তোমাদের যা কিছু খাবার সাধ হয়,
খেয়ে নিয়ো প্রথমা বৈশাখে
গরম ভাতে পানি ঢেলে পান্তা, মচমচে ইলশে ভাজা
নতুন কেনা মাটির বাসনে চুমুক দিয়ে
চুকচুক করে পান্তার পানি খেয়ো, আর উগড়ে দিয়ো তৃপ্তির ঢেকুর-
আহ! বড্ড বাঙালি হলুম!
আমি সেই বাসিভাতই খাব, গতরাতে ভাতের হাঁড়িতে পানি ঢেলে
যত্ন করে পঁচতে না দেয়া মায়ের রেখে দেয়া ধন; পেঁয়াজকুচি
আর ভাজা শুকনামরিচ ভেঙে মাখানো অমৃতে কী স্বাদ,
তোমরা জানবে না।
আমরা তো হদ্যিকাল থেকেই এসব খেয়েছি প্রতিটা সকালে
লাঙল আর কাস্তে লয়ে ক্ষেতে বেরোবার আগে।
আমাদের কালেভদ্রে ইলিশ জুটতো - বিশেষত মেজবানিতে;
একবেলা খেয়ে আরেক বেলার জন্য নুন-পানিতে জ্বাল দিয়ে
রেখে দিত মা। সকালের পান্তায় ইলিশভাজা - কোন হালায় শেখালো?
গ্রীস্মের বাংলায় কোন নদীতে ইলিশ গাবায়? পৌষ-মাঘ-ফাল্গুনে
কিংবা চৈত্র-বোশেখ ঝাঁকাভরা ইলিশ কে দেখেছে, কোন বাজারে?
কারা, কবে সকালের পান্তাভাতে ভাজা ইলিশে পেট পুরেছে?
এই যে গালভরা বুলি ঝাড়ো – বোশেখের সকালে পান্তা-ইলিশ –
এ ‘পোশাকি ঐতিহ্য’ বাঙালির নয়। এসব বুলিবাজেরাও
বাঙালি কেউ নয়; বাংলার জনপদে ওদের পদস্পর্শ পড়ে নি।
আমাদের ছিল সেঁচিশাক ডাঁটাশাক বুনোকচু কলমিলতা
আমাদের ছিল আলুভর্তা কুমড়ো ভাজা মাষকলাইয়ের লাউ
আমাদের ছিল খলসে বইচা ট্যাংরা ভেদা শোল টাকি আর
পুঁটিমাছের ভাগা
আমাদের ছিল খাল-বিল-পুকুর-ডোবার সহজ জীবন
সহজ সুখেই কেটেছে চিরটা কাল
আমাদের ছিল চৈত্রসংক্রান্তি-
গ্রামে গ্রামে মেলা, পাগলা ষাঁড়ের কাছি ছেঁড়া, আর ঘোড়দৌড়
আমাদের ছিল হালখাতা আর কলাপাতায় রসগোল্লা
আমাদের ছিল
বাজারে বাজারে দোকানে দোকানে প্রাণভরা উৎসবে পয়লা বৈশাখ
যখন রাতের খাবারেই কষ্টেসৃষ্টে কদাচিৎ জুটতো- আহা,
সকালের পান্তায় একটুকরো ইলিশ, কে আমায়
কবে খাইয়েছিল, কেউ কি বলবা?
গরম পান্তায় ভাজা ইলিশ- কোন হালায় তোমাগো শিখাইছে
এই কৃত্রিম বাঙালিপনা?
তোমরা আবহমান বাংলার কেউ নও, ধান্ধাবাজ পরদেশী।
খালি পিডাইতে ইচ্ছা করে- যখন শুনি তোমরা বলছো-
পান্তা-ইলিশ হইলো বাংলার ঐতিহ্য।
৮ এপ্রিল ২০১৮
-
হদ্যিকাল- আদিকাল (আঞ্চলিক/কথ্য ভাষা; ক্ষোভ প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত)
হালা- শালা- (ঐ একই)
-
ফুটনোট : শিরোনামটি জীবনানন্দ দাশের 'তোমাদের যেখানে যাবার সাধ হয়' থেকে ধার করা
পহেলা বৈশাখ – আমাদের আসল খাদ্যসংস্কৃতি বনাম কৃত্রিম ইলিশ-সংস্কৃতি : ব্লগার ও ফেইসবুকারদের মতামত ভিত্তিক সমীক্ষা
উৎসর্গ : অকৃত্রিম বাঙালিরা