বাংলাদেশ আজ এক দুর্দান্ত খেলা দেখালো ভারতের বিপক্ষে। এশিয়া কাপের সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে ভারতকে ৬ রানে হারিয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় আনন্দযজ্ঞে আজ আপনাদের সবার নিমন্ত্রণ।
লিগ পর্বের ১ম ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে মোটামুটি টাইট ম্যাচে ৫ উইকেটে হারার পর (বাংলাদেশ ১৬৪, শ্রীলংকা ৩৯ ওভারে ১৬৫/৫) সুপার ফোরে বাংলাদেশ উঠতে পারবে কিনা, এই সংশয়ে শরীরের সর্ব অঙ্গে কাঁপনধরা জ্বর চলে আসে সমগ্র বঙ্গবাসীর; কারণ হলো প্রতিপক্ষ হলো দুর্দান্ত ফর্মে থাকা, ক্রিকেটবিশ্বের ভিত কাঁপিয়ে দেয়া, অঘটনঘটনপটমান আফগানিস্তান। (পটিয়সী হলো স্ত্রীলিঙ্গ। ওটার পুং লিংগ বানাইলাম )। তবে, মানীর মান আল্লাহই রাখেন, সময়মতো টাইগাররা জ্বলে উঠে আফগানদেরকে ৮৯ রানের বড়ো ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে খেলা নিশ্চিত করে (বাংলাদেশ ৩৩৪/৫, আফগানিস্তান ৪৪.৩ ওভারে ২৪৫)।
প্লিজ ক্লিক করুন - জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ - কোরাস
জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ - একক কণ্ঠ
সুপার ফোরের ১ম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেট হারলো বাংলাদেশ (বাংলাদেশ ১৯৩, পাকিস্তান ৩৯.৩ ওভারে ১৯৪)। বাংলাদেশ ব্যাকফুটে চলে যায়। পরের ম্যাচে শ্রীলংকার সাথে মোটামুটি ভালো ফাইট দিয়াই ২১ রানে হেরে গিয়ে ৩ বার এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশ এবারের এশিয়া কাপ ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়ে। (শ্রীলংকা ২৫৭/৯, বাংলাদেশ ৪৮.১ ওভারে ২৩৬)।
এবারের এশিয়া কাপের অর্জন বলতে কি তাহলে ঐ আফগান সিংহদের হারানো একটা মাত্র উইন? কারণ, বাংলাদেশের আর একটা মাত্র খেলা বাকি আছে যা অলরেডি এবারের এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত করা ভারতের সাথে। লাস্ট ম্যাচে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ভারতকে হারানো কি চাট্টিখানি কথা? ১৯৮৮ সাল থেকে এশিয়া কাপের ১২টি মোকাবেলায় ভারত জিতেছে ১১টিতে, আর বাংলাদেশ সর্বশেষ ২০১২ সালে মিরপুরের মাঠে একটিমাত্র ম্যাচে ভারতকে হারিয়েছিল। পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নড়বড়ে।
যাই হোক, সারানিশি কাঁদি, আর আশায় আশায় বুক বাঁধি।
যথাসময়ে খেলা শুরু হলো। বাংলাদেশ টসে হেরে আগে ব্যাটিং পাইল। আমি অবশ্য সারাজনম বাংলাদেশকে আগেই ব্যাটিং দেখতে চাই। যাই হোক। ৫৯ রানে টপ অর্ডারের মাত্র ৪জন সাজঘরে ফেরত গেলে সাকিব আর হৃদয় জুটি গড়লেন। ১০১ রানের পার্টনারশিপে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে চলে যায়। সাকিব সহ ২টা হাফ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ২৬৫ রান করে। একটা সময় ছিল, ২০০০ সালের আগে এবং কিছু পরে, যখন ২৫০ রানের টার্গেটকে উইনিং স্কোর ধরা হতো। ২৫০ রানের উপরের টার্গেটে জয়ের সংখ্যা ছিল খুবই কম। কিন্তু দিন পালটে গেছে। এখন ২৫০-এর জায়গায় ৩৫০ হলেও ওস্তাদরা ভয়ে থাকে, এই বুঝি ম্যাচ ছুটে গেল। তো, বাংলাদেশ ২৬৬ রানের টার্গেট দিয়া জয়ের আশা করবে, এমন ভাবাটা স্বাভাবিক ভাবনা না; কী টার্ম এটাকে দেয়া যায় আপনারাই বলুন। সাহসী ভাবনাই বলা যায়। ভারতের ব্যাটিং শুরু হলো। ২য় ওভারেই তানজিম হাসান সাকিবের বলে রোহিত শর্মা সুন্দর একটা ক্যাচ তুলে দেন এনামুল হকের হাতে। পুরা বাংলাদেশ শিবিরে ঝড়ের উল্লাস।
১৭ রানের মাথায় ২ উইকেট চলে যায় ভারতের। ৯৪ রানের মাথায় ৪ উইকেট পড়ার পর বাংলাদেশ শিবিরে আশার সঞ্চার হতে থাকে। কিন্তু গিল সেই আশায় কেবলই আঘাত করতে থাকেন। ১২১ রান করে গিল আউট হওয়ার পর আমরা ধরে নিই, আজকের জয়টা আমাদেরই। কিন্তু আবার বাধ সাধতে থাকে আক্সার। ২৫৪ রানের মাথায় আক্সার ৪২ রান করে আউট হওয়ার পর আশা শক্ত হয়, কিন্তু বুক কাঁপতে থাকে। লাস্ট ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার পড়ে ১২ রানের। হাতে আছে মাত্র ১ উইকেট। বোলিঙে আসেন তানজিম হাসান সাকিব। ১ম বল টু শামি- নো রান। ২য় বল টু শামি - নো রান। ৩য় বল টু শামি - নো রান। ৪র্থ বল টু শামি - ফোরররর। ২ বলে ৮ রান। ২ টা ৪ কিংবা ২ টা ৬ কিংবা এক ৬ এক ৪ কিংবা এক ৬ এক ডাবলস হলেই ভারত জিত্তা যাইব। হার্টবিট আছে কী নাই তাও দেখার সময় নাই। পরের বল (৫ নং বল) টু শামি - এক রান নিয়া ২য় রানের জন্য দৌড় দিতেই শামি ভাই ক্রিজে পৌঁছার আগেই তানজিম ভাইয়ের থ্রো করা বলে লিটন ভাই উইকেট ভাইঙ্গা ফালায়, শামি ভাই রান আউট, আর বাংলাদেশ ৬ রানের ঐতিহাসি জয় পায়।
কথা না বাড়াই। রাত হয়ে গেছে। ফল অব উইকেট দেখুন।
বাংলাদেশ : 1-13 (Litton Das-০, 2.1 ov), 2-15 (Tanzid Hasan-১৩, 3.1 ov), 3-28 (Anamul Haque-৪ (চার), 5.4 ov), 4-59 (Mehidy Hasan Miraz-১৩, 13.6 ov), 5-160 (Shakib Al Hasan-৮০, 33.1 ov), 6-161 (Shamim Hossain-১, 34.1 ov), 7-193 (Towhid Hridoy-৫৪, 41.2 ov), 8-238 (Nasum Ahmed-৪৪(চুয়াল্লিশ), 47.2 ov) •)
ভারত : 1-2 (Rohit Sharma-০, 0.2 ov), 2-17 (Tilak Varma-৫, 2.4 ov), 3-74 (KL Rahul-১৯, 17.1 ov), 4-94 (Ishan Kishan-৫, 23.3 ov), 5-139 (Suryakumar Yadav-২৬, 32.4 ov), 6-170 (Ravindra Jadeja-৭, 37.4 ov), 7-209 (Shubman Gill-১২১, 43.4 ov), 8-249 (Shardul Thakur-১১, 48.1 ov), 9-254 (Axar Patel-৪২, 48.4 ov), 10-259 (Mohammed Shami-৬, 49.5 ov)
উল্লেখ্য, এ পোস্টটা দিতে চাইছিলাম আনন্দযজ্ঞে গানটার জন্য। বেশি আবেগের ঠেলায় ক্রিকেটের কথাই লিখে ফেললাম। আপনাদের যেটা খুশি সেটাতে মজা লন, কিংবা সবগুলিতেই মজা লন। আমার কোনো আপত্তি নাই।
শুভ ঘুমাহ্ন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১:২৭