somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈশবে আমার একটা নাম ছিলো বাংলাদেশ বেতার

০৫ ই জুন, ২০২৩ রাত ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেকালে রেডিও বাংলাদেশকে বাংলাদেশ বেতার বলা হতো। আব্বা ঢাকা থেকে বাড়ীতে আসলে আমি তাঁকে বাড়ীতে ঘটা সকল ঘটনার বিবরণ প্রদান করতাম। আব্বা ছিলেন হিসাবী মা ছিলেন কিছুটা খরুচে। সেজন্য আমার বিবরনির কারণে মাকে অনেক সময় দু’কথা শুনতে হতো। সেজন্য আব্বা আসার আগে মা আমাকে বলতেন, এই বাংলাদেশ বেতার তোর আব্বাকে এই এই ঘটনা কিন্তু বলা যাবে না। মায়ের অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে আমি সেসব ঘটনা চেপে যেতাম। তাতে পরিবারে আমার খাতিরও বেড়ে গিয়েছিলো।

বড় ভাইয়ের রাতে মাছ ধরার নেশা ছিলো। তিনি টেটা দিয়ে মাছ ধরতেন। সাথে থাকতো দোনালী বাতি।দোনালী বাতিতে পানির অনেক নীচ পর্যন্ত মাছ দেখা যেত। মাছ ধরে রাখার ভান্ডকে আমাদের এলাকায় খলি বলা হতো। বড় ভাইয়ের সাথে মেঝভাই ছিলেন। খলি তাঁর হাতে ছিলো। বড় ভাই অনেক মাছ পাচ্ছিলেন। সেজন্য সেদিন তাঁর মাছ ধরার আগ্রহ বেড়ে গিয়ে ছিলো। তাঁদের সামনে একজন লোক ছিলো। তাঁর পিছু পিছু তাঁরা অনেক দূর পর্যন্ত চলে গিয়ে ছিলেন। হঠাৎ তাঁরা দেখলেন সেই লোক উদাও এবং তাঁরা নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে এসেছেন। তখন তাঁরা ভয় পেলেন এবং দ্রুত বাড়ী ফিরে আসলেন। আপা সব সময় তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে জেগে থাকতেন মাছ কুটার জন্য। বাড়ী আসার পর মেঝ ভাইয়ের মনে হলো খলি হালকা। তিনি খলি উপুড় করার পর দেখলেন কোন মাছ পড়লো না। তখন তাঁরা বললেন, এত মাছ গেলো কোথায়? আপা বললেন, থাক মাছ লাগবে না। তোরা ফিরে এসেচিস এটাই বড় কথা। তারপর থেকে মেঝ ভাইয়ের মাছ ধরতে যাওয়ার আগ্রহ কমে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে বড় ভাই বাংলাদেশ বেতার কে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। যদিও আমি তখন খুব ছোট ছিলাম।

আমার ছ’বছরের সময় আপার বিয়ে হয়ে যায়। তখন আমার দায়িত্ব ছিলো আপার শ্বশুর বাড়ীতে মাছ নিয়ে যাওয়া। তখন রাস্তার উপর পোল গুলো ছিলো বেশ উবাকাটা। সেই পোল পার হতে গড়িয়ে পড়ার ভয়ে অন্তর আত্মা শুকিয়ে যেতো। শাঁকোগুলো বুড়োর দাঁতের মত নড়বড়ে ছিল। এমন রাস্তা পাড়ি দিয়ে আপনার শ্বশুর বাড়ীর হাঁটে পৌছালে আপার এক দেবর লুঙ্গিটা খুলে রেখে দিত। এমতাবস্থায় মহা সংকোচ নিয়ে আপার শ্বশুর বাড়ী পৌঁছে মাওইজানকে আপার সেই দেবর শাজাহান ভাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ দিতাম। পরে শাজাহান ভাই লুঙ্গি ফেরৎ দিতে এলে মাওই খুব করে তাঁকে বকে দিতেন। তাতে মনে কিছুটা শান্তনা পেতাম। এত কিছুর পরেও আপার শ্বশুরবাড়ী যাওয়া বন্ধ হয়নি দায়িত্বের টানে। ভাইদের বোনের প্রতি একটা দায়িত্ব আছে না?

অন্যপথ একটু লম্বা ছিলো। আসার পথে সেই পথে আসতাম। সেই পথে দুলাভাইয়ের বড় বোনের বাড়ী ছিলো। মাওই তাঁর জন্য কিছু দিলে সেটা নিয়ে আসতাম। তারপর সেখানে খেয়ে বাড়ী ফিরে আসতাম। আপার শ্বশুর বাড়ী যাওয়ার পথে সে পথে যেতাম না, কারণ তাতে তাঁকে যদি আবার ভাগ দিতে হয়? ফেরার পথে আসতাম তাঁর বাপের বাড়ী থেকে কিছু নিয়ে। তবে বেয়ারার হিসাবে আদর পেতাম। এরপর বাড়ী ফিরে আসলে মা খুব খুশী হতেন। বাংলাদেশ বেতার হিসাবে আপাকে কেমন কিভাবে দেখলাম সেসব নিখুঁতভাবে বিবরণ দিতাম। আমার অন্য ভাইদেরকে পাঠালে তাঁরা যা বিবরণ দিতেন তাতে মা খুশী হতে পারতেন না। সেজন্য এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেতার হিসাবে মা আমাকে খুব আদর করতেন।

# একালেও রেডিও বাংলাদেশের নাম বাংলাদেশ বেতার। তারমানে সরকার পাল্টালে বাংলাদেশ বেতার রেডিও বাংলাদেশ হয়, আবার রেডিও বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বেতার হয়। আমার শৈশব বাংলাদেশ বেতার দিয়ে শুরু হয়ে এখনো বাংলাদেশ বেতারে চলমান আছে। জানিনা জীবনটা কোন অবস্থায় শেষ হয়? রেডিও বাংলাদেশ নাকি বাংলাদেশ বেতার। সরকার পাল্টালে সব কিছু পাল্টে যায়, সেজন্য সরকার পাল্টানো আমার নিকট বিরক্তিকর মনে হয়। তথাপি সরকার পাল্টে যায়। এটাই নাকি গণতন্ত্রের নিয়ম!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৩ সকাল ৮:২১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×