
মক্কা আল্লাহর হুকুমত কায়েমের স্থান না হওয়ায় আল্লাহ মহানবিকে (সা.) মদীনায় হিজরত করতে বললেন। অত:পর মহানবি (সা.) মদীনায় আল্লাহর হুকুমত কায়েম করলেন। শক্তি সঞ্চিত হওয়ার পর তিনি মক্কা জয় করলেন। বাংলাদেশে যারা আল্লাহর হুকুমত কায়েম করবে তাদের সাথে এ দেশের জনগণের সম্পর্ক যেমন তা’ হলো, নেতা তুমি এগিয়ে চল আমরা নাই তোমার পিছে। গতকাল এমন ঘটনা ঘটেছে যে, ওয়াজ মাহফিলে হাজার হাজার জনতা ছিল, যখনই বিশ্ব কাপ ফুটবল ফাইনাল খেলা শুরু হলো অমনি ওয়াজের মাহফিল খালি হয়ে ফুটবল খেলা দেখার মাহফিল লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। এমন মানসিকতার লোকজনদের মাঝে আল্লাহর হুকুমত কায়েম হবে কি? সেজন্য যারা আল্লাহর হুকুমত কায়েম করতে চান তাদেরকে বলব, আগে জনগণের মানসিকতা বদলান তারপর আল্লাহর হুকুমত কায়েমের ভাবনা ভাবুন। জনগণের মানসিকার পরিবর্ত না হলে হাজার চেষ্টা করলেও আল্লাহর হুকুমত কায়েম হবে না।
সূরাঃ ১২ ইউসুফ, ৩৯ নং ও ৪০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩৯। হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়! ভিন্ন ভিন্ন বহু রব শ্রেয়, নাকি পরাক্রমশালী এক আল্লাহ?
৪০। তাঁকে ছেড়ে তোমরা কতগুলি নামের ইবাদত করছ, যে নাম তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ, এইগুলির কোন প্রমাণ আল্লাহ পাঠাননি। হুকুম দেয়ার অধিকার শুধু আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, আর কারও ইবাদত করবে না। এটাই সরল সঠিক দীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়।
সূরাঃ ৬ আনআম, ৫৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৭। তুমি বল- আমি আমার প্রতিপালকের প্রদত্ত একটি সুস্পষ্ট উজ্জ্বল যুক্তি-প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত, আর তোমরা সেই দলিলকে মিথ্যা মনে করছো, যে জিনিসটি তোমরা খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাও তার ইখতিয়ার আমার হাতে নেই, হুকুমের মালিক আল্লাহ ছাড়া আর কেউই নন। তিনি সত্য ও ও বাস্তবানুগ কথা বর্ণনা করেন। তিনি হচ্ছেন সর্বোত্তম মীমাংসা কারী।
সূরাঃ ৪২ শূরা, ১৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৩। তিনি তোমাদের জন্য বিদিবদ্ধ করেছেন দীন। যার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন নূহকে। আর যা আমি ওহী করেছি তোমাকে। আর যার নির্দেশ দিয়ে ছিলাম, ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে, এই বলে যে, তোমরা দীনকে প্রতিষ্ঠিত কর। আর তাতে মতভেদ করবে না।তুমি মুশরিকদেরকে যার প্রতি আহবান করছ তা’ তাদের নিকট দূর্বহ মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দীনের প্রতি আকৃষ্ট করেন। আর যে তাঁর অভিমুখী তাকে তিনি দীনের দিকে পরিচালিত করেন।
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত জন্তু, শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু, তবে যা তোমরা যবেহ করতে পেরেছ তা’ ব্যতীত, আর যা মূর্তি পুজার বেদির উপর বলি দেওয়া হয় তা এবং জুয়ার তীরদ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা, এ সব পাপ কাজ। আজ কাফেরগণ তোমাদের দীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে; সুতরাং তাদেরকে ভয় করবে না, শুধু আমাকে ভয় কর। আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম। তবে কেহ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তখন আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
সহিহ বোখারী ৭ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-
৭। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচটি ভিত্তির উপর ইসলাম প্রতিষ্ঠিত। ১। সাক্ষ দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল ২।সালাত কায়েম করা ৩।জাকাত দেওয়া ৪। হজ্জ ৫। রমজানের রোজা রাখা।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৯৫০ নং হাদিসের (ফিতনা অধ্যায়) অনুবাদ-
৩৯৫০। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.)বলতে শুনেছি আমার উম্মত পথভ্রষ্টতার উপর একত্রিত হবে না। যখন তোমরা উম্মতের মাঝে মতপার্থক্য দেখতে পাবে, তখন সর্ববৃহৎ দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবে।
* আল্লাহর হুকুম হলো দীন কায়েম। দীন হলো ইসলাম। ইসলামের রয়েছে পাঁচটি ভিত্তি। বাংলাদেশের জনগণের সর্ববৃহৎ দলের মাঝে ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি মজবুত না হলে এখানে ইসলাম বা দীন বা আল্লাহর হুকুমত কায়েম হবে না। মদীনার জনসাধারণের সর্ববৃহৎ দলের মাঝে ইসলামের পাঁচটি ভিত্তি মজবুত হওয়ার পর রাসূল (সা.) তাতে আল্লাহর হুকুমত কায়েম করেছেন। সুতরাং বাংলাদেশেও এমন পরিস্থিতি না হলে এখানে আল্লাহর হুকুমত কায়েম হবে না। অথচ অনুমান করা হয় বাংলাদেশে ৫% লোকের মাঝে ইসলামের পাঁচ ভিত্তি মজবুত আছে। এমতাবস্থায় এখানে আল্লাহর হুকুমত কায়েম সম্ভব নয়। কথায় বলে আগের কাজ আগে তুমি সারো পরের কথা ভাববে পরে আরো। যারা বাংলাদেশে আল্লাহর হুকুমত কায়েম করতে চায় তারা আগে বাংলাদেশের জনসাধারণের সর্ববৃহৎ দলে পরিণত হবে। তারপর তারা তাদের মধ্যে ইসলামের পঞ্চভিত্তি মজবুত করবে। তারপর তারা এখানে আল্লাহর হুকুমত কায়েমের কথা বলবে।নতুবা তাদের কথা অসময়ে বলা বেদরকারী কথা বিবেচিত হবে। আর তাদের এ কাজ হবে সময়ের অপচয়। আর অপচয়কারী শয়তানের ভাই হিসাবে এমন অহেতুক কাজের জন্য তারা শয়তানের ভাই হিসাবে বিবেচিত হবে। -আসতাগফিরুল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


