somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবাইকে কুরবানির ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক জায়গায় হিসেব দেখলাম যে কুরবানির ঈদ উপলক্ষে এবছর বাংলাদেশে প্রায় ৯৫ লক্ষ পশু জবাই করা হবে। এর মধ্যে ৬০ লক্ষ গরু আর ৩৫ লক্ষ ছাগল ও ভেড়া। গরু প্রতি ৩০ হাজার টাকা আর ছাগল ও ভেড়া প্রতি আড়াই হাজার টাকা হিসেবে মোট প্রায় ১৮,৮৭৫ কোটি টাকা খরচ হবে, যার সমমূল্য প্রায় ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার।
তাদের প্রস্তাবনা হল এই বিশাল অঙ্কের টাকাটা কুরবানির পিছনে খরচ না করে দেশের ৫০ লক্ষ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে বিতরণ করে দিলে পরিবারপ্রতি প্রায় ৩৮ হাজার টাকা করে পেতে পারতো। ফলে পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য, কিংবা উন্নয়নমূলক খাতে টাকাটা ব্যয় হোত আর ফলস্বরূপ দেশের জন্য আরো উত্তম কিছু হোত।
দেশ ও দেশের মানুষের উন্নতির জন্য তাদের এইরূপ প্রস্তাবনা দেখে আমারও ভালো লাগলো। বস্তুত কুরবানি ও হজ্জ নিয়ে এই ধরণের প্রস্তাবনা অনেকের মাথাতেই ঘুরপাক খায়। কেউ বলে, অনেকেই বলে না। তাই আমি একটি সরল হিসেব দিতে এই লেখাটি লিখছি। এখানে আমি উপরের উপাত্তগুলোই ব্যবহার করবো যেন প্রস্তাবনা প্রদানকারীদের পরবর্তীতে হিসেব করতে আরো সুবিধা হয়।
১.
প্রথমেই একটি প্রশ্ন করিঃ কুরবানির ঈদে পশু কেনা-বেচার কারণে যে ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার হাতবদল হল সেটা কি কালোটাকা না সাদাটাকা?
এর পুরোটা সাদাটাকা। প্রতিটি পশু হাট থেকে কেনার সময় দামের ৫ থেকে ৬ শতাংশ টাকা হাসিল হিসেবে সরকারি খাতে চলে গেছে আর বাকি টাকা পশু বিক্রেতাদের হাতে গেছে। এরা অধিকাংশই এদেশের প্রান্তিক মানুষ। মানে ২৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ৯৫ শতাংশ, অর্থাৎ ২২৮ কোটি মার্কিন ডলার মাত্র এক সপ্তাহে এদেশের প্রান্তিক মানুষদের হাতে পোঁছে গেছে এক কুরবানির উপলক্ষে।
কতগুলো পরিবারে এই টাকা পৌঁছে যাচ্ছে কোন ধারণা আছে আপনাদের? ধরে নিলাম, প্রতিটি প্রান্তিক পরিবার ৩৬ হাজার টাকা করে হাতে পেল। অর্থাৎ এদেশের ৫০ লক্ষ প্রান্তিক পরিবারের হাতে মাত্র এক সপ্তাহে ৩৬ হাজার করে টাকা পৌঁছে গেল কুরবানির উপলক্ষে।
টাকা যখন হাতবদল হয় তখন অর্থনীতির পরিভাষায় সেটাকে Circulation of Money বলে। Circulation of Money প্রবৃদ্ধির একটা সূচক। আপনার হিসেব দেখলে সাদাচোখে মনে হয় ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার শুধু শুধু পানিতে ফেলা হল, আর বিনিময়ে কিছু পশু হত্যা করা হল। ব্যাস!
এবার আপনাদের প্রস্তাবনায় ফিরে যাই। ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার দেশের ৫০ লক্ষ পশ্চাৎপদ পরিবারের মাঝে বিতরণ করতে চান আপনি।
- কীভাবে করবেন?
- কাকে দায়িত্ব দিবেন?
- কাকে বিশ্বাস করতে পারবেন যে পাওনা টাকা প্রাপ্যহাতে এক সপ্তাহে যথাযথভাবে পৌঁছে যাবে?
২.
কুরবানির মাংসের এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে আর এক-তৃতীয়াংশ দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। অর্থাৎ ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে এই একদিনে। কুরবানির উপলক্ষ ছাড়া অন্য কোন উপায়ে এটার একটা বিকল্প বলে দেখান তো!
শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবীতে এই একদিনের উপলক্ষে যে পরিমাণ খাবার (মাংস) বিতরণ করা হয়, সেটার সেকুলার একটা বিকল্প কেউ বলতে পারবেন আমাকে?
৩.
কুরবানির মাংস তো মুসলিমরা একা খায় না, অপরকে দুই-তৃতীয়াংশ দিয়ে তারপর খায়।
- টাকার হিসেব যদি করবেনই তাহলে পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খেয়ে সেই টাকাটা মানুষকে দেবার দাবি করেন না কেনো?
- জনগণের করের টাকায় সরকারি চাকুরিজীবিদের বেতন-ভাতা বাড়ার প্রতিবাদ করেন না কেনো?
- সরকারি প্রটোকলের ব্যয়ের হিসেব চেয়ে প্রতিবাদ করেন না কেনো?
- কালোটাকার হিসেব চেয়ে প্রতিবাদ করেন না কেনো?
- ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর রাস্তা-মিনার-সৌধ রঙ করে ফুলের তোড়া বিছিয়ে যে খরচ হয় সেই টাকা গরিব-দুস্থদের স্বাস্থ্য কিংবা পুনর্বাসন খাতে দিয়ে দেবার দাবিতে কোন প্রস্তাবনা পেশ করেন না কেনো?
এগুলোর কোনটাই আপনারা করেন না, কখনও করবেনও না, কারণ আল্লাহ'র পুলিশ-থানা-হাজত-জেলের সরঞ্জাম নাই। তবে যে সরঞ্জাম আছে, আশা করি তা সময় হলেই দেখা যাবে। নেত্রবিস্ফারিত করে দেখে নিয়েন।
৪.
এবার আসি অন্য কথায়। কুরবানি-হজ্জ আল্লাহ'র সন্তুষ্টির জন্য করা ইবাদত। এখানে যে অর্থ ব্যয় হয় সেটাও আল্লাহ'র সন্তুষ্টির জন্যই ব্যয় করা হয়। এখানে টাকার হিসেব করা মানে নামাজ পড়ার কারণে সময়ের অপচয় হিসেব করার মতন। কেননা আপনাদের প্রস্তাবনা মতে নামাজ না পড়ে বরং নামাজের সময়টা অন্য কাজে লাগালে দেশের জন্য দশের জন্য আরো ভালো হোত। আপনাদের কুরবানির হিসেবের যুক্তিও তো এই পথেই যায়।
শেষ কথা। আমি একজন মুসলমান। আমি এমন একটি ধর্ম ও প্রথার গর্বিত একজন অনুসারী যার বিরোধিতা সব যুগেই করা হয়েছে, আর এখনও হচ্ছে এবং সামনেও হবে। অথচ আমার ধর্ম ও প্রথা শুধু যে টিকে আছে তা না, বরং স্বমহিমায় টিকে আছে, আর মাথাব্যথাকারীদের জন্য উপাদেয় হিসেবেই টিকে আছে এবং থাকবে। কুরবানিতে পশু হত্যা করা যদি মুসলমানদের পাশবিকতাই শেখাতো তবে হাজার হাজার বছরের পুরোনো এই রীতির ধারে পৃথিবীর জনসংখ্যা এখন দেড়শ কোটির বেশি হোত না, আর হলেও ছয়শ কোটিই হোত মুসলমান।
ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম), মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা করে গেছেন, তা আমার দাদা করেছেন, আমার বাবা করেন, তারপর আমি করবো, আর আমার পরে আমার সন্তানেরা করে যাবে ইনশাআল্লাহ। কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিমের সন্তানেরা এটা করেই যাবে, বিইদনিল্লাহ।
সবাইকে কুরবানির ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
ঈদ মুবারাক।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৫
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×