প্যাকেট দুধে ক্ষতিকারক অ্যালড্রিন। গতকাল দুপুরের দেশের প্রথম সারির একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রধান শিরনাম।খবরটা আমি দেখে মোটেও অবাক হইনি। কেন জানেন? এটা আসলে অনেক দেরিতেই ধরা পরল।আরও অনেক আগেই এটা আমাদের বের করা উচিৎ ছিল। শিরনামটি থেকে প্রতীয়মান যে আমরা জাতি হিসেবে কতটা অসচেতন ও মূর্খ। ইকোলজিকাল ফুড কি আমরা এখন অনেকেই ধারনাও করতে পারিনা অথচ ইউরোপে এখন লোকজন শপিং এ গেলে আগে খুজে বের করার চেষ্টা করে তিনি যে খাবারটা কিনেছেন তা ইকলজিকালি সেফ কিনা? এমনকি অধিক মূল্য দিয়ে হলেও। মানছি আমাদের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আমাদের সেটি করার প্রধান অন্তরায়। তাই বলে কি আমরা এইটুকু বিবেক দিয়ে কাজ করতে পারিনা। যে অ্যালড্রিন সারা পৃথিবীতে এমনকি বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ হয়েছে আর বহু বছর আগে, সেই অ্যালড্রিন কি করে আমাদের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে? অ্যালড্রিন এমন এক বিষ যার সাইন্টিফিক নাম 1,2,3,4,10,10-hexachloro-6,7-epoxy-1,4,4α,5,6,7,8,8α-octahydro-1,4-endo,exo-5,8-dimethanonaphthalene। অরগানো ক্লোরনেটেড গ্রুপের এই কীটনাশকটি ১৯৮৫ সালের কীটনাশক আইনে নিষিদ্ধ করা সত্তেও কিছু আসাধু ব্যবসায়ীর কারনে এখন এটি গ্রামে/ গঞ্জে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও জেনেভা সম্মেলনে এটি ব্যবহার মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য।কারন এটি মানব ও প্রানিকুলের মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি সহ পরিবেশের বাস্তুসংস্থানের উপর মারাত্মক ক্ষতির কারন। ২-৪ ডি গ্রুপের এই কীটনাশক অতি দ্রুত কাজ করে বলে আমাদের দেশের অশিক্ষিত কৃষকরা খুব সহজেই এটি ব্যবহার করে। কিন্তু এর রেসিডিউয়াল ইফেক্ট মারাত্মক।
চিত্রঃ যেভাবে এই কীটনাশক এর ভয়াবহতা ছড়ায়।(উইকিপিডিয়া)
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে এই কীটনাশকের ক্রীয়া প্রায় ২০-২২ বছর অব্দি থাকে। যা পরবর্তীতে প্রয়োগকৃত স্থানের আশেপাশের এলাকা, গাছপালা, ঘাস, এমনকি পুকুর বা নদীর পানিতে মিশে এর প্রভাব বিস্তার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুলশান আরার সাম্প্রতিক প্রকাশিত (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)একটি অভিসন্দর্ভে দেখা গেছে, বাংলাদেশের রংপুরের তারাগঞ্জের পানিতে এই অর্গানো ক্লোরিনেটেড গ্রুপের উপস্থিতি। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে বিগত এক দশকে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ২১% যা ৯০ দশকের তুলনায় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি হারে। অথচ উন্নত বিশ্বে কীটনাশকের কথা মাথায়ই আনেনা। তাদের দেশের কৃষির সিংহভাগ ব্যয় হয় শুধু গবেষণার কাজে, কিভাবে পরিবেশ বান্ধব (বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল অ্যাকশন) তৈরি করা যায়। অথচ আমাদের দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র মাস্টার্স ছাত্রছাত্রীদের গবেষণার জন্য কোন বাজেট নেই কিংবা থাকেলেও তার বাস্তব প্রয়োগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়য় মঞ্জুরি কমিশন এই ব্যপারে উদাসীন। আর সরোকারের সহযোগিতার কথা নাইবা বললাম। যততুকু কাজ হচ্ছে কিছু বেসরকারি দাতা সংস্থা ও এন,জি,ও। কিন্তু আমরা আমাদের নিজেদের মরন নিজেরাই ডেকে আনছি। ভয়াল এই পরিবেশহানির হাত থেকে বাঁচার প্রধান হাতিয়ার সামাজিক দায়িত্ববোধ/মূল্যবোধ ও পরিবেশের বিরূপতার সচেতনতা সৃষ্টি করা। ইকোলজি/ পরিবেশ বান্ধবতা বিষয়ে বিষদ ধারনা দিয়ে দক্ষ কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে সামগ্রিক কৃষক পর্যায়ে এর ভয়াবহতার বার্তা পৌঁছে দেয়া। এখনই সময় রুখে দেয়ার। আসুন নিজে সচেতন হই অন্যকে সচেতন করি।
ফয়সাল কবির।
লেখকঃ পি,এইচ,ডি শিক্ষার্থী (ইকোলজিকাল সাইন্স)।
ডায়েগু, কোরিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:১৪