somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লৌকিক রহস্য; অথবা অলৌকিক || পর্ব-২

০১ লা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুটিমিয়াদের বাড়ির উত্তর দিকে একটা বড়ো ঝিল আছে। সেই ঝিলে বারো মাস পানি থাকে। ঝিলের চারদিকের উঁচু জমিতে আউশ আর আমন ধানের চাষ হয়। বৃষ্টি হলে ধানক্ষেতের পানি গড়িয়ে সেই ঝিলে নামে। পানির সেই ধারা বেয়ে ঝিল থেকে ধানক্ষেতের ওপরে উঠে আসে দুই-তিন সনী কইমাছ। রাতের বেলা ধানক্ষেত মাড়িয়ে এসব কইমাছ ধরাতে প্রচুর রোমাঞ্চ আছে। কিন্তু বৃষ্টির রাতে কইমাছ গাবানোর রহস্য সবাই জানে না, জানলেও কেউ ঘর থেকে বেরোয় না কেবল সাহসের অভাবে।
পাশের বাড়ির আবুল এ ব্যাপারে দারুণ ওস্তাদ। সে কুটিমিয়ার প্রিয়বন্ধুদের একজন। সে আবুলের মুখে রাতে কইমাছ ধরার অনেক গল্প শুনেছে। আবুলদের বাড়িতে বড়ো হাঁড়িতে জিয়ানো আলীশান কইমাছের দাপাদাপি দেখে মাছ ধরার ইচ্ছেয় সে পাগল হয়ে উঠেছে বহুদিন। কিন্তু আবুলের মাছ ধরার নিশিসঙ্গী সে কোনোদিন হতে পারে নি। কেননা, রাত-বিরাতে মা-বাবা তাকে ঘর থেকে বেরোতে দেন নি।

কিন্তু কুটিমিয়া এখন স্বাধীন। সে বড়ো হয়ে উঠেছে। এখন তাকে মা-বাবার সাথে এক ঘরে শুতে হয় না। কিছুদিন আগে থেকে তারা তিন ভাই আলাদা ভাবে রসুইঘরে ঘুমায়। রাতে যে ভয়ডর লাগে না তা না। তিনজনের মধ্যে চানমিয়া সবার ছোটো। সে শখ করে এদের কাছে থাকে। বড়োই খেয়ালি ছেলে, একেকদিন হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে চিৎকার জুড়ে দেয়, ‘ও বাজান, আমারে নিয়া যাও। আমারে নিয়া যাও বাজান।’ বাবা কিংবা মা এসে তাকে ঘরে নিয়ে যান।
মাঝেমধ্যে মা-বাবা কিংবা চাচা-চাচিরা পায়খানা প্রস্রাবের জন্য বের হোন, ওদের ঘরের দরজায় টোকা দেন, বেড়ায় থাপ্পড় দেন বা মৃদু ডাকাডাকি করেন। এতে একটা লাভ হয়, বুকের ভিতর যদিও বা সামান্য ভয়ডরের উদ্রেক হয়, এই ডাকাডাকিতে তা হালকা হয়ে যায়। কিন্তু এতকিছুর পরও পুরোটা রাত কুটিমিয়ার কাছে নিজেকে খুব স্বাধীন মনে হয়। ঘর থেকে চুপিচুপি বেরিয়ে কারো সাথে জয়পাড়া হলে সিনেমা দেখে এলে বাড়ির কাকপক্ষীটিরও জানার সাধ্য নেই।

আশ্বিনের এক রাতে সারারাত অঝোর ধারায় বৃষ্টি হওয়ার পর শেষ রাতের দিকে তা থেমে গেলো। কুটিমিয়ার মনের ভিতর তখন তোলপাড়—‘ইশ্‌, যদি আবুল আইয়া ডাক দিত, আইজক্যা অনেক কইমাছ ধরন যাইতো।’ সে কান খাড়া করে থাকলো, কারণ, তার দৃঢ় বিশ্বাস আবুল আসবেই। যখন সে মা-বাবার সাথে এক ঘরে থাকতো, এমন নিশীথে কাশতে কাশতে তাদের দুয়ার পার হয়ে রাস্তায় বের হয়ে যেতো আবুল; খাল পার হয়ে ওপারের ধানক্ষেতে গপাগপ অনেক কইমাছ ধরতো।
কুটিমিয়া কান খাড়া করেই ছিল, এমন সময় হঠাৎ নীচু গলায় আবুলের ডাক, ‘কুডি ঘুমাইতেছা নি রে?’
এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় কুটিমিয়া। তারপর পাটখড়ির ঝাঁপ সরিয়ে দরজায় এসে দাঁড়ায়। রোমাঞ্চে থরথর গলায় জিজ্ঞাসা করে, ‘ওইপাড়ে যাবি?’
‘হ...যাবি নি? গেলে আয়।’
‘খাড়া, আইফ্যার লাগছি।’ বলেই ঘরের ঝাঁপ ভেজিয়ে দ্রুত বের হয়ে আসে।
আবুলের এক হাতে ছাতা ফুটানো, আরেক হাতে একটা টর্চ আর ব্যাগ।
‘তুই টর্চটা আতে নে।’ আবুল বলে।
‘জুতি আনলি না?’ কুটি জিজ্ঞাসা করে।
‘জুতি লাগবো না।’
ধানক্ষেতের আইল বরাবর আসতেই পানির কলকল শব্দ, তাতে কইমাছের ছোটাছুটি আর ক্যাতকুত শব্দে কুটিমিয়ার শরীরে উত্তেজনার আগুন জ্বলে উঠলো।
দুজনে ধানের সারি ফাঁক করে ক্ষেতে নামে—টর্চের আলো সামনে ফেলেই কুটিমিয়া পাগল হয়ে গেলো, এত্ত কই! কইমাছের এরূপ দাপাদাপি-ছোটাছুটি সে জীবনেও দেখে নি।
হাতের ছাতাটা কুটিমিয়ার হাতে দিয়ে আবুল বলে, ‘তুই খালি সোজা কইরা টর্চ মারতে থাক।’
আবুলের বাম হাতে ব্যাগ। উবু হয়ে একটা একটা করে কইমাছ ধরে ব্যাগের ভিতরে পুরতে লাগলো। একেকটা কই বড়োই দুষ্টু—ধরতে গেলেই ছুট দেয়—পিছে পিছে আবুলও ছোটে। কিন্তু ওর চালাকির কাছে কইমাছের দুষ্টুমি কিছুই না।
‘আমিও দরি?’ কুটিমিয়া আবুলকে বলে।
‘তুই পারবি? লাইড দরবো ক্যাডা?’ আবুল মৃদু ভর্ৎসনার স্বরে বলে।
‘এক কাম করি, তুই ছাতি আর লাইটটা দর, আমার কাছে ব্যাগ দে, আমি কয়ডা দইর‌আ দেহি।’ কুটিমিয়া বলে।
‘তুই পারবি ন্যা।’ আবুল একটা ঝাড়ি দেয়। কুটিমিয়া মর্মাহত হয় এবং দমে যায়।

কুটিমিয়ার বাম দিকে একটা বড়ো রকমের ক্যাতকুত শব্দ হলো—ওদিকে টর্চ ধরতেই ওর দু চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেলো—‘একদম হাত্তির সুমান কই রে!’ বলেই সে নীচু হয়ে ওটা ধরার জন্য হাত বাড়ায়, কিন্তু কইটা খড়্‌ড়ৎ করে সামনের দিকে একটা লম্বা দৌড় মারলো, তারপর ধানের গোছার মধ্যে টুপ করে লুকিয়ে গেলো। কুটিমিয়া নাছোড়বান্দা, ওটা সে ধরবেই। সে পা টিপে টিপে সামনে এগোয়, আলগোছে ধানের গোছায় হাত রাখে, অমনি কইমাছটা আবারো দৌড়ে আগের মতো মাথা গুঁজে লুকিয়ে যায়। এভাবে লুকোচুরি খেলা চলতে থাকলো, কুটিমিয়া দৌড়ায়—কইমাছটাও দৌড়ায়, যেন দাঁড়িয়াবাঁধা খেলা। শেষ পর্যন্ত এক দৌড়ে মাছটা কোথায় গিয়ে কোন্‌ ধানগোছার মধ্যে লুকালো তার কোনো হদিস পাওয়া গেলো না।
আবুল ঠিকই বুঝেছিল কুটিমিয়া মাছ ধরতে জানে না। এত চেষ্টা করেও মাছটা ধরতে না পেরে সে মনে মনে খুবই লজ্জিত হলো। লজ্জিত হবার আরেকটা কারণ হলো এতক্ষণ সে আবুলের জন্য টর্চ ধরে নি, নিশ্চয়ই ওর ওপর ভীষণ চটে আছে।
কুটিমিয়া ঘুরে আগের জায়গায় চলে আসে। আবুল মাছ ধরতে ধরতে সামনের দিকে অনেক দূর চলে গেছে। ও এতই পটু যে টর্চের আলো ছাড়াই অন্ধকারে দেধারছে মাছ ধরছে। মাছের ছোটাছুটি, মাছের পিছনে আবুলের দৌড়, টুপটাপ শব্দ, মৃদু কাশি শোনা যায়। কুটিমিয়া সামনে এগোয়।
‘ব্যাগ ভরছে নি রে?’ সংকুচিত স্বরে কুটিমিয়া জিজ্ঞাসা করে।
‘হুঁম।’
‘তুই কুতায়?’ টর্চ মারতে মারতে আরো সামনে যায় কুটিমিয়া।
মাছ ধরার নেশা বড়ো নেশা। এই নেশায় ধরলে দিনদুনিয়ার কোনো কথা মনে থাকে না। কাদাপানির মধ্যে আবুলের পা ওঠানামার শব্দ পাওয়া যায়, ওর নাকের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ পাওয়া যায়। কুটিমিয়া সামনে এগোতে থাকে।
‘তুই কই রে?’ কুটিমিয়া আবার জিজ্ঞাসা করে।
‘এই যে...।’ আবুল একটু টেনে টেনে বলে।
‘এত দূরে গ্যাছা ক্যান?’
আবুল আস্তে আস্তে বেশি পানির মধ্যে চলে গেছে। সে হাতড়েও মাছ ধরতে বড়ো ওস্তাদ।
কুটিমিয়া ধানের সারি ফাঁক করে টর্চের আলো ফেলে সামনে এগোয়।
‘আবুল...।’ কুটিমিয়া স্বর একটু উঁচু করে ডাকে।
‘কী...?’ দূরে আবুলের জবাব শোনা যায়।
‘তুই কত দূরে গ্যাছা?’
‘এই যে...’
কুটিমিয়া ধানগাছের ওপর দিয়ে সামনে টর্চ মারে। ধানের মধ্যে উবু হয়ে থাকলে কি কিছু দেখা যায়? আবুলকেও দেখা যায় না। সামনে মাছের নড়াচড়া লক্ষ করে ও বোধ হয় এক জায়গায় ঝিম ধরে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
পানিতে আর হাঁটার শব্দ পাওয়া যায় না।
‘আ..বু..ল...।’ কুটিমিয়া দীর্ঘ উচ্চ স্বরে ডাকে।
কিন্তু আবুলের কোনো উত্তর আসে না। কুটিমিয়া আবার টর্চ মারে। আবুলের মাথা দেখা যায় না। ধানের গোছাও নড়াচড়া করে না। আবুল কত দূরে গেছে?
‘আ...বু...ল...। আবুল রে...।’ কুটিমিয়া লম্বা গলায় ডাকতে থাকে।
আবুল নিরুত্তর।
আবার সে ডাকে, ‘আ...বু...ল...’
হঠাৎ ফজলুর কথা মনে হতে না হতেই কুটিমিয়ার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। হাতের সবকিছু ফেলে উলটো ঘুরে সে দ্রুত নিশ্বাসে বাড়ির দিকে দৌড়াতে শুরু করে। সে দৌড়ায়—কাদা, ধানগাছ মাড়িয়ে সে দৌড়ায় আর গলার সর্বোচ্চ স্বরে চিৎকার দিয়ে ডাকে—‘বাজান...বা-জা-ন...ও বাজান...।’ তার ভয়ার্ত চিৎকার পুরো ঝিলের চারপাশে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। কাদাপানি কোনো কিছুর কথা তার মনে থাকে না। ধানের গোছায়, লতায় তার পা আটকে যায়, দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে গিয়ে আবার সে উঠে দৌড়াতে থাকে, গগণবিদারী শব্দে তার কণ্ঠে কেবলই ‘বাজান বাজান’ ডাক শোনা যেতে থাকে।
প্রায় দু-তিন শ গজ দূরে বাড়িতে ঘরের ভিতরে কুটিমিয়ার বাপজান ঘুমভাঙ্গা চিৎকার দিয়ে ওঠেন—‘তুই কুতায় রে বাজান? তর কী অইছে...?’ ঝড়ের বেগে বেরিয়ে খালপাড়ে এসেই তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন, সাঁতরে এপাড়ে আসেন, দৌড়ে কুটিমিয়ার কাছে গিয়ে সাপটে ধরে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে খালপাড়ে এসে দাঁড়ান। দুজনের সর্বাঙ্গ তখন থরথর করে কাঁপছে।
মুহূর্তে সারাবাড়ির মানুষ ঘর ছেড়ে খালের পাড়ে চলে আসে। কুটিমিয়া তখন বাপজানের বুকে মিশে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছে—‘আমি ডরাইছি বাজান—আমারে তাড়াতাড়ি বাইত্তে নিয়া যাও।’
প্রর্বল বর্ষণে খাল ভরে গেছে, প্রচণ্ড স্রোত। কিন্তু আশ্চর্য, কুটিমিয়া এই খাল কীভাবে পার হয়ে এপাড়ে এসেছিল তা তার মনে পড়ে না।
তার ছোটো চাচা ওপাড়ে বাঁধা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া কোষা নৌকা সেচছে ওদেরকে পার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

ফজলুর জীবনেও এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু আশ্চর্য, ঘুণাক্ষরেও কুটিমিয়ার সেই ঘটনা মনে পড়ে নি।

***

ফজলু আর হামজু পাগলা একসাথে আড়িয়াল বিলে ঝাঁকিজাল দিয়ে মাছ ধরতো। মাছ ধরা তাদের পেশা ছিল। তাদের দুজনের একটা কোষা নৌকা ছিল। হামজু পাগলা বইঠা বাইতো, ফজলু কোষায় দাঁড়িয়ে জাল ফেলতো। ভোর রাতে তারা বাড়ি থেকে বের হতো। আধমাইল দূরে ফকির বাড়ির ঘাটে নৌকা বাঁধা থাকতো। হামজু পাগলাদের বাড়ি একটু দূরে ছিল। ফজলুদের বাড়ির কাছে এসে সে ফজলুকে ডাক দিত, ফজলু জাল নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলে দুজনে একত্রে হাঁটতে হাঁটতে ঘাটে যেতো।

এক ভোর রাতে হামজু এসে হাঁক দিল, ‘ও ফজলু, তাড়াতাড়ি আয় দেহি।’
ফজলু চোখ ডলে ঘর থেকে জাল নিয়ে বের হয়। বউ ঘরের দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়ে।
এর বহুক্ষণ পর হামজু পাগলার ডাকে ফজলুর বউয়ের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
‘ফজলু, ও ফজলু...’
‘ও হামজু ভাই...,’ তড়িঘড়ি দরজা খুলে ফজলুর বউ শংকিত স্বরে বলে, ‘উনারে না নিয়া গেলা?’
‘কী কও তুমি?’ হামজুর কণ্ঠস্বরে ভয়মিশ্রিত বিস্ময়।
‘একবার না উনারে নিয়া গেলা?’ কাঁপা গলায় সে আবারো বলে।
‘কী কও তুমি? সর্বনাশ অই নাই তো ভাবীজান?’
বউয়ের কলজের পানি শুকিয়ে যায়। সে বলে, ‘তুমার ভাই তো সইত্য সইত্যই তুমার সাতে গেলো।’
ফজলু সত্যি সত্যিই গিয়েছিল, তবে হামজু নয়, অন্য কেউ তাকে ডেকে নিয়েছিল।

ফজলুর বউ আর হামজু পাগলার ভয়ার্ত চিৎকারে মুহূর্তে পাড়াপড়শিরা জড়ো হয়ে পড়ে, সারা বাড়ি, সারা গ্রাম, সম্ভাব্য সব জায়গা তন্ন তন্ন করে ফজলুকে খোঁজা হয়। সবার ধারণা হয় ফজলুর এতদিনকার শত্রু রমিজ মোল্লাই তাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে খুন করেছে, তারপর আড়িয়াল বিলের কচুরিপানার নীচে গায়েব করে দিয়েছে।
সবাই আড়িয়াল বিলের দিকে ধাবিত হয়, ফকির বাড়ির ঘাটে কোষা নৌকাটি নেই, ওটি কই গেলো? রমিজ মোল্লাই নিয়েছে।
আড়িয়াল বিলের ঠিক মোহনায় খালের ধারে ফজলুকে পাওয়া গেলো। খালের কিনারে রসি দিয়ে লগির সাথে কোষা নৌকাটি বাঁধা রয়েছে। ফজলু আর হামজু পাগলা প্রতিদিন মাছ ধরা শেষে এই জায়গায় এসে এভাবে নৌকা বেঁধে মহাজনদের অপেক্ষায় থাকতো।
লগি থেকে তিন হাত দূরে ফজলুর শরীর পানির নীচে উলটো করে চুবানো, পা দুটি সটান ওপর দিকে খাড়া হয়ে আছে। পায়ের তালু আর আঙ্গুলগুলো ধবধবে পরিষ্কার, একটুও কাদা লেগে নেই; পানিতে লুঙ্গির কোনা ভাসছে।
ফজলুর দেহ পানি থেকে ডাঙ্গায় তোলা হলো। মাথা থেকে বুক অব্দি কাদার ভিতর গাড়া ছিল। শরীরের কোথাও ধ্বস্তাধ্বস্তির চিহ্ন নেই, নখের একটা আঁচড়ও কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না। পাথরের একটা মূর্তিকে উলটো করে আলগোছে কাদায় পুঁতে দিলে যেমন হয়, মনে হলো ঠিক সেভাবে নরম করে ফজলুর মাথা থেকে বুক পর্যন্ত কাদায় গেঁথে দেয়া হয়েছিল।

কুটিমিয়ার অবস্থাও ফজলুর মতোই হতে পারতো। হয় নি, কারণ সবার বিশ্বাস, তার ওপর নিশ্চয়ই অলি-আউলাদের নেক দোয়া আর রহমত আছে। যে আবুল তাকে ডেকে এনেছিল, জানা গেলো প্রায় মাস খানেক আগে সে গোবিন্দপুরে তার ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে গেছে। কুটিমিয়া নিজেই তাকে গুদারায় উঠিয়ে দিয়ে এসেছিল। আবুল বাড়িতে নেই বলে কুটিমিয়ার মনে কত দুঃখ ছিল, অথচ এই কথাটা তার একবারের জন্যও মনে পড়লো না—‘আবুল বাইত্তে নাই, এই রাইত্রে কে ডাকে?’


চলবে ---

আগের পর্ব : লৌকিক রহস্য; অথবা অলৌকিক। পর্ব-১
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৩৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×