অপরিচিতের নাম
ধরণিতে,
পরিচিত জনতার সরণিতে।
১
এর আগে আমি এক সুশ্রী অভিনেত্রীর প্রেমে পড়েছিলাম
যাঁর কবিতাগুলো তাঁর রূপের চেয়েও অধিক হৃদয়ভেদী ছিল।
তাঁকে প্রেম প্রকাশের আগেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন- প্রেম তাঁর
নেশা নয় উঠতি কবিদের মতো। তিনি বলেছিলেন- ‘কবিতা লিখুন।’
কবিতা লিখতে লিখতে আমি অন্ধ ও অসাড় হয়ে বহুকাল মুখ থুবড়ে পড়ে
ছিলাম কোনো এক অরণ্যের রুক্ষ সরণিতে। দূর থেকে পবিত্র ধ্বনির
মতো ভেসে আসে তোমার অমৃত কণ্ঠসুর- ‘মনমাঝি নাইয়া- ’
চমকে সম্বিৎ ফিরে পেলে নিজেকে আবিষ্কার করি তীব্র ছুটে যেতে
তোমার সুরের উৎসে। তুমি ধীর রাগে গাইছিলে- ‘ভবনদীর কুল...’
হে সুন্দরী গায়িকা, রহস্যময়ী কবিতা-কন্যা, তুমি তো কবিতা
বোঝো না, বোঝো না কবিকে; তুমি যখন গাও, শহরের বাগান
যখন মূর্ছনায় বুঁদ হয় তোমার পায়ের ছন্দে, দুপুরের অলস পৌরুষে
তখন সচকিত জেগে ওঠে ঝড়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তোমাকে খুঁজি-
তোমার ফ্যানপেইজ- নিত্যরঙিন শাড়ি ও সাজনে তোমাকে
ভিন্ন ভিন্ন রূপে খুঁজি- কাশবন, নদীচর- শহীদ মিনার- তোমার
সুনির্মল চোখ আমাকে কাঁদায়, গভীর দৃষ্টিতে আমি ডুবে যাই-
হায়- তোমাকে নিয়ে আজও কোনো কবি কবিতা লিখেন নি,
কোনো গান লেখা হয় নি তোমাকে নিয়ে- অথচ একদিন আচানক
অকল্যান্ড ভ্রমণে বের হয়ে প্রেমিকের পাশে বসে বিয়ের কাজটি
সেরে ফেললে- তুমি তখন আনন্দে উদ্বেলিত- তখন বাংলাদেশের
জীর্ণ কুটিরে জনৈক কবির রক্তাক্ত হৃৎপিণ্ড মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল
তোমাকে মানুষ জানতো না। কেউ কেউ জানতো। আজ জানবে অনেকে।
তোমার এই রূপ যেদিন থাকবে না, সুশ্রী অভিনেত্রীও যেভাবে
বিগত-যৌবনা হয়েছেন- সেদিন আমারও চোখ থাকবে না তোমার
শাড়ির ভাঁজ আর শরীরের রহস্য পরতে পরতে পরখ করার।
কিন্তু জেনে রাখো- সেদিন তোমার একটি বাসনা খুব তীব্র হবে-
কোনো এক কবি সেই বহুকাল আগের মতো প্রতিটা অলস দুপুরে
তোমাকে খুঁজে খুঁজে যেন বিধূর সন্ন্যাসী হয়। সেদিনও ‘তোমার’
কবিতারা বেঁচে থাকবে- আর বিষণ্ণ ফুলের মতো আমার সমাধিতে
লুটিয়ে পড়ে নিরন্তর নিভৃতে কাঁদবে- নীরবে কেবলই কাঁদতে থাকবে।
২৮ এপ্রিল ২০১৪
২
কোনোদিন যদি মনে হয়
মিছেই নষ্ট করেছি সময়
গানের পেছনে,
তোমার গনগনে
রূপের উত্তাপে ধ্বংস করেছি নিজেকে;
যদি মনে হয়-
এসব বালখিল্য কবিতারা কবির জন্য নয়
তবুও অগ্নিভূক পোকাদের মতো
ঝাঁপ দেব তোমার আগুনে।
যদিবা অগণন খ্যাতির ভিতরে
কোনো একদিন ‘তোমার’ কবিতারা কলঙ্কিত তারা হয়ে
এঁকে দেয় দুর্লঙ্ঘ্য ক্ষত-
তবুও তোমাকেই চাই- তোমার প্রেমেতে কবিতার অমরত্ব।
তবু তুমি ধরে রেখো সুর, রূপের দ্রোহ
তোমাতে আমার সন্ন্যাস, তোমাতেই ধ্যানের সমারোহ।
২৯ এপ্রিল ২০১৪
অমিত সম্ভাবনাময়ী এ সুকণ্ঠী ও সুশ্রী গায়িকার নাম সিঁথি সাহা। আমি অবাক হচ্ছি এ কারণে যে এরকম ট্যালেন্টেড একজন গায়িকাকে আমরা খুব কম মানুষই চিনি- এমনও হতে পারে যে আমাদের এই ব্লগ বা আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ডদের মধ্যে হয়তো অনেকেই তাঁর নাম আজ প্রথম বারের মতো জানলেন। আমি অবশ্য এর আগে সিঁথি সাহাকে নিয়ে এই ব্লগে তিনটা পোস্ট পাবলিশ করেছিলাম, এবং ফেইসবুকেও বেশ কয়েকবার তাঁকে নিয়ে স্টেটাস দিয়েছি। তাঁর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ‘কল্পনা’, ‘অলস দুপুর’, ‘প্রার্থনা’, ‘পহেলা বৈশাখ’, ‘বৈঠা’, ‘তুমি প্রথম তুমি শেষ’, ‘ভেবে ভেবে’, ‘না বলো না’, ‘পূর্ণতা’, ইত্যাদি অন্যতম। আমার জানা মতে এ পর্যন্ত তাঁর দুটো একক এ্যালবাম বের হয়েছে। ‘প্রজাপতি’ ছায়াছবিতে তাঁর ‘টাকা’ গানটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। তাঁর কণ্ঠ দরাজ ও শক্তিশালী।
ইউটিউবের লিংক কাজ করছে না। নিচের লিংকে ক্লিক করে সরাসরি ইউটিউবে গিয়ে তোমার দেয়া শেষ কথা গানটি শোনা যাবে। এ গানের কোনো ভিডিও নেই। সিঁথি সাহার স্টিল ফটোগ্রাফ দিয়ে এটি করা হয়েছে।
কোনো এক সুশ্রী গায়িকাকে নিয়ে কবিতা লিখেছি, একদিন এটি আমার জন্য খুব বিব্রতকর হতে পারে। নিজেকে খুব তুচ্ছ, খাটো মনে হতে পারে, কলঙ্কচিহ্নের মতো আমার সকল খ্যাতিকে ধূলায়িত ও ম্লান করে দিতে পারে। এ গায়িকার নাম-ডাক যদি খুব অচিরেই বাংলাদেশের হৃদয় হতে মুছে যায়, আর কবি হিসাবে আমার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে- সিঁথিকে নিয়ে লেখা আমার কবিতা যেমন মূল্য পাবে না, তেমনি এক অখ্যাত গায়িকাকে নিয়ে কবিতা লেখার দায়ে পদে পদে আমাকে হয়তো ভর্তসনার শিকার হতে হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সিঁথিকে মানুষ তখন আবার নতুন করে খুঁজবেন, সিঁথি আবার জেগে উঠবেন। এর উলটোটা যদি ঘটে- এ গায়িকা বাংলাদেশের শীর্ষে পৌঁছে গেলেন, আর কবি হিসাবে আমি আজকের মতোই অজ্ঞাত ও অখ্যাত থেকে গেলাম, সিঁথিকে নিয়ে লেখা আমার কবিতা কোনো মূল্য পাবে না; প্রিন্সেস ডায়ানা, ক্লিওপেট্রা, মেরিলিন মনরো, ঐশ্বরিয়া রাইকে নিয়ে সবাই যা খুশি লিখবেন তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তবু আমি এটাই চাই- যাতে আমার এ লেখাটি সেদিন জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে জেগে ওঠে- হ্যাঁ, আমিই সর্বপ্রথম সিঁথিকে আবিষ্কার করেছিলাম, সিঁথি একদিন শীর্ষে উঠবেন- আমি ছাড়া আর কেউ সিঁথির মধ্যে এ সম্ভাবনা আবিষ্কার করতে পারেন নি।
সিঁথি সাহা তাঁর রূপের কারণে নয়, কণ্ঠমাধুর্যের কারণেই মানুষের হৃদয়ে স্থান লাভ করবেন, অনেক অনেক দিন বেঁচে থাকবেন।
***
পরিশিষ্ট
***
সিঁথি সাহার কয়েকটি মিউজিক ভিডিও নিচে যুক্ত করা হলো। ‘বৈঠা’ আমি রিমিক্স করেছি। ‘বৈঠা’ এবং ‘তোমার দেয়া’ গান দুটোর কোনো মিউজিক ভিডিও করা হয়েছে কিনা জানি না। সিঁথি সাহার স্টিল ফটোগ্রাফ দিয়ে ও দুটোর মিউজিক ভিডিও আমার বানানো।
অলস দুপুরে
কল্পনা
এলো এলো বৈশাখ
প্রার্থনা
বৈঠা – মনমাঝি নাইয়া
তোমার দেয়া শেষ কথা মনে পড়ে যায়
সিঁথি সাহাকে নিয়ে আমার আগের পোস্ট ও ফেইসবুক স্টেটাস সমূহ
সিঁথির সাহার 'বৈঠা'র খোঁজে; অতঃপর আরো কিছু গান
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৫:৩৪
সিঁথি সাহার গাওয়া একটি গান - বৈঠা নে তোর মনমাঝি নাইয়া
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:৪৯
সিঁথি ও আনানের গান
১১ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৩১
সিঁথি সাহার কণ্ঠে নূরী পাগলার গান : মনমাঝি নাইয়া ফেইসবুক
16 September 2010 at 02:11
সিঁথি সাহার কণ্ঠে নূরী পাগলার গান : মনমাঝি নাইয়া
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১১:৩২
সিঁথি সাহার ফেইসবুক ফ্যানপেইজ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ৮:০২