সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মানব জাতির ইমাম বানাব; সে বলেছিল আমার বংশধরগণ হতেও; তিনি বলেছিলেন, আমার প্রতিশ্রুতি জালেমদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না।
সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৬৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭। হে রাসূল! তোমার রবের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা’ প্রচার কর। যদি না কর তবে তো তুমি তাঁর রেসালাত প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।
সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৩। ঐসব রাসূলদের আমরা তাদের কোন জনের উপর কোন জনকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কোন জনের সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন।আর কোন জনকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। আর আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসাকে প্রকাশ্য মুজেযা দান করেছি। আর তাকে পবিত্র আত্মা দ্বারা সাহায্য করেছি।আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে নবিগণের পরবর্তী লোকেরা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না। কিন্তু তারা পরস্পর ইখতিলাফ (মতভেদ) করেছিল।তাতে তাদের কিছু লোক মুমিন এবং কিছু লোক কাফের হয়ে গেল। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না। কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন।
সূরাঃ ৪৮ ফাতহ, ২৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৯। মোহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল; তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবে।তাদের লক্ষণ তাদের মুখমন্ডলে সিজদার প্রভাব পরিস্ফুট থাকবে: তওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপ এবং ইঞ্জিলেও তাদের বর্ণনা এরূপই। তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারা গাছ, যা থেকে নির্গত হয় নতুন পাতা, অতঃপর ইহা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীদের জন্য আনন্দ দায়ক। এভাবে মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা আল্লাহ কাফিরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের।
সূরাঃ ৯ তাওবা, ৪০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪০। যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহতো তাঁকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিরগণ তাঁকে ধাওয়া করেছিল (হত্যা করার জন্য), আর তিনি ছিলেন দু’জনের মধ্যে দ্বিতীয় জন। যখন তাঁরা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিলেন, তিনি তখন তাঁর সঙ্গিকে বলেছিলেন, তুমি বিষণ্ন হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।অতঃপর তাঁর উপর আল্লাহ তাঁর প্রশান্তি নাজিল করেন এবং তাঁকে শক্তিশালী করেন এমন সৈন্যবাহিনী দ্বারা যা তোমরা দেখনি।আর তিনি কাফেরদের কথা তুচ্ছ করে দেন।আর আল্লাহর কথাই সুউচ্চ। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী সুবিজ্ঞ।
সহিহ বোখারী ২৯ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-
২৯। হযরত আহনাফ ইবনে কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি হযরত আলী (রা.) অথবা হযরত ওসমান (রা.) কে সাহায্য করতে চললাম, (পথে) আবু বাকরাহ (রা.) এর সাথে দেখা হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে চলছি। তিনি বললেন ফিরে যাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে কলতে শুনেছি, যখন দু’জন মুসলমান তরবারী নিয়ে পরস্পর মুখোমুখী হয়, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয় জাহান্নামী হয়। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এতো হত্যাকারী বলে, কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপারটি কি? তিনি বললেন, সে তার সঙ্গীকে হত্যা করার আকাঙ্খী ছিল।
সহিহ আল বোখারী, ৬৮০৪ নং হাদিসের (কিতাবুল ইয়তেসাম) অনুবাদ-
৬৮০৪। হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি নবি করিম(সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবি করিম (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের একদল লোক সর্বদা নাহকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত ও জয়যুক্ত থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহর নির্দেশ (কেয়ামত) আসবে, সে সময়ও তারা জয়যুক্ত থাকবে।
সহিহ সুনানে ইবনে মাজাহ, ২৭৭৬ নং হাদিসের (জিহাদ অধ্যায়) অনুবাদ-
২৭৭৬। আনাস ইবনে মালেকের (রা.) খালা এবং মহানবির (সা.) দুধ খালা উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রা.) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। অতঃপর তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! কে আপনাকে হাসালো? তিনি বললেন, আমার উম্মতের কতক লোককে আমার নিকট এমন অবস্থায় পেশ করা হয়েছে যে, তারা এই সমূদ্রের উপর সওয়ার হয়েছে, যেমনভাবে বাদশাহ সিংহাসনে আরোহন করে। উম্মু হারাম বললেন, তিনি তাঁরজন্য দোয়া করলেন। এরপর পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর প্রথম বারের ন্যায় জাগ্রত হলেন। তারপর উম্মু হারাম (রা.) অনুরূপ বললেন, রাসূলও (সা.) প্রথমবারের অনুরূপ জবাব দিলেন। উম্মু হারাম (রা.) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভূক্ত থাকবে। আনাস (রা.) বলেন, অতঃপর তিনি তাঁর স্বামী উবাদা ইবনে সামিতের (রা.) সাথে বের হলেন জিহাদ করার জন্য, যখন মুসলিমগণ মু’আবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের সাথে সর্ব প্রথম নৌযুদ্ধে রওয়ানা করে। অতঃপর তারা জিহাদ থেকে ফিরে এসে সিরিয়ায় অবতরণ করলেন তখন সওয়ার হওয়ার জন্য তাঁর কাছে একটা জন্তুযান আনা হলো। জন্তুযানটি তাকে ফেলে দিল। এতেই তিনি ইন্তিকাল করলেন।
* আল্লাহ হযরত ইব্রাহীমকে (আ.) চল্লিশ বছরের পরে নেতা বানিয়েছেন এবং তাঁর বংশে হযরত মোহাম্মদকেও (সা.) চল্লিশ বছরের পরে নেতা বানিয়েছেন। চল্লিশ বছরের আগে হযরত আলীর (রা.) নেতা হওয়ার সংগত কোন কারণ ছিল না।কাফির সম্প্রদায় খারেজী তাঁকে কাফের ফতোয়া দিয়ে হত্যা করে ফেলে। তাদের ফতোয়া সঠিক নয় ওহীর মাধ্যমে রাসূলকে (সা.) সেইটা বলে দিতে বলা হয়েছে। কারণ রাসূল (সা.) কোন কাফেরের বন্ধু হতে পারেন না। রাসূল (সা.) বলে দিলেন তিনি যার বন্ধু আলী (রা.) তার বন্ধু। সুতরাং তাঁর মত মুমিনের বন্ধু কাফের হওয়া সম্ভব নয়। খারেজি বিষয়ে রাসূল (সা.) আতংকিত ছিলেন। তাঁর জীবদ্দসায় তাদের উদ্ভব ঘটবে না আল্লাহ তাঁকে সেই প্রতিশ্রুতি প্রদান করায় তিনি ওহী অনুযায়ী হযরত আলীর (রা.) কাফের না হওয়ার বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দিলেন হযরত আলীর (রা.) তাঁর মত মাওলা হওয়ার সংবাদ দিয়ে। অবশেষে কোরআনের অপব্যখ্যার মাধ্যমে খারেজীরা হযরত আলীকে (রা.) কাফের ফতোয়া দেয় এবং হত্যা করে ফেলে। গাদির খুমের হাদিসের কারণে কিছু সংখ্যক চরম পন্থী ছাড়া সমগ্র মুসলিম জাতি হযরত আলীর (রা.) কাফির না হওয়া বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ। শিয়ারা মাওলা অর্থ নেতা বলে হযরত আবু বকর (রা.), হযরত ওমর (রা.) ও হযরত ওসমানকে (রা.) অবৈধ খলিফা বলে তাঁদের বিরোধীতা করে এবং তারা হযরত ওসমানকে (রা.) হত্যা করে কাফের হয়েগেল। তাদের এ অকাজের ফলে মুসলিম চার দলে বিভক্ত হয়। তাদের একদল তাঁর পক্ষে যুদ্ধ করে। দুই দল তাঁর বিপক্ষে যুদ্ধ করে। এক দল তাঁর পক্ষ-বিপক্ষ কোন দলে যোগদান করা থেকে বিরত থাকে। তারা আবার তাঁর পক্ষ ও বিপক্ষ দলকে জাহান্নামী ফতোয়া দেয়। এ ফতোয়া শিয়া ও খারেজী ক্ষেত্রে সঠিক। সাহাবা ক্ষেত্রে সঠিক নয় কারণ তাঁর প্রতি আল্লাহর ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ঘোষণা আছে। সাহাবায়ে কেরামের (রা.) জাহান্নামী না হওয়ার বিষয়টি যারা বলে তারা সুন্নী। শিয়ারা হযরত মুয়াবিয়াকে (রা.) মোনাফেক বলে। যখন কাফিরগণ হুনায়েনে রাসূলকে (সা.) ধাওয়া করেছিল (হত্যা করার জন্য) তখন হযরত মুয়াবিয়া (রা.) রাসূলকে (সা.) সাহায্য করেন। তার বিনিয়ে রাসূল (সা.) তাঁকে একশত উট পুরস্কার দেন। হাদিস দিয়ে হযরত মুগিরা বিন শোবা (রা.) শিয়া দাবী নাকচ করে দেন। কারণ যুদ্ধে হযরত আলী (রা.) হযরত মুয়াবিয়াকে (রা.) পরাজিত করতে পারেননি। সুতরাং গাদির খুমের হাদিস অনুযায়ী হযরত আলী (রা.) কাফের নন এবং হযরত মুগিরা বিন শোবা (রা.) বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী হযরত মুয়াবিয়াও (রা.) মোনাফেক নন। রাসূলের (সা.) স্বপ্ন হযরত মুয়াবিয়াকে (রা.) মুমিন সাব্যস্ত করে।
সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৫৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৬। কেউ আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং মু’মিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে আল্লাহর দলইতো বিজয়ী হবে।
# সূরাঃ ৫ মায়িদা, ৫৬ নং আয়াতের তাফসির - তাফসিরে ইবনে কাছির
ওবায়দা ইবনে সামেত (রা.) ইহুদীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সা.) এবং মু’মিনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছিলেন। সেজন্য আল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’লা, তাঁর রাসূল (সা.) ও ঈমানদারদের নিজের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারা যেন জেনে রাখে কেবল আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে।
সূরাঃ ৪ নিসা, আয়াত নং ১১৫ এর অনুবাদ-
১১৫। কারো নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মু’মিনদের পথ ব্যতিত অন্যপথ অনুসরন করে, তবে সে যে দিকে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর উহা কত মন্দ আবাস।
* রাসূলের (সা.) দুধ খালু হযরত ওবায়দা ইবনে সামেতকে (রা.) আল্লাহর দলের সদস্য বলা হয়েছে। তিনি হযরত মুয়াবিয়ার (রা.) দলে থাকায় হযরত মুয়াবিয়ার (রা.) দল মোনাফেক দল ছিল না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসও (রা.) হযরত মুয়াবিয়ার দলের সদস্য ছিলেন। সুতরাং হযরত মুয়াবিয়াকে (রা.) মোনাফেক ফতোয়াদানকারী শিয়া ও হযরত আলীকে (রা.) কাফের ফতোয়াদানকারী খারেজী কাফের সাব্যস্ত হবে।এরা মুসলিমদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিকারী দল। এদের জন্য মহাশাস্তি রয়েছে। আর সেই শাস্তি হলো জাহান্নাম। কালেমার কারণে এরা জান্নাতে গেলেও এদের প্রকাশ্য অঙ্গে জাহান্নামের চিহ্ন চিরকাল থেকে যাবে। সংগত কারণে শিয়া ইরান থেকে সুন্নী মুসলিমরা দূরে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৭:০৯