
বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্লগের কিছু ব্লগার, শীর্ষ নিউজের মতন বিতর্কিত অনলাইন-পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলোর মাঝে শুধুমাত্র ইসলামিক টেলিভিশন ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ এর সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস কে নিয়ে তোলপার করে ফেলছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি মুসলমানদের নবীজীকে নিয়ে কটাক্ষ করেছেন!! অনেকেই ব্যাঙ্গের মতন লাফাচ্ছেন, কিন্তু একবারের জন্যও মূল কাহিনী জানার চেষ্টা করছেন না।
মদন মোহন বাবু খুব একটা ধোয়া তুলসী পাতা না। তবে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আসছে সেগুলোও সঠিক না। তার কিছু দোষকে পুঁজি করে বিএনপি-জামায়াত-ইসলামী জোটের নোংড়া রাজনীতি চলছে। এর মূল টার্গেট মদন বাবু না, টার্গেট হল দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দাইয় ফেলা। আর এক্ষেত্রে তারা ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের ধর্মান্ধ মানুষকে এই ঢাল ব্যবহার করে কাবু করা খুবই সহজ!!
এবার আসি মূল ঘটনায়। বিএনপি ঢাকা শহরের বড় কিছু স্কুল নিয়ে একটা রাজনীতি করার চেষ্টায় ছিল। এর প্রথম স্তর ছিল - ছাত্রদের মাঝে এটা প্রচার করা যে ঐ স্কুলের নাম বদল করা হচ্ছে। এবং এর নাম হয়ে যাবে শেখ জামাল, শেখ কালাম, শেখ রাসেল কিংবা শেখ ফজিলাতুন্নেছার নামে। (এটা নিয়ে আমি আর কথা বাড়াচ্ছি না। তবে এগুলো আমি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। এটা নিয়ে বিশদ রিপোর্ট খুব শীঘ্রই তুলে ধরবো।) ধানমন্ডি স্কুলের কতিপয় ছাত্র যখন এই অপপ্রচারের মাধ্যমে বাকিদের উস্কে দেবার চেষ্টা করে, তখন এতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় মদন বাবু। তিনি ঐসব ছাত্রদের ডেকে তীব্রভাবে ভর্ৎসনা করেন। আর এখন মদন বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা মূলত এরাই।
তবে মদন বাবুর কিছু দোষ আছে। তিনি ছত্ররা দাঁড়ি রাখলে তাদের বকতেন। বলতেন, 'তোরা বাচ্চা মানুষ। তোদের দাঁড়ি রাখলে কেমন দেখায়। ক্লাসে ক্লিন শেইভ করে আসবি।' এছাড়াও তিনি অনেক কড়া লোক। ছাত্ররা সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি করলে (যেমন টিফিন টাইমের পরেও ক্লাশে না আসলে) বকতেন। এতে অনেক ছাত্রই তার বিরুদ্ধে ক্ষ্যাপা। তাদের ছাত্রদের উসকানো অনেক সহজ। মজার ব্যাপার হল কিছু শিক্ষকও এই রাজনীতির সাথে জড়িত। ওই স্কুলে শিক্ষকদের মাঝে নোংড়া গ্রুপিং আছে। এবং মদন বাবুও একই কাজ করেন। ঐ স্কুলে ছাত্রদের বৃত্তি কোচিং এর নামে ছাত্র প্রতি ১০০০-১২০০ তোলা হয়েছে। এই টাকার সিংহভাগই গিয়েছে মদনবাবুর গ্রুপে। তার গ্রুপে আরো আছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ আরো কিছু শিক্ষক। বাকি শিক্ষকেরা টাকার ভাগ ঠিক মত পাননি বলেই মদন বাবুর উপর চরম ক্ষ্যাপা।
গেল বছর ধানমন্ডি স্কুলে প্রথমবারের মতন সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়। প্রতিবছরই স্কুলের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আয়োজন করতে চাইলেই স্কুল কর্তৃপক্ষ করতে দিয়ে চায় নি। এক্ষেত্রে বাঁধা ছিলেন স্কুলেরই কিছু ধর্মীয় ভাবে গোঁড়া শিক্ষক। কিন্তু গতবার মদনবাবু বলেছেন যে যাই হোক না কেন উনি সনাতন ধর্মাবলম্বী জন্য সরস্বতী পূজার ব্যবস্থা করবেনই। এই নিয়ে স্কুলের একটা গ্রুপ উনার উপর চরম ক্ষ্যাপা!
সব শেষে আসি নবীজীকে কটাক্ষ করার ব্যাপার আসলো কোথা থেকে! মদন বাবু একটা সালিশীতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে একলোকের সাথে নানা কথা প্রসঙ্গে জানতে পারেন যে ঐ লোক দুটো বিয়ে করেছেন। তখন মদন বাবু বলেছেন একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে এটা কোন ভালো কাজ না। আর এক স্ত্রী থাকতে এটা তো একদমই ঠিক না। তখন ঐ লোক বলেন আমাদের নবীজী একাধিক বিয়ে করেছেন। আর ধর্মীয়ভাবে ৪ টা পর্যন্ত বিয়ে করা যায়। তাহলে কি নবীজী খারাপ করছেন? তখন মদন বাবু বলেছেন ঐ সময়ের কথা এখন টানলে তো চলবে না। তবে এখনকার সমাজে এরকম কাজ ভালো না। ঐ লোক এটাকে এখন বানিয়ে দিয়েছেন যে মদন বাবু নবীজীর সম্পর্কে কটুক্তি করেছেন!!
ঐলোকের এক পরিচিত ছেলেও মদনবাবুর স্কুলে পড়ে। তার মাধ্যমে এই কথা স্কুলেও চলে আসে। আগে থেকেই তৈরি হওয়া ক্ষোভিতরা নিজেদের মতন করে দুই আর দুই চার মিলিয়ে নিয়েছেন। এর মাঝে ইসলামী ঐকজোট সমর্থক এক শিক্ষক এবং জামায়েতে ইসলামী সমর্থক অভিভাবক এই ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট হন। এতে আন্দোলন বেগবান হয়। বেশ কিছু ছাত্র মদনবাবুর কক্ষ ভাংচুড় চালায়। মদন বাবুর বিরুদ্ধে কিছু ছাত্র ও অভিভাবক রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। তারা রাস্তা বন্দ করে দিলে শেরে বাংলা নগর থানার পুলিশ এসে তাদেরকে মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে সরিয়ে নেন। কাল মদন বাবু পুলিশ প্রোটেকশনে ছিলেন। শিক্ষা অধদপ্তরে কর্মকর্তারা এসে স্কুল পরিদর্শন করে গেছেন। ঘটনা সত্যতা কতটুকু তা যাচাই করা হচ্ছে।
তিলকে তাল বানিয়ে সরকার বিরোধী রাজনীতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনপি জোট। তারা এতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে ধর্মকে। তাদের এই রাজনীতি কতটা হিংস্র ও নোংড়া তার প্রমাণ এতে স্কুলের ছাত্রদেরকে ব্যবহার করা। তারা স্কুল ছাত্রদের আবেগ নিয়ে খেলছে! এর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে শীর্ষ নিউজ এবং 'ইসলামী টিভি' এর মত চ্যানেল!! আর সাথে রয়েছে 'আমার দেশ'!!
আপডেটঃ
মদনবাবু যে কথাগুলো বলেছেন বলে উনি স্বীকার করেছেন বলে কতিপয় পত্রিকা প্রচার করছে তাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গতকাল রাত পর্যন্ত শিক্ষা অদিদফতরের কর্মকর্তারাস ঐ স্কুলে মিটিং করেন। ঘটনা সত্যি হলে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী মদনবাবুকে তৎক্ষণাৎ সাসপেন্ড করা হত। তদন্ত এখনো চলছে। ছাত্র ও অভিভাবকদের আবেগের ব্যাপারে খেয়াল রেখে মদনবাবুকে সাময়িকভাবে পঞ্চগড়ের একটা স্কুলে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্যি হলে অবশ্যই তাকে সাসপেণ্ড করা হবে!!
এখন পর্যন্ত মদনবাবুর বিরুদ্ধে কোন প্রকার দাপ্তরিক প্রমাণ পাওয়া যায় নি। আর গত ২৬ জুলাই ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ এর প্রধান শিক্ষিকা শেরে বাংলা থানায় মদন বাবুর বিরুদ্ধে ডায়েরি করেন যে উনি নবীজীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন। এখন প্রশ্ন এসে যাচ্ছে যে, মদনবাবু যদি কোন কটূক্তি করে থাকেন তো সেক্ষত্রে তার বিরুদ্ধে কি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব?? যদিও ব্যাপারটা খুবই খারাপ হবে। আমার জানামতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের মতন কোন ব্লাসফেমি আইন নেই।
সর্বশেষ খবর হচ্ছে মদনবাবু নিখোঁজ। আর এটি বলেছেন শেরাবাংলা নগর থানার কর্মকর্তা। তবে কোনটা ঠিক??
১) উনি কোন কিছু করেন নি তবুও ভয়ে পালিয়েছেন??
২) উনি দোষী বলেই পালিয়েছেন??
৩) উনি কি জিহাদী জনতার জোশের শিকার হয়েছেন??
৪) নাকি পুলিশ তাকে প্রোটেকশন দিয়ে লুকিয়ে রেখে বলছেন যে উনি নিখোঁজ??
মুল পোস্টঃ দেবা ভাই এর ব্লগ http://www.amarblog.com/debavaibd/posts/134607

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


