somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবে সন্তান যখন কালশাপ হয়ে যায়

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সামান্য মোটরসাইকেলের জন্য নিজের মা-বাবার ঘরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া। ভেবে দেখেন, কতটা বীভৎস চিন্তা একজন কিশোরের! তার তো পরীক্ষার রেজাল্ট করে, নানা উদ্ভাবনী চমক দিয়ে, কবিতা লিখে, গল্প লিখে চারদিকের সবাইকে মুগ্ধ করার কথা। কিন্তু সে কি টেক্সট বইয়ের বাইরে কোনোদিন রবীন্দ্রনাথ পড়েছে? নজরুল? জীবনানন্দ? কিংবা শামসুর রাহমান? এসব না পড়লে সে তো সত্যিকার মানুষ হবে না।

আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সে পড়েনি। তাকে পড়ানোর জন্য বলেনি তার বাবা-মা, স্বজন। পড়লে এই ছেলে কোনোদিনও এভাবে বখে যেতে পারত না। তার পারিবারিক মূল্যবোধ, সামাজিক বন্ধন এ রকম শিকড়হীন হতো না।
লেখকের এই কথা আমি মানতে পারলাম না। রবীন্দ্র, নজরুল, জীবনান্দ না পড়লে কেউ সত্যিকার মানুষ হবে না? আসলে, কারো মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসন থাকলে সে এই কাজ করতে পারে না। ছোট বেলা থেকে পিতা মাতার অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য হল আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা দান করা। সেটা করলে আজ এই দিন দেখতে হইত না।
বিঃদ্রঃ "ধর্মীয় মুল্যবোধ" কথাটা বলায় কারো কারো চুল্কানি হইতে পারে। যদি গালাগালি না করে যুক্তি তর্ক দিয়ে বিতর্ক করতে চান তাইলে মোস্ট ওয়েলকাম

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ফরিদপুরে সেই কিশোর ছেলের লাগানো আগুনে পুড়ে যাওয়া বাবা মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লড়তে শেষ পর্যন্ত মারাই গেলেন। বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরবেলা তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। যে ছেলেকে বুকের জমিনে আগলে রাখতেন বাবা, শিশুকালে যে বুক ছিল লাফালাফি করার নির্ভয় বিচরণক্ষেত্র, সেই বুকেই পেট্রলের আগুন জ্বালিয়ে দিল প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র। পুড়ে গেল বাবার শরীরের বেশির ভাগ অংশ।

হতভাগ্য এই বাবার নাম এ টি এম রফিকুল হুদা (৪৮)। রফিকুল হুদার আরেকটি পরিচয়, তিনি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদার ছোট ভাই। কী-ই বা বয়স হয়েছিল রফিকুল হুদার? সবেমাত্র আর্থিক সচ্ছলতা হয়তো অর্জন করে গুছিয়ে এনেছিলেন সব। হয়তো সাজানো-গোছানো সংসার নামের রঙিন নৌকাটিতে আনন্দের পাল তুলে শুভযাত্রা শুরু করেছিলেন। ঠিক এই শুভক্ষণে এসে নিজেরই রক্তের কাছে জীবনতরী ডুবল তাঁর।

'হন্তারক' কিশোরের নাম মুগ্ধ। ১৭ বছরের সদ্য এসএসসি পাস করা কিশোরটির জন্ম হুদা দম্পতির ঘরে একদিন আনন্দের বার্তা এনে দিয়েছিল। ফুটফুটে সন্তানের নাম তাই রাখা হয়েছিল মুগ্ধ। সেই মুগ্ধতা এমনই ছিল যে রাজপুত্রের মতো সন্তানটিকে তারা চাহিবামাত্র এই কিশোর বয়সেই পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। একটি ১৭ বছরের বাচ্চা ছেলেকে এত দামি মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার ঘটনাতেই প্রমাণ হয়, মুগ্ধতে ভয়ানকভাবেই মুগ্ধ ছিলেন তার বাবা-মা।

সর্বশেষ, এসএসসি পাসের পর মুগ্ধ আবারও নতুন মডেলের মোটরসাইকেলের জন্য বায়না ধরেছিল। বাবা দিতে রাজি হননি। বাবা বুঝতে পেরেছিলেন, এভাবে চলতে থাকলে ছেলে পথ হারাবে। কিন্তু এই বোধোদয় অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে। ততদিনে ছেলে বখে যাওয়ার শেষসীমায় পৌঁছে গেছে।

অভিভাবকদের এখানেই ভুল। চাহিবামাত্র অযৌক্তিক আবদার মেটাতে মেটাতে সন্তানদের তারা এমন পর্যায়ে নিয়ে যান যে, তাদের আর শোধরানোর অবস্থা থাকে না। এ বয়সের একটি কিশোরের যেখানে সাইকেলই যথেষ্ট, সেখানে মোটরসাইকেল মহাবিলাসিতা বৈকি। তা ছাড়া এর উপযোগিতা আছে কি? একটি বাচ্চা ছেলের এই বয়সে কেন লাগবে এই মোটরযান? এই মোটরসাইকেল পেয়ে সে বখে যাওয়া আরো দুই-চারজনকে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় দাপিয়ে বেড়ায়। ইভ টিজিংসহ নানা অপরাধে ঝুঁকতে থাকে একের পর এক। বাধা দিতে গেলে শেষ পরিণতি, উল্টো বিষ ছোবল। যার দংশনে বুধবার প্রাণ গেল হতভাগ্য বাবা রফিকুল হুদার।

সন্তানের চাহিদা মেটাতে হবে। এটি অভিভাবকের দায়িত্ব। কিন্তু সেই চাহিদা কি আকাশের পূর্ণিমার চাঁদ? অবশ্যই না। পূর্ণিমার চাঁদের বদলে তাদের দিতে হবে ঝলসানো রুটি। বিলাসী জিনিসপত্র ব্যবহারের বিষয়ে অভিভাবকদের হতে হবে সতর্ক। না হলে সন্তানের এ ধরনের মানসিক বৈকল্য দেখা দিতেই পারে। অভিভাবকরা সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে কিছু ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছেন, ফলে এ ধরনের ঘটনার ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে।

বাবা-ছেলের সম্পর্ক নিয়ে কতই না সুন্দর সুন্দর গল্পের কথা জানি আমরা। পৃথিবীর যত সুন্দর আর ভালোবাসায় মাখামাখি করা সম্পর্ক রয়েছে, তার মধ্যে বাবা-ছেলের সম্পর্কই সবচেয়ে মধুর। কিন্তু ফরিদপুরের এই কিশোর মুগ্ধ আমাদের দাঁড় করিয়ে দিল ধূসর একটি গল্পের সামনে।

সামান্য মোটরসাইকেলের জন্য নিজের মা-বাবার ঘরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া। ভেবে দেখেন, কতটা বীভৎস চিন্তা একজন কিশোরের! তার তো পরীক্ষার রেজাল্ট করে, নানা উদ্ভাবনী চমক দিয়ে, কবিতা লিখে, গল্প লিখে চারদিকের সবাইকে মুগ্ধ করার কথা। কিন্তু সে কি টেক্সট বইয়ের বাইরে কোনোদিন রবীন্দ্রনাথ পড়েছে? নজরুল? জীবনানন্দ? কিংবা শামসুর রাহমান? এসব না পড়লে সে তো সত্যিকার মানুষ হবে না।

আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সে পড়েনি। তাকে পড়ানোর জন্য বলেনি তার বাবা-মা, স্বজন। পড়লে এই ছেলে কোনোদিনও এভাবে বখে যেতে পারত না। তার পারিবারিক মূল্যবোধ, সামাজিক বন্ধন এ রকম শিকড়হীন হতো না।

এই হতভাগ্য বাবা-মা মনে করেছিলেন, পুত্রের চাহিদামতো নতুন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল, স্মার্টফোন, ফাস্টফুডের জোগান দিলেই তাঁর সন্তান সুসন্তান হয়ে উঠবে। তাই তাঁরা ছেলের চাহিদামতো একের পর এক নয়া ব্র্যান্ডের 'হোন্ডা' কিনে দিয়েছেন। স্মার্টফোন হাতে তুলে দিয়েছেন। এই ফোন পেয়ে তারা এখন বুক বা বই পড়ার চেয়ে ফেসবুক পড়াকে বেশি গুরুত্ব দেয়। বাবা-মা বুঝতে পারেন না, তাঁদের ছেলে একটি 'হোন্ডা পেয়ে গুণ্ডা' হবে একদিন। নিজের রক্ত থেকেই তৈরি হবে বিষাক্ত কালসাপ। সেই সাপের ছোবলে একদিন যাবে নিজেরই প্রাণ। এর ওপর আছে রাষ্ট্রীয় জগাখিচুড়ি এক শিক্ষাব্যবস্থা। তাহলে এই কিশোররা কীভাবে মানুষ হবে?

এরা তো বিষাক্ত সাপই হবে। তাদের ছোবলে যাবে পিতার জীবন, আক্রান্ত হবে প্রতিবেশীর স্কুল-কলেজগামী কোনো মেয়ে। ঘরে ঘরে এরাই তৈরি হচ্ছে এখন। ফলে ঐশী থেকে মুগ্ধ—মনুষ্যসন্তান নয়, হয়ে উঠছে একেকটি বিষাক্ত কালসাপ।

রাষ্ট্র, সমাজব্যবস্থায় কোথাও ভয়ংকর কোনো গণ্ডগোল হচ্ছে। এখনই এ নিয়ে রাষ্ট্রকর্তা, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে। কোথায় যেন ঘাটতি আছে, খুঁজতে হবে সেগুলো। মনে রাখতে হবে, তরুণ-যুবারাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের রক্ষা করতে না পারলে সমূহ বিপদ কিন্তু।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, বার্তা সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×