somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাফিউর রহমান ফারাবী
ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাংলাদেশের প্রান্ত হতে আপনাকে হাজার সালাম! ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পিতা মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক

জেল জীবনের স্মৃতিকথা ১ম পর্ব :(

০৫ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জেল খানার প্রতি ভয় তো সবার আছেই। ডান পন্থী রাজনীতির কারনে আমিও ১ মাস চট্রগ্রাম জেলখানায় ছিলাম। আমাদের চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সালের আগষ্ট মাসে বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে একটা তুমুল আন্দোলন হয়েছিল যেটা দেশের সকল জাতীয় পত্রিকায় হেডলাইন হইছিল। সকল সাধারন ছাত্র-ছাত্রী এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। যারা রাজনীতি করত তাদের মাঝেও অনেকে এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।

তবে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব টা ছিল বাম পন্থী ছাত্র দল গুলির দখলে যেমন ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট। তবে শিবির, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও অন্যান্য ইসলামী দলের কিছু ছেলেও এই আন্দোলনে ছিল। তো আগষ্ট মাসের ১ তারিখে একটা বিরাট মিছিল হয় চট্রগ্রাম শহরের ষোল শহরে। ঐ মিছিলের রেশ ধরে পরের দিন ২ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল পরবর্তী বিরাট ভাংচুর শুরু হয়। তখন পুলিশ বেশ কিছু ছাত্র কে মিছিল থেকে গ্রেফতার করে। আমি ফারাবী এই হতভাগাও এই গ্রেফতারের মাঝে পরে যাই :(( গ্রেফতার হওয়ার সময় এক বিরাট মাইর খাই পিঠ ও মাথার উপরে :(( :(( :((
টেনে হিচরে আমাদের কে পুলিশের ভ্যানে তোলা হয় তারপরে হাটহাজারী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন হাটহাজারী থানা আবার একটা ভাড়া বাসায় ছিল। থানার হাজত ছিল ১০ জন থাকার মত। কিন্তু রাখা হইছিল ৬০ জন ছাত্র কে। তো বুঝুন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। সেই সকাল বেলা গ্রেফতার করছে কোন খাওয়া দাওয়া নাই এই অবস্থায় রাত ৮ টায় আমাদের কে আরেকটা বড় পুলিস ভ্যানে তোলে হালি শহরে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেখি হলের অনেক ছাত্র কে আনা হইছে। :( :( এরপরে কিছু লোক আসল পুরা বোরখা পরে। এদের পায়ে মোজাও পড়া ছিল। :( :( এরা এসে মোট ২৪ জন কে আলাদা করল। এরমধ্যে ২৩ জনই শিবিরের নেতা, আর বাকী জন হলাম আমি। আমি শিবির না করলেই আরেক টা ইসলামী দলে জড়িত ছিলাম যেটা ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তাই ঐ দলের নাম বলতে পারব না। আপনারাই বুঝে নেন। এরপর আমাদের ২৪ জন কে আলাদা করল। এই ২৪ জনের মাঝে ছিল তখনকার সময়ে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওর্দী হলের সভাপতি সালাউদ্দিন ভাই যিনি পরে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি হইছিলেন। ২৪ জন কে আলাদা করার পর এক জন একজন করে ডাকা শুরু হইল। এরপর পুলিশের মাইর। মাইর মানে ঐরকম মাইর। পায়ে যে বাড়ি গুলি দিছিল এখনও আমার মনে পড়ে। এই পুরা ব্যাপার টাই নিয়ন্ত্রণ করছিল গোপালগঞ্জ জেলার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। আর আমাদের গায়ে হাত তুলছিল উপজাতি পুলিশরা। উপজাতি পুলিশরা কিন্তু খুব ভয়ংকর। তারা সুযোগ পেলেই বাজ্ঞালীদের কে এক ঘা ধরিয়ে দেয়। :(( :(( সবচেয়ে বেশি মাইর খাইছিল চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি সালাউদ্দিন ভাই। আমিও কম মাইর খায়নি। যদিও আমি শিবিরের সাথী সদস্য কিছু ছিলাম না তাও আমাকে এই শিবির ভাইদের সাথে মাইর, রিমান্ড ও ১ মাস জেল খাটতে হয়। মাইরের পর পুলিশ কর্মকর্তা রা আমাদের কে বলে পা ঝাড়া দিতে। তাইলে নাকি কষ্ট টা কম হয়। পা ঝাড়াঝাড়ির পর আমাদের কে ভাত, ডিম ও ডাল খাইতে দেয়া হয়। :) :) এরপর শুরু হয় বাসা বাড়ির ঠিকানা নেয়া। কারন মামলা করতে তো বাড়ির ঠিকানা লাগে। মজার ব্যাপার হল ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট কাউকে পুলিশ একটা মামলাও দিল না। কারন তারা মহাজোটের অংশীধার :( :(

কিন্তু পুরা আন্দোলন টাই তারা চালাইছিল। আমাদের প্রত্যেকের নামে ২ টা মামলা দেয়া হয়। একটা বিস্ফোরক ও অন্য টা সরকারী কাজে পুলিশ কে বাধা দান। পরের দিন সকালে সবাইকে হ্যান্ডকাপ ও দড়ি দিয়ে বাইন্ধা কোর্টে উঠানো হয়। তখন মনে হচ্ছিল নিজেকে চোর-ডাকাত। কি আজিব দেশ রে বাবা বাংলাদেশ! যাই হোক যথারীতি জামিন নামঞ্জুর ও কোর্ট শেষে বিকাল বেলায় জেল খানায় প্রেরন :(( :((
জেলে ঢুকানোর পর আমাদের সবার কাছে যে টাকা পয়সা ছিল তা আমাদের নামে একটা খাতায় লেখা হয়। বার বার জিজ্ঞাস করা হয় আগে কেউ জেল খাটছে কিনা ? তো আমরা সবাই বলি না আগে কখন এই নরকের গর্তে আসা হয় নি। এইবারই প্রথম X( X( । আমাদের মাঝে আমি সহ ৮ জন ছিলাম খুব অসুস্থ। তাই জেল খানার সুবেদার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে এই ৮ জন ছাত্র কে জেলখানার হাসপাতাল পদ্মা নামক একটা ভবনের ২ তালায় ১২ নং রুমে নিয়ে যান। আর বাকীদের কে মেঘনা ভবনের নিচতলা যেটাকে জেল খানার ভাষায় আমদানী বলা হয় সেখানে রাখা হয়। আমি ভাবলাম হাসপাতালে গিয়ে হাত মুখ থুব কিন্তু এ কি কোন পানি নাই। জেল খানায় সবচেয়ে কষ্ট হল পানির কষ্ট। সেখানে খুব মাপা পানি বোতলে জমিয়ে রাখা হয়। আজ এই পর্যন্তই। সামনের পর্বে আরো বিস্তারির বলব ইনশাল্লাহ ;) ;) আবার আমার এইসব কথা কোন পুলিশ কে আবার আপনারা বইলেন না। তাইলে আবার আমায় জেলে ঢুকায় দিবে |-)

আমার জেল জীবনের স্মৃতিকথা ৫ম পর্ব পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন

আমার জেল জীবনের স্মৃতিকথা ৪র্থ পর্ব পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন
আমার জেল জীবনের স্মৃতিকথা ৩য় পর্ব পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন
আমার জেল জীবনের স্মৃতিকথা ২য় পর্ব পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৫০
১৮টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×