somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

.

০৩ রা মে, ২০২০ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুদ্ধক্ষেত্রে বুকে গুলি খাওয়া বা বেয়নেটবিদ্ধ সৈনিকও ক্ষিপ্রবেগে উঠে আক্রমণকারী শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়, কিংবা অসহায় অবস্থায় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কেন? কারণ, আক্রমণকারীকে হঁটিয়ে সে নিজের জীবন রক্ষা করতে চায়। কিংবা সে পালিয়ে বাঁচতে চায়। বাঁচাটাই মুখ্য। গুলি খাওয়ার পর কেউ বসে থাকে না- আমার মরনের সময় হইছে, একটু পর তো মরেই যাব, আর কষ্ট করনের দরকার নাই।

করোনায় যখন সবাই নিঃস্ব হতে শুরু করবে, অর্থাৎ, ঘরে খাবার নাই, ক্ষুধার যন্ত্রণা যখন সহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে, তখন করোনার ভয় কাউকে ঘরে আটকে রাখতে পারবে না; তখন খাবারের সন্ধানে মানুষ ঘর থেকে ছিটকে বাইরে বেরিয়ে পড়বে। যখন ক্ষুধায় পেট কামড়াতে থাকবে, যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকবে, করোনা ভাইরাসে কিলবিল করা এক থালা খাবার যদি সামনে পাওয়া যায়, তা হবে সবচাইতে লোভনীয় ও পরম আরাধ্য, ক্ষুধার্ত মানুষ সেই করোনা গুলানো খাবার মুখে তুলে নিবে। করোনায় সে মরবে না বাঁচবে, সেই ভাবনা তখন তার মাথায়ই আসবে না।

একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লক ডাউন চলতে পারে। একেক দেশের জন্য লক-ডাউনের সময়কাল একেক রকম হবে। আমেরিকা হয়ত ৫ বছর ঘরে বন্দি থেকেও খাবার যোগান দিতে পারবে। চায়না, ইটালি, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্সও হয়ত দীর্ঘকাল ধরে ঘরে বন্দি থেকেও নিয়মিত খাবার বা ত্রাণসামগ্রী পেয়ে অনায়াসে বেঁচে থাকতে পারবে। ইন্ডিয়া, আফ্রিকার মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এই সুখ-বিলাসিতা আকাশ-কুসুম ভাবনার মতো। বাংলাদেশে কী পরিমাণ খাবার মজুদ আছে, এই তথ্য আমার জানা নেই। ধরি, ২ বছরের খাবার আছে। সেই ২ বছরের সুবিধা ১৮ কোটি জনগণের প্রত্যেকের দ্বারে পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু, কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সেই ত্রাণ সহায়তা সবার কাছে পৌঁছবে কিনা, তা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ রয়েছে (বিগত মাস দুয়েকে যেভাবে ত্রাণ সামগ্রী চুরি হয়েছে, তার আলোকে বললাম)। হয়ত একটা শ্রেণির লোক এই ত্রাণের সুবিধা পুরোপুরি পাবে, কিন্তু যারা রোজ এনে রোজ খায়, তাদের শতভাগ লোকের কাছে ২ বছর ধরে ত্রাণের মাল পৌঁছে দেয়া নানাবিধ কারণে প্রায় অসম্ভব হবে। সরকার ২ বছরের জন্য ত্রাণ ভাণ্ডার উন্মুক্ত করে দিলেও কোনো কোনো লোভী ও স্বার্থপর ব্যক্তি এই দাবি তুলে বসবে - আমারে ত্রাণের ২৫% ভাগ দিতে হবে; হয়ত, এই মহামারিকে তারা আখের গোছানোর একটা সুবর্ণ সুযোগ ভেবে এই দাবি করে বসবে। এই ত্রাণ যে মূলত অসহায় মানুষের জন্য, এটা তারা ভাববে না; তারা ভাববে, না খেয়ে মরার অধিকার কেবল গরীব মানুষেরই। সে ২৫% ভাগ নিবে প্রকাশ্যে, বিরাট একটা ভাগ নিবে চুরি করে। বাকি কত ভাগ জনগণ পাবে, তা খুব চিন্তার বিষয়। বিগত দুই মাসেই মানুষ যেভাবে হাহাকার করতেছে, সেনাবাহিনী, পুলিশের উপস্থিতিতে সৎ ও কর্মঠ মানুষ দ্বারা ত্রাণ বিতরণ করা না হলে অসহায় মানুষের হাহাকারে ভবিষ্যতে আকাশ-বাতাসে আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

প্রকৃতির সাথে আরো ভয়াবহ যুদ্ধ করেই মানুষ আজকের সভ্যতায় পৌঁছেছে। জ্বর সর্দি ডায়রিয়া ক্যান্সার এইডস ইত্যাদির মতোই একসময় করোনা একটা কমন রোগ হিসাবে গণ্য হবে। অন্য রোগের জন্য যেমন লক ডাউন লাগে না, একসময় করোনার জন্যও লক ডাউন লাগবে না। মানুষ মরবে, বাঁচবে, মরবে, বাঁচবে, এভাবে পৃথিবী চলতে থাকবে, তার মধ্যেই আবার দেশে দেশে যুদ্ধও বাঁধবে। সেই যুদ্ধে শত্রুর আক্রমণের সাথে করোনার আক্রমণ যোগ হবে মাত্র, অতীতে যেমন বিশ্বযুদ্ধে ম্যালেরিয়ার আক্রমণ হতো।

করোনার প্রকোপ আর কতদিন পৃথিবী জুড়ে থাকবে, কখন তা পিক-এ উঠবে, কখন নামবে তা নিয়ে প্রতিদিনই অজস্র মতামত ও তত্ত্ব উঠে আসছে। হতাশার ব্যাপার হলো, কোনো তত্ত্বই বা পূর্বাভাসই আজো সঠিক প্রমাণিত হলো না; শুরুতে কিছুদিন তা নিয়ে খুব আশাব্যঞ্জক প্রচারণা চলে, একসময় তা স্তিমিত হয়ে যায়। পরিস্থিতি যে 'অ্যাম্বিগুয়াজ' বা ঘোলাটে, বা অনিশ্চিত, এ ব্যাপারে মোটামুটি সবাই একমত।

তবে হাস্যকর কথা হলো, এত এত পর্যালোচনা, তত্ত্ব, অ্যাসেসমেন্ট বা গবেষণার মধ্যে কারো কারো কোনো কোনো মতামত বা গবেষণার ফল হয়ত করোনার ভবিষ্যত বিস্তার ও তিরোধানের সাথে মিলে যাবে। সেটাও হবে বিরাট এক ইতিহাস- তখন তারা এ নিয়ে খুব ফালাফালি করবে - দেখো, আমি আগেই বলছিলাম- করোনা এতদিন থাকবে, দেশে এটা ঘটবে ওটা হবে, ইত্যাদি। তখন সেইসব ক্লাউনকে নিয়া আবার কিছু ডাফার মাতামাতি শুরু করে দিবে। আদতে, এগুলো কারো কোনো মিরাকিউলাস পাওয়ার না, যা বলবে তাই ঘটবে। অনেকের মধ্যে একজনেরটা লাইগ্যা যাওয়ার মতো, খেলায় হারজিতের বাজি ধরার মতো (বেটিং) - কেউ না কেউ জিতবেই, এবং তার পক্ষে একটা পার্সেন্টেজ বাজি ধরবেই।

করোনার ভবিষ্যত কী হতে পারে, এই হলো আমার সাদামাটা মতামত। তাই শিরোনামটাও সাদা রাখা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×