ক্রিকেট খেলতে যতোটুকু পারি তাতে নিজেকে খেলোয়াড় (ক্রিকেটার তো বহুদূরের কথা) দাবি করতে পারি না। কিন্তু ক্রিকেট আমার রক্তকণিকায়, ক্রিকেট ছাড়া বাঁচতে পারি না।
আমার প্রথম সন্তানের (ছেলে) জন্ম ২৯ মে ১৯৯৪। ওর নাম রাখলেন ওর দাদী- সাইফ আল মাহমুদ লাজিম। ডাকনাম লাজিম। তো ছেলে বড় হতে থাকে, ছোট ছোট শব্দে কথা বলতে শেখে। যে বয়সে বাচ্চারা নিজের নাম বলতে পারে ঐ বয়স থেকে তার নামও আমরা জিজ্ঞাসা করতে থাকি। কিন্তু লাজিম ওর নাম উচ্চারণ করতে পারে না, বলে টেনে টেনে...আ-জি-ম অথবা না-জি-ম। কিছুতেই লাজিম হয় না।
ওর উচ্চারণ নিয়ে আমরা এক সময় চিন্তিত হয়ে পড়লেও দেখি এক সময় ওর জড়তা বেশ কাটতে শুরু করেছে, কিন্তু নাম তার আজিম বা নাজিমই বলে, ওর কণ্ঠে লাজিম হয় না।
১৯৯৭ সনের আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল। বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশ এ ম্যাচে জিতলেই ১৯৯৯ এর ওয়ার্ল্ড কাপে খেলবে ইংল্যান্ডে। সারা বাংলাদেশ সেই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে। আমিও।
আমার রেডিও'র সাথে স্পিকার লাগিয়ে চারতলার ফ্ল্যাটের জানালার কাছে জোর ভলিউমে কমেন্ট্রি ছেড়ে দিলাম। আমি শুনি সেই ধারাভাষ্য, যাঁরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান তাঁরাও অন্তত এক দণ্ড দাঁড়ান হয় আমার পাগলামি দেখতে, অথবা ঐ ধারাভাষ্য শুনতে।
সেই কাহিনী আপনারা সবাই জানেন। আজ তা ইতিহাস।
বাংলাদেশ জিতেছিল। সেই উন্মাদনার মুহূর্তে আমার আরেকটা পাগলামি ছিল। বাংলাদেশ দলের ১২ জন ক্রিকেটারের নাম একে একে আমার ছেলের সামনে উচ্চারণ করি, আর তাকে বলি, আব্বু, বলো তো, আমার নাম আকরাম.....ইত্যাদি।
আমার ছেলে যে নামটা খুব স্বচ্ছন্দে স্পষ্ট উচ্চারণ করলো সে নামটা হলো- পাইলট। ব্যস, পাইলটকে বলি, আব্বু, আজ থেকে তোমার নাম পাইলট। বলো তো 'পাইলট।' পাইলট খুব মিষ্টি করে ওর নাম বলে.........পাইলট।
পাইলটের বয়স এখন ১৫। পাইলটের আরও অনেক নিকনেইম আছে ওর ফুফু-খালা-নানা-দাদাদের দেয়া। আমি পরিবারের বড় সন্তান, পাইলট আমার পরিবারের বড় নাতি। ওর আদর মাপা যায় না।
তো, একবার ওর এক মামা বলেছিল পাইলট কোন নাম হয় নাকি? ও মা, পাইলট বেঁকে গেলো, সে সবাইকে জানিয়ে দিল ওকে আজ থেকে কেউ পাইলট ডাকবে না, ডাকতে হবে সাইফ বলে।
কিন্তু আমি তাকে মিষ্টি কথায় অনেক বুঝালাম। তার মা'র সাথে মাঝে মাঝে এ নিয়ে খুব লাগে।
অবশেষে আমিও ঘোষণা করলাম, আমার সামনে পাইলটকে কেউ অন্য নামে ডাকলে আমি তাকে খুন করবো।
একটা বড় দলের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলে বাংলাদেশ দল দেশবাসীকে আজ হতাশ করেছে নি:সন্দেহে। আমি তাঁদের দেশপ্রেমের আবেগকে শ্রদ্ধা করেই বলছি, ১ম ওডিআইও তো আজকের মতো হতে পারতো। অতএব, আসুন, পরের ম্যাচের জন্য উজ্জীবিত হই।
পরিশিষ্ট :
আমার এক কলিগ জানতে চাইলেন, তোমার ছেলের নাম পাইলট কেন?
আমি তাঁকে উপরের ঘটনা বলি। নামের শানে নযুল তাঁকে আকৃষ্ট করেনি। কিন্তু তাতে আমার বিচলিত হবার কোনও কারণ নেই। আমার ছেলের নামের পেছনে একটা জ্বলজ্বলে ইতিহাস আছে, এটা আমাকে আজীবন গর্বিত করবে ও আনন্দ দেবে।
ক্রিকেট নিয়ে আমার আরেকটি আবেগীয় লেখা এখানে : বাংলাদেশের শততম ওডিআই ক্রিকেটম্যাচ জয় : সবিতা এবং আপনি
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




