somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাফিউর রহমান ফারাবী
ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাংলাদেশের প্রান্ত হতে আপনাকে হাজার সালাম! ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পিতা মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক

জেল জীবনের স্মৃতিকথা ৪র্থ পর্ব :( :( :(

০৮ ই জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চট্রগ্রাম জেলখানায় বন্দীদের থাকার জায়গা গুলি কয়েকটি ভবনে বিভক্ত। ভবন গুলির নাম হল পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সাঙ্গু, কর্ণফুলি, আর ৩২ সেল ও Condemnd সেল।
সাধারন কয়েদীরা থাকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এগুলিতে। যেমন আমি প্রথমে ১ সপ্তাহ ছিলাম হাসপাতাল পদ্মায়। তারপর আমাকে পাঠানো হয় কর্ণফুলি ৫ এ। মানে কর্ণফুলি ভবনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রত্যেক ভবন গুলি ছিল ৫ তলা। আমি ছিলাম ২ তলায়। ফজরের পরে রুম খুলে দেওয়া হত আমরা ফাইল শেষে ইচ্ছা করলেই কর্ণফুলি ভবনের যে কোন তলায় যেয়ে যে কারো সাথে দেখা করতে পারতাম। এটা করা যেত বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। বিকাল ৫ টার পরে আবার ফাইল শেষে রুমে তালাবদ্ধ। সকাল বেলা আমাদের খাবার দেয়া হত একটা বড় কাল রুটি ও ডাল। এটা খেয়েই দুপুর ১২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা। এরপরে দুপুরের খাবার। দুপুরে সপ্তাহে ২ দিন ছোট ছোট ৩ টুকরা গরুর মাংস ও আরেকদিন ১ টুকরা মাছ দেয়া হত। আর রাতে দেয়া হত শুধু ভাত আর ডাল আর সেই বিখ্যাত বিচিওয়ালা কাঁকরোলের তরকারি। জেল খানায় ভাতের সাথে ডাল ও কাঁকরোলের তরকারিটা ছিল Common, জেল খানায় কখনো কোন শাক সবজি, মুরগীর মাংস দেয়া হত না। আপনি যদি দীর্ঘদিন জেল খাটেন তাইলে আপনি পুইশাক, লাল শাক, ডাটা শাক, পালং শাক ও মুরগীর মাংসের স্বাদ জিনিস টা কি ভুলে যাবেন। জেল খানায় ভাত দেয়া হত অনেক কিন্তু ভাত খাওয়ার মত তরকারী ও ডাল থাকত না। তাই প্রচুর ভাত নষ্ট হত। সব সময়ই আমার পাতে অনেক ভাত থাকত কিন্তু সামান্য একটু ডালের অভাবে আমি আর ঐ ভাত টা শেষ করতে পারতাম না। :(( :(( :((

আমি যাওয়ার ১ সপ্তাহ পরেই রমযান মাস শুরু হয়। তো ভাবলাম রমযান মাসে একটু ভাল খাবার হয়ত পাওয়া যাবে। কিন্তু সেহরীতে কি দেওয়া হয়েছিল জানেন ? শুধু ডাল আর ভাত। সেহরিতে এই ডাল আর ভাত খাইয়াই আমাকে ২৫ রমযান পর্যন্ত রোযা রাখতে হইছে। :( :( :( বস্তির লোকেরাও এর চেয়ে ভাল সেহরী খায়।
তবে ইফতার টা অবশ্য ভাল দেয়া হত। বুট মুড়ি, খেজুর সব থাকত। তবে আমি ইফতার করতাম কিছু ডাকাতদের সাথে। কারন এক ডাকাতের আপন চাচা চৌকায় কাজ করত। জেল খানায় রান্নাঘর কে চৌকা বলা হয়। ঐ ডাকাতের চাচা ভাল ভাল ইফতারি নিয়ে এসে দিত। আবার খুব বিচিত্র কারনে কয়েকজন ডাকাত আমাকে খুব পছন্দ করতো। তাই ইফতার টা আমার ভালই হত। আর হ্যা P.C. Card এর মাধ্যমে কিন্তু আপনি ভাল ভাল ইফতারি কিনতে পারবেন। তবে ইফতারি আসতে আসতেই শেষ হয়ে যায়। তাই P.C. Card এ টাকা থাকলেও ভাল ইফতারি কিনা যায় না।

এখন আমি আপনাদের কে Court Date জিনিসটা বুঝাবো। আপনি তো জেল খাটছেন মামলার কারনে। তো আপনার ঐ মামলা টা তো ১ সপ্তাহ পরপরই কোর্টে উঠে, শুনানী হয় বা রিমান্ডের শুনানী হয়। তো যেদিন আপনার Court Date সে দিন আপনাকে কোর্টে যেতে হবে। সকাল ৯ টা থেকেই পুলিশের ভ্যান এসে কারাবন্দীদের কে নিয়ে যাওয়া শুরু করে। এই পুলিশের ভ্যানে এত বন্দীকে উঠান হয় যে দম বন্ধ হয়ে আসে। এরপর কোর্টে যাওয়ার পর আপনাকে হাজতে ঢুকান হবে। সেই ব্রিটিশ আমলের হাজত খানা। ৫০ জনের থাকার জায়গার রাখা হয় ২৫০-৩০০ জনকে। দম বন্ধ হয়ে আসে। তবে সেইখানেও বিরাট বাণিজ্য আছে। আপনার কোন আত্মীয় স্বজন এসে কোর্টের কোন পুলিশকে ২০০ টাকা দিলে আপনাকে সারাদিন হাজতের বাইরে রাখবে। আপনি ঐ আত্মীয়ের সাথে কথা বার্তা বলতে পারবেন। ঐ আত্মীয় আপনার হাতে টাকা পয়সা দিতে পারবে। তো Court Date এ আমার পিতা আমার ঐ পুলিশের আত্মীয় ও শিবিরের নেতা কর্মীরা আমাদের সাথে দেখা করত। আমার পিতা তো মৌলভীবাজার জেলা থেকে উদয়ন ট্রেনে একদিনের জন্য চট্রগ্রামে আসতো আবার পরের দিন চলে যেত। তো আমি আমার পিতা কে জিজ্ঞাস করলাম টিকিট না পেলে রাতে এত দূর যাও কিভাবে ? আমার পিতা উত্তরে বলল- “ ট্রেনের নিচে কোন বগিতে বসে কোন ভাবে চলে যাই। ” এই কথা টা আমার জীবনে সবচেয়ে বেদনাদায়ক একটা বাক্য। :(( :(( :((

আমাদের ২৪ জনের মাঝে বিচারক ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে ১২ জনের। এরমধ্যে আমিও ছিলাম। প্রথমে ৯ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারপর আমি সহ আরো ২ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। পুলিশের রিমান্ড ২ ভাগে বিভক্ত। একটা হল আপনি পুলিসের হাতে গ্রেফতার হলেন তারপর আপনাকে জেলে প্রেরন করার আগেই রিমান্ড মঞ্জুর করা হল। তো ঐ রিমান্ডে আপনাকে পুলিশ ইচ্ছা মত মারতে পারে যেমন আমাদের কে হালিশহর পুলিশ লাইনে রাতের বেলার গরু মারা মারছিল। আবার আপনি জেলে যাওয়ার পর যদি পুলিশ আপনাকে রিমান্ডে নেয় তাইলে ঐ রিমান্ডে বেশী একটা মাইরধর করতে পারে না। কারন হাইকোর্টের একটা রায় আছে যে রিমান্ডে মাইরধর করা যাবে না। আর জেল থেকে রিমান্ডে নিলে তখন আপনার অভিভাবক হল জেলার। আপনার শরীরে কোন ক্ষতি হলে জেলার পুলিশের কাছ থেকে আপনাকে নিবে না। আর সর্বোপরি আপনি যদি কিছু টাকা আপনার মামলার IO মানে investigation officer কে দেন তাইলে রিমান্ডে উনি আপনাকে কোন মাইরধর করবে না। আর রিমান্ডে নিতে পারে শুধু আপনার মামলার IO বা investigation officer। তো আমাদের পক্ষ থেকে পুলিশ কে ৩০০০০ টাকা দেয়া হয়েছিল যেন মাইরধর না করা হয়। আমার রিমান্ড টা পরে রমযান মাসে। বিকাল বেলা হাটহাজারী থানা থেকে পুলিশের গাড়ি এসে আমাদের ৩ জনকে নিয়ে যায়। ইফতারের আগে আগে হাটহাজারী থানায় পৌছি। ইফতার ঐখানেই করি। তারপর রাত ১০ টায় আমার ডাক পড়ে। আমাকে একটা পুলিশ এক SI এর রুমে নিয়ে যায়। মাটিতে বসতে বলে। আমি স্যান্ডেল খুলে মাটিতে বসি। প্রথমেই জিজ্ঞাস করে কি কর শিবির না ছাত্রদল না হিযবুত তাহরীর ? আমি উত্তরে বলি আপাতত রাজনীতি থেকে দূরে আছি। তবে একসময় করতাম। তখন ঐ SI বলে তোমার দেশের বাড়ি ব্রাক্ষনবাড়িয়া সদরে পুলিশ গেছিল। কিন্তু এলাকাবাসী কেউ তোমাকে চিনে নাই। X( X( X( এর কারন কি ? আমি তখন বললাম আমরা এলাকায় থাকি না। পিতার সরকারী চাকুরী করার কারনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছিলাম। শুধু ঈদে ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় যাই। এইজন্য ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় আমাকে কেউ না চিনাই স্বাভাবিক। এরপর জিজ্ঞাস করল রোযা রাখছ ? আমি বললাম হ্যা রাখছি। তারপর আমাকে চলে যেতে বলল। আমার সাথে বাকী ২ জনেরও একই প্রশ্নোত্তর পর্ব হইছিল। রাজনৈতিক মামলা গুলির রিমান্ডে সাধারনত মাইরধইর করা হয় না। কিন্তু খুন অস্ত্র মামলা নারী নির্যাতন ওইসব মামলায় প্রচুর মাইরধইর করা হয়। মাইরা এক্কেবারে শুয়াইয়া ফেলা হয়। ঐ সব মামলায় সব সময় টাকা দিলেও কিছু হয় না। রিমান্ডে একটা Common মাইর হইল পা দুইটা উলটা কইরা মাথা নিচে শুয়াইয়া এরপর মাইর দেয়া। এরকম আংটা দেয়ালে অনেক লাগানো দেখলাম। বুঝেনই তো বিচিত্র দেশে বিচিত্র কারবার। ;) ;) ;)

আমি জেল খানায় সবচেয়ে বেশী পেয়েছি অস্ত্র, ডাকাতি ও নারী নির্যাতন মামলার কারনে আটক প্রাপ্ত ব্যক্তি। এরমধ্যে নারী নির্যাতন কেইস গুলি খুবই ভয়ংকর। একবার কোন ছেলে নারী নির্যাতন কোন কেইসে ফাইসা গেলে এর খবর আছে। হয় খালাস নয় সাজা। নারী নির্যাতন কেইসে জামিন খুব কম দেয়া হয়। দিলেও ১ বছর পরে। তাও আবার হাইকোর্ট থেকে। হাইকোর্টে যাওয়া কি সোজা কথা ? প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, এরপরে জজ কোর্ট এরপরে হাই কোর্ট। হাইকোর্ট পর্যন্ত যাইতে আপনার বাপ মায়ের খবর হইয়া যাবে। তাই ভাই আর যাই করেন কখন কোন মেয়েলী ব্যাপারে জড়িত হইয়েন না। যেইসব বন্ধুর চরিত্রে সমস্যা আছে তাদের থেকে দূরে থাকেন। কারন বন্ধুর মামলার এজহারে আপনার নামও এসে পড়তে পারে। আর কখন কোন মেয়ের সাথে কোন প্রেমের সম্পর্কই রাখার দরকার নাই। কারন যতগুলি Young ছেলেকে আমি নারী নির্যাতন মামলায় জড়িত হতে দেখছি এদের মধ্যে বেশীর ভাগই ঐ মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। :| :|

আমার জেল জীবনের স্মৃতিকথা ৫ম পর্ব পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন

আমার জেল জীবনের স্মৃতিকথা ৩য় পর্ব পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন
আমার জেল জীবনের স্মৃতিকথা ২য় পর্ব পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন
আমার জেল জীবনের স্মৃতিকথা ১ম পর্ব পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৩৭
১৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×