somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহযাত্রী

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(অনেক দিন আগে একটা গল্প লিখেছিলাম। আগে অন্য ব্লগে প্রকাশ ও করেছিলাম। আজ এখানের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম।)

" চুপচাপ হাটছিল সে বনের মধ্যে দিয়ে। ঘন গাছপালা চারপাশ কেমন জানি অন্ধকার করে রেখেছে। সেই অন্ধকার যেন ধীরে ধীরে চেপে ধরছে তাকে। হটাত কে যেন বলে উঠলো- “পালাও...জলদি পালাও।“ প্রানপনে দৌড় লাগালো সে...লতানো কিছু ডাল তাকে আকড়ে ধরে রাখতে চাচ্ছে। তবু সে দৌড়াতে থাকে...একসময় ক্লান্ত হয়ে পরে যায় সে। আর তখনি চারপাশের সব অন্ধকার তাকে গ্রাস করে ফেলে।"
ধড়মড় করে জেগে উঠে অর্নব। সপ্নের রেশ এখনও তার চোখে মুখে লেগে আছে। এরকম একটা সপ্ন কেন দেখলো তার কোন তল খুজে পায় না সে। আজকাল খালি এরকম ধরনের সপ্ন দেখছে সে যার কোন কারন সে খুজে পাচ্ছে না। সচারচর ট্রেনে বা বাসে অর্নবের ঘুম আসে না কিন্তু আজ চিটাগাং যাওয়ার পথে কেন যে চোখ লেগে গেল তার ও কোন কারন সে খুজে পেল না। ফার্স্ট ক্লাস কম্পার্টমেন্টে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত কোন সহযাত্রী পায়নি সে। কিন্তু এখন উঠে বসে সামনের বাথে একটা সুটকেস দেখতে পেল সে।ট্রেন টা কোথায় তা দেখার জন্য জানালার বাইরে তাকালেও এক রাশ অন্ধকার ছাড়া কিছুই পেল না সে...”অন্ধকার!!!” হটাত করে সপ্নটার কথা মনে পরে যায় তার......
দরজা খোলার শব্দে মুখ ফিরিয়ে এক মধ্যবয়সী ভদ্রলোকের দেখা পায় সে...চেহারা আর পাঁচটা সাধারন মানুষের মতই...তাকে যেন ঠিক এখানে মানাচ্ছে না।সুটকেসটাও দামি কিন্তু লোকটা বড্ডবেশী সাধারন।পোশাক আশাক একেবারে সাধারন মানের। রুমাল দিয়ে হাত মুছতে মুছতে ঘরে প্রবেশ দেখেই বোঝা যায় বাথরুম থেকে ফিরলেন। মুখে তখনো একটু একটু পানির কনা লেগে আছে। ভাল করে হাত মুখ মিছে সামনের বাথে বসে অর্নবের দিকে তাকিয়ে হালকা একটু হাসি দিল সে। জবাবে অর্নব ও একটু হেসে দিলেও মনে মনে একটু শংকিত এই ভেবে যে লোকটা আবার আড্ডা না জমিয়ে বসে!! তাই তাড়াতাড়ি মুখ ফিরিয়ে জানলার বাইরের অন্ধকার দেখতে শুরু করলো। অর্নব যে খুব অমিশুকে তা নয়...কিন্তু আজ অর্নবের কোন কথা বলতে ইচ্ছা করছে না...কারো সাথে পরিচিত হতে ইচ্ছা করছে না।
“তুমি কি একা যাচ্ছ???” সামনের লোকটা হটাত প্রশ্ন করলো। জবাবে হালকা করে মাথা নাড়লো অর্নব।
“সে কি!!! তোমার মত ছোট একটা ছেলে এতদুরের পথ একা যাচ্ছে???” এরকম প্রশ্নে মেজাজ খুব গরম হয়ে গেল অর্নবের। প্রথমত সে মোটেও এত ছোট নয়। ক্লাস এইটে পরা একটা ছেলে কে আজকাল কেউ আর ছোট বলে না। আর ঢাকা থেকে চিটাগং এখন মোটেও আর অতটা দূর নয়...কিন্তু এসব কথা মুখে বলে না সে। চুপ করে বাইরেই তাকিয়ে থাকে।কিন্তু লোকটা সহজে চুপ করার বান্দা নয়।
“তোমার বাবা কী করেন????” আবার প্রশ্ন অর্নবের কাছে। চুপ করে থাকাটা খারাপ দেখায় তাই একটু বিরক্তির ভাব নিয়ে সে জবাব দেয়, “ব্যাবসা”ভেবেছিল ওর বিরক্তি দেখে লোকটা চুপ করে যাবে...কিন্তু কিসের কি!!!!
“তোমার বাবা মা তোমাকে একা ছাড়লো????” অবাক সুরে প্রশ্ন করে আবার লোকটা। উত্তরের অপেক্ষা না করেই নিজ সুরে বলতে থাকে,” সব কিছু কেমন জানি বদলে গেছে, আমাদের সময় বাবা মা রা এত সাহসী ছিল না...এত বছর পর দেশে ফিরে কত কী পরিবর্তন দেখছি!!!”
“আপনি বাইরে ছিলেন???” এবার অর্নব ই প্রশ্ন করে।
“ইয়েস, টুয়েন্টি ইয়ারস...বিশ টা বছর বাইরে কেটেছে আমার...” অর্নবের প্রশ্ন শুনে তাকে যেন একটু খুশি ই মনে হয়...
“কোথায় ছিলেন???” অর্নব আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞাস করে...
“কখনো ইউরোপ, কখন আমেরিকা...কখন বা আফ্রিকা......আমার নেশাই তো ছিল ঘোরাঘুরি।এখন হাপিয়ে উঠেছি তাই ফিরে এলাম দেশে।এবার নিজের দেশ টা কে দেখবো“
ইসস কত মজা!!!! মনে মনে অর্নব ভাবে...সেও যদি সব ভুলে এরকম বেড়াতে পারত!!!কিন্তু লোকটার সাজসজ্জা এত সাধারন কেন???
“তুমি কোথায় যাচ্ছ???” খানিকটা নিরবতার পর লোকটা আবার প্রশ্ন করে,
“আমি!!!!...আমি আসলে আমার খালার বাসায় যাচ্ছি। পরীক্ষা শেষ বাবা মা কে বললাম চিটাগং যাব...উনারাও রাজি হয়ে গেলেন...তাই”
“কিন্তু তুমি একা কেন???”
“এমনিই......আমি একা যেতে চেয়েছিলাম যে......”
“তোমার বাবা মা তোমাকে খুব ভালো বাসে না???”
“ভীষন......আমি যা চাই তাই দেন...কখনও আমাকে কিছুতে বাধা দেন না...”
“তুমিতো ভীষন ভাগ্যবান দেখি!!!!!”
“আপনি আইফেল টাওয়ার দেখেছেন????” অর্নব জিজ্ঞাস করে।
“কেন দেখবো না???? শুনবে সে সব গল্প????”
“অবশ্যই”......উৎসাহের সুরে অর্নব জবাব দেয়। লোকটা তখন তাকে গল্প বলতে থাকে লন্ডনের টেমসের, নায়াগ্রা জলপ্রপাতের...আইফেল টাওয়ারের...অর্নব কে কল্পনার চোখে নিয়ে যায় আফ্রিকায়্‌ ...তাকে দেখায় সিংহ...জেব্রা...মিশরের পিরামিড...মুগ্ধ হয়ে অর্নব গল্প শুনে যায়...এত সুন্দর করে যে কেউ গল্প বলতে পারে টা অর্নবের জানা ছিল না...
গল্পের মাঝে হটাত ধরাম করে দরজা টা খুলে ফেলে...”এই তো স্যার...এই সেই লোক” কোট টাই পরা এক লোক অর্নবের সহযাত্রীর দিকে আঙ্গুল তুলে দেখায়...সাথে সাথে কিছু পুলিশ ঢুকে দুই পাশ থেকে ধরে ফেলে তাকে। আরেকটা পুলিশ খুলে ফেলে তার সুটকেস। জিনিস পত্র দেখিয়ে অফিসারটা কোর্ট পরা লোক্তকে জিজ্ঞাসা করে “ কী এগুলো আপনার ই তো???
“হ্যা, হ্যা আমার ই” লোকটা উত্তর দেয়।
“হারামজাদা, চুরি করে আবার ফার্স্ট ক্লাসে ট্রাভেল করা হচ্ছে না???” জোরে একটা চড় দিয়ে সহযাত্রীকে প্রশ্ন করে অফিসার।
“কি হচ্ছে এসব???” হতভম্ভ ভাব কাটিয়ে অর্নব প্রশ্ন করে।
“ কিছু না বাবা, ভয়ের কোন কারন নেই।এই ব্যাটা একটা চোর।সামনের বগি থেকে এই ব্যাগটা চুরি করে এখানে লুকিয়ে ছিল সামনের স্টেশনে নেমে যাবে বলে...কে জানে!!হয়ত ভেবেছিল তুমি একা তাই তোমার জিনিস গুলাও মারার ধান্দা করছিল কিনা!!!”
হটাত চোখটা ঝাপসা হয়ে এল অর্নবের, যে লোক এত সুন্দর গল্প বলে সে কি করে চোর হয়?লোকটার মুখের দিকে একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নেয় সে...পুলিশ লোকটাকে নিয়ে যাওয়ার পর পানি আর ধরে রাখতে পারে না সে...লোকটা কেন তাকে এত মিথ্যা বলল?? অবশ্য মিথ্যা তো সবাই ই বলে...সে ও তো বলল......কে বলেছে তার বাবা মা তাকে ভালোবাসে? ভালোবাসলে কী অর্নব কে এখন খালার বাসায় যেতে হত? তাকে মিথ্যা বলে চিটাগাং পাঠিয়ে দিত? সবাই ভাবে অর্নব কিছু বোঝে না। কিন্তু অর্নব সব বোঝে, সে জানে ঢাকা ফেরার পর তার বাবা মা কে আর একসাথে পাবে না সে। তারা তো আলাদা হয়ে যাচ্ছে। প্রতি রাতে তাদের ঝগড়া ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিত অর্নবের। তবু অর্নব সব সময় না বোঝার ভান করে হাসিখুশি থেকেছে...কিন্তু আজ রাতের আধারে ট্রেনের ছূটে চলার মাঝে অর্নব নামের ছেলে টা আর চুপ থাকলো না। অঝোর ধারায় কেদে চলেছে সে। কেন জানি লোকটার জন্য কষ্ট হচ্ছিল তার... বারবার চোখ মোছার ফাকে হটাত একটা কথা মনে হয় তার......”লোকটার নাম টা তো জানা হয়নি!!!!”
১৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×