সূরাঃ ৯ তাওবা, ৪০ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪০। যদি তোমরা তাঁকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহতো তাঁকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফিরগণ তাঁকে ধাওয়া করেছিল (হত্যা করার জন্য), আর তিনি ছিলেন দু’জনের মধ্যে দ্বিতীয় জন। যখন তাঁরা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিলেন, তিনি তখন তাঁর সঙ্গিকে বলেছিলেন, তুমি বিষণ্ন হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।অতঃপর তাঁর উপর আল্লাহ তাঁর প্রশান্তি নাজিল করেন এবং তাঁকে শক্তিশালী করেন এমন সৈন্যবাহিনী দ্বারা যা তোমরা দেখনি।আর তিনি কাফেরদের কথা তুচ্ছ করে দেন।আর আল্লাহর কথাই সুউচ্চ। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী সুবিজ্ঞ।
সূরাঃ ৪৮ ফাতহ, ২৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৯। মোহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল; তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবে।তাদের লক্ষণ তাদের মুখমন্ডলে সিজদার প্রভাব পরিস্ফুট থাকবে: তওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপ এবং ইঞ্জিলেও তাদের বর্ণনা এরূপই। তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারা গাছ, যা থেকে নির্গত হয় নতুন পাতা, অতঃপর ইহা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীদের জন্য আনন্দ দায়ক। এভাবে মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা আল্লাহ কাফিরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের।
সূরাঃ ৬২ জুমুআ, ২ নং আয়াতের অনুবাদ।
২। তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতে, যে তাদের নিকট আবৃত করে তাঁর আয়াত সমূহ; তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত; এর আগে তো এরা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।
সূরাঃ ৬ আনআম, ৩৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩৯। আর যারা আমার আয়াত সমূহকে মিথ্যা মনে করে, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত মুক ও বধির। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন হেদায়াতের সরল সহজ পথের সন্ধান দেন।
সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে জান না। আমরা তাদের সম্পর্কে জানি।আমারা সিগ্র তাদেরকে দু’বার শাস্তি দেব। এরপর তারা মহা শাস্তির দিকে যাত্রা করবে।
* রাসূলকে (সা.) যাঁরা সাহায্য করেছেন সেই সাহাবায়ে কেরামকে (রা.) আল্লাহ ক্ষমা করেছেন। তিনি যাঁদেরকে ক্ষমা করেন তাঁদেরকে তিনি হেদায়াতের মধ্যে রাখেন। তাঁরা আর পথভ্রষ্ট হন না। আল্লাহ বলেছেন তিনি যাঁদের হেদায়াত দেন তাঁদের জন্য পথভ্রষ্টতা নাই।উহুদে রাসূলকে (সা.) যারা সাহায্য করেনি তারা মোনাফেক হয়ে ঘিয়েছিল। তথাপি যাঁরা সাহাবা হিসাবে পরিচিত তাঁদের মধ্যে কেউ মোনাফেক হয়ে থাকলে সেটা আল্লা ছাড়া অন্য কারো জানার কথা না।তাঁদের কেউ মোনাফেক হয়ে থাকলে তারা আল্লাহর শাস্তি পাচ্ছেন। সুতরাং তাঁদের কারো সমালোচনা করা কোন মুসলিমের দায়িত্ব না।তথাপি দায়িত্বের বাইরে গিয়ে রাসূলকে (সা.) যাঁরা সাহায্য করেছেন যারা তাঁদের সমালোচনা করে তাদেরকে থামানো না গেলে মুসলিম জাতির উপর থেকে আল্লাহর লানত থামবে না। জাহাজ আপনি ফুটো করেননি অন্য কেউ ফুটো করেছে তাই বলে আপনি ডুবে যাওয়া থেকে রেহাই পাবেন কি? সুতরাং রাসূলের (সা.) সাহায়্যকারীগণের সমালোচনা যারা করে তাদেরকে সকল মুসলিম মিলে থামাতে হবে। নতুবা অমুসলিমদেরকে দিয়ে মুসলিমদেরকে আল্লাহ শাস্তি দিতেই থাকবেন।
সূরাঃ ৮ আনফাল, ৬৭ থেকে ৬৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৬৭।দেশে ব্যাপকভাবে শত্রুকে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নবির উচিত নয়। তোমরা পার্থিব সম্পদ কামনা কর। আল্লাহ চান পরকালের কল্যাণ। আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।
৬৮। আল্লাহর পূর্ব বিধান না থাকলে তোমরা যা গ্রহণ করেছ সেজন্য তোমরা মহাশাস্তিতে আক্রান্ত হতে।
৬৯। যুদ্ধে যা লাভ করেছ তা’ বৈধ ও উত্তম বলে ভোগ কর। আর আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
সূরাঃ ৭ আ’রাফ, ১৯ নং থেকে ২২ নং আয়াতের অনুবাদ-
১৯। হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর।আর যা খুশী খাও। আর এ গাছের কাছে যেও না।তাহলে তোমরা যালিমদের মধ্যে গণ্য হবে।
২০। অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান যা তাদের নিকট গোপন রাথা হয়েছিল তা’ তাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল। আর সে বলল, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও, অথবা এখানে স্থায়ী হয়ে যাও সেজন্য তোমাদের রব এ গাছ সম্বন্ধে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন।
২১। সে তাদের নিকট কসম করে বলল, আমিতো তোমাদের নছিহতকারীদের একজন।
২২। এভাবে সে তাদেরকে ধোকা দিয়ে নীচু করল।তৎপর যখন তারা সে বৃক্ষফলের মজা গ্রহণ করল তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল।আর তারা নিজেদেরকে জান্নাতের পাতা দ্বারা আবৃত করতে লাগল।তখন তাদের রব তাদেরকে ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এ গাছের কাছে যেতে মানা করিনি? আর আমি কি বলিনি যে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন?
সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৩। ঐসব রাসূলদের আমরা তাদের কোন জনের উপর কোন জনকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কোন জনের সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন।আর কোন জনকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। আর আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসাকে প্রকাশ্য মুজেযা দান করেছি। আর তাকে পবিত্র আত্মা দ্বারা সাহায্য করেছি।আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে নবিগণের পরবর্তী লোকেরা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না। কিন্তু তারা পরস্পর ইখতিলাফ (মতভেদ) করেছিল।তাতে তাদের কিছু লোক মুমিন এবং কিছু লোক কাফের হয়ে গেল। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না। কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন।
সহিহ বোখারী ২৯ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-
২৯। হযরত আহনাফ ইবনে কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি হযরত আলী (রা.) অথবা হযরত ওসমান (রা.) কে সাহায্য করতে চললাম, (পথে) আবু বাকরাহ (রা.) এর সাথে দেখা হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে চলছি। তিনি বললেন ফিরে যাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে কলতে শুনেছি, যখন দু’জন মুসলমান তরবারী নিয়ে পরস্পর মুখোমুখী হয়, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয় জাহান্নামী হয়। আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এতো হত্যাকারী বলে, কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপারটি কি? তিনি বললেন, সে তার সঙ্গীকে হত্যা করার আকাঙ্খী ছিল।
* উচিত নয় এমন কাজ আমাদের রাসূল (সা.) করেছেন। হযরত আদমতো (আ.) শয়তানের ধোঁকায় পড়েছেন। তারপর আল্লাহ তাঁদেরকে ক্ষমতা করে দিলে তাঁদের সামালোচনা করা যাবে কি? রাসূলের (সা.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.)শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হয়েছেন। এটা যে উচিত কাজ ছিল না সেটাতো বুঝাই যাচ্ছে। একজন সাহাবাও (রা.) এসব কাজকে জাহান্নামের কাজ বলেছেন। কিন্তু আল্লাহ তাঁদেরকে ক্ষমা করলে তাঁদেরকে জাহান্নামী বলা যাবে কি? রাসূলকে (সা.) সাহায্যকারী সাহাবা (রা.) বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত। অন্যদের সাথে তাঁদেরকে একইভাবে বিবেচনা করলে চলবে না। সাহাবায়ে কেরামকে (রা.) কাফের মনে করে কাফের হয়েছে খারেজী (ইবাদী)। সাহাবায়ে কেরামকে (রা.) মোনাফেক মনে করে মোনাফেক হয়েছে শিয়া। সাহাবায়ে কেরামকে (রা.) পথভ্রষ্ট মনে করে পথভ্রষ্ট হয়েছে সালাফী ও আহলে হাদিস। কারণ যাঁরা রাসূলের (সা.) সাহায়্যকারী তাঁদের জন্য পথভ্রষ্টতা নাই।
সূরাঃ ২ বাকারা, ২৮৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৮৬। আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্ট দায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।সে ভাল যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার। সে মন্দ যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার। হে আমাদের প্রতিপালক যদি আমরা ভুলে যাই অথবা আমাদের ত্রুটি হয় তবে আমাদেরকে পাকড়াও করো না। হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের পূর্ববর্তিগণের উপর যেমন গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করবেন না।হে আমাদের প্রতিপালক এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করবেন না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।আমাদের পাপ মোছন করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের উপর আমাদেরকে জয়যুক্ত করুন।
সহিহ আল বোখারী ১ নং হাদিসের (কিতাবুল ঈমান) অনুবাদ-
১। হযরত আলকামা ইবনে ওয়াককাস লাইছি (র.) বলেন, আমি শুনেছি, ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) মসজিদের মিম্বরে উঠে বলেছিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, সকল কাজেই নিয়ত অনুযায়ী হয়। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে, তাই পেয়ে থাকে। কাজেই যার হিজরত দুনিয়া লাভ বা কোন মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হয়েছে, তার হিজরত তদোদ্দেশ্যেই হয়েছে।
* সাহাবায়ে কেরামের (রা.) নিয়ত ছিল শুদ্ধ। সুতরাং তাঁদের উচিত নয় এমন কাজ হলো তাঁদের কাজের ত্রুটি। যার জন্য তাঁদের সমালোচনা করা হারাম। কারণ রাসূলকে (সা.) ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তাঁরা সাহায্য করেছেন। উচিত নয় এমন কাজ অনেক নবি (আ.) কর্তৃক সংঘটিত হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের (রা.) দ্বারাও এমন অনেক কাজ হয়েছে। তাঁদেরকে সাধারণের কাতারে নামিয়ে সমালোচনা করা আল্লাহর ক্রোধের কারণ। হযরত আবু কবরের (রা.) প্রতি কারো অভিযোগ থাকলে তা’ প্রত্যাহার করতে হবে। হযরত ওমরের (রা.) প্রতি কারো অভিযোগ থাকলে তা’ প্রত্যাহার করতে হবে। হযরত ওসামানের (রা.) প্রতি কারো অভিযোগ থাকলে তা’ প্রত্যাহার করতে হবে। হযরত আলীর (রা.) প্রতি কারো অভিযোগ থাকলে তা’ প্রত্যাহার করতে হবে। হযরত মুয়াবিয়ার (রা.) প্রতি কারো অভিযোগ থাকলে তা’ প্রত্যাহার করতে হবে।ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যাঁরা অবদান রেখেছেন আল্লাহ তাঁদেরকে পথভ্রষ্ট হতে দেননি। সাহাবা নয় এমন যারা তাঁদেরকে পথভ্রষ্ট বলে আল্লাহ তাদেরকে কুফুরীতে লিপ্ত করে দেন। তাদের জন্য আর হেদায়াত থাকে না। তাদের শেষ ঠিকানা জাহান্নাম। কারণ তারা তাদের সীমা অতিক্রমকারী। অন্য মুসলিম এদেরকে নিবৃত করার চেষ্টা না করলে তারাও আল্লাহর লানতে আক্রান্ত হয়। শিয়া সাহাবার সাথে বেয়াদবীর কারণে লানতে আক্রান্ত। হামাস শিয়ার বন্ধু হয়ে লানতে আক্রান্ত। ইবাদী ও সালাফীও লানতের মধ্যেই আছে। সাহাবার সমালোচনা একটি জঘণ্যতম কাজ। এর থেকে মুসলিমকে নিবৃত করার যথেষ্ট চেষ্টা না থাকলে মুসলিম জাতির উপর থেকে আল্লাহর লানত থামবে না। আল্লাহর লানতে তারা নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করে কষ্ট পাবে এবং অমুসলিম তারাও তারা মহাশাস্তি পেতে থাকবে। এরজন্য অনেকের পরকালও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:২০