তুমি কি আমার কথা ভাবো ?
তুমি কি আমার কথা ভাবো?
কঠিন প্রাচীরে কান পেতে শুনি
মুক্তির দিন একদিন আসবেই
সেইদিন তোমাকে আবারো কাছে পাবো।
যেখানে সূর্যের সোনালি বিচ্ছুরণ
এখনো হোঁচট খায়
পড়ন্ত বিকেলের বসন্ত যৌবনে
যেখানে ধ্বনিত পাখির কাকলি
প্রাচীরের বাঁধ ভেঙ্গে চলে যাবো
তুমি আর আমি পায় পায়
সেই নির্জনতায়।
রাত্রির নিঃসঙ্গতায় একা জেগে আছি
আমার চোখে নেই ঘুম,
চোখের সামনে প্রাচীরের গায়
স্বপ্নের পাখিগুলো ডানা ঝাঁপটায়
মুক্তির অন্বেষা খুঁজিতেছে পথ
সুপুষ্ট মৌসুম।
এখনো আমার চোখে নেমে আসে
সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশ,
পলাশের লাল রঙে রঙিন পদ্মাপার
পারভাঙ্গা তীরে নব কিশলয়ে
পালতোলা নায়ে স্বচ্ছ সলিলে
গোধূলির সুস্পষ্ট প্রকাশ।
এই নির্জনতায় বসে বসে ভাবি
আবারো তোমায় কাছে পাবো
গানে আর কবিতায় কাটাবো প্রহর
মধুরাত এনে দিবে চাঁদের সুষমা
তারার মালিকা গেঁথে কবরী সাজাবো।
তুমি কি আমার কথা ভাবো?
আমার কথা কি ভাবো?
****************************************************
কবিপরিচিতি
কবি মিজানুর রহমান শমশেরী ৮ই কার্তিক ১৩৫৩ বঙ্গাব্দে (১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে) ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার অন্তর্গত সুতারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৯ আষাঢ় ১৩৮৮ বঙ্গাব্দে (১৪ জুলাই ১৯৮১) বিয়ের পূর্বরাতে হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকালে প্রয়াত হোন । তবে এ-ও জনশ্রুতি আছে যে, আরাধ্য মানবীকে না পেয়ে বিয়ের আগের রাতে তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেন। তাঁর পিতার নাম শমশের উদ্দিন। সর্বজ্যেষ্ঠা এক বোন ও পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে শমশেরী ছিলেন পঞ্চম।
একান্ত কৈশোর থেকেই লেখালেখির প্রতি শমশেরীর আগ্রহ গড়ে ওঠে। সাহিত্যসাধনা ও সাহিত্যচর্চা ছিল তাঁর প্রাণ। স্কুল-কলেজের বন্ধু-বান্ধবী ও এলাকার তরুণ-কিশোরদের নিয়ে গড়ে তোলেন সাহিত্যচর্চা বিষয়ক আসর 'পদ্মাপারখেলাঘর'। এর পূর্বে আদমদজী নগরের 'অগ্নিবন্যা খেলাঘর' আসরের সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে তিনি তাঁর খেলাঘর জীবন শুরু করেন।
শমশেরী ৭০ দশকের কবি। ধূমকেতু, দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সমাচার সহ তদানীন্তন গুটিকতক জাতীয় দৈনিকের সবকটাতেই এবং অন্যান্য লিটল ম্যাগাজিন ও সাময়িকীতে তিনি নিয়মিত লিখতেন। দৈনিক বাংলার বাণীতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে লিখতেন উপ-সম্পাদকীয়।
তাঁর জীবদ্দশায় একটিমাত্র কাহিনীকাব্য 'অশ্রুমালা' প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির আয়তন সুবিশাল। এই পাণ্ডুলিপিতে যে বইগুলোর নাম উল্লেখ আছে তা হলো : জীবন যন্ত্রণা, বসন্ত পরাগ, একাত্তরের চিঠি, শিকল ভাঙ্গার গান (গান) ও হিজলফুলের মালা (কাহিনীকাব্য)। এখানে রয়েছে সর্বমোট ১৩৭টি কবিতা, ৪০টি ছড়া ও ৫২টি গান।
শমশেরীর কবিতায় কঠিন জীবন-যুদ্ধ ও ঘাত-প্রতিঘাতের এক চরম নিষ্ঠুর বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছিল। স্বাধীনতা-উত্তর কালে এদেশের মানুষের মধ্যে বিরাজমান নিদারুণ দুঃখ-দুর্দশা, অনাহার, নৃশংসতা, দুর্নীতি- এসবও অতি প্রকটভাবে তাঁর কবিতায় উঠে এসেছিল। তাঁর কবিতায় সুকান্তের সুর সুস্পষ্ট, তিনি এতোখানিই সুকান্ত-প্রভাবিত হয়ে উঠেছিলেন যে, তাঁর বাক্যের গাঁথুনিতেও সুকান্তের কবিতার শব্দগুচ্ছের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
আগেই বলেছি, শমশেরী ৭০ দশকের কবি। নির্মাণ ও বিষয়-বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই সময়ের কবিতার সাথে আজকের দিনের কবিতার বিস্তর ব্যবধান। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে অনেকেই হয়তো তাঁর বেশ কিছু কবিতাকে 'খাঁটি আধুনিক' কবিতা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধাবোধ করবেন। আজকের দিনের বিচারে তা 'আধুনিক' হোক বা না হোক, তাঁর সময়ে নিশ্চয়ই এগুলো 'আধুনিক' কবিতাই ছিল। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে কবিতার চেয়ে ছড়ায়ই শমশেরীর হাত অধিক পরিণত হয়ে উঠেছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




