somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা খুব গরীব ছিলাম

০১ লা নভেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার মায়ের একটা টিনের স্যুটকেস ছিল, যার রং ছিল জংপরা সবুজ
কাড়ের এক কোণে ওটা সযত্নে তুলে রাখতো মা, আর মাঝে মাঝে নামিয়ে তা থেকে
বের করতো পাতাবাহারের ছাপাঅলা একটা লাল পলিয়েস্টার শাড়ি;
আমরা ছোটো ছোটো ভাইবোনেরা উৎসুক চোখে দেখতাম স্যুটকেসের ভিতরে
মায়ের মহামূল্য সম্পদগুলো- গোলমতো একটা সিঁদুরের কৌটো ছিল,
আমি এখনো জানি না আমার মুসলমান-জননীর কী প্রয়োজন ছিল ঐ সিঁদুরের।
আর যা যা ছিল, যদ্দূর মনে করতে পারি, কয়েকটা স্বর্ণের বালা, দুল, কিছু চুড়ি;
একটা বহুদিনের পুরোনো তিব্বত স্নো'র কৌটোও ছিল, হয়তোবা।

আমার মায়ের স্যুটকেসটা জীর্ণ হতে হতে ওর আংটা-টা হয়ে গিয়েছিল খুব ঢিলে;
একটা তালাও ছিল তাতে, চাবিটা কোথায় যেন লুকিয়ে রাখতো মা,
কেননা, তার আঁচলের গোছায় কয়েকটা চাবি ঝনাৎ শব্দ করতো, স্যুটকেসের চাবিটা
নিশ্চয়ই ওখানে দেখি নি।

মা যখন ভাঙা স্যুটকেসটা নামাতো, ওটা খুব ঝনঝন বা ঠনঠন শব্দ করতো।

মাঝে মাঝেই মাকে দেখতাম স্যুটকেস নামিয়ে
তা থেকে শাড়িটা বের করতো, আর মলিন মুখে তা পরতো। শাড়ি পরে আমার মা
কোথাও বেড়াতে না গিয়ে রসুই ঘরে ঢুকতো রান্না করতে, কিংবা ধান ভানতে,
কিংবা রাস্তার ওপার হতে নাড়ার আঁটি এনে গুছিয়ে রাখতো দুয়ারে।
তারপর বাবা যেদিন মেঘুলা বাজার থেকে একটা নতুন কাপড় কিনে আনতো
মায়ের জন্য, মা তার পরনের শাড়িটি খুলে, বহু যত্নে ভাঁজ করে ভাঙা স্যুটকেসের
ভিতর সাজিয়ে রাখতো। শৈশব হতে শুরু করে আমার ১৩-১৪ বছর বয়সে মায়ের
মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাকে শাড়িটি পরতে দেখেছি।
মা আমাকে প্রায়ই বলতো, 'আমার এই শাড়িড্যা তর বউরে দিমু।' মায়ের বালা,
চুড়িগুলোও কোনো একদিন আমার বউয়ের হবে, মা বলতো।
আমি পরিবারের বড় ছেলে, এজন্য এটাই নিয়ম।

আমরা সে-সময় অতিশয় গরীব ছিলাম। আমার বাবা ছিল একজন দরিদ্র চাষা,
যার নিজের কোনো জমি ছিল না; আমার মা সেই দরিদ্র চাষার আহ্লাদী
ও লক্ষ্মী স্ত্রী ছিল, যাকে পরনের কাপড়ের অভাবে প্রায়ই তুলে-রাখা
শাড়ি পরতে হতো। আমরা অতিশয় গরীব ছিলাম, আর আমার বাবা ও
মায়ের ছিল দুরবিন চোখ- তার সন্তানেরা ভবিষ্যত পালটে দেবে।

৩০ কি ৩২ বছর পেরিয়ে গেছে। মায়ের ভাঙা স্যুটকেসটা কোথায় যে হারিয়ে গেছে, জানি না। পাতাবাহারের ছাপাঅলা লাল শাড়িটা আমার চোখে এখনো দিব্যি ভাসে।
ওটার খবরও জানি না।

কাববোর্ডের ভিতর থকে থকে সাজানো স্ত্রীর শাড়িগুলোর দিকে তাকাই-
অকস্মাৎ বেহেশ্‌ত হতে নেমে এসে আমার মা যদি এগুলো দেখতে পেতো,
আনন্দে অজ্ঞান না হয়ে সে যেতোই না- তার গরীবের ঘরে আজ কী
সুন্দর সুন্দর চাঁদ ফুটেছে, একঝাঁক নাতি-নাতনি, যারা জানে না
তার দাদিমা একদিন কত্তো গরীব ছিল, যাকে পরনের কাপড়ের অভাবে
প্রায়ই তুলে-রাখা শাড়ি পরতে হতো।



সর্বত্র আমার মা :

অন্বেষা Click This Link

শৈশবের দুঃখগুলো Click This Link

মাকে আমার পড়ে মনে Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৩৬
৫২টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×