কোনকিছুকে যত বেশি খণ্ডে বিভক্ত করা যায়, অতিস্বাভাবিকভাবেই তার প্রাবল্য ততো বেশি হ্রাস পায়। প্রতিনিয়ত আমরা-আমি,আপনি, সে, ও, আমলা, রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, শ্রমিক, শিক্ষক, কামলা, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার, দোকানদার যেভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে খণ্ডিত করছি আমাদের চিন্তা, চেতনা, সততা আর আদর্শকে তাতে এখনও যে আমাদের স্বদেশ টিকে আছে ভাবতেও অবাক লাগে। যেখানে সেখানে যেভাবে সেভাবে গড়ে উঠছে ‘লীগ’ আর ‘দল’-এর নানা শাখা-প্রশাখা। রাস্তায় বের হলেই চোখের প্রায় পুরোটা দখল করে নেয় ‘ট্রাক শ্রমিক লীগ’, ‘দোকান মালিক জাতীয়তাবাদী দল’-এধরনের অগুন্তি সাইনবোর্ডে। প্রায় প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাল, নীল, সবুজ রঙের আড়ালে ‘সরকার-সমর্থিত’ আর ‘বিরোধীদল-সমর্থিত’ প্যানেলের শিক্ষকদের মাঝে যে রেষারেষি, কোন্দল তা মাঝে মাঝে তাদের ‘প্রভু’দলগুলোর উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিকদের কীর্তিকলাপকে হার মানায়। এভাবে আমাদের দেশের প্রতিটা পেশায় কমপক্ষে ২/৩ টা বিভাগ- দল আর লীগ, কমপক্ষে। যখন লীগ ক্ষমতায় তখন দল, আর যখন দল ক্ষমতায় তখন লীগ নিষ্ক্রিয় হয়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে। এভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রে, প্রতিটা পেশায় যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিষ্ক্রিয়তা তা একসাথে মিলে সৃষ্টি করেছে আমাদের জাতিগত নিষ্ক্রিয়তা।
এভাবে সংকুচিত হ’তে হ’তে দেশের যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও প্রতিনিয়ত ক্ষয়ে যাচ্ছে সাদামাটা ডালভাত খাওয়া আমজনতার নির্বোধ প্ররোচনায়। আমরাই পাঁচ বছর পর পর আমাদের ‘বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ্গণ’র অঙ্গীকার-বন্যায় প্লাবিত হই, আর নৌকা আর শিসের দুই পাল্লায় ভ’রে দিই আমাদের আদর্শ আর গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার! একবার যে পাল্লা ভারি হয়, পরেরবার আসতে না আসতেই তার তলানিতে ফুটো হ’য়ে যায়, আর আমরা আমাদের আদর্শকে সঁপে দিই অন্য পাল্লায়। এভাবেই পর্যায়ক্রমে আমরা, নিতান্ত সাদাসিধে আমজনতারাই, দেশকে লিজ দিই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে-মেরে ধরে কেটে গোজামিল দিয়ে, লুটপাট করে দেশকে লাঞ্ছিত করতে!
এভাবেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমরা, বিশাল লালসবুজের স্বাধীনতাকে আর প্রিয় জন্মভূমিকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র খণ্ডিত-বিখণ্ডিত করে চলেছি অবিরাম, অক্লান্তভাবে! কী বোকা আমরা!