somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইকরাম হোসেনের কবিতা

০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার উচ্চারণগুলি

আমার উচ্চারণগুলি প্রতিদিন পুড়ে যায় রোদের আগুনে
ভেসে যায় সন্ধ্যায়, দিঘির কালো জলের শান্ত ঢেউয়ে।

রোদরঙা কাগজে মোড়ানো প্রিয় প্রেমিকার উপহারের মতে
বিরাণ স্বদেশ পড়ে থাকে স্বপ্নের শিথানে; দিগ্বিদিকের চিহ্নবিহীন
শীতের নীল মাঠ নিয়ে অচেনা সব পাখিদের ব্যক্তিগত দুঃখ,
আমার করতলে, প্রার্থনার মতো প্রেম, বিবর্ণ শেষ সোনালি খড়টির জন্যও।

আমার উচ্চারণগুলি প্রতিদিন আমার প্রেমিকার চোখের জলের কারণ।



তোমার অনুপস্থিতি

গোলগাল পূর্ণিমার চাঁদ এসে দোল খেতে থাকে ঘোর অমাবস্যায়, তবু ভাঙা প্রতিশ্রুতির মিছিল চলতেই থাকে চলতেই থাকে।

সংক্রান্তির দিন গুনে গুনে লাভ নাই, বৈশাখ রৌদ্রই আনে শুধু, পাখিদের আনে না এখন আর। কুয়াশা পুকুরেই মিশে যায়, পার্বনের শিন্নীতে তার জলের জায়গা হয় না।

পাখি পাখি, ফাগুনের শিমুলতলা আজ নীল নীল। শিরায় শিরায় বিরহের অসুখ তবু নতুন পাতারা গাঢ় সবুজ। কষ্টদের বিশ্রামের জায়গা নাই।

দোলনা ছিঁড়ে পড়ে যায় চাঁদ, তোমার অনুপস্থিতি আবার ভরায় চরাচর, দিগ্বিদিক।



অনুভূতি

অনুভূতিদের ছুঁয়ে দেখি, চুপচাপ
দুয়েকটি ছোট্ট পুতুল, শুকনো পাতা, শুকনো গোলাপ
তাকে সাজানো টুকটাক।

মাঝরাত, শেষরাত, দুপুরের খণ্ডাখণ্ড
তুলে রাখি টুকরো রোদ টুকরো আঁধার।

বসন্ত বাদল শ্রাবণ, শীতের হাওয়া, খোলা নদী ছলছল
অথবা ধান-গ্রাম, দুঃখী পাথার নির্জন,
তুলে রাখি মনের গোপন ঘরে, দিনদিন।

বছরে বছর যায়, অনুভূতি-মানুষের ছায়ারা যায়;
ঝরে পড়ে কবিতা, থরে থরে,
মনের গোপন ঘরে।



নর-নারী

মেয়ে:

রাতের শরীর ভেঙে পড়ে থাকে ছোট ছোট আঁধারের টুকরা অবশেষে, অতিকায় পাহাড়ও কান্তিতে ঘুমায় মেঘেদের ছায়ায়, ধূসর চোখে রাজ্যের শিশির নিয়ে সহস্রাব্দ বসে থাকি তোমার প্রসন্নতার আশায়।

জলেরা ঘেটে গেলে অন্তরের বিষন্ন কালো, পুকুরধারে বসে থাকি দুঃখকথা শোনাবো মাছরাঙাকে তাই। ধেয়ে আসে শিকারি চিল, গাঢ় রোদে নেমে আসে শকুন।

ধুয়ে গেলে জোছনা, ধুয়ে গেলে রোদের দিন, ধুয়ে গেলে সব ধূসর জলে, তখন কি তোমার দিন হবে চোখ তোলার?

ছেলে:

অহরহ কেটে যায় সাড়া দেবার প্রহর, অথচ উদ্দাম রোদেদের ভালোবাসা থেকে মুখ ফিরিয়ে কিছুতেই চাইতে পারি না তোমার দিকে। জলে ঘাসে মেঘে বেলা শেষ হয়ে এলে টালমাটাল বর্ষা-নদীতে চলে আসে তোমার চোখের ঘোলা জল, অথচ নদীর নাচে আবারও পার হয়ে যায় প্রহর।

চড়্ইুয়ের চোখে সন্ধ্যা নেমে আসলে, আঁধারের চাদরে তারা গুনতে আমিও বসে যাই হাজার হাজার পাগলের সাথে, অথচ তোমার চোখের তারায় জল ঝিকমিক নত্র আসে যায় প্রতিরাতে। নিদারুণ আঁধার আমাকে টেনে রাখে।

গাড়া দেবার বাঁশি ভাসিয়ে দিয়েছি বর্ষায়।



বিরহকবিতা-১

আদিপাপ উঠে আসো শরীরে আমার; বেদনার, বিরহের
বন্ধ্যা সময় প্রতারক, বিশ্বাস ভঙ্গকারিণী অতএব,
পাপের বর্ণিল রঙেই অনন্ত সওয়াব; মুখে বিষ ঢেলে
মরে যাওয়া ভালো; বিষণè প্রেমিকার চুমুর তৃষ্ণায় মরে যাবার চেয়ে।
বুকে মুখ রেখে পাপ করে একবার এখন অসীমে
মরা হাজারবার, সংখ্যাহীন পুণ্যে নাই প্রতিচ্ছবি তার;
শ্বাসকষ্টে যে সুখ বাঁধা পড়ে, অনুপম তা, পুড়ে যাওয়া
পতঙ্গ জানে সেসব, ঝাঁপ দিয়ে আগুনে, আলোর আকর্ষণে।



বিরহকবিতা-২

ভেসে গেছে অভিমানী বাঁধ, আকাশ উড়াল দিলে অতঃপর;
মেঘপাখিদের পালক, দুয়েকটা ছড়ানো সন্ধ্যা, আর কিছু
নিরুত্তাপ স্মৃতি নিয়েই হারিয়ে যাই একেলা ধুলার পথে।

রাতফুলদের ঘুম নাই তাই তাদের সম্মোহনে হেঁটে যাই
দীর্ঘপথ আলোহীন। ঘরভাসানো স্বপ্নের দল এখন
আসে না আর, তোমার অবহেলা, প্রতিকারণহীন তাই।



শীতে প্রেমের কবিতা

কবে যে ভালোবেসে মেরে গেছো এক জনমের কালি আমার
অহংকারের চোখে মুখে। এখন সময় পুড়ে যায়;
সূর্যের দানব হেঁসেলে, সাথে উবে যায় জীবন তিলতিল
সাথে নিয়ে প্রেম, সাথে নিয়ে জনপদের নীরবতা, বেঁচে থাকার সাধ।
অসহ্য অক্টোপাস ভালোবাসার, ছাড়ে না তবু; ছাড়ে না তীব্র সবুজ
বনের বাদামি হয়ে ওঠা ক্রমে দেখে দেখে অলস সহজ
জীবনের প্রতি বেহায়া পপাত।

দূরপথ ঘুরে আসে সূর্য, শীতের জড়তা, স্বস্তিহীনতা
তবু ছড়াও উত্তাপ, ছড়াও উষ্ণতা, তুমি কী অবলীলায়!



ছেড়ে যাচ্ছি

ছেড়ে যাচ্ছি বলে এমন নয় যে আমার কষ্ট হচ্ছে,
হৃৎপিণ্ড দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে ঠিক আছে কিন্তু
তাই বলে চোখের জল ফেলে যাচ্ছি তা কিন্তু নয়।

আবারও আকাশ কালো হবে, সারারাত তারারা থাকবে না;
তুমি থাকলে না বলে তোমার মুখ কালোতে এঁকে যাবো,
দশদিকে বিরহের কালিতে তা কিন্তু নয়।

ছেড়ে যাচ্ছি বলে ভেঙে যাচ্ছি তা তো বলি নি
ছেড়ে যাচ্ছি বলে মরে যাচ্ছি তা তো বলি নি।



অভিশাপ

হৃদয় ঘেঁটে পাওয়া অবশেষে, নির্জনতার
ছায়াহীন মেঘ, এবং কয়েকটি বিফল বসন্ত বিরহ।
লাজুক পাখির মতো আগুন এক কোণে।
দ্রোহ, তীব্র রাতের বৃষ্টিতে ঘরহীন একেলা পেগাসাস।

পাপে ও পার্বণে একই পলাতক লালমুখি সন্ধ্যা;
পতনে পূর্বপুরুষের অভিশাপ, অমোঘ বাক্যের মতো।



কাঠমানুষ

ক্ষয়ে যাক কাঠমানুষ, ঘুণে খাক, নামুক সাতরঙা ধ্বংস,
পাহাড় উল্টে পড়ুক পথে, পুড়ুক জোনাকিদের আগুনে;
ভেসে যাক ভেসে যাক ভেসে যেতে থাক উল্টা স্রোতে।

শহরের যান্ত্রিক শীৎকার, কাঠমানুষের শুকনো চোখ;
বৈশাখি পুকুর হোক, ফেটে যাক ফেটে যাক, ফেটে যেতে থাক
কাঠমানুষের পাথর মন, বেরিয়ে যাক যরে জঞ্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৩০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×