সারিদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হতো,
সারি, আর ওর বোনেরা, সাথে একদঙ্গল মেয়েরা মিলে
গলাগলি ধরে জানালা মৃদু ফাঁক করে আমাকে দেখছে
আর চুপিচুপি কত কী বলাবলি করছে, কখনোবা হাসতে হাসতে
গলে পড়ছে একে অপরের গায়ে।
কী স্বাভাবিক ভাবেই না হেঁটে আসতাম সবখানি পথ
অথচ ওদের পথের সীমানায় ঢুকতেই মনে হতো, ওই তো,
জানালাটা খুব ধীরে ধীরে ফাঁক হচ্ছে, আর ওপাশেই ওরা
কলাবরিষ্ঠা, লাস্যময়ী লীলাবতীগণ
লজ্জায় ওদিকে তাকাতে পারতাম না, মাথা নীচু হতে হতে
মাটি ছুঁয়ে যাবে, এমনটা মনে হতো
আর তখন থেকেই বুঝেছিলাম – লজ্জা পুরুষের উত্তম ভূষণ,
বিশেষ করে অন্তর্মুখী উঠতি যুবকগণের
সারিকে আমি দেখি নি, না তার মুখ, না শুনেছি তার কণ্ঠ কোনোদিন
আজও, এতযুগ পর যখন সারিদের বাড়ির পাশ হেঁটে দিয়ে যাই,
আলগোছে নেমে আসে মাথা, মাটির কাছাকাছি যেন,
যেন খুব নিবিড় ফিসফাস শব্দমঞ্জরী
বাতাসে ভেসে আসে ওখানে ঐ জানালার ফাঁক গলে
অথচ কী নিদারুণ গল্প রচনা করে সারিরা এ বাড়ি ছেড়ে গেছে
আরও তিনযুগ আগে, কোনোরূপ ঠিকানা না রেখেই
দৈবাৎ আপনি কখনো ওপথে গেলে হয়তবা দেখবেন
জঙ্গলে ছাওয়া একখানি পোড়ো বাড়ি, হয়তবা কোনো চিহ্নই
দেখতে পাবেন না কোথাও
আমি জানি না, কী ছিল সারিকার মনে, আমার জন্য প্রেম
নাকি অহেতুক গুচ্ছ গুচ্ছ কৌতূহল। কিন্তু আমি সুনিশ্চিত জানি,
যদি কোনোদিন পথে যেতে যেতে হঠাৎ ডেকে উঠতো সারিকা,
মুখচোরা এক প্রেমিক সেদিন হঠাৎ সবেগে দৌড়ে যেয়ে
জানালার পাশে, ক্ষিপ্র সাবলীল স্বরে বলে উঠতো,
‘তুমি কি কবিতা ভালোবাসো, সারিকা?
তাহলে এই নাও, এই দেখো, তোমার নামে কত্ত কবিতা!
যবে থেকে আমায় দেখতে এ জানালা থেকে, তারপর
একটাও বিপ্লবের কবিতা লিখি নি, একটাও দ্রোহের কবিতা লিখি নি,
নিরন্তর আমি প্রেমের কবিতা লিখেছি থরে থরে পাতায় পাতায়।
আমি এক প্রব্রজিত কবি, প্রেম চাই তোমার সকাশে।
আমাকে প্রেম দাও, সারিকা।’
২১ এপ্রিল ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:৫৯