ও কী ও বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে
কোনদিন আসিবেন বন্ধু,
কয়া যাও, কয়া যাও রে
কথা ও সুর : জসীমউদ্দীন
ধীর লয়ের গান বা রাগপ্রধান গান আমার অধিক পছন্দের। যে-কোনো গান আমি যখন আপন মনে গাইতে থাকি, ওগুলোকে খুব টেনে টেনে গাইতে আমার ভালো লাগে। সেই ধীর লয়ের মধ্য দিয়ে আমি এক অন্য ভুবনে চলে যাই, সেখানে সুরের লহরী যেন ধীর ঢেউয়ের ছন্দ তুলছে, আর পুরোটা পৃথিবী সেই তালে তালে দুলছে।
এর আগে আমি এ গানটা খালি গলায় গেয়েছিলাম। কেউ শুনতে চাইলে ক্লিক করুন এই লিংকে অথবা/এবং এই লিংকে। সেই ধীর লয়ে গাওয়া গানের উপর মিউজিক যোগ করেছি- যেটা শুনতে পারেন - এই লিংকে ক্লিক করে, আর নীচেও ক্লিক করে দেখতে পারেন মিউজিক ভিডিওটি।
খুব ধীর লয়ে গাওয়া গান মূলত একটা এক্সপেরিমেন্টাল সিঙিং। মিউজিশিয়ানগণ, বিশেষ করে অভিজ্ঞ মিউজিশিয়ানরা প্রায়শ প্রচলিত গানের সুরে ভেরিয়েশন এনে গানগুলোকে নতুন করে কম্পোজ ও উপস্থাপন করে থাকেন। এতে গানগুলো বেশিরভাগ সময়ই অধিক উপভোগ্য ও আকর্ষণীয় হয়ে থাকে।
আমার গাওয়া এ গানটার সুরেও আমি একটুখানি ভেরিয়েশন আনার চেষ্টা করেছি, গানের ভাষায় যাকে রেন্ডিশন বলা হয়। ফুয়াদ, বালাম, হাবিব, এবং খুব সম্ভবত সুমনও রেন্ডিশনে প্রচুর গান করেছেন (ফিউশনসহ)।
অনেক রেন্ডিশন এত ফেমাস হয়েছে যে, মূল সুরটা হয়ত আজ আর কেউ জানেন না, এবং এমনও হয়েছে যে মূল সুরের চাইতে রেন্ডিশন অনেক বেশি শ্রুতিমধুর ও আকর্ষণীয় হয়েছে। রুনা লায়লার গাওয়া দামাদাম মাস্তকালান্দার গানটা হলো এর জ্বলন্ত উদাহরণ। পাকিস্তানের কোনো এক উর্দু সিনেমার (Jabroo) টাইটেল সং হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল সেই গান, পরে সেটা আবার অন্য সিনেমায় রেন্ডিশন করা হয় (Dillan Dey Soudey) এবং রুনা লায়লার কণ্ঠে আমরা শুনি সর্বেশষ ভার্সন। নূর জাহান আর রুনা লায়লা, এ দুজনের কণ্ঠেই গানটা বেশি পপুলারিটি পেয়েছে; তবে বাংলাদেশ ও ভারতে অবশ্য রুনা লায়লাই এগিয়ে আছেন।
ধান ভানতে গানের গীত গেয়ে ফেললাম।
ও কী ও বন্ধু - অনেক জনপ্রিয় একটা গান। আব্বাসউদ্দীন আহমদ থেকে শুরু করে তার মেয়ে ফেরদৌসী রহমান, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, রথীন্দ্রনাথ রায়, স্বাগত দে সহ অনেক বিখ্যাত শিল্পী এ গানটা গেয়েছেন। অনেক ছায়াছবিতেই এটা গাওয়া হয়েছে।
'রঙ্গীন রাখাল বন্ধু' ছায়াছবিতে এ গানটা ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লা। আমি এ পোস্টে যে-গানগুলো শেয়ার করেছি, প্রতিটা গানই অনন্য। তবে এ গানের যতগুলো ভার্সন শুনেছি, তার মধ্যে রুনা লায়লার গাওয়াটাই আমার কাছে সবচাইতে সেরা মনে হয়েছে। ভালো লেগেছে রথীন্দ্রনাথ রায়ের গায়কীও। আমার গাওয়া এ গানের মূল সুরে রুনা লায়লার গায়কী অনুসরণ করেছি। উল্লেখ্য, উপরে যাদের নাম উল্লেখ করেছি, প্রত্যকের গায়কীতেই সুরের সামান্য তারতম্য আছে, সেটা হলো ব্যক্তির নিজস্ব প্রকাশভঙ্গীর কারণে, যা কেউ ইচ্ছে করলেই অন্যের সাথে ১০০ ভাগ মিল রেখে গাইতে পারেন না, প্লাস, সবারই থাকে কিছু স্বকীয়তা। কিন্তু রেন্ডিশন বা ভেরিয়েশন হলো গানের মূল সুরের কোনো কোনো স্থানে সামান্য চেঞ্জ করে দেয়া।
এ গানের শুরু (মুখ) ও ১ম অন্তরায় প্রথমে মূল সুর ও পরে ভেরিয়েশন সুরে গাওয়া হয়েছে। কেউ এ গান আগে শুনলে সহজেই বুঝতে পারবেন ভেরিয়েশন কোন জায়গায় করা হয়েছে।
যদি কেউ এই ভেরিয়েশনসহ গাইতে চান, তারা প্লিজ নীচের ইন্সট্রাকশন ফলো করুন।
ও কী ও বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে
কোন দিন আসিবেন বন্ধু কয়া যাও কয়া যাও রে - মূল সুর
কোন দিন আসিবেন বন্ধু কয়া যাও কয়া যাও রে - ভেরিয়েশন/রেন্ডিশন
যদি বন্ধু যাবার চাও
ঘাড়ের গামছা থুইয়া যাও রে - মূল সুর
যদি বন্ধু যাবার চাও
ঘাড়ের গামছা থুইয়া যাও রে - ভেরিয়েশন/রেন্ডিশন
বন্ধু কাজল ভ্রমরারে
কোন দিন আসিবেন বন্ধু কয়া যাও কয়া যাও রে - মূল সুর
কোন দিন আসিবেন বন্ধু কয়া যাও কয়া যাও রে - ভেরিয়েশন/রেন্ডিশন
বটবৃক্ষের ছায়া যেমন রে
মোর বন্ধুর মায়া তেমন রে।
বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে
কোন দিন আসিবেন বন্ধু কয়া যাও কয়া যাও রে - মূল সুর
কোন দিন আসিবেন বন্ধু কয়া যাও কয়া যাও রে - ভেরিয়েশন/রেন্ডিশন
কথা ও সুর : জসীমউদ্দীন
সুরের রেন্ডিশন/ভেরিয়েশন : খলিল মাহ্মুদ
তবে, অনেকে গাইতে গেলে মনে হতে পারে, তিনি দেখি পুরা গানটাই রেন্ডিশন করে ফেলেছেন এটা রেন্ডিশন, নাকি অন্য কিছু, তা বোঝা যাবে তার গায়কীর মিষ্টতা বা শুষ্কতা থেকে। অর্থাৎ, আপনি ঠিকই ধরে ফেলবেন, এটা রেন্ডিশন, নাকি হাম্বারবের ভ্যাঁ ভ্যাঁ
রেন্ডিশনের মূল লক্ষ, গানটার মিষ্টতা ও আকর্ষণ আরো বাড়ানো। আপনি রেন্ডিশন করতে যেয়ে গানটার বারোটার বাজিয়ে দিলে ওটা শুরুতেই ফ্লপ করবে, প্লাস শ্রোতা, দর্শক, মূল শিল্পী, সুরকার, গীতিকার আপনার উপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হবেন।
রেন্ডিশন অফিশিয়ালি প্রচার বা প্রকাশ করতে গেলে অবশ্যই মূল সুরকার, শিল্পী, প্রমুখের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া উচিত বলে ধারণা করছি (এ ব্যাপারে অথেনটিক কিছু জানা নেই)।
এ গানের যে রেন্ডিশন এখানে দেখানো হলো, তার কপিরাইট আমার। যে-কেউ এটা প্রচার করতে পারেন, তবে রেন্ডিশনে আমার নাম উল্লেখ আবশ্যিক হবে।
এবার এ গানের আরো কয়েকটা মিউজিক ভিডিও দেখুন।
আব্বাসউদ্দীন আহমদ
রথীন্দ্রনাথ রায়
ও কী ও বন্ধু কাজল ভোমরা রে - ফেরদৌসী রহমান, ছায়াছবি 'নোলক'
রুনা লায়লা, ছায়াছবি 'রঙ্গীন রাখাল বন্ধু'
সাবিনা ইয়াসমিন, ছায়াছবি 'রাখাল রাজা (ভারত)
স্বাগত দে
মোস্তফা জামান আব্বাসীর কণ্ঠে এ গানটা বিশেষভাবে ভালো লাগলো। কোনো একদিন রেডিওতে তার খালি গলায় গাওয়া একটা ফোক গান শুনেছিলাম। গানের কলি ও সুর সবই ভুলে গেছি, কিন্তু সেই আবহ এখনো অম্লান। এবং আমি ঠিক জানি না, এই যে আমি এত ধীর লয়ে টেনে টেনে খালি গলায় গান গাইতে গাইতে নিমগ্ন হয়ে যাই, হয়ত তার গানটা শোনার পর থেকেই আমি আমার অজান্তে এরকম গায়কীতে অনুরক্ত হয়ে পড়ি।
মোস্তফা জামান আব্বাসী
সবাই ভালো থাকবেন।
বাংলার প্রতিটা ঘরে ইদ বয়ে আনুক নির্মল সুখ ও আনন্দ।
ইদ মোবারক।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২২ রাত ১১:১৮