাদের ধরে চাল বাছতে বসিয়ে দিতেন আর আমরা স্বানন্দে পুরো ড্রাম ভরে দিতাম।

চাল বাছতে বাছতে মনে হতো এই যে একটা দুটো তিনটি খুত বেছে নিলাম এতে কি চালের পরিমান কমবে? এত গুলো চালের মধ্যে দুটো চাল নিলেও তাতে কোনো পার্থক্য হবে না। এমনকি আরো দুটি, আরো দুটি, প্রগমনিক ধারায় চলতে থাকলেও সে চাল ফুরোবে না। নানুকে বুঝিয়ে না বলতে পারলেও তিনি ঠিকই বুঝে নিয়ে একটা লাইন বললেন,"কোন সে ব্যাপারী গুনতে পারে এক থাল সুপারী?" রাতের বেলা আকাশের তারা গুনতে গিয়েও একই সমস্যায় পড়লাম। ঠিক যেখান থেকে তারা গুনতে শুরু করেছি, আমি সেখানেই আটকে থাকি। কোথা থেকে কোন তারা কোথা দিয়ে উকি দিচ্ছে, বোঝা মুস্কিল। তারা গোনাটা একটা গোলক ধাঁধাঁ। তবু আমার দুঃসাহস থামেনি। জ্ঞান অর্জন করলাম, বুঝতে শিখলাম কিভাবে অসংখ্য জিনিসকে মাপতে হয়, তাকে কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ব নেতারা নাছোড়বান্দা। তারা ছোটবেলার সেই চাল গোনার হিসাবেই পড়ে আছে। মনে করে এতটুকু কার্বন নিঃসরনে কিছু হবে না। হলেও প্রকৃতি ঠিকই সামলে নেবে। অথবা যদি হয়ও তাহলে সেটা অবশ্যম্ভাবী। ঠেকানো যাবে না। তারা যেনো ছোটবেলার সেই ভ্রান্ত দর্শনে আটকে আছে।

স্লাভিক গড চেরনোবগ ছিলেন একজন অপদেবতা। সে অভিশাপ দেবার পয়মন্ত ছিলো, হাস্যজ্বল উৎসবে মৃত্যুর ছায়া ডেকে এনে বিষাদের বন্যা বইয়ে দিতে তার মুন্সিয়ানা তুলনাহীন। ওডিনের গুংনীরের মতো তার ছিলো কাঠের তৈরী বিশাল হাতল ওয়ালা হাতুড়ী। উৎসর্গের গরুর মাথায় এক আঘাতে ফাটিয়ে হত্যার প্রিয় অস্ত্র ছিলো সেই হাতূড়ি, যেনো তরমুজের মতো ফেটে চূরমার। আমাদের নেতারা হলো সেই চেরনোবগের ছায়া। তাদের কলমের খোঁচা গ্রীমনিরের গুংনীড়।

আমরা সেই উৎসর্গের গরু, বলা যায় বলির পাঠা। যদিও প্রহেলিকার জগতে বাস আমরা নিজেদেরকে মহান হুবালের বিশ্বাস ধারন করা সাহসী ছায়াসঙ্গী ভাবতে ভালোবাসি অথচ এ সবই মায়া, মিথ্যা। আমাদের বিশ্বাসের মোহরে তারা বেঁচে থাকে, ঈশ্বর হয়ে আমাদের ভাগ্য নিয়ে হাস্যকর খেলা খেলে।

আমাদের দরকার ছিলো একজন প্রমেথিউস অথবা ফ্রান্সের আধুনা "ভলতেয়ার" পল সাঁত্রে, যারা আমাদের চোখের পর্দা সরিয়ে ইউটোপিয়ার জগতকে ভেঙ্গে দেবেন! যদিও ভয় হয়, আমাদের বিপ্লব হাতছাড়া হয়ে মধ্যযুগীয় হুবালের হন্তারক ডাকাতের অনুসারীদের হাতে না চলে যায়! আজ তাই ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়ার লাখোকোটি মানুষ নীরবে কাঁদছে, সে কস্ট গুলো আসলেই কাউকে স্পর্শ করে না, না হুবাল, না আজুরা মেহতা, না ওডিন অথবা আখেনাতেনের সেই আদি পরাক্রমশালী "আতেন"!

হ্যাপী ব্লগিং!

আন্দোলনের যারা ডাক দিয়েছেন

১৬ বছরের এক সুইডিশ পিচকির আন্দোলন


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৪:১৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×