এক রাজা একদিন দেখতে চাইলেন, তার রাজ্যবাসীদের ঘরে কার হুকুম চলে, স্বামীর, নাকি স্ত্রীর।
তিনি রাজ্যে ঘোষণা করলেন...
যে-সব স্বামীর ঘরে বউয়ের কথা মানা হয়, সে-সব ঘরের স্বামীরা রাজপ্রাসাদে এসে একটা করে আপেল নিয়ে যাবে।
আর যাদের ঘরে স্বামীর কথা চলে, তারা পাবে একটা করে ঘোড়া।
পরের দিন সমস্ত রাজ্যবাসী হাজির, সবাই একটা করে আপেল নিয়ে ঘরে চলে যেতে লাগলো...
রাজা ভাবলেন, সন্ধ্যে হয়ে গেল, এখনো কি এমন একজনকেও পাওয়া যাবে না যার ঘরে স্বামীর কথা চলে!
এমন সময় একজন এলো - লম্বা চওড়া স্বাস্থ্য, ইয়াবড়ো গোঁফ। সে এসে বললো, ‘আমার ঘরে আমারই কথা চলে।'
রাজা বেজায় খুশি হলেন। তিনি বললেন, ‘যাও, আমার ঘোড়াশাল থেকে সব থেকে ভালো ঐ কালো ঘোড়াটা তোমায় দিলাম।’
মর্দটা খুশিতে ঘোড়ায় চড়ে নাচতে নাচতে হাঁটিয়া চলিয়া গেল।
রাজা খুশি মনে বললেন, ‘যাক, অন্ততপক্ষে একজন পাওয়া গেল।’
কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখা গেল সেই লোকটা ঘোড়া নিয়ে ফিরে এলো এবং বললো, ‘রাজা মশাই, আমাকে ঘোড়াটা পাল্টে দিন, আমার বউ বললো যে কালো রং অশুভ, সাদা শান্তির প্রতীক, তাই সাদা ঘোড়া দিন।’
রাজা রেগে গেলেন... ‘হালার পুত বলদের বাচ্চা আবাল, তুই ঘোড়া রাইখ্যা একটা আপেল নিয়া এক্ষুণি আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় হ।’
রাতের বেলা মন্ত্রী এলো, বললো, ‘রাজা মশাই, সবাই তো আপেলই নিল! আপেলের বদলে আপনি যদি অন্তত পাঁচ কেজি করে চাল দিতেন, তাহলে আপনার প্রজাদের কিছু সাশ্রয় হতো।’
রাজা বললেন, ‘আমিও সেটাই ভেবেছিলাম, কিন্তু বড়ো রানি বললো, আপেলই ভালো হবে।’
মন্ত্রী শুধালো, ‘রাজা মশাই, আপনাকেও কি একটা আপেল কেটে দেবো?’
রাজা লজ্জিত হয়ে বললেন, ‘সে কথা থাক, আগে বলো, তুমি রাজসভায় এই মতামত না দিয়ে এখন কেন দিতে এসেছো এই রাতের বেলায়?’
মন্ত্রীর লাজুক উত্তর, ‘আগামীকাল সকালেই বলতাম, কিন্তু আমার বউ বললো, এখনই যাও, আর রাজামশাইকে বুদ্ধিটা এখনই দিয়ে এসো যাতে করে পরের বারে চাল দেওয়ার ঘোষণা দেন উনি।’
রাজা স্বস্তির হাসি হেসে বললেন, ‘আপেলটা তুমি নিয়ে যাবে? নাকি ঘরে পাঠিয়ে দেবো?’
একবার আমাদের সামহোয়্যারইন ব্লগেও এমন একটা আশ্চর্য মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। বসার জায়গায় দুইটা গ্যালারি করা হয়েছিল। একটা ছিল – স্ত্রৈণ / প্রেমিকাতৈণ – যারা স্ত্রী বা প্রেমিকার আজ্ঞাবহ, তারা এই গ্যালারিতে বসিবেক। আরেকটা ছিল – বীরবাহু – যারা কক্ষণো স্ত্রী বা প্রেমিকার কথায় উঠবস করে না।
যথাদিনে যথাসময়ে সবাই মিলনমেলায় আসলো। ‘স্ত্রৈণ/প্রেমিকাতৈণ’ গ্যালারিতে বসিবার তিল ঠাঁই রহিল না। অনেকেই স্ত্রী, কেউ বা গার্লফ্রেন্ড বা প্রেমিকা নিয়া পাশাপাশি ঠাসাঠাসি করিয়া বসিল। কিন্তু আশ্চর্য, ‘বীরবাহু’ গ্যালারি একেবারে শূন্য, একটা মশা বা মাছিও সেইখানে নাই। কী লজ্জার কথা, তাই না, এই বঙ্গে একজনও বীরপুরুষ নাই, যার কিনা স্ত্রীর হুকুম অগ্রাহ্য করার মতো বুকের পাটা আছে?
হ্যাঁ, এমন সময় দেখা গেল, আমাদের বিশ্ববিখ্যাত কবিব্লগার সোনামিয়া ‘বীরবাহু’ গ্যালারিতে গিয়া আলগোছে বসিয়া পড়িলেন। উহা দেখিয়া সবারই চক্ষু গেল চড়কগাছ হইয়া। প্রথমে কানাঘুষা শুরু হইল, পরে চিল্লাচিল্লিতে গ্যালারি ফাডিয়া যাইবার উপক্রম হইল। এই অবস্থায় সকলের পক্ষ হইতে বিশ্বকবি শায়মারন্দ্র ঠাকুর সোনামিয়ার সামনে উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ভাইয়ুমণি, তুমি যে ভাবীমণির কথা মতো চলো না, তাহা আমরা হগলেই জানি। কিন্তু, আমাদেরকে একটু বলবে, তোমার এই দুরন্ত দুঃসাহস কীভাবে হইল?
সোনামিয়া একটু ভ্যাবাচ্যাকা খাইল। তারপর ধীরে ধীরে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, আপোনি কী বলিতেছেন, তা আমার বোধগম্য হয় নাই। বুঝাইয়া বলুন।
শায়মারন্দ্র বলেন, তুমি যে হগলের সাথে ঐ গ্যালারি বসলা না, তার কারণ কী?
সোনামিয়া এইবার বুঝিল। বলিল, দেখুন, আসার সময় সুজানা আমাকে পই পই করিয়া বলিয়া দিয়াছে, আমি যেন কোনো ভিড়ের মধ্যে না যাই। ঐখানে যাইয়া কি আমি মরুম? তাই স্ত্রীর কথামতো এই ফাঁকা মাঠেই বসিয়াছি।
==
আমাদের সাচ্চু ভাইয়া আজ তার চাকরি জীবনের প্রথম স্যালারি পেয়েছে। আরো আনন্দের বিষয় হলো, আগামীকল্য ভাবীর জন্মদিন। আনন্দের উপর আনন্দ, আগামীকাল তাদের ম্যারিজ অ্যানিভার্সারিও। সে গালে হাত দিয়া ভাবতে লাগলো, এত আনন্দ কীভাবে উদ্যাপন করবে। প্রথমত, রাত ১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়বে এবং রাত ১১:৫৯ মিনিটে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে ভাবীকে উইশ করবে। সে বাসায় ফেরার পথে ভাবীর জন্য একটা আচ্ছা রঙের শাড়ি নিয়া যাবে।
অফিস শেষে সে ভরা বৃষ্টি মাথায় নিয়া 'আহা আজি এ বসন্তে' গাইতে গাইতে শপিং মলে ঢুকলো। শাড়ির দোকানে যাওয়ার আগে কিছু অর্নামেন্টও কিনলো। লাল রঙের দুল আর ম্যাচিং করা সিটিগোল্ড ভাবীর খুব প্রিয়। কিনলো খুব বেশি করে।
শাড়ির দোকানে যেতেই দোকানওয়ালা একগাঁদা শাড়ি বিছাইয়া দিল। প্রতিটা শাড়ি নিজের শরীরে জড়াইয়া গদগদ হয়ে বলতে লাগলো, স্যার, ভাবীর গায়ের রঙ নিশ্চয়ই দুধে-আলতা? এই শাড়িটা পরলে তাকে পরীর মতো লাগবে। ধইরা রাখবেন, যাতে উইড়া না যায়। সাচ্চু ভাই লজ্জা পায়। আসলেই ভাবী অসম্ভব সুন্দরী। ১০টা পরীমনিও তার সামনে কিছু না। কিন্তু শাড়িটার দাম ভয়াবহ। তার পুরো বেতনের সমান। যাই হোক, স্ত্রীর ভালোবাসার কাছে এই টাকা খুবই তুচ্ছ। সে বড়ো অঙ্কের টাকা দিয়াই শাড়ি কিনতে মনস্থ করলো।
'দিন। প্যাকেট কইরা দিন।' বলে সাচ্চু ভাই পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে টাকা দিতে বের করতে যেয়েই দেখে, মানিব্যাগে মাত্র ৫০ টাকার ১টা নোট, আর খুচরা কিছু পুটিপাটি মাছের নোট শুধু। সে অবাক হয়। কীভাবে এরকম হলো?
বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর তার মনে পড়ে, ওহ, আজ তো সে বেতনই পায় নাই।
সে অগত্যা স্যরি বলে মুখটা কালো করে শাড়ি রেখে বেরিয়ে যায়। বাসায় ফিরতে একটু লেট হচ্ছে। বাসায় ফোন করে ভাবীকে বলার জন্য পকেট থেকে মোবাইল বের করতে যেয়েই দেখে পকেটে মোবাইল নাই। একি!! মোবাইল কই!! ওহহো, সে যে অফিসে মোবাইলটা ফেলে এসেছে!!
সে আবার রিকশা করে অফিসে রওনা দেয় মোবাইল আনার জন্য। কিন্তু সে অফিস আর খুঁজে পাচ্ছে না। পাচ্ছে না তো পাচ্ছে না। ঢাকা শহর তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর তার মনে হলো, শালার অফিস পাবে কোথায়, সে তো চাকরিই করে না।
ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে সে বাসায় ফিরে। মেজাজটা তার তিরিক্ষি। জুতা না খুলেই খাটের উপর শুইয়া পড়লো। ভাবী এসে তার জুতা খুলবে, শার্টটাও খুলে দিবে, তার মনের একান্ত ইচ্ছা। তারপর খেতে বসবে। খাওয়া দাওয়া সেরে একটু ঘুরতে যাবে। আজ জোসনা রাত। সারা শহর ভাবীকে নিয়ে ঘুরবে।
কিন্তু ভাবী আসছে না। অভিমান তীব্র হচ্ছে। একসময় অভিমান রাগে রূপান্তরিত হলো। সে হঠাৎ বিস্ফোরিত হলো - আরে ঐ ফলনার মা, আমি যে বাসায় আসছি তা দেখো নাই? নাকি আন্ধা হইয়া গেছো!
কিন্তু ভাবীর কোনো সাড়াশব্দ নাই। সে এবার আরো জোরে গলা ফাডাইয়া চিল্লাইতে চিল্লাইতে যখন ড্যাম টায়ার্ড হইয়া গেলো, তখন তার মনে পড়লো - আব্বে হালা, আমি তো বিয়াই করি নাইক্যা, বউ আইব্বো কই থনে?
২৯ জুন ২০২২
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



