somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য থ্রি ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এক)

'ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন অফ এনার্জি'র ক্লাস। পেছনে জানালার পাশে একটা সিটে বসে বসে ঝিমুচ্ছি। জানালা দিয়ে প্রকৃতির বিশুদ্ধ ঠান্ডা বাতাস এসে ঢুকছে। ঝিমুতে খারাপ লাগছে না !
অবশ্য না ঝিমিয়েও কিছু
করার নেই। কারেন্ট এক
জায়গা থেকে কন্ডাক্টরের মধ্য দিয়ে অন্য জায়গায় কিভাবে যায়- এই সহজ ব্যাপারটা এত কঠিন করে লেখা..... সব মাথার দু’হাত উপর
দিয়ে যায়। আরে ভাই,
কারেন্টের যেভাবে খুশি,
সেভাবে যাক না। যাচ্ছে তো সে, তাকে নিয়া এত
ঘাটাঘাটি করার করার
কি দরকার ?

অবশ্য সবাই যে আমার মতই গাধা- ব্যাপারটা ঠিক এমনও না। এই
তো একেবারের সামনের সারিতে ফারজানাকে দেখা যাচ্ছে। স্যারের প্রতিটি কথার সাথেই মাথা ঢুলাচ্ছে আর প্রয়োজনানুসারে নোট করে নিচ্ছে। এই মেয়েটাকে আমি যত দেখি তত অবাক হই। একটা মানুষ এতটা ট্যালেন্ট কিভাবে হতে পারে ? এই লাস্ট সেমিস্টারের কথা- আমি দুই সাবজেক্টে সাপ্লি দিয়ে টেনে টুনে কোনমতে ৩ তুলেছিলাম, সে জায়গায়
তার CGPA ছিল ৩.৯৭ ! ভাবা যায় ?

আমি অবশ্য এসব
নিয়ে ভাবিও না। CGPA নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নেই। কোন মতে পাস করে বেরুতে পারলেই হল। তাই স্যার যখন হিব্রু ভাষায় লেকচার দেন, তখন আমি জানালার পাশে বসে ঘুমাই !!

নাকি সাবজেক্টা আসলেই এতটা কঠিন না, শুধুমাত্র জয়নাল স্যার পড়াচ্ছে বলেই আমার কাছে এতটা কঠিন মনে হচ্ছে ? স্যারের সাথে আমার একদম বনে না।
প্রথম সেমিস্টারের ভাইবা ফাইনালে স্যার আমাকে বিশাল একটা বাঁশ দিয়েছিলেন। সেই থেকে স্যারের কোন কিছুই আমার ভাল লাগে না। এমনকি স্যার যদি আমাকে খাওয়ার কথাও বলেন, সেটাও আমার কাছে বিষের মত মনে হয় ! এজন্যই কি ব্যাপারগুলো আমার কাছে এতটা কঠিন মনে হচ্ছে ?

আচ্ছা, সাবজেক্টা যদি মাইশা পড়াত তাহলে কেমন হত ?
মাইশার কথা মনে পড়তেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল । এত সুন্দর করে কথা বলে মেয়েটা ! ও আশে পাশে থাকলে আমার কথা বলতেই ইচ্ছে করে না । সারাদিন শুধু ওর কথাই শুনতে ইচ্ছে করে !
কোন বিষয়ই ওর জন্য কঠিন নয় । সবকিছু এত সহজ করে বুঝিয়ে বলে ! মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হয়ে যাই- কিভাবে পারে মেয়েটা !?

ওকে অনেক পছন্দ করি আমি। মনে হয় খানিকটা ভালও বাসি । তবে ব্যাপারটা ও জানে না । ওকে কখনো জানতে দিতেও চাই না ।
কিছু কিছু জিনিস গোপন থাকাই ভাল ।

প্রাকৃতিক এয়ার কন্ডিশনের বিশুদ্ধ বাতাসে ঘুমে ঢুলু ঢুলু অবস্থা, হঠাৎ ঘাড়ের স্পাইনাল কর্ডে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলাম। ধীরে ধীরে সেটা সেরিব্রাম হয়ে কপালের দু’পাশে বিস্তার লাভ করল। ব্যাথাটা সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে, হাত-পা কাঁপছে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বুঝলাম আবার সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। চোখ দুটো খোলা রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এল। জ্ঞান হারাচ্ছি আমি। তলিয়ে যাচ্ছি অতলে...........

(দুই)

মাইশার সাথে আমার পরিচয়ের ব্যাপারটা খানিকটা অদ্ভুত ।
বন্ধু জিয়ার সাথে গিয়েছিলাম থিয়েটার ইনিস্টিটিউটে । সেবার ঢাকা থেকে একটা নাট্য দল এসেছিল । তাদের কাজগুলো নাকি অনেক ভাল । তাছাড়া ফ্রি ফ্রি টিকিট পাচ্ছি । নিজেরও তেমন কোন কাজ ছিল না । বাসায় বসে বসে অলস সময় কাটছিল । এজন্যই মঞ্চ নাটক দেখতে আসা ।

জিয়া গেছে টিকিট কালেক্ট করতে । আমি একা একা দাঁড়িয়ে আছি । এমন সময় একটি কিণ্নর কন্ঠ কানে এল-

- এই যে ভাইয়া, শুনছেন ?
- আমাকে বলছেন ?
- জি আপনাকেই বলছি । আপনার বয়স কি আঠারো প্লাস ?

একটু অবাক হয়ে বললাম- কেন বলুন তো ?

মেয়েটি যন্ত্রের মত বলে গেল- পাশে আমাদের একটা ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প চলছে । আপনার বয়স যদি আঠারোর বেশি হয় এবং আপনার পূর্ববর্তী রক্তদানের যদি চার মাস পার হয়ে থাকে তবে প্লিজ আমাদের সাথে কো-অপারেট করুন । আপনার দেয়া রক্তেই হয়ত কোন মুমুর্ষু রোগীর জীবন বাঁচবে ।

ভয়ে আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল । রক্ত দেব ? আমি ? মাথা খারাপ ? আমি বরাবরই ব্লাড ডোনেটের মত ফ্রি স্যোশাল সার্ভিসগুলোকে এড়িয়ে চলতে চাই । ইয়া মোটা একটা সুঁই ঢুকিয়ে শরীর থেকে এত্তগুলো রক্ত বের করে নেব- কোন মানে হয় এসবের ?

তাড়াতাড়ি মাথা নাড়িয়ে বললাম- না না আপু, আমার বয়স ১৮ হয়নি । আমার তো মাত্র ১৬ চলতেছে !
- সত্যি বলছেন ? কিন্তু আপনাকে দেখেতো আরেকটু বয়ষ্ক মনে হয় !
- না না, বিশ্বাস করেন আপু, আমি এইবার এস এস সি দিলাম । আম্মুর সাথে এখানে এসেছি । আম্মু একটু ওদিকে গেছে ।
- ও আচ্ছা, ঠিক আছে, ধন্যবাদ।

মেয়ে চলে যাচ্ছিল, কিন্তু ঠিক তখনই জিয়া এসে পড়ল ।
- হারামি তুই এখানে ? তোরে আমি পুরা এরিয়া খুঁজতেছি ! টিকিট পাইছি, চল।

আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম। দেখলাম সে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম । জিয়া ব্যাপারটা খেয়াল করল। মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল- কি ব্যাপার আপু ? কোন সমস্যা ?
- পাশে আমাদের একটা স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী চলছিল। আপনারা যদি একটু.......
- ওহ স্যরি আপু ! আমি গত সাপ্তাহেই আমার মামীর অপারেশনের সময় রক্ত দিলাম। এখনো দুই সাপ্তাহও হয়নি । আমি তো দিতে পারব না । আপনি বরং একে নিয়ে যান - জিয়া আমাকে দেখিয়ে দিল ।
- কিন্তু উনি তো বললেন উনার এখনো আঠারো বছর হয়নি !
- কি বললেন ? ১৮ হয় নি ?

জিয়া হা হা করে হেসে উঠল । বলল- জ্বি, ঠিকই বলেছেন। ওর বয়স তো আঠারো না, বিশ চলছে !!

আমি প্রমাদ গুনলাম। মনে মনে বললাম- হে ধরণী, দ্বিধা হও। এই জল্লাদ মেয়ের বকবকানি শুনার কোন ইচ্ছাই আমার নাই। কিন্তু ধরণী দ্বিধা হল না। তাই তার সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না ।

মেয়ে কটমট চোখে আমার দিকে তাকাল- কি ব্যাপার ? মিথ্যে বললেন কেন ?
- ইয়ে না মানে.......
- না মানে কি ?
- ইয়ে.... মানে... আমার সুঁই খুব ভয় লাগে ।
- ছি ! আপনি সামান্য একটা সুঁই কে ভয় পান ? নিজেকে পুরুষ বলতে লজ্জা করে না ?

ভয়ানক প্রশ্ন ! করে বললে সমস্যা, করে না বললে আরো বেশি সমস্যা ! তাই কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।

- কি ব্যাপার ? চুপ করে রইলেন কেন ? আপনি যে সামান্য সুঁইয়ের ভয়ে রক্ত
দিতে চাইছেন না, যদি এই রক্তের অভাবে একজন রোগী মারা যায়- তার দায়ভার টা কি আপনার কাঁধে পড়ে না ? আপনার বয়স কত বললেন ? বিশ ? তার মানে গত দুই বছরে আপনি কমপক্ষে ছয় বার রক্ত দিতে পারতেন। ছয়টা মানুষের জীবন বাঁচাতে পারতেন । ছয়টা মানুষের মৃত্যুর জন্য আপনি দায়ী- ব্যাপারটা কি আপনার মনে একটুও অনুশোচনার জন্ম দেয় না ?

মেয়েটার কথায় এবার সত্যি সত্যি খানিকটা ভয় পেলাম। ছয়টা মানুষের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী- বলে কি !!

মিনমিন করে বললাম- ইয়ে..... না মানে.....
- আমি কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না। আপনি আমাকে জাস্ট এটুকু বলুন আপনি আমার সাথে যাচ্চেন কি না ?

জিয়া পেছন থেকে ঠেলে দিয়ে বলল- যা, একটা ভাল কাজ করে আয়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম- চলুন.....

ব্লাড টেস্ট থেকে শুরু করে কালেকশান পর্যন্ত পুরো সময়টা আমি চোখমুখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে বসে ছিলাম। মাঝখানে অবশ্য এক বার সেই চঞ্চলা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- ব্যথা করবে না তো ?
সে দাঁত খিঁচিয়ে উত্তর দিয়েছিল- করলে করবে । সামান্য সুঁইয়ের আঘাতে আপনি মারা যাবেন না !

এরপর তো আর কোন কথা চলে না।
রক্তদানের ব্যাপারটা শেষ হবার পর খেয়াল করলাম- ব্যাপারটাকে যতটা ভয়ঙ্কর মনে করেছিলাম ঠিক ততটা ভয়ানক না। সামান্য একটু ব্যথা পাওয়া যায়, কিন্তু সেটা একটা পিঁপড়ার কামড়ের চেয়ে বেশী যন্ত্রনাদায়ক না । আর সুঁই গাঁথার পরপর রক্তের প্রথম টানে মাথাটা হালকা একটু ঘুরিয়ে উঠে । কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মাঝে সেটাও সহ্য হয়ে যায় ।
ইশ ! আগে যদি জানতাম ব্যাপারটা এত সহজ তাহলে ৬টা মানুষের মৃত্যুর দায় মাথায় বয়ে বেড়াতে হত না !!

রক্ত দিয়ে জিয়ার কাঁধে হাত রেখে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসছিলাম, ঠিক তখনই মেয়েটা আবার ডাকল-

- এই যে শুনুন.....
- জি, বলুন.....
- আপনার সেল নাম্বারটা দিয়ে যান ।
- কেন ?
- আপনার ব্লাড গ্রুপ হচ্ছে "ও নেগেটিভ" । খুব রেয়ার একটা গ্রুপ । এই গ্রুপের রক্ত সহজে পাওয়া যায় না । এজন্য আমরা এই গ্রুপধারী সবার নাম্বার কালেকশান করে রাখি, যাতে জরুরি প্রয়োজনে রক্ত পেতে তেমন অসুবিধা না হয় ।
- ঠিক আছে রাখুন।

নাম্বারটা দিলাম। বললাম- আপনারটাও দিন ।
- কেন ?
- বারে ! আমার যদি কখনো রক্তের দরকার হয়, তখন ?

মোক্ষম জবাব। সেও তার নাম্বারটা দিল । কিন্তু শাসিয়ে গেল- অপ্রয়োজনে ফোন দিলে খবর আছে ! নাম্বার সেভ করতে গিয়েই প্রথম জানলাম - চপলা, শৃঙ্খল, প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী, পরোপকারী, দরদী এই মেয়েটির নাম মাইশা !
মাইশার ফোন পেলাম সাপ্তাহ খানেক পর । অবাক হলাম। এত তাড়াতাড়ি আবার রক্ত দিতে হবে ! এমনিতে প্রথমবার রক্ত দেয়ার পর এখনো দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারিনি । এরই মাঝে এখন যদি আবার রক্ত চায় তাহালে তো আঁই মইচ্ছি !
ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করলাম ।

- হ্যালো.....
- নীল বলছেন ?
- জি বলছি।
- আমি মাইশা ।
- জি মাইশা, বলুন.....
- কাল বিকেলে ফ্রি আছেন ?
- ইয়ে..... আমি তো মাত্র এক সপ্তাহ আগেই রক্ত দিলাম ! এখনই আবার দিতে হবে ?
- আমি কি আপনাকে একবারও বলেছি যে রক্ত দেয়া লাগবে ?
- না, তা বলেন নি । কিন্তু ঐ দিন যে বলেছিলেন- শুধূমাত্র রক্তের দরকার পড়লেই ফোন দিবেন, অন্য কোন কারণে নয় !
- আপনার সাথে সুখ-দুঃখের গল্প করার জন্য ফোন দেই নি কিন্তু ! দরকারেই দিয়েছি ।
- ও আচ্ছা । জি বলুন কি দরকার ?
- আপনাকে বলেছিলাম না- আমাদের "ও নেগেটিভ" ব্লাডধারীদের একটা গ্রুফ আছে ?
- জ্বি, বলেছিলেন তো ।
- কাল বিকেলে শিল্পকলাতে ঐ গ্রুপটার একটা ছোটোখাটো গেট টুগেদার আছে । চলে আসবেন। আপনাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব ।
- ও আচ্ছা। ঠিক আছে, চেষ্টা করবো ।
- জ্বি না, শুধু চেষ্টা করলেই চলবে না । আসতেই হবে !

মাইশার বলার ভঙ্গিমা দেখে হেসে ফেললাম । বললাম- ঠিক আছে, আসবো।

পরদিন মাইশার সাথে অনেক কথা হল । একজন আরেকজনকে ধীরে ধীরে জানতে শুরু করলাম। জানা গেল- দুইজন একই ভার্সিটিতে পড়ি । ও আমার এক ব্যাচ জুনিয়র আর ডিপার্টমেন্ট আলাদা হবার কারণে আগে দেখা হয় নি ।

তবে ঐ দিনের পর থেকে দুইজনের প্রায়ই দেখা হতে লাগল । ক্যাম্পাসে কিংবা ক্যাম্পাসের বাইরে । মাঝে মাঝে একসাথে লাঞ্চ করা হত আমাদের । কখনো বা একসাথে রিক্সায় উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি, কখনো মুভি দেখতে যাওয়া । রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা গেঁজানো তো ছিলই !
পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার টায় বেশ মিল ছিল দুজনের। এজন্য দুজনের জমতও বেশ ।
ঝগড়াও অবশ্য হত মাঝে মাঝে । তবে সেটা আমার লেখা পড়া নিয়েই হত । মেয়েটার জ্বালায় দু-একটা সেমিস্টারে রেজাল্টও মোটামুটি ভাল করে ফেলেছিলাম !

চাইলে আমাদের সম্পর্কটা খুব সহজেই অন্যদিকে মোড় নিতে পারত । কিন্তু আমরা কেউই কেন জানি ব্যাপারটা ঠিক সেই ভাবে চাই নি ।
হয়ত সম্পর্কের নাম দেয়ার ব্যাপারে আমরা বিশ্বাসী ছিলাম না । হয়ত আমাদের সম্পর্কে নাম দেওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না ।

চলছে তো । যেভাবে চলছে সেভাবেই বা খারাপ কি ?

(তিন)

মাথাব্যথাটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। হাত-পা কাঁপছে, নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। জ্ঞান হারাচ্ছি আমি। মনে হচ্ছ অতলে হারিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ সব কিছু স্থির হয়ে গেল। নিজেকে আবিষ্কার করলাম চলন্ত ট্রেনে !

আমার মুখোমুখি সিটে ছোট্ট একটা পরিবারকে দেখা যাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী আর তাদের কিউট একটা বাচ্চা। বুঝা যাচ্ছে, খুব সুখী একটা পরিবার। বিপরীত পাশে দেখলাম কিছু মাঝ বয়সী আড্ডায় মেতেছে। সামনে দেখা যাচ্ছে কিছু তরুণ গীটার নিয়ে টুংটাং করছে আর বেসুরো গলায় চেঁছাচ্ছে। আর পেছনে বসা কিছু তরুণী আড়চোখে বারবার তাদের দিকে তাকাচ্ছে আর নিজেদের মাঝে ফিসফাস করছে । উপরের বাথে কয়েকজনকে দেখলাম গানের তালে তালে হাততালি দিচ্ছে। একেবারে পেছনের সিটে দেখলাম একজোড়া বুড়ো-বুড়ি। বোধ হয় আপন মনে তারুণ্যের এই উচ্ছ্বলতা দেখছে, আর তাদের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে করার চেষ্টা করছে।

আর আমি ? তেমন কিছু করার নেই দেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি । আপন মনে তর্জনিতে চাবির রিং ঘুরাচ্ছি ।

হঠাৎ সামনের দিক থেকে চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ ভেসে এল। কি হয়েছে সেটা দেখার জন্য উঠে দাঁড়াতেই প্রচন্ড এক ধাক্কায় সামনের সিটে উপড়ে পড়লাম । মনে হল কেউ একজন হঠাৎ করেই ট্রেনের চেইন ধরে হ্যাচকা টান দিয়েছে ! সোজা হয়ে দাঁড়াতেই আবার প্রচন্ড ধাক্কা। উপরের বাথের স্ট্রিল ফ্রেমে আমার মাথা ঠুকে গেছে। টের পেলাম কানের পাশ দিয়ে উষ্ণ রক্তের বয়ে চলা স্রোত । পুরো বগীতেই নারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মনে হচ্ছে পুরো ট্রেনটাই উল্টে গেছে । ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে লাগল। চেঁচামেচির শব্দও আর তেমন একটা শোনা যাচ্ছে না। বুঝলাম জ্ঞান হারাচ্ছি। কিংবা মারা যাচ্ছি।

সময় কতক্ষণ গেছে বলতে পারবো না। শূন্যে সময়ের হিসাব কেউ রাখে না। কয়েক মিনিটও হতে পারে আবার কয়েক যুগও হতে পারে। হঠাৎ মনে হলো কেউ যেন আমার নাম ধরে ডাকছে, বহু দূর থেকে ধীরে ধীরে ভেসে আসা সেই কন্ঠস্বর। একবারে, দুইবার, বারবার- কেউ যেন আকূল হয়ে ডাকছে আমাকে।

আস্তে আস্তে ঘোর কেটে যেতে লাগল। টের পেলাম কেউ যেন আমাকে ধরে ঝাঁকাচ্ছে । কন্ঠস্বরটা এখন আরো স্পষ্ট- নীল..... কি হয়েছে তোর ? উঠ না....প্লিজ উঠ..... নীল.....

ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালাম। মাইশা উদ্ধিগ্ন মুখে আমার দিকে ঝুঁকে আছে। আবার চোখ বন্ধ করলাম। মস্তিষ্ককে পুরোপুরি সচল হবার সুযোগ দেয়া দরকার। ব্যাপারটা আমার জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রত্যেকবারই মনে হয় এ যেন প্রথমবার এমনটা ঘটল।

আবার চোখ খুললাম। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম ক্লাসেই আছি। পুরো ক্লাসটা ফাঁকা। আমি একা পেছনের বেন্ঞ্চটায় বসে আছি। আমার সামনে মাইশা দাঁড়ানো। তার চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ। আমি ঘামতে শুরু করলাম ।

- কি হয়েছে তোর ?
- কিছু না !
- কিছু না মানে ? শরীর খারাপ ?
- না, ঠিক আছি।
- ঠিক আছি মানে কি ? ঠিক থাকলে এতক্ষণ ধরে ডাকছি, উঠছিস না কেন ? রাতে ঘুমাস নাই ?
- না, ঠিক তা না । একটু শরীর খারাপ লাগছিল। তাই ঘুমাচ্ছিলাম।
- কেউ এভাবে ঘুমায় ? আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।
- ভয় ! কেন ?
- ভাবছিলাম তুই মারা গেছিস !
- হা হা হা ! আমি এত তাড়াতাড়া মরব এটা তুই ভাবলি কি করে ? আমি মরলে তোরে সারা জীবন ধরে জ্বালাবে কে ?
- জ্বালাতে আসিস ! পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেব।
- ক্ষমতা আছে ?
- দেখতে চাস ?
- না না, থাক। আচ্ছা বল, তুই এখন আমার ডিপার্টমেন্টে কেন ?
- ক্লাস শেষ হবার পরও তোর কোন খবর নাই। এত্তগুলো ফোন দিলাম; পিক করছিস না। তাই তোকে খুঁজতে এলাম। এসে দেখি হারামি মরার মত ঘুমাচ্ছিস।
- ওহ ! স্যরি রে। ক্লাসে ঢোকার সময় ফোন সাইলেন্ট করেছিলাম। তাই বলতে পারি না।
- হুম !
- তা হঠাত্‍ এত জরুরি দরকার ?
- বাড়ি যাচ্ছি।
- বাড়ি যাচ্ছি মানে ?
- বাড়ি যাচ্ছি মানে হল বাড়ি যাচ্ছি। গ্রামের বাড়ি।
- কবে ? কখন ?
- আজ সন্ধ্যা ৬ টার ট্রেনে।
- বলা নেই, কওয়া নেই। হুট করে বাড়ি যাওয়া। কাহিনী কি ?
- জানি না। কিছুক্ষণ আগে আব্বা ফোন করে ইমারজেন্সি ভাবে বাড়ি যেতে বলল। কেন যাব সেসব কিছু বলে নাই। বলছে গেলেই দেখতে পাবো ।
- দেখিস, তোরে আবার ধরে বিয়ে না দিয়ে দেয় !
- ফাইজলামি করবি না।
- না না, ফাইজলামি না, সিরিয়াসলি। সিনেমাতে কিন্তু সবসময় এমনটাই ঘটে।
- শোন, লাইফটা সিনেমা না। তাই সিনেমার ব্যাপার-স্যাপার এখানে এপ্লাই করতে আসবি না । আর সত্যি যদি সেরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয় তাহলে মনে রাখবি আমিও কম যাই না । সিনেমাটিক উপায়েই বাসা থেকে পালিয়ে আসব।
- হা হা হা।
-হাসবি না। চল আমার সাথে।
- কোথায় ?
- একটু নিউমার্কেট যাব। কিছু কেনাকাটা বাকি।
- চল।

মাইশার কাছে ইচ্ছে করেই প্রকৃত ব্যাপারটা গোপন করে গেলাম। মাইশা হয়ত বিশ্বাস করবে না । এ পর্যন্ত যাদেরকে বলেছি তারা কেউই বিশ্বাস করে নি। সবাই আমাকে পাগল ভেবেছে। আমি চাইনা মাইশাও আমাকে পাগল ভাবতে শুরু করুক।

মাঝে মাঝে ভবিষ্যৎ দেখতে পারার অদ্ভুত ক্ষমতাটার কথা আমি প্রথম টের পাই ক্লাস ফাইভের শেষ পর্যায়ে। সম্ভবত ফাইনাল পরীক্ষার হলে ছিলাম তখন। হঠাত্‍ করেই চোখ মুখ ঝাপসা হয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল । নিজেকে আবিষ্কার করলাম বাসভর্তি যাত্রীদের মাঝে। পরীক্ষার হল থেকে কিভাবে হুট করে চলন্ত বাসে আসলাম সেটা তখন মাথায় আসে নি। সম্ভবত সেটা কোন এডুকেশন ট্যুরের বাস ছিল। বেশীর ভাগই ছিল ছাত্রছাত্রী, হুলস্থুল হৈ চৈ হচ্ছিল। পাহাড়ি পথ ধরে ছুটে চলা সেই বাসটি হঠাত্‍ করেই মোড় নিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেল ।

জ্ঞান ফিরে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম। ভেবেছিলাম আমাকে হয়ত খাদ থেকে উদ্ধার
করে হাসপাতালে আনা হয়েছে। পরে জানলাম কিসের খাদ ? আমি নাকি পরীক্ষার হলে পরীক্ষা দিতে দিতে হঠাৎ করেই বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলাম। তখন সবাই ধরাধরি করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে । আম্মুকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলতে গিয়েও চেপে যাই। হয়ত পুরা ব্যাপারটা কল্পনা ছিল। হুঁশ হারানোর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই ডাক্তার আঙ্কেল আব্বুকে বললেন- এপিলেপ্সির লক্ষণ। ছেলেকে দেখে রাখবেন। পুরো ব্যাপারটা ডাক্তার আঙ্কেল এপিলেপ্সি বলে চালিয়ে দিলেন, সহজ বাংলায় যেটাকে বলে মৃগী রোগ।

আমিও ব্যাপারটা মেনে নিয়েছালাম । কিন্তু বিপত্তি বাঁধল সেদিন রাত আটটার বাংলা সংবাদ দেখতে গিয়ে। বান্দারবানে শিক্ষা সফরে গিয়ে ৪২ জন ছাত্রছাত্রী সহ মোট নিহতের সংখ্যা ৫০ !!

এক্সিডেন্টের ব্যাপারটা ইনসিডেন্ট হতেই পারে। কিন্তু আমি বাসে যাদের হাসতে খেলতে দেখেছিলাম, নিহতের তালিকায় তাদেরও দেখা যাচ্ছে- এই ব্যাপারটা কিছুতেই ইনসিডেন্ট হতে পারে না।
পুরো বিষয়টা আম্মুকে খুলে বললাম। আম্মু অবাক চোখে আমার দিকে তাকালেন। আমাকে কিছু না বলে পুরো বিষয়টা আব্বুকে গিয়ে বললেন । আমার এপিলেপ্সি আছে শুনে আব্বুর যতটা না দুঃশ্চিন্তা হয়েছিল, এটা শুনে তিনি ডাবল ঘাবড়ে গেলেন ।
ছেলে মৃগী রোগী- এটা মানা যায় কিন্তু ছেলে পাগল- এটা মানা যে কোন বাবার পক্ষেই কষ্টসাধ্য।

আব্বু আমাকে নিয়ে আসলেন এক সায়াকিস্টের কাছে। সেখানে কিছু হাস্যকর প্রশ্নের সম্মুখীন হই। সায়েন্স ফিকশন বেশী পড়ি কিনা, হরর মুভি বেশী দেখি কিনা, স্বপ্নে আর কি কি দেখি ইত্যাদি ইত্যাদি। বয়স কম হলেও স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম ডাক্তার সাহেব আমাকে পাগল প্রমাণের চেষ্টা করছেন। সূক্ষ্ম একটা অপমানবোধ তৈরি হয় নিজের ভেতর। সিদ্ধান্ত নিই জীবনে আর যা কিছুই দেখি না কেন, সেটা কাউকে জানাব না । আমি যেটা দেখছি সেটা স্বাভাবিক না। আর মানুষ অস্বাভাবিকতাকে কখনো স্বীকার করতে চায় না।

এরপরও আরো অনেক সময় আরো অনেক কিছু দেখেছি। কখনো দেখেছি এয়ারক্রাপ্ট ক্রাশ করেছে, কখনো বা লঞ্চডুবি হয়েছে । দুয়েক জনকে বলার চেষ্টা করেছিলাম। তারা হয়ত হেসে উড়িয়ে দিয়েছে নয়তো ব্যাপরটা কো-ইনসিডেন্ট বলে মেনে নিয়েছে। কিন্তু আমার কথা কখনো বিশ্বাস করেনি। এজন্যই আজকের ব্যাপারটা মাইশার কাছে চেপে গেছি।

(চার)

মাইশাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে বাসায় আসতে আসতে সাড়ে চারটা বেজে যায় । ওর শফিং বলতে ছোট ভাইয়ের জন্য দুইটা সায়েন্স ফিকশনের বই আর ছোট বোনের জন্য একটা চাবির রিং নিয়েছে। এই কটা জিনিস কিনতে সে সাড়ে তিন ঘন্টা লাগিয়েছে। বই তো এক দোকান থেকেই কিনেছে। কিন্তু চাবির রিংটা কিনতে মিনিমাম ৫০ টা দোকান ঘুরেছে সে ! হুদাই ঘুরাঘুরি। মেয়েদের এসব মেয়েলি কাজ কারবার দেখলে রাগে গা জ্বলে ।

আমি অবশ্য চেয়েছিলাম ওকে ট্রেনে তুলে দিয়ে তারপর একেবারে বাসায় আসবো । কিন্তু শরীর খারাপ দেখে ও জোর করে আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দিল । বলল- ও নিজে নিজেই যেতে পারবে। আমিও আর আপত্তি করিনি। আসলেই খারাপ লাগছিল । একটা ঘুমের খুব দরকার ছিল আমার। এজন্য বাসায় চলে আসি ।

বাসায় এসে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে শাওয়ার নিই। তারপর বিছানায় শুয়ে শুয়ে পুরো ব্যাপারটা একবার ভাবতে চেষ্টা করি । আজ একটা ভয়াবহ এক্সিডেন্ট হবে। দুটো ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ।
আর কি দেখেছি সেটা ভাবতে থাকি।
ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে চাবির রিং এর কথা ।
আরেহ ! আমি তো সেই রিংটাই দেখেছিলাম যেটা আজ মাইশা নিয়েছে। তার মানে মাইশাদের ট্রেনটাই......

ওহ নো ! ব্যাপারটা কেন আগে মাথায় এল না ? যেভাবেই হোক মাইশাকে থামাতে হবে। কিন্তু কিভাবে ? ফোন দিতে গিয়ে দেখি নেটওয়ার্ক নেই। টিএনটি থেকেও মাইশার ফোনে সংযোগ পাচ্ছিলাম না। স্টেশনে যাওয়া ছাড়া ওকে থামানোর অন্য কোন উপায় নেই। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৫ টা। ৬ টায় ওর ট্রেন। তার মানে ও এতক্ষণে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে গেছে। আমাকে যেতে হলে সোজা স্টেশনেই যেতে হবে। স্টেশনের এত লোকের ভীড়ে ওকে কিভাবে খুঁজে পাবো- ব্যাপারটা এল না। অবশ্য এটা মাথায় আসলেও কোন লাভ হত না। অন্য কোন বিকল্প যে ছিল না ।

বাইক ছুটিয়ে রাস্তায় নেমে আসলাম । যতটা দ্রুত ছোটা সম্ভব ছুটছিলাম। কিন্তু কিছুদূর এসেই থমকে যেতে হল। রাস্তায় জ্যাম । এই সময় এই রাস্তায় জ্যাম থাকার কোন কারণ নেই । তবুও আজ জ্যাম। সম্ভবত প্রকৃতি চায় না পরিকল্পনায় আমি কোন হস্তক্ষেপ করি । তাই সে আজ প্রতি পদে পদে আমাকে বাঁধা দিচ্ছে । সে কিছুতেই আমাকে স্টেশনে পৌঁছাতে দেবে না । কিন্তু আমার তো থেমে যাওয়া চলবে না ।

অবশেষে অনেক ফাঁক ফোঁকর, অলি গলি পেরিয়ে আমি যখন স্টেশনে পৌঁছলাম তখন ঘড়ির কাঁটা ৬ টা পেরিয়ে গেছে। ট্রেন চলতে শুরু করেছে। এখনো ভাল স্পীড পায়নি। কিন্তু সিট প্লান জানা নেই বিধায় এই অবস্থায় মাইশাকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। চারপাশ থেকে প্রচন্ড হতাশা এসে ঘিরে ধরল আমাকে। প্রকৃতি আমাকে ভবিষ্যৎ দেখার
ক্ষমতা দিয়েছে, কিন্তু তা পরিবর্তনের ক্ষমতা দেয় নি।

খুব অসহায় বোধ করতে লাগলাম। সেই সাথে রাজ্যের ক্রোধ এসে জমা হল নিজের ভেতর । কেন জানি না, হঠাৎ মনে হল আমাকে ছুটে গিয়ে ট্রেনে উঠতে হবে। মাইশাকে একবার বুকে জড়িয়ে বলেতে হবে- দ্য থ্রি ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড- "আই লাভ ইউ" ।

শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে ছুটতে শুরু করলাম। ট্রেনের শেষ বগিটার হাতল ধরে খোলা দরজার উদ্দেশ্যে লাফ দিলাম । একটু মিস হলেই সোজা চাকার নিচে। কিন্তু আমি তো জানি একটু পরে কি ঘটতে যাচ্ছে। তাই ব্যাপারটা পাত্তা দিলাম না। আমার কাজ কারবার দেখে অনেকেই হৈ হৈ করে উঠল। কিন্তু আমার সে সবে কান দেয়ার সময় কই ? মাইশাকে যে খুঁজে বের করতে হবে ।

অনেকগুলো বগি পেরিয়ে আসার পর প্রথম দিকের একটাতে মাইশার দেখা পেলাম। ক্লান্তিতে আমার প্রাণ তখন ওষ্ঠাগত, শরীরে আর একবিন্দুও শক্তি নেই। আমার পুরো জীবনে হৃদমেশিনটার উপর এত প্রেসার বোধহয় আর কখনো পড়ে নি। ফুসফুসটা মনে হয় আজ ফেটেই যাবে। তবুও ঢুলতে ঢুলতে এগিয়ে গেলাম মাইশার দিকে।

আমাকে এই অবস্থায় দেখে মাইশা চরম হতবাক হয়েছে। ছুটে আসছিল আমার দিকে কিছু বলার জন্য। কিন্তু তাকে কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। তার আগেই তাকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম- আই লাভ ইউ ।

ঘটনার আকস্মিকতায় মাইশা হতভম্ব । পুরো কম্পার্টমেন্টের অবস্থাও ঠিক একই রকম । এমন দৃশ্য সিনেমায় খুবই স্বাভাবিক কিন্তু বাস্তবে বড়ই দূর্লভ।

মাইশার হতভম্ব ভাবটা কাটাতে তার কানে ফিসফিস করে আরেকবার বললাম- আই লাভ ইউ !
এবার কাজ হল, মাইশা সম্বিৎ ফিরে পেল। নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য অনেক কসরত্‍ করতে লাগল। কিন্তু আমার বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার ক্ষমতা স্রষ্টা তাকে দেন নি। অনেক হাঁসফাঁস করেও ছাড়াতে না পেরে শেষে সেও আমাকে জড়িয়ে ধরল।

এমন সময় প্রথম ধাক্কাটা পেলাম। ভয় পেয়ে মাইশা আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। পড়তে গিয়েও শেষ মূহুর্তে একটা রড ধরে নিজেদের সামলে নিলাম। কিন্তু মাইশাকে বাহু ছাড়া করলাম না ।

তারপর আসল বড় ধাক্কাটা। একসাথে ছিটকে পড়লাম দু’জন।
তারপর...................................

ভালবাসার মানুষটিকে বুকে জড়িয়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার সৌভাগ্য পৃথিবীতে কয় জনের হয়েছে ???

(পাঁচ)

ঘন্টাখানেক পরের ব্রেকিং নিউজ দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত পাঁচ শতাধিক। আহত সহস্রাধিক।
উদ্ধার কাজ এখনো অব্যাহত। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

- সমাপ্ত -

অপটপিক ১: রক্ত দিন, জীবন বাঁচান। নিজে রক্ত দিন, অন্যকেও রক্ত দানে উত্‍সাহিত করুন। বিশ্বাস করুন- রক্তদানে আপনার নিজের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু আপনার দেয়া রক্তে অন্য কারো প্রাণ বাঁচবে।

অপটপিক ২: গল্পটি ভাল লাগলে প্রশংসা করার দরকার নাই । তবে খারাপ লাগলে লেখককে ধুয়ে ফেলার অনুরোধ রইল ! যা মুখে আসবে বলে ফেলবেন । নু টেনশন !

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×