somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প: ভূতের গলি

০১ লা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাত এগারোটা। শুক্রবার। রাস্তা একদম খালি। গা ছমছম করছে। ছোটবেলা থেকেই আমি একটু ভীতু প্রকৃতির। ভীতু বলাটা অবশ্য সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি খুটখাট করতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু ভূতের বেলায় সমস্যাটা একটু জটিল। ভয়ংকর ভূতের একটা গল্প শুনেছিলাম ছোটবেলায়, তারপর থেকেই ভয়টা ঢুকে যায়। এখনো মাঝে মাঝে গা ছমছম করে। আর এই গা ছমছম করা সাহস নিয়ে আমি থাকি ভূতের গলিতে। শুনেছি এখানে নাকি ভূত থাকতো কোনো এক সময় ইত্যাদি ইত্যাদি। গল্পের তো অভাব নেই। এগুলো মনে হয় আসলেই গল্প, সত্য নয়। কিন্তু তারপরও একলা হলেই গা ছমছম করে।

খুব ইচ্ছে নিয়ে যে ভূতের গলিতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা নয়। ইস্টার্ণপ্লাজায় অফিস। অফিসের কাছাকাছি হাতিরপুল, কাঁঠাল বাগান কিংবা দিলুরোড কোথাও মেসবাড়ি খালি পেলাম না। অবশেষে সদ্য ছেড়ে আসা ভার্সিটির এক বন্ধুর মাধ্যমে লতায়পাতায় প্যাঁচানো আরেক বন্ধুর বাসার ছয়তলার একটা রুম খালি পেলাম। সেটাও আবার চড়া ভাড়ায়। ভাড়াও সমস্যা না, সমস্যা হলো এলাকাটা ভূতের গলি। কখন যে একটা অঘটন ঘটে যায়! কিন্তু এই সমস্যার কথা ২৬/২৭ বছরের একজন মানুষের মুখে মানায় না। কিছু একটা বললেই সবাই হাসাহাসি শুরু করবে। হয়তো ভয় দেখানোও শুরু করবে। যদিও এরই মধ্যে একজন ভয় দেখিয়ে ফেলেছে। ভূতের ভয় অবশ্য নয়। বলছিল, ‘তুমি তো রাত বিরাতে বাসায় ফেরো একটু সাবধানে থেকো। এলাকায় ইদানিং ছিনতাই হচ্ছে।’

সেদিন ‘আমি কি ডরাই সখী ভিখারীর রাঘবে’ জাতীয় একটা ভাব নিলেও মনে মনে একটু ভয়ও পেয়েছিলাম। তবে ওরাই বা আমাকে ধরে পাবেটা কি? পাঁচ টাকা বেতনের চাকরি করি। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। ওদিকে টুম্পাটাও আমার অপেক্ষায় বিয়ে না করে বসে আছে। তবে হ্যাঁ, পাঁচ-ছয় বছরের পুরানো একটা নোকিয়া-১১০০ মোবাইল ফোন পাবে, সেটার কিপ্যাডের সব লেখা সাদা হয়ে গেছে। কাজেই ওদের নিয়ে আসলেই ভয় নেই। ভয় হলো তেনাদের নিয়ে। অন্ধকারে তেনাদের নাম নাকি মুখে নিতে নেই।

বেশি দেরি করে ফিরতেও চাই না। একটু রাত হলেই এলাকাটা ফাঁকা হয়ে যায়। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়েই আজ একটু দেরি হয়ে গেল। ফলাফল জনমানব শূণ্য পরিবেশ। অবশ্য বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি। সামনে একটা তিন রাস্তার মোড়। ওটা পেরিয়ে শ’খানেক গজ দূরেই বাসা। কাংখিত বাসা।

মোড়ের সোডিয়াম লাইটটা জ্বলছে না। নষ্ট মনে হয়। সিটি কর্পোরেশনের কি এত দেখার টাইম আছে। অগত্যা মোড়টায় খানিকটা অন্ধকার। ভূতুড়ে একটা ব্যাপার। কোথায় যেন একটা সমস্যা আছে মনে হচ্ছে। হুম, মোড়ের একপাশে একটা ডাস্টবিন। ওখানে একটা খোঁড়া কুকুর শুয়ে বসে থাকে। কুকুরটা নেই। অদ্ভূত! কুকুরটাতো কোথাও যায় না। ওখানেই পড়ে থাকে। আজ গেল কোথায়?

তিন রাস্তার মিলনস্থলে পা দেওয়া মাত্রই ঘটল একটা অঘটন। লোডশেডিং। এতক্ষন আবছা অন্ধকার ছিল, এখন পুরাই অন্ধকার। গা ছমছমানিটা বেড়ে যাচ্ছে আশংকাজনক হারে। পা দু’টো অসম্ভব রকমের ভারী হয়ে গেল। ভয়াবহ নিস্তব্ধতা। আকাশের চাঁদ-তারারাও উধাও। আজ অমাবশ্যা কি না কে জানে। মনে হচ্ছে, অন্ধকার একটা গ্রহে আমি একা।

হঠাৎ দূরে একটা কুকুর বিকট স্বরে ডেকে উঠলো। চমকে উঠলাম। তবে খানিকটা সাহস সঞ্চিত হলো। যাক, আমি অন্তত একা না। কিন্তু এই সাহসে হবে না। আরো সাহস দরকার। ছোটবেলায় মা বলতেন, ‘ভয় পেলে আইতুল করসি তিনবার পড়ে বুকে ফুঁ দিবি, কেউ কিছু করতে পারবে না।’

এখন তিনবার আইতুল কুরসি পড়ে বুকে ফুঁ দিতে হবে। কিন্তু আইতুল কুরসি খুবই কঠিন একটা দোয়া, সহজেই মনে পড়ে না। তাছাড়া ভয় পেলে সবার আগে আইতুল কুরসিটাই ভুলে যাই। না, ভুলে গেলে চলবে না। মনে করতেই হবে। বেশি একটা চেষ্টা করতে হলো না। মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে যেতেই সাহস খানিকটা বেড়ে গেল। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূল উল্লাহ (সঃ)’ তিনবার পড়ে বুকে ফুঁ দিতেই সকল ভয় ডর গায়েব। এমন সময় দেখি চাঁদে খানিকটা আলো ফুটলো। ফুটলো মানে, এতক্ষণ হয়তো মেঘের আড়ালে ছিল, এখন বেড়িয়ে এসেছে। অনেক সাহস নিয়ে ডান পা’টা সামনের দিকে বাড়াতেই মনে হলো, ওটা তো আইতুল করসি না, কালেমা তৈয়্যবা ছিল। এখন?

দুপ করে সাহসটা কমে গেল। আবার গা ছমছমানী ভয়! কে-ম-নে এই পথ করিব পাড়? কিন্তু যেতে তো হবেই। সারারাত তো আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। বাড়ানো ডান পায়ের ওপর ভর দিয়ে সাহস করে এগোতে শুরু করলাম। চার-পাঁচ কদম এগোতেই ডাস্টবিনের ওপাশটায় কী যেন দেখলাম মনে হলো! কিছু একটা চকচক করে উঠলো। নাকি সাদা কিছু দেখলাম! আতংকে পা জোড়া কমে বরফ হয়ে গেল।

তারপরের ঘটনাগুলো এত তাড়াতাড়ি ঘটলো যে ঠিকঠাক বর্ণনা করতে পারবো না। হঠাৎ তেনারা এসে উপস্থিত। তিনজন। না, বড় মামারা নয়, ছোট মামারা। আমি তো বড় মামা ভেবে ‘ভূ-ভূ-ভূ-ভূত’ করে তোতলাতে শুরু করেছি। চিৎকার দেবার চেষ্টা করলাম কিন্তু লাভ হলো না। গোঙ্গানীর মতো আওয়াজ বের হচ্ছে। ততক্ষণে তেনারা এসে পড়লেন ভূতের মতোই। দশাসই তিনজন ছিনতাইকারী। তাদের হাতে বড় বড় তিনটে ছুড়ি চাঁদের আলোয় চকচক করে উঠলো।

ছবি: গুগল মামা।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫৬
২৪টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×