somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভংচং সায়েন্স ফিকশনঃ দ্য গ্রেটেস্ট কিস অফ দ্য ওয়ার্ল্ড !

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবিন বলল- যা নীল, বলে ফেল...
আকিব বলল- তোর মত ভীতুর ডিম আমি আর একটাও দেখি নাই । একটা মেয়েরে ভালবাসি বলার সাহস নাই, শালা আইছে আবার রোমিও হইতে...!
জাহিদ বলল- তুই জানস আমি এই পর্যন্ত কয়টা মেয়েরে 'আই লাভয়্যু' কইছি ? ৯৯ টারে !! আর তুই শালা একটা মাত্র মেয়েরে কইতে পারতেছস না । তোর তো বঙ্গোপসাগরে ডুবে মরা উচিত।
আমি আড়চোখে একবার সাগরের নীলাভ পানির দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বললাম- লঞ্চের ভিতর প্রপোজ করাটা কি ঠিক হবে ? নিচে নেমে বলি....
আকিব মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল- তুই শালা কোন দিনও ওরে এই কথা বলতে পারবি না । ঠিক আছে, বলিস না। আমি গিয়েই ওরে প্রপোজ করমু । তারপর তোর চোখের সামনে দিয়া যখন ভাগাই নিয়া যামু, তখন বুঝবি কত ধানে কত ভূষি !
 
আমি ওর দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙানোর চেষ্টা করি । কিন্তু আমাকে পাত্তা না দিয়ে তিনজন তিন দিকে চলে যায় । একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি আমি....
 
শিমুর সাথে আমার প্রথম পরিচয় বছর দুয়েক আগে, একটা হাসপাতালে । না, সেদিন সে আর আমি কেউই অসুস্থ ছিলাম না । দুজন ছিলাম ভিন্ন দুটো কারণে । আর সেখানেই পরিচয়ের সূত্রপাত । ঘটনাটা এরকমঃ
 
বড় ভাবীর বাচ্চা হবে, ক্রিটিক্যাল কন্ডিশান । সিজারিয়ান ছাড়া কোন উপায় নেই । ভাইয়া, আমি, আব্বু-আম্মু, ভাবীর মা-বাবা, ভাইয়ার ছোট শ্যালিকা.... পুরো গোষ্ঠী হাসপাতালে, খুব উত্কন্ঠায় সময় কাটছে । কিন্তু শেষ মূহুর্তে অলৌকিক ভাবে সব যেন কি করে ঠিক হয়ে গেল । সিজারিয়ানের প্রয়োজন হলনা, নরমাল ডেলিভারিতেই ফুটফুটে একটা ভাইস্তা হল আমার । সবাই চরম খুশী... ভাইয়া আমার পকটে একটা ছোটখাট বান্ডেল গছিয়ে দিয়ে বললেনঃ যা, মিষ্টি নিয়ে আয় । হাসপাতালের সবার জন্যই আনবি, তাড়াতাড়ি যা...
খুশীতে আমিও আটখানা । সিঁড়ি দিয়ে লাফাতে লাফাতে নামছিলাম । হঠাৎ মোড় ফিরতেই কেউ একজনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েই ছিটকে পড়ে গেলাম ! সেই কেউ একজনের দিকে চোখ পড়তেই আরেকবার ধাক্কার মত খেলাম । মনের ভেতর থেকে কে যেন হড়বড় করে বলে উঠল- 'আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম। কাহাকে পাইলাম ? এ যে দুর্লভ, এ যে মানবী, ইহার রহস্যের কি অন্ত আছে !'
ইতিমধ্যে মানবীও উঠে পড়েছেন । আমি চোখে মুখে করুণ ভাব ফুটিয়ে যথাসম্ভব আদ্র কন্ঠে 'স্যরি' বলতে যাব, তার আগেই তিনি বলে উঠলেন- আপনার ব্লাড গ্রুপ কি এবি নেগেটিভ ?
আহা ! কি কিন্নর কন্ঠস্বর ! শুনলে মনে হয় কারো কথা শুনছি না, শুনছি দূর থেকে ভেসে আসা কোন সুমধুর ধ্বনি । কয়েক মূহুর্তের জন্য আমি স্তব্দ হয়ে গিয়েছিলাম । আর আমাকে চুপ থাকতে দেখেই কিন্নর কন্ঠী এবার খানিকটা ঝাঁঝাল স্বরেই বলল- কি ব্যাপার ? চুপ করে আছেন কেন ? কথা কানে যায় না ? কি জিজ্ঞাসা করেছি আপনাকে ? আপনার ব্লাড গ্রুপ কি এবি নেগেটিভ ?
আমি বললাম- হু....
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে 'মানবী' আমার হাত ধরে হাঁটা শুরু করল । শুধু যেতে যেতে বলল- পেশেন্টের অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল, কোথাও ডোনার পাওয়া যাচ্ছে না, আপনি রক্ত দিবেন...
বলতে না বলতেই আমরা ব্লাড ব্যাংক, নার্সের হাতে আমাকে ছেড়ে দিয়েই বললেন- ডোনার পাওয়া গেছে । আপনারা দ্রুত রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা করুন । যেভাবেই হোক, পেশেন্টকে বাঁচাতেই হবে ।
আমি আর কিছু বলার সুযোগ পেলাম না ! নার্স তার কাজে লেগে গেল । আমি মুখ গোমড়া করে শুয়ে রইলাম । এতক্ষণে মনে পড়ল আমি মিষ্টির জন্য বেরিয়েছিলাম ! ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া ঠিক হয় নাই !
রক্ত দেয়া শেষ হলে নার্স বলল- আপনি যে রক্ত দিতে এসেছেন, আপনার নিজেরই তো রক্তশূন্যতা আছে !
আমি মুখে করুণ একটা হাসি ফুটিয়ে বললাম- কি করব বলুন ? মাত্র একমাস আগেই রক্ত দিলাম । এরমাঝে আবার দিতে হল ! আমার শরীরে তো আর রক্ত তৈরির ফ্যাক্টরি নেই !
একথা শুনে নার্স ক্ষেপে গিয়ে বলল- কি বললেন ? একমাস আগে রক্ত দিয়ে এখন আবার এসেছেন ! ফাইজলামি পাইছেন ?
চেঁচামেচি শুনে মেয়েটিও ছুটে এল । সব শুনে বলল- সে কি ? আপনি একমাস আগে রক্ত দিয়ে আবার এখন কেন এলেন ?
আমি কাচুমাচু করে বললাম- আমি কই এলাম ? আপনিই তো আমাকে টেনে নিয়ে এসেছেন !
সে বলল- তা ঠিক । কিন্তু আপনি বলবেন না যে আপনার তিন মাস হয়নি ?
আমি চাপা স্বরে বললাম- আমি কিছু বলার সুযোগ পেলাম কই ! কিছু বোঝার আগেই দেখি এখানে শুয়ে পড়েছি !
এবার মেয়েটি হেসে ফেলল । আহা ! কী সুন্দর সে হাসি ! তারপর মুখে করুণ একটা ভঙ্গি ফুটিয়ে বলল- স্যরি । আমার আপনাকে সব জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল । আসলে তখন মাথা ঠিকভাবে কাজ করছিল না । এজন্য কি করেছি বলতে পারব না । কিন্তু আপনি তো বলতে পারতেন যে এক মাস আগেই আপনি রক্ত দিয়েছেন ?
আমি মনে মনে বললাম- মেয়ে, একমাস তো অনেক বড় ব্যাপার, তোমার এই মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এক ঘন্টা পর আবারও রক্ত দিতে পারব !
আর মুখে বললাম- পেশেন্ট আপনার কি হয় ?
মেয়ে কিছু নার মত মাথা নেড়ে বলল- আমার কিছু হয় না । রক্তের জন্য উনার অপারেশান হচ্ছিল না । তাই....
এবার আমার মেজাজ চড়ে গেল । চিনি না, জানি না, মেয়েটারও কিছু হয়না- এমন একজনের জন্য এতবড় রিক্স নেয়ার কোন দরকার ছিল না । উঠে পড়লাম আমি, যাওয়া দরকার । ভাইয়ার রাগী রাগী চেহারাটা ইতিমধ্যে আমার চোখের সামনে ভাসতে শুরু করেছে !
ব্লাড ব্যাংক থেকে বেরুতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল । তারপর মনে হল ভূকম্প শুরু হয়েছে । পুরো বিল্ডিং কাঁপছে । আমি আর তাল সামলাতে পারলাম না । পড়ে গেলাম । আর কিচ্ছু মনে নেই !!
 
জ্ঞান ফিরতেই দেখি আট দশটা অপরিচিত মুখ আমার দিকে ঝুঁকে আছে । ও হ্যাঁ, এর মাঝে এক পরিচিত মুখও আছে !
আমাকে চোখ খুলতে দেখে তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠল । আমার স্টেচারের পাশে টুলে বসা রাশভারি একজন হাসি ফুটিয়ে বললেন- কি হে ইয়্যাংম্যান ? আরেকজনকে বাঁচাতে এসে শেষে কি নিজেই মরতে বসেছিলে !
প্রত্তুত্তরে আমি হাসলাম শুধু ।
কয়েকজনকে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসতে । আমার বোকামির খবর কানে কানে ইতিমধ্যে সবার কাছেই পৌঁছে গেছে । শুনলাম একজন এটা নিয়ে একটা জোক ও বানিয়ে ফেলেছে ! জোকটা ছিল অনেকটা এরকম-
আমি সিঁড়ি দিয়ে হেলে দুলে নামছিলাম । হঠাৎ কোথায় থেকে যেন ভূমি ফুঁড়ে শিমুর আগমন । ওড়না পেছিয়ে কোমরা বাঁধা, পিছনে বেণী পাকানো চুল, হাতে ধরা ভয়াল দর্শন ছুরি !
এসেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কলার পাকড়ে বলল- কি দিবি বল ? জান না রক্ত !?
আমি মিনমিন করে বললাম- রক্ত । তারপরেই নাকি এ অবস্থা !
ছেলেটার বলার ভঙ্গিটা এত সুন্দর ছিল, আমিসহ রুমের বাকি সবাই হো হো করে হেসে উঠল । পরে জনেছিলাম ছেলেটির নাম আনাস, টিমের জোকার বয় ।
 
ধীরে ধীরে সবার সাথে পরিচয় হল । জানতে পারলাম- ইনারা সবাই 'মিশনঃ লাইফ সার্পোট' নামক একটা সোশ্যাল অর্গানাইজেশনের মেম্বার । আর আমার সামনে বসা রাশভারী লোকটি হলেন সংগঠনের লীডার, রাহী ভাই । স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে রাহী ভাইরা কাজ করেন । পাশাপাশি তাদের একটি গ্রুপ সবসময় হসপিটালে এক্টিভ থাকে, কারো রক্ত জোগাড় না হলে তারা ম্যানেজ করে দেন ।
'মিশনঃ লাইফ সাপোর্টে'র কাজে আমি রীতিমত মুগ্ধ । যারা দিনে দুপুরে এইভাবে মানুষ ধরে রক্ত নিয়ে নেয়, তাদের অসাধ্য কিছুই নেই ! আমিও তাদের সাথে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করলাম । তারাও সানন্দে আমাকে তাদের দলভুক্ত করে নিলেন ।
আসলে সত্যি বলতে কি, মানুষের প্রতি আমার ভালবাসা উথলিয়ে পড়ছিল- এমন ভাবনা কিন্তু আমি এদের সঙ্গে কাজ করতে চাইনি । আমার এদের সঙ্গে কাজ করতে চাওয়ার পিছনে প্রত্যক্ষ কারণ ছিল শিমু ! দিলাম না হয় প্রতি চার মাসে একবার করে রক্ত, বাকি ১১৯ দিন ওর আশেপাশে থাকা যাবে ! এটাই বা কম কি ?
ফর্ম-টর্ম সব পূরণ করার পরই আমার মনে হল আমি আমি মিষ্টি কিনতে বেরিয়েছিলাম ! ঐদিকের কি অবস্থা কে জানে ?
আমি আবার উঠে ছুটতেই রাহী ভাই থামালেন । তাকে সব খুলে বললাম । সব শুনে তিনিও আমার সাথে এলেন । ভাগ্যিস সেদিন তিনি আমার সাথে গিয়েছিলেন । তা না হলে সেদিন আমার কপালে ভাইয়ার পেঁদানি লেখা ছিল !
 
সেই ঘটনার পর থেকে গত দুইটি বছর আমি এদের সাথে আছি । একসাথে কত মানুষের জীবন বাঁচালাম, কত ক্যাম্পেইন, কত কত প্রোগ্রাম করলাম, কিন্তু মূল যে কারণে আমি দলে ঢুকেছিলাম, শুধু সেটা করাই হলনা আমার । আজও শিমুকে মুখ ফুটে বুকের অনুভূতির কথা জানাতে পারলাম না !
টিমের প্রায় সবাই শিমুর প্রতি আমার এই অনুভূতির কথা জানে । আমার ধারণা শিমু নিজেও জানে ব্যাপারটা । সব জেনে শুনেই ভান ধরে আছে । হয় আমি নিজে বলার জন্য অপেক্ষা করে আছে, নাহয় আমার প্রতি তার কোন অনুভূতিই নেই ! জানি না, কোনটি সঠিক । জানার একটাই উপায়, সেটি হচ্ছে ওকে বলে দেখা । আর এই কাজটিই করা হয়ে উঠছে না আমার । এমনিতে সবসময় স্বাভাবিক থাকি, কিন্তু ওকে এসব বলব ভাবলেই কেমন জানি গলাটা শুকিয়ে আসে ! মুখ দিয়ে কথাই বেরুতে চায় না !
 
টিমের সবাই মিলে আমরা মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হই । কোন সময় কাছে কোথাও, কোন সময় বহুদূর ! এই যেমন এই বার...

যাচ্ছি সেন্ট মার্টিন । এডভেঞ্চার এডভেঞ্চার ভাব আনার জন্য যাত্রাপথে আনা হয়েছে বৈচিত্রতা । প্রথমে ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম । তারপর চট্টগ্রাম থেকে বাসে কক্সবাজার । এখন আছি লন্ঞ্চে, গন্তব্য সাগরে ভেসে ভেসে কোরাল দ্বীপে.... ছোট্ট একটি সাদা ইয়ট ভাড়া করা হয়েছে । যাত্রী শুধু আমরা আমরাই, যাতে প্রাণ খুলে আনন্দ করা যায় ।
বন্ধুরা জেদ ধরেছে- এই সফরে যেভাবেই হোক শিমুকে প্রপোজ করতেই হবে ! তা না হলে আমার কপালে নাকি 'খারাবি' আছে ! ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেছে খারাবির কথা ! জানি না কি আছে কপালে ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম- আল্লাহ ভরসা !
 
সৃষ্টিকর্তা সর্বত্র জুড়ে থাকলেও পিচ্চিকাল থেকে আমার ধারণা তিনি বোধহয় আকাশেই থাকেন । তাই আল্লাহ ভরসা বলার জন্য উপরের দিকে তাকাতেই চাকতির মত ছোট্ট কালো বস্তুটা প্রথম আমার নজরে এল আর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল- হলি কাউ !!
চিত্কার করে সবাইকে ডাকলাম UFO দেখার জন্য । তবে এত চিত্কার করে না ডাকলেও বোধহয় চলত ! ফ্লাইং সসারটা সোজা আমাদের দিকে ছুটে এল । আমাদের ইয়ট থেকে কয়েক ফুট দূরে শূন্যে স্থির হল ।
ইয়টের ডেকে আমরা সবাই, হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছি আকাশ ফেঁড়ে নেমে আসা সসারটির দিকে । নিঃশ্বাস ফেলতেও বোধহয় ভুলে গেছি সবাই !
হলিউডি মুভিগুলাতে এমন বিদঘুটে উড়ুক্কু যান হারমেশাই দেখি । কিন্তু বাস্তবেও যে এটা দেখতে হবে এমনটা ভাবেই কেউই ! আমরা সবাই রুদ্ধ শ্বাসে অপেক্ষা করছি কি ঘটে তা দেখার জন্য । পিনপতন নীরবতা পুরো এলাকা জুড়ে, শুধু সমুদ্রের ঢেউ আর বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া ! পলপল করে বয়ে চলছে সময়, কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন নেই । নীরবতা যখন অসহ্য হয়ে উঠল, তখন খুট করেই সসারের সামনের একটি অংশ খুলে গেল !
 
রুদ্ধশ্বাসে আমরা সবাই তাকিয়ে আছি । কি দেখব ? আমাদের মতই কোন মানুষ নাকি ভয়ংকর দর্শন কোন প্রাণী ? খুব বেশীক্ষণ অপেক্ষা করা লাগল না । গুটিগুটি পায়ে ভীনগ্রহের প্রাণীগুলো বেরিয়ে এল । কিম্ভুতকিমাকার প্রাণীগুলোকে দেখে কার কি মনে হল জানি না, তবে আমার ঠিক বহুবছর আগে ইটিভিতে দেখা অ্যানিমেটেড মুভি 'মন্টু মিয়ার' কথা মনে পড়ল ! সেই চিকনা চাকনা হালকা সবুজাভ দেহ, গোলাকার টাক্কু মাথা, মাথার উপর এন্টেনার মত দুইটা শুড়, টেনিস বলের সমান বড় বড় চোখ, ফোলা ফোলা গাল, নাক অদৃশ্য, ছোটখাটো একটা মুখ ! দেখে ভয়ের বদলে কেমন জানি হাসি পেয়ে যায় !!
অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখছিলাম, কিন্তু হঠাৎ করে প্রাণীগুলো বিজাতীয় এক ভাষায় নিজেরা নিজেরা কথা বলতে শুরু করল । কোরিয়ানদের মত নাঁকি নাঁকি ভাষা ! হাসছে না কাঁদছে নাকি সিরিয়াস কোন বিষয় নিয়ে আলোচনায় মেতেছে- কিছুই বোঝার উপায় নেই । ফিক করে হেসে দিলাম আমি । আমার দেখাদেখি কয়েকজনও একটু করে হেসে উঠছিল, কিন্তু তার আগেই ধমক খেয়ে থেমে যেতে হল !
পিপিলীকার মত দেখতে প্রাণীগুলি স্পষ্ট বাংলায় ধমক দিল- থামো !!!
 
ভিনদেশীদের মুখে নিজের মাতৃভাষা শুনলে অনেক ভাল লাগে, খানিকটা গর্ববোধও হয় । কিন্তু ভিনগ্রহবাসীদের মুখে বাংলা শুনে আমার কেমন জানি ভয় ভয় করতে লাগল । ছোট বেলা থেকে প্রচুর সায়েন্স ফিকশন পড়ার বদৌলতে যদিও আমি জানি ওরা ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে বাংলা বলছে, তারপরও অস্বস্তিটা কিছুতেই তাড়াতে পারছি না । কন্ঠস্বরটা কেমন জানি হিম শীতল । শুনলেই গা ঘুলিয়ে আসে !
 
আমাদের মাঝে মৌকে বলা হয় মিস পারফেক্ট ! সব জায়গায় সব পরিবেশে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে বলেই এই নাম। এইখানেও সে সামলে নিল । গলা খাঁখারি দিয়ে বলল- পৃথিবীতে আপনাদের স্বাগতম হে মহান ভিনগ্রহবাসী । পৃথিবীতে বেড়াতে আসার জন্য আমাদের উষ্ণ অভিনন্দন গ্রহণ করুন ।
ভিনগ্রহ বাসীদের মুখখানি এত ছোট, ঠিকমত বোঝা যায় না । কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে হল মৌর কথা শুনে প্রাণীগুলো খেক খেক করে হেসে উঠল ! ব্যাটাদের মতলব টা কি ?
মতলব জানার জন্য বেশীক্ষণ অপেক্ষা করার দরকার হল না । খানিকবাদেই ওদের একজন মুখ খুলল- ওহে নির্বোধ মানব ! আমরা পৃথীবীতে বেড়াতে আসি নি । আমরা এসেছি তোমাদের ধ্বংস করে পৃথিবীর দখল নিতে !
শিরদাঁড়ায় শীতল এন্ড্রোলিনের প্রবাহ টের পেলাম আমি । বলে কি ? আমাদের ধ্বংস করে পৃথিবীর দখল নেবে, মামা বাড়ির আবদার নাকি ?
আমাদের মাঝে রাতুল বডি বিল্ডার । খিটখিটে টাইপের মানুষ সে । অল্পতেই রেগে যায় । মহাকাশ থেকে নেমে আসা এই আপদগুলোর কথা শুনে সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল- এত্তবড় সাহস তোদের ? আমাদের গ্রহতে এসে আমাদের হুমকি দিস ! এক ঘুসি দিলে আরেকটা দেয়ার জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না, আসছে আমাদের ধ্বংস করতে ! দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা ! আজ তোদের একদিন কি আমার একদিন !
তেড়ে ফুঁড়ে দুই পা এগিয়েই রাতুল মাথা চেপে ধরে তীব্র চিত্কার করে বসে পড়ল । কি হয়েছে দেখার জন্য ওর কাছে ছুটে যেতে গিয়ে আবিস্কার করলাম, আমরা কেউই নড়তে পারছি না । কি অদ্ভুত ব্যাপার ! পা টা মনে হচ্ছে শরীরের সাথে নেই, কোন অনুভূতিই নেই সেখানে । ব্যাপারটা কিভাবে সম্ভব হচ্ছে তা আমাদের কারো মাথাই ঢুকল না । তবে এটা যে এই বজ্জাত প্রাণীগুলোর কাজ তা ভালো করেই বুঝতে পারলাম । শত চেষ্টা করেও আমরা কেউ একচুলও নড়তে পারলাম না । এবং সেই থাকে আমরা প্রথম বারের মত অনুধাবন করলাম- সামনে ভয়ানক বিপদ । হয়ত ধ্বংসও অনিবার্য ।
 
ভিনগ্রহবাসীদের কর্কশ সেই স্বর আবার শোনা গেল- তাহলে ? তোমরা প্রস্তুত তো হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে ?
বলে কি ? হাওয়ায় মিলিয়ে দেবে, এর জন্য আবার প্রস্তুত কিনা সেটাও জিজ্ঞাসা করছে ! তবে শেষ সময় কি এসেই গেল ?
ডুবন্ত মানুষ খড়কুঁটো ধরে হলেও বাঁচার চেষ্টা করে । শেষ চেষ্টা হিসেবে আমি একবার ওদের সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম । কন্ঠ যথাসম্ভব আদ্র করে বললাম- তোমরা কেন আমাদের ধ্বংস করতে চাইছ ? আমাদের অপরাধ কি ?
সেই শীতল কন্ঠে উত্তর- তোমরা নিচু শ্রেণীর সভ্যতা । তোমরা সৃষ্টি জগতের বাহুল্য । তাই তোমাদের ধ্বংস করে যোগ্যদের জন্য আমরা এখানে আবাস গড়ব ।
বুকটা হাহাকার করে উঠল আমার । মরিয়া হয়ে বলে উঠলাম- কি বলছ তোমরা ? আমরা নিচু শ্রেণীর সভ্যতা ? আমরা এই পৃথীবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী । শত শত বছর ধরে আমরা একটু একটু করে এই পৃথীবীকে বাসযোগ্য করে তুলেছি আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান দিয়ে । গড়ে তুলেছি আমাদের সভ্যতা...
তারা আমার ভুল শুধরে দিয়ে বলল- নিচু শ্রেণীর সভ্যতা । আর বিজ্ঞানের কথা বলছ ? তোমাদের বিজ্ঞান এখনো হাস্যকর শ্রেণীর । বিজ্ঞানের প্রথম ধাপটাই পেরুতে তোমাদের আরো হাজার বছর লেগে যাবে । কি করবে তোমরা এই বিজ্ঞান দিয়ে ?
তোমাদের কথা ঠিক না- প্রতিবাদ করে বললাম আমি- আমাদের বিজ্ঞান মোটেও হাস্যকর না । আমরা অনেক গুরত্বপূর্ণ আর মহান আবিস্কার করেছি ।
ইঁদুরের মত মুখওয়ালা কুত্সিত প্রাণীগুলোর মুখে এবার খানিকটা প্রশ্রয়ের হাসি দেখা গেল । মাথার শিং দুটো একটু দুলিয়ে একজন বলল- তাই বুঝি ? ঠিকাছে, তোমাদেরকে একটা সুযোগ দেয়া হল । তোমরা তোমাদের মহান আবিষ্কারগুলো একে একে বলতে থাকো । আমাদের কাছে যদি কোন আবিষ্কারকে মহান মনে হয়, যদি মনে হয় তোমরা এমন কিছু আবিষ্কার করতে পেরছ যা এই বিশ্বজগতের জন্য গুরত্বপূর্ণ, যদি তোমরা আমাদেরকে তোমাদের পৃথিবীতে টিকে থাকার গুরত্ব বোঝাতে পার, তবে তোমাদেরকে আমরা ছেড়ে দেব !

 হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি । যাক, সুযোগ একটা তো পাওয়া গেল । আমাদের অনেক গুলো মহান আবিস্কার আছে, কিছু না কিছু তো তাদের মনে ধরবে । তাহলেই এই যাত্রায় আর অক্কা পেতে হবে না ।
তবে মহান আবিষ্কারের তালিকাটা চিন্তা করে একটু একটু ভয় পেতে লাগলাম । আমাদের কোন কোন আবিষ্কারকে মহান বলা যায় ? আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু আবিষ্কার করেছি, যার অনেকগুলো অনেক গুরত্বপূর্ণ । কিন্তু এর কোনটাই কি মহান স্বীকৃতির যোগ্য ?
 
একে একে বলতে থাকলাম- সেলফোন, ঘড়ি, স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন সিস্টেমের কথা । পানিতে ভাসার জন্য জাহাজ, আকাশের উড়ার জন্য এরোপ্লেনের কথা । কিন্তু কোনটাই তাদের মনোঃপুত না ।
রাফা বলল- আমরা চাঁদ জয় করেছি । মঙ্গলে রোবট পাঠিয়েছি । আর ৫০ বছরের ভিতর আমরা সেখানে বসতি স্থাপন করব ।
আপদগুলো খেক খেক করে হেসে বলল- হাতি ঘোড়া গেল তল, পিঁপড়ে বলে কত জল ! আমরা এন্ড্রোমিডা থেকে মিল্কিওয়েতে চলে এলাম, আর তোমরা আমাদেরকে মঙ্গলে যাওয়ার গল্প শোনাও !
বলার ভঙ্গিটা এত জঘন্য ছিল যে আমার নিজেরই লজ্জা পেতে লাগল ।
তুশি বলল- আমরা অনেকগুলো ভ্যাকসিন তৈরি করতে পেরেছি, যার কারণে অনেক রোগ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত প্রায় ।
প্রাণীগুলো শিং দুলিয়ে বলল- তাতে লাভটা কি হয়েছে শুনি ? তোমরা তো এখনো জরা রোধ করতে পারনি । আমাদের মত মৃত্যুকে জয় করতে পারনি । যদি অমরত্ব লাভ করতে পারতে সেটাকে নাহয় মহান আবিষ্কার বলে ধরে নিতাম !
সূক্ষ আলপিন থেকে শুরু করে ভয়ংকর নিউক্লিয়ার বোমা পর্যন্ত কোন কিছুই বাদ দিলাম না । কিন্তু আমাদের কোন আবিষ্কারই নাকি ওদের কাছে মহান মনে হয়নি । বরং উল্টো নিউক্লিয়ার বোমার কথা শুনে রাম ধমক দিয়েছে !
 
হাল ছেড়ে দিল সবাই । সারা জীবন ধরে আমরা আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান-বুদ্ধি নিয়ে গর্ব করেছি ! নিজেদের আশরাফুল মাখলুকাত বলে বুক চিতিয়ে হেঁটেছি ! অথচ আমাদের এমন কোন মহান আবিষ্কার নেই যা এই প্রাণীগুলোকে মুগ্ধ করতে পারে ! কি অদ্ভুত কথা ! আমাদের তো মরে যাওয়াই উচিত !
আমাদের থেমে যেতে দেখে প্রাণীগুলো গদগদ হয়ে বলল- দেখলে ? বলেছিলাম না তোমরা এই বিশ্বজগতের সবছেয়ে অর্থব প্রাণী ? তোমাদের ধ্বংস করে ফেললে এই মহাবিশ্বের কোন ক্ষতি হবে না ।
আমরা নিশ্চুপ । আমাদের চুপ থাকতে দেখে প্রাণীগুলো আবার বলল- তাহলে তোমরা প্রস্তুত ধ্বংসের জন্য ?
হঠাৎ আমার কি হল জানি না, আমি চিত্কার করে বলে উঠলাম- থামো ! আমরা তো এখনো আমাদের সবচেয়ে মহান আবিষ্কারের কথাটাই তো বলি নি !
আমার চিত্কার এতটাই তীব্র ছিল যে জাহাজের সবাই চমকে উঠল ! ভীনগ্রহবাসী প্রাণীগুলো ভ্যাবছ্যাকা খেয়ে বলল- কি সে মহান আবিষ্কার ?
 
আমরা যখন একে একে আমাদের আবিষ্কার গুলোর কথা বলছিলাম আর প্রাণীগুলো সোত্সাহে তাদের মাথা নাড়াচ্ছিল, আমার তখনই ধারণা হয়েছিল বিজ্ঞান দিয়ে আমরা এদের মুগ্ধ করতে পারব না । প্রযুক্তিগতভাবে এরা আমাদের চেয়ে কয়েক শতাব্দী এগিয়ে আছে । এদের হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাদের ভিন্ন কোন পন্থা অবলম্বন করতে হবে । সেটা ঠিক কি, তা আমি তখনো জানতাম না । কিন্তু এখন একটা সুযোগ তো নেয়াই যায় !
আমি চিৎকার করে জবাব দিলাম- আমরা প্রেম করতে পারি !!

জবাব দেয়ার আগেও ঠিক আমি জানতাম না আমি কি বলতে যাচ্ছি ! আর বলার পর আমি নিজেই হতভাগ হয়ে গেলাম। কি বললাম আমি ? শুধু আমি না, ইয়টের ডেকে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকা বাকি সবাই ই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল । তাদের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, পৃথিবীর এহেন বিপর্যয়ের মূহুর্তে আমি এইরকম একটা লেইম জোক করতে পারি !

তবে এন্ড্রোমিডা থেকে আগত প্রাণীগুলোকে এই ব্যাপারে খানিকটা কৌতুহলী দেখা গেল ! বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর তাদের একজন বলল- প্রেম ? সেটা কি জিনিস ? আমাদের ব্যাখ্যা কর ।
গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম । প্রেম ! আহা, আজো করা হল না ! আর মুখে বললাম- এটা হচ্ছে শক্তি নিয়ন্ত্রনের একটা কৌশল ! তোমরা সেটা বুঝবে না । আমরা তো নড়তে পারছি না, নইলে প্র্যাকট্রিক্যালি করে তোমাদের বোঝাতে পারতাম !

তারা বুঝবে না বলাতে প্রাণীগুলো বোধহয় কিঞ্চিত অপমানিত বোধ করেছে ! টিম লীডার গোছের একজন চোখ দুটো সরু করে বলল- ঠিক আছে, তোমাদের উপর থেকে আমরা নিয়ন্ত্রন সরিয়ে নিচ্ছি । এখন বোঝাও প্রেম কি জিনিস !

হাত পা নাড়াতে পেরে জানে পানি এল। এতক্ষণ ধরে মনে হচ্ছিল কেউ যেন আমাকে গলা পর্যন্ত বালিতে পুঁতে রেখেছে। ছাড়া পেয়েই গলা খাখারি দিয়ে বললাম- প্রেম হচ্ছে শক্তি নিয়ন্ত্রনের একটা কৌশল । এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বজগতের নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাই ! তোমরা নিশ্চয় জানো যে, এই বিশ্বজগতের শতকরা ৯৭ ভাগ এন্টিম্যাটার দিয়ে তৈরি আর বাকি ৩ শতাংশ ম্যাটারের । যখন ম্যাটার ও এন্টিম্যাটার পরস্পরের সংস্পর্শে আসে, তখন প্রচন্ড বিস্ফোরণের সৃষ্টি হয়, প্রচুর শক্তি বিকিরণ করে । আমরা সেই অবস্থা নিয়ন্ত্রন করতে পারি !
প্রাণীগুলো তাদের টেনিস বলের সামন চোখগুলোকে আরো খানিকটা বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । তাদের চোখে মুখে স্পষ্ট অবিশ্বাস ।
তাদের অবস্থা বুঝতে পেরে আমি বলি- কি বিশ্বাস হচ্ছে না তো ? দাঁড়াও তোমাদের দেখাচ্ছি !
বলেই হেঁটে হেঁটে আমি শিমুর কাছে আসলাম । ফিসফিস করে ওকে বলি- দেখো শিমু, আমাদের পৃথিবীর ভীষণ বিপদ। যে কোন মূল্যেই হোক, পৃথিবীকে রক্ষা করতে হবে এই বজ্জাতগুলোর হাত থেকে ।
শিমু মুখে কিছু বলল না, শুধু মাথা নেড়ে সায় জানাল ।
আমি শিমুর হাত ধরে ওকে নিয়ে ভিনগ্রহের প্রাণীগুলোর স্পেসশীপের সামনে চলে এলাম ।
 
পৃথিবীবাসী, ভিনগ্রহবাসী সবাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে কি করি সেটা দেখার জন্য । আমি তাদের সে দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে বলতে শুরু করলাম- দেখ, আমাদের দুজনের শারীরিক গঠন কিন্তু এক না । তোমরা চাইলে তোমাদের স্ক্যানাদের দিয়ে আমাদের পরীক্ষা করে....
আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে তাদের একজন বলল- হু, ইতিমধ্যে আমরা সেটা করে নিয়েছি । আমাদের চোখ গামা রে সংবেদনশীল । তাই এক্সট্রা স্ক্যানার ব্যবহারের দরকার পড়ে না !
আমি একটা ঢোক গিলে মনে মনে বললাম, বলে কি ! কিন্তু মুখে আগের সেই গাম্ভীর্য ধরে রেখেই বললাম- তো যা বলছিলাম, আমাদের দুজনের শারীরিক গঠন এক না । ধরো সে পদার্থের তৈরি আর আমি অপদার্থ দুঃখিত প্রতিপদার্থের । এখন আমাদের দুজনের মাঝে যখন কলিশন হবে তখন প্রচন্ড বিস্ফোরণ হয়ে প্রচুর এনার্জি উৎপাদন হবার কথা । কিন্তু দেখবে কিছুই হবে না । পুরো ব্যাপারটাকে আমরা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসব । কি দেখতে চাও ?
কিছু শোনার অপেক্ষা না করেই জাগতিক এবং মহাজাগতিক দুই ধরনের প্রাণীকেই চরম হতবাগ করে দিয়ে শিমুকে জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁট দুটো মুখে পুরে নিলাম ! পাক্কা দুই মিনিট পর যখন ওকে ছাড়লাম আমরা দুজনই তখন হাঁফাচ্ছি। আমাদের ইয়ট এবং তাদের স্পেসশীফ- দুটোতেই তখন পিনপতন নীরবতা ।
 
বেশ কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ, তারপর হঠাৎ করেই ভিনগ্রহবাসীদের বিজাতীয় ভাষায় কথোকপথন এবং সবশেষে তাদের লীডার গোছের প্রাণীটি বলত শুরু করল- আমরা অভিভূত । তোমাদের আবিষ্কারটি সত্যিই মহান ! যারা এমন দক্ষভাবে এত বিশাল পরিমাণ শক্তিকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে তারা আসলেই অসধারণ প্রাণী । পৃথিবীকে শাসন করার তোমরাই যোগ্য দাবিদার । আমরা পৃথিবী ছেড়ে যাচ্ছি । ভাল থেকো তোমরা ।
বলেই তারা হুট করে যেভাবে এসেছিল সেভাবেই হুট করে চলে গেল । ওদের স্পেসশীফটা দৃষ্টিসীমার আড়ার হওয়ার পর আমি চেঁচিয়ে উঠলাম- হুররে ! আমরা বেঁচে গেছি !
 
আমার দেখাদেখি ইয়টের বাকি সবাই হৈ হুল্লোড শুরু করেছিল, কিন্তু ঠাস করে এক চড়ের শব্দে সবাই থেমে গেল ।
গালে জ্বলুনি টের পেয়ে বুঝলাম চড়টি আমাকেই দেয়া হয়েছে আর দাত্রী হল শিমু । আমি পিটপিট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি । রাগের মাত্রা কতটা সেটা বোঝার চেষ্টা করছি । ইয়েটের ডেকে বাকি সবাই আমাদের দেখছে আর প্রাণপণে হাসি চাপার চেষ্টা করছে । পৃথিবীকে রক্ষার বিনিময়ে এই প্রতিদান ! দুঃখে আমার বুকটা ভেঙ্গে এল ।
শিমু ক্ষেপা গলায় বলল- কেউ এতক্ষণ কিস করে ? আর একটু হলে তো আমি মরেই যেতাম !

শিমুর কথা শেষ হতেই চাপা হাসির বিস্ফোরণ ঘটল । ওর দিকে তাকাতেই দেখলাম ও ও হাসছে । গালে হাত বুলাতে বুলাতে আমিও হাসিতে যোগ দিলাম ।
শিমুকে 'ভালবাসি' বলার চমৎকার একটা সুযোগ ছিল । কিন্তু বললাম না । আসলে এত কিছু ঘটার পর সেটা বলার দরকারও ছিল না ! ভালবাসা একটা অনুভূতি, সেটা আমি যেমন বুঝতে পারি, ও ও তেমন বুঝতে পারে । সব কথা মুখে বলার দরকার হয় না ।

দিন শেষে আমার ছোট্ট একটা আফসোস- একটা মাত্র চুমু খেয়ে পৃথিবীকে অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলাম। এটা ছিল দ্য গ্রেটেস্ট কিস অফ দ্য ওয়ার্ল্ড । অথচ পৃথিবীবাসী এই মহান চুমুটির কথা কখনোই জানতে পারবে না !!
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×