আজ বাংলাদেশের ছায়াছবি ‘স্বরলিপি’ ও ভারতের ছায়াছবি ‘দেয়া নেয়া’র কয়েকটি গান শেয়ার করবো, যেগুলো গান হিসাবে কালজয়ী, এবং রোমান্টিকতায় সেরা। এই গান এবং ছবির কিছু বিশেষত্ব আছে, যা এই পোস্ট পড়ার পর বোঝা যাবে এবং সবাই অবাক এবং চমৎকৃত হবেন বলে আশা করছি। এ গানগুলো শোনার আগে ছবি দুটোর গল্পটা শোনা যাক। এগুলো খুব পুরোনো ছবি, অনেকেই হয়ত দেখেছেন, তাই কাহিনি অসম্পূর্ণ রাখছি না। পুরোনো বই কিংবা পুরোনো ছায়াছবির রিভিউতে কাহিনি অসম্পূর্ণ রাখা হলে ওগুলো পড়তে আমার বিরক্ত লাগে। সাম্প্রতিক কোনো এক অতি পুরাতন বইয়ের রিভিউ পোস্টে অনুরোধ করার পরও কোনো একজন রহস্যটা খুলে বলেন নি বলে বড্ড অভিমানে মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে আছে। যাই হোক, এই গল্প পড়ার পর ছবিটা না দেখলেও চলবে। আর যদি দেখেনও, মজা আরো বেশি পাবেন বলেই আমি মনে করি।
ছবিসূত্র : ছায়াছবি 'দেয়া নেয়া' থেকে নিজস্ব স্ক্রিনশট
চলুন, গল্প শুনি।
রাজ্জাকের বাবা একজন বিরাট শিল্পপতি। নিজের কাজে সহায়তা করার জন্য বাবা রাজ্জাককে তার অফিসে নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু রাজ্জাক অফিশিয়াল কামকাজ বন্ধ করে সারাক্ষণ গানের পেছনে লেগে থাকেন এবং বাবার অগোচরে সঙ্গীত জগতে নাম করতে থাকেন; একসময় একজন সঙ্গীত পরিচালকও হয়ে ওঠেন। দুটো গান রেকর্ড করার জন্য তড়িঘড়ি করে ঢাকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন রাজ্জাক। বাবার ভয়ে বাবাকে না বলেই লা লা লা না না না সুরে গুনগুন করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথে বাবার সামনে পড়েন। ব্যাঘ্রমূর্তি বাবাকে দেখে রজ্জাক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। এ সময়ে বাবা-পুত্রের মধ্যে বেশকিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়, যার উপর ভিত্তি করে রাজ্জাকের জীবন অন্যদিকে মোড় নেয়। যথারীতি, অসহায়া জননী বাবা-ছেলে দুজনকেই শান্ত করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
গম্ভীর ও রাগত স্বরে বাবা জিজ্ঞাসা করেন, ‘কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’
মাননীয় স্পিকার বনে যাওয়া রাজ্জাক আমতা আমতা করে কোনোমতে জবাব দেন, ‘ঢাকায়’।
বাবা কঠিন সুরে বলেন, ‘পড়ে যেও।‘ তারপর সামনে যেতে যেতে রাজ্জাককে বলেন, ‘এদিকে এসো।‘ এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘ব্রিফকেসটা রাখো’।
ব্রিফকেসটা নীচে রাখার পর বাবা জিজ্ঞাসা করেন, ‘অফিসে যাও নি কেন?’
- ‘একটু কাজ ছিল।‘
- ‘হেল উইথ ইয়োর কাজ!’ বাবা গর্জে ওঠেন।
- ‘এফএনএফ ব্র্যান্ডের বাজেটটা আজ হ্যান্ড ওভার করার কথা ছিল। করোনি কেন?’ তারপর বাবা তার পকেট থেকে একগাঁদা কাগজ বের করতে করতে বলেন, ‘আমার অফিসের কাগজগুলো তোমার বাঁদরামো করার জন্য নয়। এসব হিজিবিজি করে রেখেছ। এগুলো কী?’ বলেই কাগজের গাঁদা রাজ্জাকের দিকে ছুঁড়ে মারেন। রাজ্জাক দক্ষ ফিল্ডারের মতো ক্যাচ তুলে নেন। রাজ্জাক পাতাগুলো দেখে কাঁপা স্বরে বলেন, ‘স্বরলিপি!’ কথা শেষ হওয়ার আগেই বাবা ধমকে ওঠেন, ‘ড্যাম ইয়োর স্বরলিপি!’
রাজ্জাকের মা ভয়ার্ত স্বরে স্বামীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী হয়েছে? আমাকে বলো।‘
বাবা বলেন, ‘তোমার এই গুণধর ছেলের জন্য আজ আমার নেট ১ লাখ টাকা লস হয়ে গেল।‘ ক্ষিপ্ত স্বরে রাজ্জাকের উদ্দেশে বাবা বলতে থাকেন, ‘একটা টাকা রোজগার করার নামগন্ধ নেই, টাকা নষ্ট করতে লজ্জা করে না তোমার?’
রাজ্জাক একটু সাহসী হয়ে ওঠেন। কণ্ঠে সামান্য জিদ এনে বলেন, ‘ঐসব টাকা রোজগারের ফন্দি ফিকির আমার মাথায় আসে না।‘
বাবা পালটা জিজ্ঞাসা করেন, ‘ফূর্তি করে ঘুরে বেড়িয়ে টাকা নষ্ট করার খুব ফন্দি ফিকির মাথায় আসে, না?’
- ‘আমি ফূর্তি করে ঘুরে বেড়াই নি। আমার গানের রেকর্ডিং ছিল।‘
- ‘রেকর্ডিং?’ বাবা আশ্চর্য হন। ‘কীসের রেকর্ডিং?’
- ‘গানের!’
- ‘গান!!’ বাবা ধিক্কার দিয়ে ওঠেন, ‘তুমি গান করো? কোনো ভদ্রলোক নিজের কাজকম্ম ফেলে রেখে গান করতে পারে? ছিঃ! তোমাকে আমার নিজের ছেলে বলে ভাবতেও আই ফিল অ্যাশেইম্ড।'
- ‘বাবা!!’ রাজ্জাকের গলায় আর্ত স্বর ফুটে ওঠে।
বাবার কণ্ঠে গান সম্পর্কে অবজ্ঞা প্রকাশ পেতে থাকে, ‘গান! গান হলো ভিখিরির ভিক্ষা আদায়ের ফিকির। মায়ে তাড়ানো বাপে খেদানো রংবাজ বেকার ছোকরাদের সময় কাটানোর ফন্দি।‘
- ‘গান সম্বন্ধে আপনার এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।‘ বাবার কথায় আহত স্বরে রাজ্জাক বলেন।
- ‘নৌ। আই অ্যাম সেন্ট পার্সেন্ট রাইট।‘
রাজ্জাক একটু চড়া সুরে বলেন, ‘সারাজীবন লোহালক্কড় ঘেঁটে আর টাকা রোজগারের ফন্দি ফিকির করে গান বুঝবার মতো মনের অবস্থা আপনার নেই।‘
- ‘বাপের মুখের উপর এসব বড়ো বড়ো কথা বলার আগে বাপের শেলটারটি ছেড়ে দিয়ে বাইরে গিয়ে কিছু করে দেখাও।‘ বাবা দাঁত কটমটিয়ে বলেন।
- ‘ডু ইয়্যু মিন ইট?’ রাজ্জাক বলেন।
- ‘ইয়েস। আই মিন হোয়াট আই সে।‘ বাবার উত্তর।
- ‘বেশ! আমি প্রমাণ করবো আপনার এ ধারণা ভুল। গান যারা গায় তারা শিল্পী। তারা ভিখিরিও নয়, রংবাজ বেকারও নয়। এ আমার জীবনের প্রতি, আমার সাধনার প্রতি মস্ত বড়ো অপমান। এত বড়ো অপমান সহ্য করে এ বাড়িতে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।‘
এই বলে ব্রিফকেইস হাতে নিয়ে হড়হড় করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান রাজ্জাক। তার মা পেছন থেকে ‘খোকা খোকা’ বলে অনেক ডাকাডাকি করলেন, কিন্তু একগুঁয়ে রাজ্জাক আর পেছনে ফিরে তাকালেন না।
রাজ্জাক ঢাকা যাওয়ার পথে বন্ধুসুলভ বড়ো ভাই ও কবি-গীতিকার আনোয়ার হোসেনের সাথে দেখা করে যান। আনোয়ার হোসেন যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী। তার কলমের খোঁচায় বাংলা গান আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এই আনোয়ার হোসেনের গান গেয়েই রাজ্জাক এত উপরে উঠে এসেছেন। কোনোমতেই গান লেখা ছাড়া যাবে না, এই অনুরোধ রেখে রাজ্জাক ঢাকা চলে যান।
ঢাকায় এসে আনোয়ার ও আশীষ কুমার লৌহ দম্পতির বাসায় ওঠেন রাজ্জাক। এরা দুজনই রাজ্জাকের ক্লাসমেট। ছাত্রজীবনে রাজ্জাক আর আনোয়ারা একসাথে স্টেজে গান গাইতেন। এই তিনজনের প্রাণখোলা রোমান্টিকতাপূর্ণ বন্ধুত্ব দর্শকদের অনেক আনন্দ দেয়।
আশীষ কুমার লৌহ একজন গাড়ির মেকানিক্স। তার একটা গ্যারেজ আছে। একদিন রাজ্জাক বন্ধু লৌহের সাথে গ্যারেজে ছিলেন। তার নিজেরও একটা গাড়ি ছিল, ছবির শুরুতে ক্রেডিট লাইন দেখানোর সময় স্ক্রিনে দেখা যায়। তার গাড়িঘোড়ার কলকব্জার উপর ভালো জ্ঞান আছে ধরে নেয়া যায়। তো, সেই গ্যারেজে কাজ করার সময় জনৈক ড্রাইভার দৌড়ে এসে জানায়, পথিমধ্যে তার মালিকের গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। রাজ্জাককে মেকানিক্স ভেবে তাকে পেঁচাইয়া ধইরা বলে, ‘আইজ আপনার কোনো কথাই শুনবো না। আপনাকে যাইতেই হবে ঐ গাড়ি সাইরা দেওনের লাইগা।‘ তারপর রাজ্জাকরে সাইকেলে কইরা নিয়া যায়। গাড়ির কাছে যাওয়ার পর রাজ্জাক দেখেন, সুন্দরী ববিতা গাড়িতে বসা, আর গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে ববিতার নানা।
‘গাড়ি সারতে পারবা তো? নাকি পার্টস চুরিটুরি কইরা নিয়া যাইবা?’ রাজ্জাকের উদ্দেশে এরকম অপমানজনক ও অবজ্ঞাসূচক কথা বলতে থাকেন সুন্দরী যৌবনবতী ববিতা। কিন্তু, এই অবজ্ঞাকে থোরাই কেয়ার করেন রাজ্জাক। কনফিডেন্সের সাথে গাড়ি ঠিক করে ফেলেন, ড্রাইভিং সিটে বসে স্টার্ট দিয়ে ববিবতাকে নিয়ে ভোঁ দৌড়!
না, ওটা টেস্টিং ছিল।
মেকানিক্স হিসাবে রাজ্জাকের পারফরমেন্সে ববিতার নানা মুগ্ধ। তাকে চাকরির অফার দিয়ে পরের দিন আসতে বলেন। রাজ্জাকও সুন্দরী ববিতাকে দেখে মনে মনে একটা রোমান্টিক রহস্যগেইম খেলার প্ল্যান করেন। এ সময় রাজ্জাক তার নিজের নাম ‘হৃদয় হরণ’ বলে জানান।
পরের দিন বাসায় এসে হৃদয় হরণ তাজ্জব! জনাবা ববিতা অত্যন্ত সঙ্গীতামোদী এক যুবতী বটেন। হৃদয় হরণ সবচাইতে বেশি অবাক হলেন, যখন দেখলেন জনাবা ববিতা পিয়ানোতে যে গানটি তুলেছেন, সেটি স্বয়ং রাজ্জাক ভাইয়ের হিট হওয়া গান। কথাচ্ছলে নানা হৃদয় হরণকে জানিয়ে দিলেন, বিখ্যাত গায়ক রাজ্জাক ভাই হলেন ববিতা ম্যাডামের মোস্ট ফেভারিট সিঙ্গার।
এরপর কাহিনি ঘনীভূত হতে থাকে। ববিতা ম্যাডাম নায়করাজ রাজ্জাকের সাক্ষাৎ লাভের জন্য অনেক চেষ্টা তদবির করেও ব্যর্থ হন। আর হৃদয় হরণ? সে হইল গিয়া টেপা-টেপির বাপ। কিছুদিন পর পর মনিবের কাছ থেকে ছুটি নিয়া পরিবারের কাছে যান শ্রান্তি বিনোদনের জন্য। আসলে ব্যাপারটা হলো, যখন তার রেডিওতে গানের প্রোগ্রাম থাকে, তখন ক্যাজুয়াল লিভ বা সি লিভ নিয়া রেডিও স্টেশনে যান রাজ্জাক। রেডিওতে গান গাওয়ার সময় ববিতা তার এক বান্ধবীসহ গলাগলি ধরে একসাথে রেডিওর লাইভ গান শুনতে থাকেন। ঐ সময়ে টিভিতে গানের প্রোগ্রাম লাইভ দেখানোর সুযোগ ছিল না বলে ববিতা সরাসরি রাজ্জাককে টিভিতে দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
ববিতা ম্যাডামের অবস্থা খুব কাহিল; রাজ্জাক ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে তার মরে যাওয়ার মতো অবস্থা। কোনোভাবেই দেখা মিলছে না প্রিয়তম সঙ্গীতশিল্পী রাজ্জাকের।
সেই সুবর্ণ সুযোগ একদিন এসে গেল। কীভাবে? সেটাই বলছি।
রাজ্জাকের বন্ধু যক্ষ্মাক্রান্ত আনোয়ার হোসেনের অবস্থা খুব খারাপ। তার চিকিৎসার খরচ যোগানোর জন্য একটা কনসার্টের আয়োজন করা হলো। এই প্রথমবারের মতো রাজ্জাক জনসমক্ষে আসবেন। এই খবরে ববিতার আর হুঁশ থাকে না।
ঐদিকে হৃদয় হরণ বেটা কী করেছে, জানেন? সে হঠাৎ বাড়ি থেকে হাওয়া। কেউ জানে না সে কোথায় গেছে। এ ব্যাপারটায় ম্যাডাম ববিতা হৃদয় হরণের উপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ। বাড়ির ড্রাইভার এত স্টুপিড হইলে কি চলে?
অডিটোরিয়াম কানায় কানায় ভর্তি। রাজ্জাককে খুব কাছে থেকে সামনাসামনি দেখার জন্য একেবারে প্রথম সারি ফ্রন্ট স্টলে গিয়ে বসেছেন সুন্দরী সেলিব্রেটি কালজয়ী নায়িকা ববিতা। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। পর্দা ফাঁক হচ্ছে ধীরে ধীরে। ঐ তো প্রিয়তম গায়ক রাজ্জাক ভাই ধীরে ধীরে হেঁটে আসছেন মাইক্রোফোন স্ট্যান্ডের দিকে।
কিন্তু একি! একি! ববিতা চমকে লাফিয়ে উঠেন।
হৃদয় হরণ! হৃদয় হরণ কেন স্টেজে, মাইক্রোফোনের পেছনে? সখীরা অশান্ত ববিতার হাত ধরে বসিয়ে শান্ত করায়।
হৃদয় হরণ গান গেয়ে উঠলেন তার হৃদয় হরণ করা সুরে। এই গান শুনতে শুনতেই ববিতা ম্যাডাম সমস্ত রহস্য বুঝে ফেলেন। হরণ! দাঁড়াও! আজকে বাড়িতে আইসা লও। নিজেরে টেপাটেপির বাপ বলার আর জায়গা পাও না! আজকে তোমার একদিন কী আমার একদিন!
ঐদিকে ঘটনা বহুদূর এগিয়েছে। রাজ্জাকের বাবা রাজ্জাকের খোঁজে পুলিশ লাগিয়েছেন। পুলিশ একদিন ফোন করে রাজ্জাকের বাবাকে জানান, যে শিল্পী আজ গান গাইবেন, তার চেহারা আপনার পুলা রাজ্জাকের মতো। এ কথা শুনে রাজ্জাকের বাবা আর মা দুজনে ঢাকায় এসে ওঠেন তাদের বাল্যবন্ধুর বাসায়। বাল্যবন্ধুটা কে, নিশ্চয়ই বুঝেছেন! বাল্যবন্ধু হলো ববিতার নানা।
তো, রহস্য উন্মোচিত হলো। নায়ক-নায়িকা, তাদের বন্ধু, নানা, বাবা-মা একসাথে হওয়ার পর অনেক রোমান্টিকতার মধ্য দিয়ে রাজ্জাক-ববিতার প্রেম বিয়েতে গড়ায়।
এই যে এতক্ষণ যে ছবিটি দেখলেন, এটা বাংলাদেশের ছায়াছবি ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্বরলিপি’র গল্প। ঠিক এই গল্পের মধ্যে রাজ্জাকের জায়গায় উত্তম কুমার এবং ববিতার জায়গায় লাবণ্যময়ী তনুজার নাম বসিয়ে দিন; ঢাকার জায়গায় কলকাতা। অন্যান্য নামগুলো ফিলার হিসাবে যদুমধু দিয়া পূরণ করে নিলে যে গল্পটি পাবেন, সেটি হলো ১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কলকাতার ছায়াছবি ‘দেয়া নেয়া’।
দুটি ছবির কাহিনি অভিন্ন তো বটেই, কোথাও কোথাও ডায়লগগুলোও হুবহু এক পাওয়া যায়। চিত্রায়নের সিকোয়েন্সও অভিন্ন। আমার জানা নাই, ‘স্বরলিপি’ কলকাতার ‘দেয়া নেয়া’র নকল ছবি, নাকি কপিরাইটপ্রাপ্ত ছবি। আইএমডিবি’র তথ্যে এটা পাওয়া যায় নি। কারো জানা থাকলে প্লিজ জানাবেন।
এখানে রাজ্জাকের গাওয়া প্রথম গানটি দেখুন- গানেরি খাতায় স্বরলিপি লিখে - রেডিওতে গায়কের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। অন্যত্র, উত্তম কুমার গাইলেন জীবন খাতার প্রতি পাতায়। স্টাইল অভিন্ন। তনুজার জীবন খাতার প্রতি পাতায় এবং ববিতার গানেরি খাতায় স্বরলিপি লিখে লিখেও একইভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে, অর্থাৎ স্টাইল অভিন্ন। এই গানগুলো মজা করে যাতে দেখতে পারেন, সেজন্য শেয়ার করলাম নীচে। সব শেষে আছে রুনা লায়লা ও আরতি মুখোপাধ্যায়ের গানের অংশকে একসাথে করে বানানো ভিডিও, যাতে কন্ঠ অদল-বদল করা হয়েছে (রিমিক্সিং)।
উল্লেখ্য, এই ছবির "গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে" গানটি দিয়েই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রথম নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। গানটি রেকর্ডকালীন সময়ে রুনা পাকিস্তানে বসবাস করতেন এবং গানটি লাহোরে রেকর্ড করা হয়।
‘স্বরলিপি’র ভালো প্রিন্ট ইউটিউবে নাই। সেই তুলনায় ‘দেয়া নেয়া’র প্রিন্ট অনেকগুণ ভালো। এই ঘরেন্টাইন কালে ছবিদুটো অবশ্যই দেখবেন। মেয়েরা নিজেদের ববিতা বা তনুজা ভাববেন কিনা জানি না, তবে, ছেলেরা নিজেকে নায়করাজ উত্তম কুমার বা মহানায়ক রাজ্জাক অবশ্যই ভাববেন, সে ব্যাপারে সন্দেহ নাই
এক্ষণে, কেউ যদি আমার মতো গানের পাগল হইয়া থাকেন, ব্যবসা-বাণিজ্য-চাকরি-বাকরিতে মন নাই (যদিও আমাকে গায়ে খেটে চাকরি করেই খেতে হচ্ছে), বাবার অগাধ সম্পত্তিকে বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে নিজের কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স নিয়া ঢাকা শহরে উঠতে পারেন। কিছুদিন ম্যাকানিক্সের কাজ করতে করতে গাড়িওয়ালা কাউকে পেয়ে যাবেন; তখন ড্রাইভারের চাকরি নিয়া ঢেমাঢেমির বাবা সাইজা বাকি অংশ মহানায়ক রাজ্জাকের মতো চালাইয়া গেলেই আপনি সাকসেস।
১
গানেরি খাতায় স্বরলিপি লিখে - মাহমুদুন্নবী
২
জীবন খাতার প্রতি পাতায় - শ্যামল মিত্র
৩
গানেরি খাতায় স্বরলিপি লিখে - রুনা লায়লা
৪
জীবন খাতার প্রতি পাতায় - আরতি মুখোপাধ্যায়
৫
জীবন পাতার পাতার প্রতি খাতায় - গানেরি খাতায় স্বরলিপি লিখে - রুনা লায়লা - আরতি মুখোপাধ্যায় ও শ্যামল মিত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১৫