somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক অদ্ভুত জাদুকরের কথা

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিন্সেস নূরজাহানের রঙ্গনৃত্যের রেশ বহুদিন অব্দি বালক কুটিমিয়ার মনে অতৃপ্ত সুখের স্বাদ ছড়িয়েছিল যেমন, উষার পূর্বলগ্নে বটবৃক্ষের অন্ধকারে কল্পিত জন্তুর পদপ্রক্ষেপণ, অতঃপর রূপবতী দুঃখিনী গৃহবধূর ফাঁসিতে ঝুলে অপমৃত্যুর রহস্যোন্মোচন তার মনে এক গভীর বেদনাভাবেরও জন্ম দিয়েছিল। তার এতটুকু জীবনে কত সাধ— যা কিছু অদেখা, অদৃশ্য, অশরীরী, সবই তার কাছে বিপুল রহস্যে ভরা, তাকে দুর্নিবার আকর্ষণে টানে। পার্থিব ভোগবিলাসের বস্তুনিচয়ের চেয়ে অপার্থিব ও আধ্যাত্মিক জগতের রহস্য তাকে খুব বেশি ভাবায়।

এক রাতে সে প্রস্রাব করতে বাইরে বেরিয়েছিল। সে ছোটো বলে তার মা ছিল সাথে। আকাশে সেদিন ধবধবে পূর্ণিমা, দিনের আলোর মতো চারদিকে জোছনা খলখল করছিল। কার্তিকের সেই রাতে বাড়ির উত্তরে আমন ধানের নাড়ার সমুদ্রে তাকিয়ে কিশোর কুটিমিয়ার মন মুহূর্তে চঞ্চল হয়ে উঠলো— এত্ত আলো! হঠাৎ সে অবাক হয়ে দেখে— সেই ধবল জোছনায় কে এক বৃদ্ধা ধানক্ষেতের আলের কাছে পশ্চিমমুখি হয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে। তার পরনের শাড়িটিও জোছনার মতো ধবল ও ফরসা— সামনে সামান্য কুঁজো হয়ে, বুকের ওপর দু হাত জোড়াবন্ধ, স্বল্প ঘোমটা টেনে, কোনোমতে বোঝা যায় পাশের বাড়ির জনার মা বুড়ির মুখটা। কিন্তু জনার মা ওখানে কেন? তার ভাঙ্গা ঘর খালি পড়ে আছে। এত রাতে কেউ চকে যায়? শুধু তাই নয়, চকে গিয়ে সে নামাজে দাঁড়িয়ে। রহস্য কী? নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে কুটিমিয়া মাকে বলে ওঠে, ‘মা দ্যাক, জনার মা বুড়ি। ক্ষেতের মইধ্যে নামাজ পড়বার লাগছে!’ হঠাৎ তার মা এসে উঁকি দেয় এবং একপলক দেখেই ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে কুটিমিয়ার হাত ধরে ছোঁ মেরে ঘরে নিয়ে যায়— কালিমা পড়ে কুটিমিয়ার বুকে থুথু ঘষে দেয়, মুখে ফুঁ দিয়ে দেয়।
বালক অবাক হয়। তার মনে কোনো ভয় নেই, তবু সে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘মা, জনার মা বুড়ি এত রাইত্রে চকে ক্যানরে?’
মা তাকে আরো শক্ত করে বুকে জড়িয়ে বলে, ‘আল্লাহ তুই পানা দে, বালা মুসিবত দূর কর আল্লা।’
কুটিমিয়া মাথা সোজা করে মায়ের মুখের দিকে মুখ করে বলে, ‘কী অইছে মা?’
‘কিছছু না সুনা। ঘুমা। দিনে কমুনে।’
দিনের বেলা মা তাকে কিছুই বললো না, কুটিমিয়ারও সে-কথা মনে পড়ে নি। কিন্তু দিনের পর রাতের বেলা সহসা মনে পড়ে যায়, আর মুহূর্তেই ভয়ে তার সর্ব-শরীরে জাড়কাটা দিয়ে ওঠে— গত রাতে যাকে চকে নামাজ পড়তে দেখেছিল, আসলে সে জনার মা বুড়ি নয়— জনার মা সেই কবে মারা গেছে, গ্রামের গোরস্থানে তাকে কবর দেয়া হয়েছে— সে আসবে কোথা থেকে? ওটা জনার মা’র ছল ধরে অন্য কেউ এসেছিল।

কোথায় যেন পরীর রাজ্য, জিনের রাজ্য! কেউ বলে তা অনেক দূরের আসমান পেরিয়ে। পরীদের গায়ে রূপ ঝলমল করে। অন্ধকার আকাশ জুড়ে যখন অগুনতি তারার ফুল ফোটে, রূপের পরীরা তখন আকাশময় উড়ে বেড়ায়, ছুটে বেড়ায়। নিজ্‌ঝুম নিশীথে বনবনানির চূড়ায় চূড়ায়, গাছগাছালির শাখায় শাখায় জোছনা ঢেউ খেলে যায়, ফুলের গন্ধে ফুলের সুষমায় তামাম পৃথিবী আনন্দোদ্‌বেলিত হয়ে উঠলে পরীরা মর্ত্যে নেমে আসে। তারা ফুল কুড়িয়ে অঙ্গে সৌরভ মাখে, ফুলবিছানো পথে নরম পায়ে হাঁটে। হাত ধরাধরি করে নাচে। খলখল করে হাসে— মানুষের গন্ধ পাওয়া মাত্র বাতাসে মিলিয়ে যায়। কুটিমিয়া ভাবতো, যদি তার দুটি ডানা থাকতো, পাখিদের মতো সে যদি উড়তে পারতো, যদি থাকতো একটি পঙ্খিরাজ ঘোড়া— ইচ্ছে হলেই পঙ্খিরাজে ভর করে উড়ে যেতো আসমানের পর আসমান ভেঙ্গে দূরের পরীর রাজ্যে। তার হাতে যদি এমন একটি সোনার কাঠি থাকতো— সেই কাঠিটা একটা তারার দিকে তুলে ধরলে তারাটি খসে বাঁশপাতার মতো চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে নেমে আসে— একটা ফণাতোলা ধারাস সাপের দিকে তাক করলে মুহূর্তে ওটা একটা লতাগুল্ম হয়ে যায়— আরো কত কী! ঐ কাঠিটি হাতে নিয়ে সে পাষাণ ফকিরের মতো পানির ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে নদী-মহাসমুদ্র পার হয়ে চলে যেতে পারতো অজানা সন্ন্যাসে।

একবার এক শীতের দুপুরে সে আর নুরু শিমের মাচানে ছোট্ট এক বাসা থেকে টুনটুনির ডিম পাড়ছিল। হঠাৎ দেখে অল্প দূরে এক রক্তচোষা তক্ষক ঘাড় উঁচিয়ে গলগল করে রক্ত খাচ্ছে। তার সমস্ত গণ্ডদেশ রক্তে বিকটবর্ণ। নুরুকে ইশারা করতেই সে একটা ঢিল উঠিয়ে ছুঁড়ে মারে তক্ষকটার গায়ে— ওটা মাটিতে পড়ে কিছুক্ষণ ছটফট করে মারা যায়। দুজনে ঝুঁকে পড়ে চোখের সামনে তক্ষকের মরে যাওয়া দেখে। কিন্তু আশ্চর্য, তক্ষকটার মুখ থেকে একফোঁটাও এতক্ষণ ধরে চুষে নেয়া রক্ত ঝরলো না। এ ঘটনা তার মনে দাগ কেটেছিল। তক্ষকরা মানুষ দেখলেই দূর থেকে অলক্ষে নাভির গোড়ায় দীর্ঘ ও অদৃশ্য শুঁড় বসিয়ে রক্ত চুষতে শুরু করে। তক্ষকটাকে কেউ যদি না দেখে, ঐ মানুষটি আর বাঁচে না। কুটিমিয়ার ভাগ্য ভালো, তক্ষকটাকে দেখতে পেয়েছিল।
কুটিমিয়া ভাবতো, এমন একটা সোনার কাঠি যদি তার হতো, কোনোদিন কোনো তক্ষক তার শরীরের রক্ত চুষতে পারতো না।
দাদির কাছে সে গল্প শোনে— কোনো এক অতীতকালে কোনো এক মাছ ইউনুছ নবীকে গিলে খেয়েছিল। কুটিমিয়ার মন ভীষণ চঞ্চল হয়ে ওঠে বাসনায়। মহানবীর ইশারায় রাতের পূর্ণ চাঁদ দু ভাগ হয়ে গিয়েছিল— সেই অলৌকিক রহস্য তার মনকে প্রচণ্ড দোলা দিয়ে যায়। বাবার মুখে সে আনাল হকের গল্প শুনেছে। কী এক আশ্চর্য খোদাপাগল ধ্যানী মহামানব সেই আনাল হক ছিলেন— তাঁকে কাঠের আগুনে পুড়িয়ে ছাই করা হলো— সেই ছাই নদীতে ফেলা হলো— আনাল হকের শরীরের প্রতিটি ভাসমান ছাইকণা সমস্বরে সুরধ্বনি তুললো— ‘আনাল হক! আনাল হক! আনাল হক!’ কী করে বড়ো পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানি (রাঃ) মাতৃগর্ভে থেকেই আঠার পারা কোরআন মজিদ মুখস্থ করে ভূপৃষ্ঠে পদার্পণ করেছিলেন! কেয়ামতের দিন পাহাড়গুলো তুলোর মতো উড়তে থাকবে। সূর্য নেমে আসবে মাথার ওপরে। বালক কুটিমিয়া এসব শোনে আর সতত গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে।
তার আর কিছু ভালো লাগে না— মনে হয় যা কিছু সে দেখে, তা অতি সাধারণ; সাদামাটা; স্বাদগন্ধ-রহস্যহীন কোনো কিছুতেই তার মন ভরে না।
কুটিমিয়ার বাবা প্রায়ই এক জাদুকরের গল্প বলেন। ভীষণ আজব সেই জাদুকর, আর তার জাদু। মাটির ওপর সটান শুইয়ে দেয়া হয় দশ-বার বছরের এক বালককে, তারপর গায়ের ওপর বিশাল এক চাদর বিছিয়ে ঢেকে দেয়া হয় তার পুরো শরীর। জমকালো এক বাক্স থেকে বের করা হয় ঝলসানো এক তরবারি; হাতের বিচিত্র কৌশলে বাতাসে সাঁই সাঁই করে কয়েকবার সেই তরবারি ঘোরায়, তারপর চাদরের কোনা উঁচু করে জাদুকর ঢুকে যায় ভিতরে। উপস্থিত দর্শকগণের উদ্দেশে অনবরত তার জবান চলতে থাকে— ‘কেওই নড়বেন না, ঝিম ধইরা দাঁড়াইয়া থাকেন। পায়ের আঙ্গুল গাইড়া দাঁড়াইয়া থাকেন। একচুল নড়লে অমঙ্গল ঘইডা যাইব। এই পুলাডা আর কুনোদিন উঠবো না।’ এসব বলতে বলতে জাদুকরের গলা ধরে আসে, তারপর আল্লাহু আকবর বলে শুয়ে থাকা বালকের গলার ওপর চালিয়ে দেয় তরবারি। সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়বিদারক চিৎকারে বালক মাটি কাঁপিয়ে তোলে, দু হাতে দড়াম দড়াম করে নিজের বুকের ওপর ঘুষি ঝাড়তে থাকে, পা আছড়ে ছটফট করতে থাকে। এরপর গলার ঘর্ঘর শব্দ শোনা যেতে থাকে। ধড় থেকে একটানে মুণ্ডুটি সরিয়ে নিয়ে যায় চাদরের আরেক কোনায়, বিচ্ছিন্ন মাথা থেকে অনর্গল মা-মা আর্তস্বর বের হতে থাকে। ধীরে ধীরে জাদুকর চাদরের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে, তার সর্বাঙ্গ প্লাবিত, হাতের চকচকে সাদা তরবারিখানা রক্তে জবজবে। মানুষ মানুষের রক্ত সহ্য করতে পারে না। জাদুকরের শরীরে ও তরবারিতে রক্ত দেখে অনেকে সংজ্ঞা হারায়। অনেকে চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে হাত-পা নাড়ায়, এবং মুহূর্তেই ভূপতিত হয়। খেলা দেখানোর শেষ পর্বে জাদুকর আবার চাদরের ভিতরে ঢোকে, সবেগে মন্ত্রপাঠ করতে থাকে, বিচ্ছিন্ন মাথাটাকে ধড়ের কাছে এনে জোড়া লাগিয়ে দেয়, বেরিয়ে এসে একটানে চাদরটি সরিয়ে ফেলে। মানুষ তখন অবাক হয়ে দেখে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে ছেলেটি আধমড়ার মতো মাটির ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছে, তার গলার কাছে রক্তের নদী। গলার রক্ত মুছে দিয়ে দুর্বলশরীর ছেলেটিকে জাদুকর আস্তে হাতে দাঁড় করায়, নিজের বাহুতে জড়িয়ে চারদিকে ঘুরে দর্শকগণকে তার গলা দেখায়, সেখানে একটি সরু রেখা, যে-রেখা বরাবর তার মাথাটিকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।
এ ছেলেটি জাদুকরের নিজের লোক হতে পারে— হতে পারে তার ছোটো ভাই বা আপন পুত্র। দর্শকসারি থেকেও উৎসাহী কাউকে ডেকে এ সাহসী জাদুটি দেখানো হতে পারে। কিন্তু কুটিমিয়া কিছুতেই মিলাতে পারে না— চাদরের ভিতরে গরু জবাইয়ের মতো জোরে ছেলেটির গলা চেপে ধরে নির্মমভাবে তরবারি চালায় কসাই জাদুকর— তারপর দেহ থেকে মস্তক আলাদা করে ফেলে। সেই খণ্ডিত মস্তক কীভাবে জোড়া লাগায় তাই ভেবে অস্থির হয়ে ওঠে কুটিমিয়া।
কুটিমিয়া তার বাবার কাছ থেকে শুনেছে, এই জাদুকরের একটা লোমহর্ষক কাহিনি আছে, যার সাথে জড়িয়ে আছে এক সাহসী ছেলের করুণ পরিণতি। গালিমপুরের সিদ্ধী পীর সাহেবের ওরস মোবারকে একবার এই জাদুকর তার অলৌকিক জাদু দেখিয়ে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিল। দর্শকগণকে বড্ড এক প্রলোভন দেখিয়ে সে বলেছিল, যদি কোনো সাহসী যুবক তার তরবারির নীচে মাথা পাততে রাজি হয়, জাদুকর তাকেই তার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সমস্ত জাদুবিদ্যা দান করবে।
দুপুরের ঝাঁঝালো রোদে মানুষ নিরুত্তর ও নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলো। জাদুকর আবারো তার বরের ঘোষণা করলো— তখনই ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে এলো এক সুঠামদেহী তেজী তরুণ। তার অসীম সাহসিকতায় মুগ্ধ জাদুকর।
সে এক অত্যাদ্ভুত জাদু প্রদর্শনী ছিল। চাদরের নীচে শায়িত অমিত সাহসী তরুণ যুবা জাদুকরের তরবারিতে দ্বিখণ্ডিত হবার প্রাক্কালে গগনভেদী চিৎকারে চতুর্দিক প্রকম্পিত করলো। তার দেহটি জবাই করা গরুর মতো ছটফট করতে থাকলো— অবশেষে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়লো। দেহ থেকে মাথা সরিয়ে চাদরের নীচ থেকে জাদুকর বেরিয়ে আসে। বিধ্বস্ত তার চেহারা, ঘর্মাক্ত সর্বশরীর, দুর্বোধ্য তার মুখাবয়ব, রক্তাক্ত তরবারি ও শরীর। বিরক্তির সাথে তরবারিখানা পাশে ছুঁড়ে ফেলে। মানুষের চোখেমুখে বিস্ময়। জাদুকর তার কোঁচড় খুলে কী যেন বের করে— একটা সুতার গুটি; গুটি খুলে সুতার মাথা শাহাদাৎ আঙুলে জড়ায়, তারপর উর্ধ্ব আকাশের দিকে গুটিটি ছুঁড়ে মারে— সুরসুর করে সুতা খুলতে খুলতে গুটি ওপরের দিকে উঠে যেতে থাকে, বিস্ময়ে মানুষ বাকরুদ্ধ, তারা জানে না ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে পরের মুহূর্তে। অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি সহসাই ঘটে গেলো। সুতার মাথা ধরে ঝুলতে ঝুলতে জাদুকর আকাশের দিকে উড়ে গেলো, উড়ে গেলো...বহুদূর আকাশে যাবার পর জাদুকর অদৃশ্যে মিলিয়ে গেলো। তখনই মানুষের চৈতন্যোদয় হলো— চাদর সরিয়ে সবাই আর্তনাদ করে ওঠে— হায়, এ কী দেখছে চোখের সামনে— এক ধারে দেহবিচ্ছিন্ন শির, অন্য ধারে নিস্তেজ শরীর। চোখের সামনে এমন একটা তরতাজা খুন হয়ে গেলো? কেন হলো এমন খুন? জাদুকরের মন্ত্রে কি তাহলে ভুল ছিল? ভুল হয়েছিল? সেই খুনের রহস্য আজও জানা যায় নি।

এমন একজন জাদুকর হওয়ার বাসনায় কিশোর কুটিমিয়া মাঝে মাঝেই বুঁদ হয়ে থাকে। মন্ত্র পড়ে একটা কুকুরের গায়ে ফুঁ দিয়ে ওটাকে একটা পাথর বানিয়ে ফেলা যেতো যদি, এক ফুঁয়ে একটা নদী যদি ধু-ধু মরুভূমি হয়ে যেতো! বাতাসকে যদি নিজের বশে আনা যেতো, আকাশের মেঘ, চাঁদসূর্যকে যদি বশ করা যেতো, এক মন্ত্রে ঝাঁঝাঁ দুপুরে সূর্য ডুবে অন্ধকার রাত্রি হতো যদি, আরেক মন্ত্রে থালার মতো গোল একটি চাঁদ আকাশে ঝলমল জোছনা ছড়াতো!
মাছেরা কীভাবে পানির নীচে বেঁচে থাকে— কুটিমিয়ারও এমন করে বাঁচতে সাধ হয়। পাখির মতো দু পায়ে মাটি ধাক্কা দিয়ে ভূমি থেকে আকাশে উড়াল দেবে, বাতাসে সাঁতার কেটে শূন্যে ভেসে বেড়াবে— কুটিমিয়ার সাধ হয়। কখনো কখনো স্বপ্নের ভিতর একটা দুরন্ত কালো ষাঁড় তার দিকে তেড়ে আসে— নাগালে পাবার আগেই এক লাফে সে শূন্যে উঠে যায়, তারপর পাখিদের মতো মনের আনন্দে উড়তে থাকে। ঘুম ভাঙবার পর তার মন বেদনায় কাতর হয়ে ওঠে।
সোনার কাঠি বা জাদুর কাঠি কোনোদিন পাবে না সে জানতো। তবু খুব ইচ্ছে হতো— যদি এতটুকুন ক্ষমতা পেতো— তার গামছার চার কোনায় চারটি গিঁঠুতে চারটি জিনকে বন্দি করতে পারে, তাতেই অনেক মোজেযা তার হাতের কব্জায় চলে আসতো। জিনরাও নাকি দেখতে মানুষের মতোই। তবে আশ্চর্য হলো, তারাও নাকি মানুষকে দেখতে পায় না। মানুষ যেমন জিনকে ভয় পায়, জিনও তেমনি ভয় পায় মানুষকে। মানুষ যেমন জিনকে বন্দি করতে চায়, জিনও মানুষকে। মানুষের ঘরদোরই জিনদের ঘরদোর। কিন্তু তারাও ভাবে মানুষেরা জিনদের ঘরেই বসবাস করে। মহান আউলিয়া পীর-দরবেশ হলেই তবে জিনকে কবজ করা যায়। তখন জিনকে যা-যা আদেশ করা হয়, তারা মুহূর্তেই তাই করে ফেলে।

লোকে বলে, গালিমপুরের সিদ্ধী পীর সাহেবের কবজে আছে হাজার হাজার জিন। প্রতি বৎসর কার্তিকের শেষ শুক্রবারে ওরস শুরু হয়, চলে একটানা সাতদিন। মানুষ রূপধারী মুরিদ জিনেরা দিনরাত পীর সাহেবের ভক্তি-খেদমতে আত্মনিমগ্ন হয়— মানুষের মতোই তারা জিকির করে, বাবার পদসেবা করে, হাঁটাচলা করে, খাওয়া-দাওয়া করে; কেবল পীর সাহেবই চিনেন কারা মানুষ আর কারা মানুষের রূপধারী জিন। যে কাজ মানুষের অসাধ্য, পীর সাহেব অনায়াসে জিনদের দিয়ে সে-কাজ সমাধা করেন। কী বিপুল সেই ওরসের আয়োজন— সব কাজই জিনদের দিয়ে করানো হয়।

সেবার কুটিমিয়ার খুব সাধ হয়েছিল সিদ্ধী পীর সাহেবের ওরস দেখার। ওরস শুরু হবার অনেক আগে থেকেই প্রাণের দোস্ত জসীম, আবুলের সাথে এ নিয়ে বুদ্ধি পরামর্শ শুরু করলো। দিন যেন যায় না, এমন অস্থির ভাবে ওরসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
একদিন সেই সাধের ওরসের দিনটি এসে হাজির হলো। দিনের শেষভাগে গ্রামের চক-পাতর, গাছগাছালি, বন-বাদাড় এক মায়াবী ধোঁয়াশা হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে। বুকের ভেতর টগবগে উত্তেজনা নিয়ে বন্ধুরা বাড়ি থেকে বের হলো।
আড়িয়াল বিলের হাঁটুপানি পার হয়ে দীর্ঘ ৮ মাইল পথ পায়ে হেঁটে সিদ্ধী পীরের ওরসে যখন পৌঁছুলো তারা, তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। হেজেক লাইট, হারিকেন, বড়ো বড়ো কুপিবাতি, মোমবাতির আলোয় মেলার চারদিক ঝলমল করছে; মানুষের কোলাহল, সার্কাস, পুতুলনাচের বাদ্যবাজনা, মাইকের আওয়াজ- সব মিলিয়ে এক বিচিত্র ছন্দোময়তার সৃষ্টি করেছে, যা কুটিমিয়ার ভিতরটাকে অনেক বেশি চঞ্চল করে তুলছে। সেই কবে নুরুল্লাপুর শানাল ফকিরের ওরসে গিয়েছিল, তারপর আর এতবড়ো ওরসে যাওয়া হয় নি কুটিমিয়ার। বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে তারা এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যায়, ঘুরে ঘুরে নানারকম দোকানপাট দেখে, কোথাও মানুষ গোল হয়ে জুয়া খেলছে, ওখানে যেয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে সেই জুয়াখেলা দেখে।
এরপর সার্কাস, পুতুলনাচ, সাপের খেলা, জাদু ইত্যাদি দেখতে দেখতে রাত গভীর হলো। ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় একটা জটলা দেখতে পায়। ওরা সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। মানুষের ভিড় ঠেলে সামনে গিয়েই খুব অবাক হয়ে কুটিমিয়া দেখলো, সেই যে অনেক বছর আগে পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ে এক অদ্ভুত পাগল ভেসে গিয়েছিল— যাকে প্রথম দিন দেখে হ্যামিলনের বাঁশিঅলা মনে হয়েছিল, যাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার ভিতরে অফুরন্ত আকুলতা ছিল— সেই পাগল চিৎকার করে তার সেই পুরোনো ধুয়া তুলছে— ‘এই দুনিয়া ফানা হবে কিছুই রবে নারে...।’ পথের এক পাশে একটা মনোহারী দোকান ছিল— সেই দোকানে বেড়ায় টাঙানো ছিল নানান রঙের ছবি আর পোস্টার; রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মায়ের কোলে শিশু, আকাশে উড়াল দেয়া পঙ্খিরাজ ঘোড়া, ইত্যাদি ছবি ছিল। ছিল শেখ ফরিদ ও রামকৃষ্ণের ছবি এবং ছিল ইমাম মাহাদীর হাতের তালুর ছবি। এই পাগল সেখানে দাঁড়িয়ে অনর্গল কথা বলছে; তার কথা শোনার জন্য উন্মাদের মতো মানুষ এসে জড়ো হচ্ছে। পাগলের মুখে যেন কথার খই ফুটছে— সুগভীর আধ্যাত্মিক কথা, যা কুটিমিয়ার কচি মগজে ঢোকে না। হঠাৎ হঠাৎ সে চিৎকার দিয়ে উঠছে— ‘এই দুনিয়া ফানা হবে, কিছুই রবে নারে, কিছুই রবে না।’
মহাআশ্চর্য ঘটনাটি হঠাৎ করেই ঘটলো। পাগল তার মাথার পাগড়ি খুলে ফেললো। মাথায় পাতলা কিছু চুল রুক্ষ হয়ে আছে, সে হাতের তালু দু’বার মাথায় চেপে চুলগুলো পেছনে নিল। মুখের গুচ্ছ গোঁফ আর কালো শ্মশ্রুতে নরম করে হাত বুলিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো— ‘দেখ আমারে, আমারে দেখ— আর দেখ ঐ ছবি।’ বলে সে তার হাতের লাঠি রামকৃষ্ণের ছবির দিকে নির্দেশ করে। মানুষ হতবাক। এ অসম্ভব। এ এক নিছক পাগল, কোনো জাদুকর নয়। মানুষ অবাক হয়ে দেখলো, ছবির রামকৃষ্ণ ঠিক ছবির পাশে দাঁড়িয়ে, তামাম মানুষের সামনে।
আশ্চর্যের শেষ নেই। পাগল এবার বলে— ‘তোরা খেয়াল কইরা দেখ, যদি আমার মুখে চাপদাঁড়ির বদলে শেখ ফরিদের মতো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি থাকতো, আমার মুখ দেখতে কেমন লাগতো?’ কেবল অবাক হবার পালা। মানুষ বিস্ময়ে মূক হয়ে দেখতে লাগলো, সামনে দণ্ডায়মান পাগল রামকৃষ্ণের মুখের চাপদাঁড়ির আড়ালে যে-মুখটা বোঝা যায়, সেটি আর কেউ নয়, স্বয়ং শেখ ফরিদের মুখ। মানুষ স্তব্ধ, হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
পাগলের গল্প চলতে থাকে। দুনিয়ার সকল পয়-পয়গম্বরের কাহিনি তার ঠোঁটে অনর্গল বের হয়ে আসছে। মানুষ যা প্রশ্ন করে, সব উত্তরই এ পাগলের জানা। দুনিয়ায় কবে রোজ কেয়ামত হবে, সব হিসাব তার জানা। দাজ্জাল কবে কোথায় মাটি ফুঁড়ে উঠে দাঁড়াবে, হযরত ঈসা কবে পুনরাবির্ভূত হবেন— সব, সবকিছু সে বলে যাচ্ছে। কোনো কোনো পয়গম্বরের উপর তার প্রচণ্ড ক্ষোভও প্রকাশ পাচ্ছে।
পথেঘাটে, হাটেবাজারে পাগলেরা মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে খেয়ে বেঁচে থাকে। এ পাগল কী খায়, কোথা থেকে খায়, তা জানার আগ্রহ হয়েছিল কুটিমিয়ার। পাগলেরা মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সাও ভিক্ষা করে থাকে, কেউ কেউ জোরজবরদস্তিও করে। কিন্তু, এ পাগল কারো কাছে কিছুই চাইছে না। কত মানুষ তার কাছ ঘেঁষে কত প্রশ্ন করছে! কেউ কেউ তাকে টাকা সাধছে, কিন্তু সে নিচ্ছে না। সে কখনো গলা ছেড়ে প্রাণখোলা হাসি হাসছে, কখনো তার কথায় রাগও ঝরে পড়ছে। কখনো সে জলদ-গম্ভীর সৌম্য পুরুষ।
কুটিমিয়া ঐ অবুঝ বালক বয়সেই বুঝতে পেরেছিল, এ পাগল কোনো সাধারণ পাগল নয়, নিশ্চয়ই সে এক মহাসাধক, যাকে মানুষ চিনতে পারছে না। কুটিমিয়ার মনে এক বরের বাসনা ছিল বহুদিনের। সে ভাবলো, এ সাধকের কাছে সে তার বরের কথাটা বলবে। কুটিমিয়া অনেক চেষ্টা তদবিরের পর পাগলের খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল- হুজুর, আপনে আমার এই টাকা দুইটা নেন। আমার মনের আশাটা জানি পুরা হয়, এই দোয়া কইরেন। কুটিমিয়া খুব আপ্লুত হয়েছিল, যখন পাগল তার হাত থেকে টাকা দুটো নিয়ে তার দিকে একপলক গভীর চোখে তাকিয়েছিল।
যাওয়ার আগে পাগল তার বাম হাত উঁচু করে বলে— ‘এ হাতের রেখাগুলান দেখ— এবার দেখ ইমাম মাহাদীর হাতের তালু।’ মানুষ দুটি তালুতে তাকিয়ে এবারও তাজ্জব হয়ে দেখে— পাগলের হাতটাই যেন ফটো করে ওখানে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে।

কুটিমিয়ার দৃঢ় ধারণা, সে কোনো জাদুকর নয়। উপস্থিত মানুষেরাও কেউ বলে নি, লোকটা জাদুকর। আর যদি কোনো জাদুকর হয়েই থাকে, কুটিমিয়া ভাবে, তাহলে সে একজন অলৌকিক জাদুকর, যার বৃত্তান্ত কোনো মানুষের জানা নেই।

সেই পাগলের সন্ধানে কুটিময়া আজও ঘুরে বেড়ায়। পদ্মার পানিতে ঝাঁপ দিয়ে যে-পাগল প্রায় আধঘণ্টা পরে মাঝ নদীতে ভেসে উঠেছিল, তারপর ভাসতে ভাসতে সন্ধ্যার আঁধারে স্রোতের পানিতে হারিয়ে গিয়েছিল, সেই পাগল এতদিন পরে কোথা থেকে সিদ্ধি পীরের ওরসে এসে আবির্ভুত হয়েছিল! এ রহস্য তার কোনোদিন জানা হয় নি, জানা হবে না।

সেই যে চলে গেলো পাগল, আর এলো না, তার দেখা মিললো না ইহজনমেও।



বাল্যকাল কখনো শেষ হয় না
তাই গল্পও চলতে থাকে ...

রচনাকাল : ২০০৬

উৎসর্গ : ্মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান তমাল, আল্ট্রা জিনিয়াস রাইটার
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০৩
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×