একাত্তরে যারা ঘোরতর আওয়ামী লীগ ছিল চুহাত্তরে তাদেরকে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করতে দেখাগেছে।দুই হাজার এক সালে যারা ঘোরতর বিএনপি ছিল এখন তাদের অনেককে বিএনপির পক্ষে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু নিজস্ব সম্পত্তি সব সময় নিজের থাকে। কিন্তু এ জনগণের অনেকেই অনেক সময় অনেকের নিজের থাকে না। এ কচুপাতার পানির মত টলটলে জনগণ বাকশাল গঠিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পিছন থেকে সরে পড়ে। কি কারণে? কারণ বাকশাল তাদের পছন্দ ছিল না। সেজন্য রাজনীতিতে জনগণের মন বুঝে তাদের পছন্দের কাজ করতে হয়।
মিলিটারী আকাশ থেকে টুপ টুপ করে ঝরে পড়ে না। এরা জনগণের ঘর থেকেই বেরিয়ে আসে। হাতে অস্ত্র থাকায় এরা কোন বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। আর যাদের হাতে অস্ত্র থাকে না তারা অস্ত্রধারীদেরকে সমর্থন যোগায়। বাকশাল গঠিত হওয়ার পর অস্ত্রধারীদের যারা আওয়ামী লীগের সমর্থন ত্যাগ করেছে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পঁচাত্তরে বিদ্রোহ করেছে।সুযোগ বুঝে জিয়া তাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে। তারাই সিপাহী বিপ্লব সম্পন্ন করে জিয়ার হাতকে শাক্তিশালী করেছে। এন্টি আওয়ামী লীগরা তখন জনগণের আওয়ামী বিদ্রোহী অংশের সমর্থন পেয়েছে বিধায় তাদের নিয়ে দল করে জিয়া ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসে। তখন এন্টি আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী বিদোহীদের সিদ্ধান্ত হয় নৌকা ঠেঁকাও। তারা একুশ বছর নৌকা ঠেঁকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়।
বাকশাল ও চুয়াত্তর এখন অনেক দূরের গল্প। এসব গল্পে এখন আর নতুন প্রজন্মকে উত্তেজিত করা যায় না, সেজন্য একাত্তর ঐতিহ্যে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে এবং একাধারে একযুগের বেশী সময় ক্ষমতায় আছে।মিলিটারী মোট তেত্রিশ বছর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা বঞ্চিত রাখতে পেরেছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ইস্যুতে কাজ হচ্ছে না বিধায় আওয়ামী বিরোধীদের বজ্রাহত বকের দশা ঘটেছে। তারা মাঝে মাঝে ঠোঁট নাড়ে তো মাঝে মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এখন আওয়ামী লীগের কাজ আওয়ামী বিরোধী নতুন কোন ইস্যু যেন তৈরী না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা। কারণ জনগণের যে অংশ কোন রাজনৈতীক দলের অংশ নয় সে অংশটি আওয়ামী লীগের পিছন থেকে সরে গেলে আওয়ামী লীগ বিপদে পড়বে। এ ক্ষেত্রে শ্লোগান হচ্ছে, নেতা তুমি এগিয়ে চল আমরা নাই তোর পিছে।
আওয়ামী লীগ মনে করছে তারা ভালো কাজ করছে এমন হলে হবে না। আওয়ামী লীগ ভালো কাজ করছে এটা জনগণকে মনে করতে হবে। বাকশাল গঠন করার কাজও আওয়ামী লীগ ভালোকাজ মনে করেছে। কিন্তু জনগণ সেটাকে ভালো কাজ মনে না করায় আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। জনগণের নিরপেক্ষ অংশের লোকেরা কারো পক্ষে কথা বললে বেকুব লোকেরা তাদেরকে সেই পক্ষের লোক মনে করে। যেমন কেউ কেউ আমাকে আওয়ামী লীগ মনে করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমি তাদের ভালো কাজ গুলো পছন্দ করছি। ঘটনা এমন নয় যে আমি তাদের মন্দ কাজগুলো অপছন্দ করব না। ভালোর দিকে তাদের পাল্লা ভারী মনে করে আমি সাকুল্যে তাদের পক্ষে কথা বলছি। কিন্তু ভালো কাজের বদলে তাদের মন্দের পাল্লা ভারী হলে আমি কি করব? তখন আমি যাদের ভালোর পাল্লা ভারী দেখব তাদের পক্ষে কথা বলব। এ উপলক্ষে কেউ আমাকে, ‘বসন্তের কোকিল’ বললেও আমি বেশী ভালোর পক্ষে কথা বলা ছাড়ব না। কারণ আমি আওয়ামী লীগের নিজস্ব সম্পত্তি নই।
দলের অন্তপ্রাণ নেতা কর্মীরা সব সময় দলের থাকে। সাধারণ জনগণ কোন সময় কোন দলে আটকে থাকে না। এ সাধারণ জনগণ মোচড় দিলেই ক্ষমতার মোড় ঘুরে যায়। এরা যেন মোড়া-মুড়ি না করে আওয়ামী লীগ সে দিকে খেয়াল রাখলে চব্বিশের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের জয় হবে। এবার সে জয় যেভাবে হোক।
বিএনপি বলছে জনগণ আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষুব্ধ। তবে সেটা আওয়ামী লীগকে টেনে হিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামানোর মত ক্ষুব্ধ নয়। সুতরাং বিএনপির অধীক আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই। তাদের বরং ব্যক্তিগত কাজে মন দেওয়া ভালো।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৯