উৎসর্গ :
প্রথম মৃত্যুর পর আমাকে সে বাঁচিয়েছে, দেখিয়েছে জীবনের স্বপ্ন
দিয়েছে ঘর, দিয়েছে প্রেম, দিয়েছে প্রশ্নাতীত সম্মান
সংসার জীবনে সে আমার বন্ধু, আমার সন্তানের পিতা
ছিদ্দিকুর রহমান খান
কবিপরিচিতি
কুড়িগ্রামে জন্ম। মাধ্যমিক স্কুল থেকে শহুরে মানুষের ভিড়ে নারায়ণগঞ্জে। কিন্তু গ্রামের সেই নানাবাড়ির আত্মিক স্পর্শ কখনোই শহুরে হতে দেয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলের বাসিন্দা হিসাবে দেয়ালিকা, রোকেয়া হল সাহিত্যপত্রিকা ও 'বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস'-এ লেখা প্রকাশ। হল ও বিভাগের সাহিত্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া সহ রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয় নিয়ে অনার্স, মাস্টার্স, এম.ফিলের গণ্ডি পেরিয়ে মাস্টার্স অফ ফিলোসফির পথে।
****
তোমাকে চাই
ছিন্ন ভিন্ন মিথ্যের বেড়াজাল, অন্ধকার সুদৃঢ়তায় পরাহত,
দশ-দিগন্তে উদ্ভাসিত আলোকবর্তিকা।
দলিল-দস্তাবেজের স্তূপীকৃত দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সম্মিলনে,
কুতুবমিনারের বাহ্যিক স্থাপত্যে নয়,
রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতায় নয়,
রবির প্রখরতায় শীর্ণ-জীর্ণ-দীনতার বিলোপে,
হবে হয়তো তাজমহলের প্রতীক ভালোবাসান
যাতে ধ্বংসের বীজ ছিল সাম্রাজ্যের,
মান-অভিমানের অনেক ঊর্ধ্বে, অনুভবের স্পর্শে;
নতজানু হৃদয়ের কাছে, বিশ্বাসের দৃঢ়তায়।
খাজনা দেবো সমস্ত জীবন; উষ্ণতার স্পর্শ।
নয় তোমাকে ছাড়া একাকী বসন্তের
এক মুহূর্ত।
মূল্যায়ন
সেই কবেন্মনে পড়ে তোমার
একদিন এক রাত্রি পার করে ছুটে এসেছিলে তুমি?
অথচ আজ
আমরা দুজন এক শহরে থাকি
ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা এ শহরে
কতো দূরবর্তী আমাদের অবস্থান!
একবারও মনে পড়ে, অনি?
স্তব্ধ সময়, অবরুদ্ধ স্বপ্ন, সঙ্গীহীন পরিবার
সমাজের ধিক্কার স-ব সয়েছি তোমার জন্য।
মনে পড়ে অনি?
কেন এমন করলে?
অর্থনঅভিমান সবই কি বড়
আমার চাইতে?
জন্ম
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে যে নিরন্তর অন্ধকার পৃথিবীর
সে অন্ধকার দূর করতে জানেনশুধুই ভালোবাসা।
সমুদ্রের তলদেশ থেকেও গভীর
ঘন নীলের চেয়েও নীল, অন্ধকারের আলোয় সোনালি ছটা,
যে ভালোবাসায় বাসা বাঁধে বিধাতা,
যে বিশ্বাসে টনক নড়ে অনড়ের,
যে অপেক্ষায় কাল কাটে আদি মাতা-পিতার;
যে মিলনের যন্ত্রণায় জাগ্রত হয় ঘুমন্ত পৃথ্বী
তুমি তাই নিয়ে জন্মেছো আমারই জন্য।
যে জন্মের পটভূমিকা কোন 'শিলাম্যান'
আবিষ্কার করতে পারেনি,
যে জন্মের পটভূমিকা কোন জ্ঞানতত্ত্ব দিতে পারেনি
যে জন্মের কারণ স্বয়ং করণিকও জানে না
তুমি কিংবা আমি অথবা আমরা
জন্মেছি এইসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে
যা কোন কমা, সেমিকোলন বা দাড়ির প্রয়োজন মানে না।
আসন্নতা
মনে হয় সরে যাচ্ছি আমরা সবাইন
পরস্পর হতে।
যেতেই তো হচ্ছে, তবে চলো দিগন্তরেখায়
যাকে দেখতে পাবো পৃথিবীর যেখানেই থাকি।
যে কোন মুহূর্তে যাকে চোখে পড়বে,
পাওয়ার ব্যাকুলতার মাঝেও বাস্তবতায়
আবিষ্কার করবো নিজেদের।
যেতেই তো হচ্ছে, তবে চলো সবুজ সীমান্তে;
কালো মেঘ, কুয়াশা, চন্দ্রালোকন
যেখানে অবশ্যই আবিষ্কার করবো পরস্পরকে।
আবারো বাস্তবতার উপলব্ধি
পরম ছোঁয়ায় ধুয়ে যাবে
পরস্পরের সুখানুভূতি।
চন্দন
এখন আমার অর্থের খুব প্রয়োজন
ক-তো দিন আগে তোমায় একটা উপহার দিয়েছিলাম
বিবর্ণ হয়ে তানএই যে চোখের সামনে।
নতুন একটা উপহারের সাথে
তুমি কি আমায় পুরনো ভালোবাসায় নেবে?
নাকি উপহারের আধুনিকতায় হারাবোন
আমাদের আমরা?
এখন আমার অর্থের খুব প্রয়োজন
নুন আনতে পান্তার দিন কবেই শেষ
বাড়ি আর গাড়ির চক্রে আবর্তিত আমরা;
শরীর আর শাড়ির মাঝে জড়াজড়ি হয়ে
ভালোবাসার নতুন ফসলে পূর্ণ আমরা
তবুও ঠোঁটের কালো তিলের ঢাকা পড়া লিপস্টিকেন
বলো নান
কী প্রয়োজন লিপস্টিক তোমার?
চন্দন-চর্চিত চামড়ায় রোজের প্রলেপ
এখন আমার সেই অর্থের খুব প্রয়োজন
আমায় একটু চন্দন কিনতে হবে।
অনুভব
আমি তোমায় ভালোবাসি আমার মতোন করে।
তুমি কেমননকী আসে যায়?
হতেই হবে আমায় তোমার
তুচ্ছ সবই, সবই রোদন।
তোমার চাওয়া মুক্ত হাওয়ানকী করে হয়?
বন্ধ হাওয়ায় রানি তুমি
বলবো আমি, করবো আমি
তুমি শুধুই মেনে যাবেনকেননা
আমি তোমায় ভালোবাসি আমার মতোন করে।
এটাই তবে ভালোবাসা? কী করে হয়?
ভালোবাসা, ভালোবাসা
তোমার মাঝে যা ভালো তাই
তোমার মতোন ভালোবাসা।
অভিশাপ
আকাশের মতো বড় হওন
তোমার প্রতি আমার আশীর্বাদ।
সেই বড় যখন দিগন্তরেখায় তাকালে
মনে হবেনআমায় সমস্ত সত্তায় পেয়েছো
অথচ
কাছে আসলেই দূরত্বে ব্যবধানে হৃদয় চূর্ণ।
আকাশের মতো বড় হও।
কখনো ছুঁয়ে দেখিনি তোমায়
বলা হয়নি, 'ভালোবাসি'
অথচ দিনমান একসাথে
হাসি-খেলা পাশাপাশি।
কী করে আজন্ম ছায়ানঅবিচ্ছেদ।
তারপর সময় অ-নে-ক
তুমি একে নাম দিলে 'স্পিরিচুয়াল লাভ'
বাস্তবে সংসার তোমার
থালা-বাটি-ঘটি,
আমি শুধুই খুঁজে বেড়াই
আবাল্য অধিকারের মুখচ্ছবি।
অনাগতের জন্য
পরদিন জেগেই ও জানালো :
ওরা যমজ ছিল।
আমার বুকের অবশিষ্ট শিরা-
উপশিরা ছিন্নভিন্ন হলো।
অঝর ধারায় বর্ষা এরপর
শেষ হয়নি আরন
আজও অবধিন
শুধুই বহমান।
গোপনে বললাম :
আমার স্বকীয়তায় অবলম্বন যদি থাকতো
তোমাকে ধরে রাখতাম আমি।
তোমাকে নয়ন
আমাকেই ফেলে এসেছি,
সেই অপারেশন থিয়েটারে
বিশ্বাস করো, রক্তপ্রবাহের কসম।
ব্যক্তিগত প্রশান্তি
আমায় হাত ধরে একটু বাইরে নিয়ে যাও
ক-তো দিন মুক্ত হাওয়ায় স্নাত হইনি
ক-তো দিন খোলা আকাশের নিচে
ঘুরপাক খেতে খেতে মাটিতে পড়িনি।
আমায় একটু নদীর কাছে নাও
ওর শান্ত পথ চলার স্পর্শে
প্রশান্ত হোক আমার চলান
প্রশান্তি নেমে আসুক জীবনধারায়।
আমাকে একটু কুয়াশাঘেরা ধানক্ষেতে নাও
স্নাত ধানের শিশিরে সিক্ত হোক আত্মা।
ভালোবাসার সিক্ততায় জয় হোক জীবনের।
আমাকে একটু জীবনের কাছে নাও
যেখানে মানবতা অপার মহিমায় মাথা তোলে
দু হাত বাড়িয়ে বলোনএসো, এসো
জীবনের গান গাও।
মুক্তির পথ
বটবৃক্ষের ছায়া মেলেনি কখনো আমার
ক্ষয়ে ক্ষয়ে কষ্টের অর্জনে আমি
ভালোবাসার শুভ্র কপোত যখনন
চারদিকে উজ্জ্বল; তখন আমার আকাশভরা বিষণ্নতা।
আমি জানি না কেন এমন হয়।
যখন আমার সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেই
তখনই চোখে ভাসে
রেললাইনের পাশে ছুঁড়ে-ফেলা মানবশিশু।
যখন ওকে ব্র্যান্ডের পাউডারের পেলব পরশ বুলাই
চোখে ভাসে বুভুক্ষের হাড্ডিসার দেহ,
উষ্ণ আলিঙ্গনে সিক্ততার দ্বারপ্রান্তে আমি যখন
আমার মনে পড়ে যায় নির্যাতিতের কথান
আকাশময় বিষণ্নতায়
আমি বিভোর হয়ে পড়ি।
কেন এমন হয়? মুক্তির নেই কি কোন পথ?
আমি মুক্তির পথ চাই।
স্তব্ধ সময়
আসমুদ্রহিমাচলে স্তব্ধ মানবতা
সুন্দরের স্পর্শ সুদূরপরাহত
রাত্রি এখন আতংকমান দুঃস্বপ্ন
কোথায় দাঁড়াবো আমরা?
যে সবুজ অঙ্গনের পরিকল্পনায়ন
পৃথিবীতে এসেছিল স্বপ্নীল মানবশিশু
তাকে কোথায় স্থান দেবো আমি?
যখন প্রশ্ন করেন
'মা, আমার নিরাপত্তা কোথায়?'
নির্বাক প্রশ্নে বাকরুদ্ধ আমি।
বেড়ি
মনন ও মস্তিষ্কে বাংলার শাশ্বত নারী।
মাঝে মাঝে এলোমেলো করে দেয়
কণ্ঠশীলন, শেষের কবিতা, সঞ্চয়িতা,
সঞ্চিতা আর- আর প্রিয় রবিবাবুর গান।
ভুলে যাই মন খারাপ হলে
শুনতে হবে গান
দেখতে হবে প্রকৃতি
এখন শুধুই সন্তান, স্বামী, সংসার।
আমার কবিতার খাতা, গানের সিডি
কিংবা পুষ্পোদ্যানের জগতে
প্রবেশ নিষেধ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১১:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




