somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশেষ সাক্ষাৎকার -কালের কন্ঠের সৌজন্যে

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশেষ সাক্ষাৎকারে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীজামায়াতের সহযোগী না বলে বরং আমাকে গুলি করে মেরে ফেলুন

হাসানুল কাদির
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লংমার্চ ঘিরে টানটান উত্তেজনা এখন দেশজুড়ে। এরই মধ্যে সংগঠনটির আমির ও বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফীর এই কর্মসূচির প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট, ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি, বিকল্প ধারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তি, দল ও সংগঠন। হেফাজতের বহুল আলোচিত এই ঢাকামুখী লংমার্চ হবে আগামী শনিবার। সংগঠনের নেতারা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এই লংমার্চ বাস্তবায়ন নিয়ে। সব কিছু ছাপিয়ে প্রায় শতবর্ষী দেশবরেণ্য আলেম, ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদ্রাসায় মহাপরিচালকের নিজ দপ্তরে বসেই লংমার্চ বাস্তবায়নের সব কার্যক্রম তদারক করছেন আল্লামা শফী। এরই মধ্যে নিয়মমাফিক চার ঘণ্টা পবিত্র বোখারি শরিফ পড়াচ্ছেন তাঁর ছাত্রদের। সার্বিক বিষয়ে তাঁকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীসহ কয়েকজন আলেম।
গত মঙ্গলবার বিকেলে হাটহাজারী মাদ্রাসায় নিজ কার্যালয়ে কালের কণ্ঠকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। এর মধ্য দিয়ে তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য, আন্দোলনের কর্মসূচি, এই সংগঠন ঘিরে নানা প্রশ্ন, দেশ, জাতি ও ইসলামের পক্ষে এবং নাস্তিক মুরতাদ ব্লগারদের বিরুদ্ধে সংসদে আইন পাসসহ বিভিন্ন দাবিতে লংমার্চসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথমবারের মতো সরাসরি কোনো মিডিয়ার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। এ সময় তিনি জানান, ঢাকামুখী লংমার্চে ৫০ লাখ মানুষের জমায়েত ঘটানোর প্রস্তুতি চলছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধা এলে প্রয়োজনে তিনি শহীদ হতেও রাজি। এই সময়ের মধ্যে সরকার দাবি না মানলে লাগাতার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন বর্ষীয়ান এই আলেম। কালের কণ্ঠ প্রতিবেদকের সঙ্গে আল্লামা শফীর সাক্ষাৎকারের সময় সেখানে উপস্থিত থেকে সহযোগিতা করেছেন মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী।
কালের কণ্ঠ : কোনো বাধার কারণে লংমার্চ বাস্তবায়ন না হলে আপনারা কী করবেন?
আল্লামা শফী : আমরা আগে থেকেই সরকারকে সতর্ক করে আসছি, ইমান-আকিদা রক্ষায় আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ লংমার্চ কর্মসূচিতে বাধা দিলে আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লাগাতার হরতাল বা অবস্থান ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। আমরা এখনো আশাবাদী, ৬ এপ্রিলের লংমাচের্র আগেই আমাদের দাবিগুলো পূরণ করে সরকার ওলামা-মাশায়েখ ও ৯০ ভাগ মুসলমানের বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। আমাদের আশাবাদী হওয়ার কারণ হচ্ছে, বর্তমান মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল তারা কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দুইবার বৈঠক হয়েছে। তখনও তিনি এই প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেছিলেন। যদিও সরকার এই প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থাশীল হওয়ার মতো কোনো কাজ এখন পর্যন্ত করেনি।
কালের কণ্ঠ : জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্কের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তাদের অর্থেই আপনাদের আন্দোলন চলে- এমন কথাও চাউর আছে। এর সত্যতা কতখানি?
আল্লামা শফী : হেফাজতে ইসলাম হচ্ছে একটি ইসলামী ও ইসলাহী একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এই সংগঠন এ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক বা কোনো দলের পক্ষে-বিপক্ষে যায়, এমন কোনো দাবি বা কর্মসূচি দেয়নি। ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারী নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহিতার বিরুদ্ধে আমাদের চলমান আন্দোলনেও আমরা যে ১৩টি দাবি উপস্থাপন করেছি, এর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না। আমাদের দাবি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি একান্তই ইমান-আকিদা, ইসলাম ও নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট। যখন হেফাজতে ইসলামের দাবি আদায়ে সারা দেশ উত্তাল, তখন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা তাদের অন্যায় অবস্থানের পক্ষে কোনো যুক্তি খুঁজে না পেয়ে হেফাজতে ইসলাম ও আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও জঙ্গিবাদের কল্পনাটক সাজিয়ে বিষোদ্গারমূলক বক্তব্য রাখছে। অথচ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দেশি-বিদেশি পরিদর্শনকারীসহ দেশের কোটি কোটি তওহিদী জনতা দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং হেফাজতে ইসলামের রাজনীতিমুক্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান ও দাবি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রায় প্রতিদিনই আমাদের সঙ্গে দেখা করছেন। তাঁরা আমাদের পড়ালেখার পরিবেশ, শৃঙ্খলা এবং হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তাঁরা সকলেই আমাদের অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ নীতির ব্যাপারে প্রশংসা করছেন। সুতরাং বিষয়টি এভাবে ভাবুন, যারা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) অবাধ্য হয়ে বিষোদ্গার করতে পারছে, তারা তাদের অপতৎপরতার প্রতিবন্ধক প্রতিবাদী ওলামা-মাশায়েখ ও হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। আমি মনে করি, তাদের অপতৎপরতা ঢাকার জন্য যত মিথ্যাচার ও অপপ্রচারই তারা করুক, দেশের ইসলামপ্রিয় জনতা এতে মোটেও বিভ্রান্ত হবে না। আমি আপনাদের মাধ্যমে সমালোচনাকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, তারা প্রমাণ করে দেখাক, হেফাজতে ইসলাম ও ওলামা-মাশায়েখের কোন্ কোন্ দাবির সঙ্গে জামায়াত-সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়া, টিভি টক শোতে হেফাজতে ইসলামের জামায়াত-সংশ্লিষ্টতার কথা যা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। জামায়াত থেকে আমরা অর্থ নিচ্ছি বলে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের উদ্দেশে বলব, টাকা-পয়সা নিলে জামায়াত থেকে কেনো, ক্ষমতাসীন বা ইসলামবিদ্বেষী মহল থেকেও তো নিতে পারতাম।
আজ থেকে দুদিন আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বিশেষ প্রতিনিধি দলকে বলেছি, 'আপনারা হেফাজতে ইসলামকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বদলে বুকে গুলি করে আমাকে মেরে ফেলুন। এই ভিত্তিহীন অভিযোগ শুনে ধৈর্য ধরে রাখতে পারি না। কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। আপনারা নব্য জামায়াতবিরোধী, নব্য মওদুদীবিরোধী। এই গোমরাহ গোষ্ঠীর জন্মলগ্ন থেকেই আমরা কওমি চিন্তার আলেমসমাজ তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক করে আসছি। জামায়াত ও মওদুদীর ইসলামবিরোধী সব তথ্য আমাদের মতো করে আর কেউ এত বেশি জানে না। তাই দয়া করে আমাদেরকে জামায়াতের সঙ্গে তুলনা করবেন না। জামায়াত ও মওদুদীর বিভিন্ন প্রকাশনা বন্ধ এবং তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি এই মুহূর্তে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে আমরা করছি না। হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এটি মূলত নাস্তিক মুরতাদ ধর্মদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগকেও আহবান করছি। তারাও মুসলমান হিসেবে আমাদের পাশে দাঁড়াবে। বাধা দেওয়ার পরিবর্তে লংমার্চ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। এটি তাদেরও ইমানি দায়িত্ব।
কালের কণ্ঠ : গত মঙ্গলবার তিন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আপনাদের দাবিও নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের গ্রেপ্তার করা। এ বিষয়ে আপনাদের প্রতিক্রিয়া কী?
আল্লামা শফী : রাঘব-বোয়ালদের গ্রেপ্তার না করে দু-চারজন চুনোপুঁটি ধরে তামাশা করার কোনো মানে হয় না। এতে বিক্ষুব্ধ নবীপ্রেমিকদের মনের জ্বালা ও আগুন আরো বাড়বে। যাদেরকে আটক করা হয়েছে এরা কারা? মুক্তমনা, সামহোয়্যারইনসহ জঘন্য কোনো ব্লগ সরকার এখনো বন্ধ করেনি। তাদের পরিচালক-মালিকদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তা ছাড়া চিহ্নিত কোনো নাস্তিককেও সরকার আটক করেনি। আমরা এমন প্রহসনের বদলে সরকারকে বলব, সংসদে ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন পাস করুন।
কালের কণ্ঠ : সরকার আপনাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে চায় বলে শোনা যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে একাধিক মন্ত্রী ও সরকারের প্রভাবশালী প্রতিনিধিও আপনার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। একপর্যায়ে প্রশাসন থেকে শুক্রবার পর্যন্ত আপনাদের আলটিমেটাম দিয়েও নাকি বলা হয়েছে, ৬ এপ্রিলের বদলে লংমার্চ অন্য কোনো দিন করতে হবে। আপনাদের দাবির সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধী শক্তির ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধেও হেফাজতে ইসলামের মঞ্চ থেকে দাবি তুলতে হবে। তা না হলে সরকার ৬ এপ্রিল লংমার্চ করতে দেবে না। এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
আল্লামা শফী : আমাদেরকে কোনো আলটিমেটাম বা সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। হেফাজত একটি স্বাধীন সংগঠন। এর কর্মসূচি কি হবে না হবে- তা নির্ধারণ করবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা। এটি সরকার বা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন বা পুতুল হিসেবে কাজ করে না। আমরা ইমান রক্ষার এই আন্দোলনে কোনো রক্তচক্ষুকে যেমন ভয় করি না, তেমনি দাবি আদায়ের প্রশ্নে আপস করার চিন্তাও আমাদের নেই।
কালের কণ্ঠ : শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমাম মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসউদ একজন বড় মাপের দেওবন্দি আলেম। আপনি আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর একজন বিশিষ্ট খলিফা। মাসউদ সাহেবও আপনার পীরভাই এবং পীরের সাহেবজাদা মাওলানা আসআদ মাদানির খলিফা। দুজনই সমচিন্তা ও একই তরিকার আলেম, পীর। এর পরও আপনাদের দুজনের অবস্থান দুই দিকে। তাঁর সঙ্গে আপনারা অথবা তাঁর পক্ষ থেকে আপনাদের সঙ্গে সংলাপের কোনো উদ্যোগ হয়েছিল কী?
আল্লামা শফী : মাওলানা মাসউদ নষ্ট ভ্রষ্ট সরকারের কেনা দাস আলেম। তাঁর সঙ্গে আমাদের এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। এর কোনো প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না।
কালের কণ্ঠ : বিশেষ একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিয়োজিত একই সুরের কয়েকটি পত্রিকার সংবাদ ও লেখায় বিশ্বাস করা যায় কি না এবং তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লেখা পড়ে কোনো কর্মসূচি দেওয়া বা পদক্ষেপ নেওয়া সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
আল্লামা শফী : বর্তমান জমানার কোনো পত্রিকা-মিডিয়ার ওপর বিশ্বাস করার সুযোগ নেই। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। আমাদের নিজস্ব কোনো মিডিয়া না থাকায় বিভিন্ন মিডিয়ায় যতটুকু পক্ষে আসে, আলহামদুলিল্লাহ। বিরুদ্ধেও অনেকে লেখেন। প্রত্যেক মিডিয়ার বিষয়ে সব ইসলামপ্রিয় মানুষের সতর্ক থাকা উচিত।
কালের কণ্ঠ : সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না হলে লংমার্চে সরকারি তরফে বাধা আসবে- অতীত ইতিহাস তাই বলে। সেই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরও হেফাজতের সমর্থক-কর্মী সেজে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করবে বলে গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন। এ অবস্থায় ঢাকামুখী লংমার্চ শেষ পর্যন্ত ঢাকায় গিয়ে পৌঁছাবে তো?
আল্লামা শফী : শহীদ হতে হলে তাতেও রাজি আছি। প্রিয় নবীর অবমাননা হবে, নাস্তিক-মুরতাদদের উল্লাস দেখব- এর চেয়ে শহীদ হয়ে যাওয়া অনেক ভালো। যত বাধা আসুক, লংমার্চ ঢাকায় যাবে। যেখানে বাধা আসবে, সেখানেই ইমানদার তৌহিদি জনতাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
কালের কণ্ঠ : সব ব্লগারের বিরুদ্ধে আপনাদের এই আন্দোলন, নাকি নির্দিষ্ট কিছু ব্লগ ও ব্লগারের বিরুদ্ধে?
আল্লামা শফী : আমাদের আন্দোলন ঢালাওভাবে সব ব্লগ বা ব্লগারের বিরুদ্ধে নয়। অনেক আলেম ও ধর্মপ্রাণ ব্লগারও আছেন। আমাদের আন্দোলন কেবল সেসব ব্লগারের বিরুদ্ধে, যারা মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার আড়ালে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, প্রিয় নবী রাসুল (সা.), পবিত্র কোরআন ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে জঘন্য কুৎসা ও অবমাননায় জড়িত। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ছাড়াও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে এবং সভ্যতা-ভব্যতা ও গণতন্ত্রের কোনো মাপকাঠিতেই এমন কুৎসা ও অবমাননা মেনে নেওয়া যায় না। ওরা ইসলামের এমন জঘন্য অবমাননা করেছে, যা পশ্চিমা বিশ্বের কোনো অমুসলিমের মুখেও কখনো শোনা যায়নি। শুরু থেকেই আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতিষ্ঠা, ইসলামবিরোধী নারীনীতি ও ধর্মহীন শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে আসছি। অথচ কয়েক বছর যেতে না যেতেই বর্তমান সরকারের গৃহীত এসব নীতির মারাত্মক কুফল শুরু হয়ে গেছে।
কালের কণ্ঠ : হেফাজতের পক্ষে বিভিন্ন নেতার বক্তব্যে কিছু ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। হেফাজতের মূল দাবি কী?
আল্লামা শফী : আমাদের মূল দাবি হচ্ছে, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুরক্ষা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ম-অবমাননার বিরুদ্ধে অবিলম্বে সংসদে কঠোর আইন পাস করা। পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন ব্লগ ও সাইটে মহান আল্লাহ, রাসুল (সা.), ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব জঘন্য কটূক্তিকর প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে, সেসব বন্ধ করে বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্লগ, ব্লগার ও পোস্টদাতাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা। পাঠ্য বইয়ের সব ধর্ম-অবমাননাকর মন্তব্য ও উদ্ধৃতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে অবিলম্বে সংশোধনী প্রকাশ করা। সব অনাচার, ব্যভিচার ও অশ্লীলতা এবং নাটক-সিনেমায় ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় নিদর্শন তথা দাড়ি-টুপি, হিজাব ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে অবমাননা রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দান। শিক্ষার সব স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। সরকার দেশ, জনগণ ও মুসলমানদের স্বার্থে আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো মেনে নিলেই চলমান আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। আমরা বারবার বলে আসছি, আমরা ক্ষমতার অংশীদার হতে চাই না।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?
আল্লামা শফী : আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানকে পবিত্র কোরআনের আলোকে প্রণয়ন এবং বিদ্যমান সংবিধান থেকে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন ও ধারা বাতিল করতে হবে বলে শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি। অবশ্যই প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাসী। ধর্মনিরপেক্ষতার মানেই হচ্ছে নাস্তিকতা। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নাগরিক ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি এবং সংগত কারণেই বাংলাদেশ মুসলিম দেশ। ইসলামী আইনে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি পালন ও নিরাপত্তা বিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সুতরাং আমরা মনে করি, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে মূলত এই দেশকে ধর্মহীন তথা নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। এর আলামতই আমরা দেখতে পাচ্ছি।
কালের কণ্ঠ : হেফাজতে ইসলামের শেষ টার্গেট কী?
আল্লামা শফী : ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র যখন যেভাবেই দেখা দেবে, জানমালের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সেসব মোকাবিলা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
কালের কণ্ঠ : আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে আপনার সখ্য থাকার কথা শোনা যায়। এ বিষয়ে আপনার কী মত?
আল্লামা শফী : যদি এমন কিছু শুনে থাকেন, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। মুসলমান পরিচয়ে লাখো কোটি মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা সমর্থকের পরিচয়ে কারো সঙ্গে আমার সখ্য বা সংশ্লিষ্টতার কথা কেউ বলতে পারবে না। আমার পুরো জীবনটাই কেটেছে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার-প্রসার, ইমান-আকিদা রক্ষা, শিরক-বিদআত এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিদর্শনে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য প্রায়ই সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, প্রতিনিধিদল ও বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব এসে থাকেন। অনেকে ব্যক্তিজীবনে সঠিক ইসলামী অনুশাসন পালনে দিকনির্দেশনা লাভ অথবা দোয়া নেওয়ার জন্য আসেন।
কালের কণ্ঠ : হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন। এর পরও ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এই সংগঠন বিশেষ কোনো ভূমিকা পালন করতে চায় কি?
আল্লামা শফী : হেফাজতে ইসলাম মৌলিক অরাজনৈতিক নীতিমালা তথা ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির বাইরে কোনো রাজনৈতিক ভূমিকায় কখনো জড়াবে না।
পরিশিষ্ট : আল্লামা শাহ আহমদ শফী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ার টিলা গ্রামের কৃতী আলেম। দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় অধ্যাপনা শেষে দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রামের সর্বপ্রাচীন ও বৃহৎ কওমি ঘরানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে ২৭ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ-বিদেশে তাঁর কয়েক লাখ ছাত্র ও ভক্ত রয়েছে। দেশজুড়ে আলেম-ওলামাদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ থাকলেও তুলনামূলক বিশ্লেষণে তিনিই সবচেয়ে বরেণ্য আলেম হিসেবে সমাদৃত।
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মলগ্ন থেকেই ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ইমান, আকিদা, অস্তিত্ব সংরক্ষণের পাশাপাশি ধর্মদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে অরাজনৈতিক এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আন্দোলন চলে আসছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে কেন্দ্র করে কতিপয় নাস্তিক ব্লগারের বিরুদ্ধে কোরআন, হাদিস, ইসলাম, আল্লাহ ও নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধে জঘন্য কটূক্তি করার অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে ইমান রক্ষার আন্দোলনের ডাক দেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×