আল্লাহর রহমতে অনেক দিন ধরে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়া লেখা লেখি করছি। লেখালেখির সূত্রে অনেক সুন্দর সুন্দর হিন্দু মেয়েদের সাথে পরিচিত হইছি নেট জগতে। সুন্দর সুন্দর হিন্দু মেয়ে দেখলেই আমার কেন জানি সতীদাহ প্রথার কথা মনে হয়। আজকে আপনাদের এমন একজন ব্যক্তির কথা বলব যিনি সরাসরী সতীদাহ প্রথার বলি হতে একটা মেয়েকে দেখেছেন। উনার নাম হচ্ছে ইউনুস মুন্সী। উনি হচ্ছেন আমার দাদার পিতা। প্রথমেই বলি সতীদাহ প্রথা একসময় হিন্দুদের উচ্চ বর্ণ ও নিম্ন বর্ণ উভয়ের মাঝেই প্রচলিত ছিল। তবে ইসলাম ভারত বর্ষ আসার পর নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা অনেকেই মুসলমান হয়ে যান। তাই সতীদাহ প্রথা টা তখন শুধুমাত্র উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের মাঝেই প্রচলিত ছিল। আবার স্বামী মারা যাবার পর চাইলেই কোন হিন্দু মেয়েকে শ্বশুরবাড়ীর লোকেরা আগুণে পুড়াইতে পারত না। সুলতান অথবা ঐ এলাকার স্থানীয় মুসলমান শাসকের অনুমতি নিতে হত। যদি হিন্দু মেয়েটা স্বেচ্ছায় আগুনে পুড়তে রাজী হত তাইলেই সুলতান/ স্থানীয় মুসলমান শাসক সতীদাহ প্রথার অনুমতি দিতেন।
মুঘল বাদশাহ বাবরের সময় সতীদাহ প্রথা টা অনেক কমে গিয়েছিল। আর বাদশাহ আওরঙ্গজেবের সময় সতীদাহ প্রথা টা এক প্রকার বন্ধই হয়ে গেছিল। আবার অনেক উচ্চ বর্ণের হিন্দু মেয়েকে স্বামী মারা যাবার পর শ্বশুরবাড়ীর লোকেরা আগুণে পুড়াইতে চাইলে তখন সে স্থানীয় শাসকের কাছে মুসলমান হয়ে যেত। আপনারা মুজাদ্দেদ আলফে সানী রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর নাম শুনেছেন ? বাদশাহ আকবর যখন মুরতাদ হয়ে দ্বীনে ইলাহী ধর্ম প্রচার শুরু করেন তখন মুজাদ্দেদ আলফে সানী রহমাতুল্লাহ আলাইহি বাদশাহ আকবরের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। পরে বাদশাহ আকবর উনাকে বন্দী করেন। বাদশাহ আকবরের মৃত্যুর পর বাদশাহ জাহাঙ্গীর মুজাদ্দেদ আলফে সানী রহমাতুল্লাহ আলাইহির কাছে ক্ষমা চেয়ে উনাকে মুক্ত করে দেন। মুজাদ্দেদ আলফে সানী রহমাতুল্লাহ আলাইহি ঐ সময় যে বিভিন্ন চিঠিপত্র লিখতেন যেটাকে মাকতুবাদ বলে এই মাকতুবাদ বা চিঠিপত্র গুলি বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলা অনুবাদ করে বের করেছে। সেইখানে এরকম অনেক কাহিনী পাওয়া যায় যে মুজাদ্দেদ আলফে সানী রহমাতুল্লাহ আলাইহি উচ্চ বর্ণের অনেক হিন্দু মেয়েকে বিধবা হওয়ার পর আগুনে পুড়ানোর হাত থেকে বাচিয়েছেন। মুজাদ্দেদ আলফে সানী রহমাতুল্লাহ আলাইহি পরে এই হিন্দু মেয়েদের কে মুসলমান বানিয়ে মুসলিম ছেলেদের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতেন।
যাই হোক লর্ড বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথাটা নিষিদ্ধ করলেও আমাদের বাড়ি ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার পাশে আগরতলা যেটা ত্রিপুরা প্রদেশের রাজধানী সেইখানে কিন্তু ১৯০০ সাল পর্যন্ত সতীদাহ প্রথা চলছিল। ভারত বর্ষে সর্বশেষ সতীদাহ প্রথা সর্বশেষ বন্ধ হইছিল এই আগরতলা রাজ্যে। কি আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না ? তাইলে বলি শুনেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “ প্রথম আলো ” উপন্যাস টা পড়ছেন ? ঐ যে ত্রিপুরার মহারাজ রাধাকিশোর মাণিক্যের সাথে রবীন্দ্রণাথ ঠাকুরের দহরম মহরম। রবীন্দ্রণাথ ঠাকুর প্রায়ই ত্রিপুরা যেতেন। বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠায় রাধাকিশোর মাণিক্যে রবীন্দ্রণাথ ঠাকুর কে ৩০০০০ হাজার টাকা দিছিলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই “ প্রথম আলো” উপন্যাসে ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় উনার এই উপন্যাসে একটা তথ্য উল্লেখ করেন যে ১৯০০ সালেও এই আগরতলা রাজ্যে সতীদাহ প্রথা চলছিল। এক সেনাপতির মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর আগুনে পুড়ার ঘটনাও এই উপন্যাসে লেখা আছে। ত্রিপুরার মহারাজ রাধাকিশোর মাণিক্য যখন কলকাতা গেছিলেন চিকিৎসার জন্য তখন এক বড় ডাক্তার রাধাকিশোর মাণিক্য কে তার গায়ের চামড়া ধরে টান দিয়া তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছিল আর বলছিল যে আপনার এই চামড়া যদি আগুনে পুড়াই তাইলে আপনার কেমন লাগবে ? আর আপনার রাজ্যে এখন জীবিত মেয়েদের কে আগুনে পুড়ান হচ্ছে আর আপনি এই সতীদাহ প্রথা কে সমর্থন দিচ্ছেন। যাই হোক প্রথম আলো উপন্যাসে ঔপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় খুব চমৎকার ভাবে ত্রিপুরা রাজ্যের এই ১৯০০ সালেও সতীদাহ প্রথার কাহিনী গুলি তুলে ধরেছেন। যাই হোক ব্রাক্ষণবাড়ীয়া কুমিল্লার পাশেই ত্রিপুরা রাজ্য। আমার দাদার পিতা ইউনুস মুন্সী গ্রামের একটা মাদ্রাস্ায় পড়াইতেন। উনি তেমন কোন বড় আলেম ছিলেন না। এই ক্ক্বওমী মাদ্রাসায় কাফিয়া পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিলেন। যুবক বয়সে ইউনুস মুন্সী প্রায়ই আগরতলা যাইতেন। উনার এক ফুফু আগরতলা থাকত। যাই হোক একদিন সকাল বেলা উনার ফুফু উনাকে বলে আজকে শ্বশান ঘাটে একটা সতীদাহ প্রথা হবে। শাহা বংশের এক বিধবা মেয়েকে তার মৃত স্বামীর সাথে আগুনে পুড়ান হবে। শাহা বংশ হচ্ছে হিন্দুদের মাঝে খুব ধনী একটা জাত। এরা সবাই ব্যবসায়ী। তো ইউনুস মুন্সী সবার সাথে গেল শ্বশান ঘাটে। দেখল সাদা শাড়ি পড়া একটা মেয়েকে সবাই ঘিরে রাখছে। মেয়েটার চারিদিকে ঢোল বাজনা বাজিয়ে চলছে কিছু লোক। এটা ঐ মেয়েটাকে আগুনে লাফ দিবার জন্য উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। কিছুক্ষন পর একজন ব্রাক্ষন এসে ঐ মেয়েটার মাথায় ঘটি ভর্তি দুধ ঢালল। এরপর কিসব মন্ত্র পড়ে মেয়েটাকে সবাই উৎসাহ দিতে থাকল আগুনে স্বামীর চিতার উপর লাফ দিতে। কি জানি ভাই মেয়েটাও কি বুঝল কিছুক্ষন পর মেয়েটাও ঐ আগুনে লাফ দিল। একটা আর্ত চিৎকার শুনা গেল এরপর সাথে সাথে সব শেষ। ইউনুস মুন্সী সারা জীবন তার ছেলে মানে আমার দাদাকে এই ঘটনা টা বলত। ইউনুস মুন্সীর ভাষ্যমতে ঐ মেয়েটার মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত নাকি সুন্দর ছিল। খুব সুন্দর সুন্দর মেয়েদেরকেই নাকি সতীদাহ প্রথার বলি দেয়া হত। দুঃখজনক হলেও সত্য ত্রিপুরায় মুসলমানরা ছিল মাত্র শতকরা ১০ ভাগ। মুসলমানদের কখনই ত্রিপুরাই ঐরকম কোন প্রভাবপত্তি ছিল না। তা না হইলে মুসলমানরা অনেক আগেই ত্রিপুরার রাজ বংশের এইসব পাগলামি প্রথা বন্ধ করে দিত।
আমার খুব খারাপ লাগে যখন দেখি হিন্দু মেয়েরা ইসলাম ধর্ম নিয়া বিদ্রুপ করে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়া তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। এই হিন্দু মেয়েরা কি ইসলাম আসার পূর্বে প্রাচীন ভারত বর্ষের ইতিহাস পড়ে নাই, তারা কি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “ প্রথম আলো ” উপন্যাস টা পড়ে নাই যে কি রকম অত্যাচার করা হইছিল তাদের উপরে ইসলাম আসার পূর্বে। ভাই ইসলাম তো লাখ লাখ হিন্দু মেয়েকে আগুনে পুড়ানোর হাত থেকে বাচিয়েছে, হাজার হাজার হিন্দু মেয়েকে মন্দিরের সেবাদাসী হওয়া থেকে বাচিয়েছে। অন্তত এই কারনে হলেও তো হিন্দু মেয়েদের উচিত ইসলাম কে ভালবাসা। স্বামী বিবেকানন্দ একটা কথা যথার্থই বলেছিলেন যে - “ ইসলাম তো ভারত বর্ষের নিপীড়িত জনগণের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। "
ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব
আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অস্তিত্ত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমান
পুরুষ জাতির বহু বিবাহ প্রথাকে ইসলামী শরীয়াহ আসলে কতটুকু সমর্থন করে
বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা
ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল
স্টালিনের নৃশংসতার স্বীকার এক বাঙ্গালী বিপ্লবী
মাওসেতুং এর সময় চীনা মুসলমানদের দূর্দশতার কথা শুনুন
কামসূত্র বইটি কোথা থেকে এল ? এর ইতিহাস কি আপনি জানেন ?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪২