somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনাভাইরাস-সরকার ও নাগরিকের সবাইকেই দায়িত্বশীল হতে হবে!

১৬ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নভেল করোনাভাইরাস কভিড-১৯ থমকে দিয়েছে প্রাণচঞ্চল জনপদ, রাত না জাগা শহর, পর্যটন কেন্দ্র, ব্যস্ত বন্দর শপিংমল বাজার সড়ক মহাসড়ক, ধনী মধ্যবিত্ত দরিদ্র দেশের চালচিত্র। হঠাত বদলে গেছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ধারা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। থেমে গেছে কর্মচঞ্চলতা, উৎপাদন, মন্দায় পড়েছে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতি। এ যেন এক অজানা পৃথিবী, গৃহবন্ধিত্ব হয়ে উঠেছে মানুষের নতুন অভিজ্ঞতার বিষয়।

করোনার বিস্তৃতি
নতুন করোনা ভাইরাসটি ইতিমধ্যেই ছাড়িয়েছে ১৫৬ দেশ ও অঞ্চলে। চীনের উহানকে কেন্দ্র করে সংক্রমণ শুরু হয়ে ভাইরাসটি বর্তমানে বেশ কয়েকটি উপকেন্দ্র তৈরি করেছে ইটালি ইরান স্পেইন দক্ষিণ কোরিয়া ফ্রান্স জার্মানি নেদারল্যান্ডস যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকার আটলান্টিক উপকূলকে কেন্দ্র করে। তাপমাত্রার বৈষম্যকে পাশ কাটিয়ে ভাইরাসটির বিস্তৃতি ঘটেছে শীত প্রধান দেশের সাথে সাথে উষ্ণতর দেশেও।

তথ্যশালা-১


সোর্স- জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি COVIS-19 তথ্যব্যাংক
গত ২৪ ঘন্টায় বিশ্বব্যাপী প্রায় ২০ হাজারের বেশি সংক্রমিত হয়েছে!



তথ্যশালা-২


সোর্সঃ worldometers ১৬ মার্চ- ১৪:৩৭ ইউটিসি টাইম
১৬ মার্চ ২০২০ ইউটিসি টাইম ১৪ঃ৪০ সময়ের আপডেইট অনুযায়ী করোনা আক্রান্ত মোট রোগী ১ লক্ষ ৭৪ ৬২৫ জন যাঁদের মধ্যে ৭৭ হাজার ৬৫৭ জন রিকোভারি করেছেন, ক্লোজড কেইসে শতাংশ হারে যা ৯২%। অন্যদিকে ৬ হাজার ৭০৫ জন মৃত্যুবরণ করেছে যা
মোট আক্রান্ত রোগীর ৪ শতাংশের কিছু বেশি। অত্যন্ত গুরুতর পরিস্থিতিতে রয়েছেন আরো প্রায় ৫৯৬৬ জন। সংকটাপন্ন এই রোগীদের অনেকেই মারা গেলে মোট মৃত্যু, মোট আক্রান্তের প্রায় ১০ শতাংশ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


গত ২৪ ঘন্টার কিছু বেশি সময়ে দেশে ৭৭৬ জন মারা গেছেন বিশ্বব্যাপী। মাত্র একদিনে ১% বেড়ে ক্লোজড কেইসের মধ্যে মৃত্যুর হার ৯% হয়ে গেছে। আবার একটিভ কেইসে প্রায় ৬% রয়েছেন, ক্রিটিক্যাল কন্ডিশানে।


সোর্সঃ worldometers ১৭ মার্চ- ১৭:৫৭ ইউটিসি টাইম!
করোনার মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী অভাবনীয় কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মূলত চীনের ঊহানে বাস্তবায়িত নজিরবিধীন লকডাউন থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বব্যাপী স্কুল বন্ধ করা আচ্ছে, বিমান যোগাযোগ বন্ধ করা হচ্ছে, কর্পোরেট কোম্পানিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করার ঘোষণা এসেছে। রেস্টুরেন্ট বার গণজমায়েত বড় বড় সেমিনার বন্ধের পদক্ষেপ আসছে। আসছে বৃহৎ পরিসরের নাগরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা। এমতাবস্থায় বাংলাদেশেও অনুরূপ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে সরকার।

সংক্রমণ রোগের বিস্তৃতি রোধে করনীয়
মূল কাজ আসলে অতি দ্রুত সংক্রমণ বন্ধ করা, সংক্রমিতদের ইনস্ট্যান্ট কোয়ারেন্টাইন করা, রোগে বিস্তারের এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথকে থামিয়ে দেয়া। কোয়ারেন্টাইন এখানে মূখ্য। এটা করা হয় স্কুল কলেজ গ্যাদারিং লোকসমাগম জনসভা উন্মুক্ত হাট বাজার ছোট বড় অনুষ্ঠান ইত্যাদি বন্ধ করে, কিংবা চূড়ান্ত স্টেইজে শহরের বিশেষ এলাকা বা পুরো শহর আংশিক লকডাউন করে। অর্থাৎ সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং তৈরি করে নির্দিস্ট সময়ে নতুন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ও হার না বাড়ে তার ব্যাবস্থা করা (কার্ভ ফ্ল্যাটেনিং যাকে বলে স্ট্যাটিটিক্সের ভাষায়), যাতে একসাথে অনেক রোগীর ট্রিটমেন্ট সক্ষমতা না থাকায় হেলথ সিস্টেম ভেঙে না পড়ে। টুডে ওর টুমোরো এই সংক্রমণ প্রায় সবারই হবে, তবে যত দেরিতে হয় ততই মঙ্গল। এক-সাইমুল্টেনিয়াস আনরিকভার্ড রোগী কমে আসবে, এতে মেডিক্যাল সাপ্লাই ও হেলথ কেয়ারের উপর চাপ কমবে। অন্যদিকে কিছু লোকের ইমিউন সিস্টেম ডেভেলপ হয়ে দ্রুত রিকভারির পথ তৈরি হবে।

এক- বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা

বাংলাদেশের নিজস্ব স্বাস্থ্য সেবা সক্ষমতা তৈরির বোধ 
বাংলাদেশের স্বচ্চল নাগরিক দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভারত সিঙ্গাপুর থাইল্যান্ড যুক্তরাজ্য ইত্যাদি দেশে গিয়ে চিকিৎসা করেন। খোদ দেশে রাস্ত্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এই চর্চা জারি রেখেছেন স্বাধীনতা অবধি। অথচ নতুন সংক্রমণ রোগের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিদেশের রোগী নিতে অপারগ নামকরা দেশ ও হাসপাতাল গুলো। অর্থাৎ বাংলাদেশের যেনতেন ভাবে ও কোনরকম মানে চালিয়ে যাওয়া স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নীতি অতি দ্রুত পরিবর্তন না করলে দেশকে বেশ বড় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংকট, প্রাণহানী এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমূখী পড়তে হতে পারে। এই ক্ষতিগুলো ডেকে আনবে বহু পরোক্ষ সংকট। বাংলাদেশ ঔষধ উৎপাদনে খুব ভালো করছে। সুতরাং ঔষধের পাশপাশি মেডিক্যাল সাপ্লাই ফ্যাসিলিটি গুলো কিভাবে দেশে চাহিদার অনুপাতে স্থানীয় ভাবে উৎপাদন করা যায় তার রোডম্যাপ তৈরি খুবই জরুরী। নাগরিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কে জবাবদিহিতা মূলক করে, সঙ্ক্রমিত রোগ সহ সকল জরুরী চিকিৎসার সক্ষমতার গুরুত্ব বুঝে তাতপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিন। বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিবার হীন্মান্যতা বন্ধ করে, দেশের চিকিৎসা সেবা কিভাবে ধনী-গরীব সবার তরে ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট মানে উন্নীত হয় তার ব্যবস্থা নিতে সরকারকে পরামর্শ দেই।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যয়
ভাবতে অবাক লাগে, সোয়া পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার বাজেটে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়য়ের বাজেট ১২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মত, যা বাজেটের ২,৪%। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যেখানে দেশের প্রতিরক্ষা বাজেট ২৯ হাজার ৬৭ কোটি টাকা সেখানে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত সব বরাদ্দ মিলিয়ে স্বাস্থ্য বরাদ্দ ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে যা বাজেটের ৪,৯%। এই স্বাস্থ্য বাজেটে চিকিৎসা ছাড়াও যেসব স্কোপ আছে তা হচ্ছে-
১. স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা-সংক্রান্ত যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন;
২. স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদান এবং জনগণের প্রত্যাশিত সেবার পরিধি সম্প্রসারণ;
৩. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সুবিধাসহ জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সংক্রামক-অসংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ ও প্রতিকার;
৪. মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন ও বিতরণ এবং আমদানি ও রফতানিযোগ্য ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ;
৫. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা শিক্ষা, নার্সিং শিক্ষা, জাতীয় জনসংখ্যা, স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত কার্যাবলি;
৬. স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ- সংক্রান্ত স্থাপনা, সেবা ইনস্টিটিউট ও কলেজ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণ;
৭. শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি, বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি এবং পুষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন;
৮. স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সকল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন-সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি।

এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, স্বাস্থ্য খাত দেশের অন্যতম একটি দুর্নীতিপরায়ন সেবা খাত। এমতাবস্থায় বহু মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটি অকেজো, বহু হাসপাতাল আন ইকুইপড, থাকলেও দিতে হয় উচ্চ পরিমাণ চাঁদা, আছে হয়রানি। ফলে দুর্যোগে, সংকটে, সংক্রামণ রোগের প্রাদুর্ভাবে যথাযথ চিকিৎসা সেবা অধরাই থাকে। নেতারা, বিত্তবানরা উচ্চ খরুচের বেসরকারি হাসপাতালে যান কিংবা বিদেশে, কিন্তু আমজনতা হয় চিকিৎসা ব্যয়ে সর্বসান্ত হঙ, নতুবা রোগ নিয়ে মরেন।

পাশাপাশি আছে খরুচে যন্ত্রপাতি কেনায় উচ্চ দুর্নিতি, বিদেশ ভ্রমণের প্রতিযগীতা। ফলে স্বাস্থ্য খাতে "স্বাস্থ্য" না থাকলেও আছে লুটপাট ও বিনোদন।এরই মধ্যে এসেছে, মেডিক্যালের পর্দা কিনতে কোটি টাকার খরচ। অর্থাৎ একদিকে ১৮ কোটি মানুষের জন্য বরাদ্দ অপ্রতুল, অন্যদিকে দুর্নীতির কারনে বরাদ্দকৃত টাকার বাস্তবায়ন ও পরিচালনা "ভ্যালু" কম।

এমতাবস্থায় করোনার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে, ৫০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। কতটা নাযুক হলে পরে, জরুরী চিকিৎসা বরাদ্দ এমন ভঙ্গুর কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে থাকে! নিজেরা মাত্র ৫০ কোটি বরাদ্দ করে পরে আবার করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এটাকে দ্বিচারিতা বলে মনে করি কেননা দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের অবস্থা ভালো।যেনতেন উছিলায় সরকারের ঋণ নেয়ার এই ঝোককে নিকুচি করি, এই সরকার গত এগার বছরে বৈদেশিক ঋণ প্রায় তিন গুণ করেছে, ফলে ঋণ সুদ আসল প্রদান বাজেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাতে পরিণত হয়েছে।

করোনার উদ্ভূত সমস্যা
যেখানে নিয়মিত স্বাস্থ্য ফ্যাসিলিটি অপর্যাপ্ত, বেড সীমিত সেখানে নতুন সঙ্ক্রামক রোগের জন্য আলাদা বেডের সক্ষমতা আসলে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর নেই। বর্তমানের সব জটিল রোগীকে ফেলে দিয়ে এই বেড গুলোতে নতুন রোগী ঢুকানোও অবাস্তব। এই বাস্তবতা প্রেক্ষিতেই সরকার হজ্ব ক্যাম্প কিংবা অন্যকোন ক্যাম্প বা স্কুলকে সাময়িক কোয়ারেনটাইন কেন্দ্র করার কথা ভেবেছে। এগুলাতে কোন স্বাস্থ্য ফ্যাসিলিটি নেই। কিন্তু ভবিষ্যত কি? তাই এখনই নতুন করে ভাবুন, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। নতুন নতুন ভাইরাস আসতেই থাকবে!

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা
১। আমরা চাই দেশ স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খাতে বাজেটের দশ শতাংশ বরাদ্দ করুক।
২। মাথাপিচু হিসেবে হাসপাতাল, বেড, ডাক্তার, নার্স, জরুরী বেড, এম্বুলেন্স সহ সকল মেডিক্যাল সাপ্লাই করুন। মেডিক্যাল সাপ্লাই দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা নিন।এতে বাজেটে স্বাস্থ্য বাজেট বাড়বে তবে অনেক পরোক্ষ ব্যয় কমে যাবে।
৩। সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা চালুর ব্যবস্থা নিন। সরকারি বেসরকারি হাস্পাতেলে জরুরী, সাধারণ ও সঙ্ক্রমিত সেবা দানের স্কোপ এবং পেমেন্ট মডেল ডেভেলপ করুন।
৪। চিকিৎসা ও ঔষদ সেবনের রেকর্ড নিতে স্বাস্থ্য বই চালু করুন (অনলাইন বা হার্ডকপি)।
৫। সরকারি থেকে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে চিকিৎসকের টাকা কামানোর ধান্ধা বন্ধ করুন।
৬।সব সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে করোনা সহ ডেঙ্গু, চিকুঙ্গুনিয়ার টেস্টকিট সরবারহ করুন। বর্তমানে করোনার টেস্ট সক্ষমতা বর্তমানে শুধু আই ই ডি সি আর এই সীমাবদ্ধ, দেশে একটি মাত্র ল্যাব। ১৫ মার্চ পর্যন্ত সরকারের হাতে মাত্র ১৭৩২টি কিট।এটা অগ্রহণযোগ্য, দেশের সব যায়গা কিংবা সব শহর বা রাজধানীর সব এলাকার কোটি মানুষের বিপরীতে আইইডিসিআর এর নামমাত্র সক্ষমতা মেনে নেয়া যায় না। জরুরি ভিত্তিতে টেস্ট কিট সংগ্রহ করুন, দেশের সব বিভাগীয় সদর হাস্পাতালের টেস্ট ও ল্যাব সক্ষমতা তৈরি করুন। Reverse transcription polymerase chain reaction (rt PCR পদ্ধতি বা এই ধরনের সফস্টিকেটেড বায়ো মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট সহ টেস্ট কিটের সাপ্লাই নিশ্চিত করুন প্রতিটি বিভাগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা টেস্টের উপর বেশ জোর দিয়েছে।
৭। হাসপাতালের দর্শনার্থী নীতিমালা খুব কড়াকড়ি করুন।

সব স্থল নৌ এবং বিমন্দরে থার্মাল স্ক্যানার
করোনার পর জানা গেল, দেশে মাত্র তিনটা থার্মাল স্ক্যানার রয়েছে, যার দুটো নষ্ট। চীনা রাষ্ট্রদূত এই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলে এই খবর জানাজানি হয়ে পড়ে। দেশের সবগুলো স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে কিভাবে সঙ্ক্রমিত রোগ নির্ণিয়ের কারিগরি আবকাঠামো সাশ্রয়ী ও দুর্নীতিমুক্ত ভাবে তৈরি করা যায়, সেসব কেনার পড়ে সঠিক ভাবে মেইন্টেইনেন্সও করা যায় তা নয়ে প্রশাসন ও সরকার আন্তরিক হোক।

বেসরকারি খাতে মনোযোগ দিন
প্রায়ই অভিযোগ আসে, বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক সংকটাপন্ন রোগী ভর্তি করে না, ভাঙচুর জনিত কারনে।এই সমস্যার একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান করুন, দরকার হলে বেসরকারি হাস্পতালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় বেসরকারি হাস্পতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো, প্রাইভেট চিকিৎসক গণ অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন। করোনা'র জন্য এমন আয়োজন কিভাবে করা যায় তার জন্য সরকারের এগিয়ে আসা দরকার। বিভিন্ন সেবার স্কোপ এবং ফি কি হবে, বেসরকারি খাত কিভাবে টেস্ট কিট সহ আমদানি নির্ভর মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটি পাবে তার ব্যবস্থা ও সুনির্দিস্ট নির্দেশনা দেয়া উচিৎ সরকারের।  

দুই- নাগরিক দায়িত্ব ও সচেতনতা

ক। কোয়ারেন্টাইনঃ কার জন্য কি অর্থ বহন করে? 
বিদেশ থেকে ফেরা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।এ জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমরা জানি দেশের বিধিবদ্ধ কোয়ারেনটাইন কেন্দ্র ও মানসম্মত ব্যবস্থা নেই। এমতাবস্থায় প্রবাসীদের দেশে না ফেরাই উত্তম। মানবিক দিক থেকেও প্রবাসীদের দেশে গিয়ে সংক্রমণ বাড়ানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকা চাই।

সরকার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ডিসি, পৌরসভার মেয়র, টিএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, সিভিল সার্জন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিদেশ ফেরতদের বিষয়ে খোঁজ রাখতে বলা হয়েছে, বিদেশফেরতদের শনাক্ত করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করতে বলেছে। এটা একদিকে সাময়িক ভাবে ওকে, অন্যদিকে হাস্যকর। এই কাজ বিমানবন্দর কেন্দ্রিক হওয়াই ভালো। এর উৎস হওয়া উচিৎ সিটিজেন ডেটাবেইজ যেখানে এনাইডি, পাস্পোর্ট ডেটাবেইজে সিটিজেন এড্রেস আছে। সুতরাং চাইলেই প্রবাসী নাগরিক কে কখন দেশে ঢুকেছেন, তার স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা কোথায় তা ডেটা সর্ট করে নিমিষেই বের করা সম্ভব হবার কথা। চায়না ডেটা মাইনিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স প্রয়োগ করে লকডাউন পিরিয়ডের সময়ে এবং তার আগে উহানের দেড় কোটি মানুষের মধ্যকার সংক্রমিতদের সংস্পর্ষে কে বা কারা এসেছেন, কে কোথায় কখন কোথায়, বাসে ট্রেনে অফিসে বাজারে গিয়েছেন, সেখানে সম্ভাব্য কারা কারা সংস্পর্শে থাকতে পারে, তাঁদের বের করে এনেছে, তাঁদের লক করেছে, খাবার সরবারহ করেছে নজিরবিহীন ভাবে। বাংলাদেশের সরকারের তেমন সক্ষমতা নেই, যদিও আইসিটি খাতের বরাদ্দ হাজার কোটি টাকা! আবার এধরনের সক্ষমতা কর্তিত্ববাদ জন্ম দেয়, প্রাইভেসি হরণ করে বলে আমরা তা চাইও না, এমনিতেই আমরা পুলিশি গুম খুন ও পিটায়া সংস্কৃতির জাঁতাকলে পিষ্ট। তবে একেবারে বেসিক সিটিজেন ডেটাবেইজ দিয়ে যা সমাধান করা যায় তা না করে, অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপর এভাবে দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া কেন?১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত ফিরেছে ৪ লাখ ৪৮৭ হাজার ৯০৯,(Click This Link) কোয়ারেন্টাইন মাত্র ১৩৪৫ থেকে ২৫০০ এর মধ্যে। অথচ কোয়ারেন্টাইনই রক্ষা কবচ।এটা তো ঢাকার কর্তাদের দায়িত্বহীনতার জ্বলন্ত প্রমাণ। স্থানীয় প্রতিনিধিরা তো নির্বাচিতও নয়, বরং দলীয়ভাবে সিলেক্টড, কিভাবে তারা জনস্বার্থ্যে জবাবদিহি করবে?এই বোধই তো তাঁদের গড়ে উঠেনি! তদুপরি একজন স্থানীয় নেতার পক্ষে কে বা কারা বাহির থেকে এসেছে তার ডেটাবেইজ রাখা দুস্কার, দেখা যাবে খোঁজ খবর নিবার আগেই সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে। আমাদের দেশে প্রবাসী আশা মাত্রই বহু লোকে মোলাকাত করতে আসেন।


হোম কয়ারেন্টাইন থাকা অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু'র নির্দেশনা গুলো মানার চেষ্টা করুন।



উদ্ভূত পরিস্থিতে নাগরিদের এগিয়ে আসতে হবে। যে কোন ধরনের কোলাকুলি, হ্যান্ডশেইক, দল বেঁধে দেখতে যাওয়া কিংবা যে কোন ছোট বড় সামাজিক ও পারিবারিক প্রোগ্রাম এড়িয়ে চলা সবার দায়িত্ব। বিদেশ ফেরতদের নিজ ঘরে থাকতে, এমনকি কিভাবে ঘরের মানুষকে সংক্রমণ মুক্ত রাখা যায় তা নিয়ে সচেতন হতে হবে, টিভি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া'র সতর্কতা ফলো করুন, স্থানীয় প্রশাসনকে সাহায্য করুন, যদিও আমরা জানি কারিগরিভাবে তারা নিতান্তই অক্ষম।

খ।কোয়ারেন্টাইনের সাময়িক বন্দোবস্ত মেনে নিন
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কোয়ারেন্টাইন সক্ষমতা নেই, তাই বাইরের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাপনাকে মেনে নিন। ভুল সময়ে মেজাজ হারিয়ে সাময়িক আয়োজনকে ভেস্তে দিবার মানে হয়না। এখন ক্যাচাল না করে ভবিষ্যতের জন্য নাগরিক চাপ তৈরি করার কথা চিন্তা করুন। গোল্ডফিশের মত সব ভুলে যাবে না।স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করতে আন্দোলন করুন, নিজে না পারলে যারা করে তাঁদের ফিজিক্যালি বা অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সমর্থন-সহায়ত করুন, দেশের স্বার্থ্য নিয়ে যে স্বল্প কয়েকজন নাগরিক প্রেসক্লাব সহ বিভিন্ন জায়গায় গলা ফাটায়, এই দেশের শিক্ষত জনতার তাতে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। মানুষের দায়িত্বহীন আচরণে মনে হচ্ছে, কেবল বাংলাদেশ সরকার নয়, বাংলাদেশীরাও কোভিড-১৯ নিয়ে সিরিয়াস নয়।

গ। হাসপাতালের দর্শনার্থী নীতিমালা কড়াকড়ি হলে তা নিজে মেনে চলুন, অন্যকেও উৎসাহিত করুন, রোগী দেখার নাম করে দলবল নিয়ে গিয়ে, সেবা কর্মী, ডাক্তার ও নার্সদের কাজকে কঠিন করে তুলবেন না।

ঘ। দেশে অবস্থানরত এবং সংক্রমিত নাগরিক কোয়ারেন্টাইনে কঠিন পদক্ষেপ আসবে, এগুলা মেনে চলুন , যথা সম্ভব ঘরে থাকুন, নিতান্তই বেরুনো দরকার পড়লে হ্যান্ড শেইক, হাতাহাতি, ধরাধরি, মাখামাখি, কোলাকুলি পরিহার করুন।

ঙ।এতিমখানা, আবাসিক কওমি মাদ্রাসা, বিশবিদ্যালয়ের গণ রুম বন্ধ করুন
চ। মসজিদের জামাত, জমায়েত, লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণ করুন। মসজিদের পরিচ্ছনতা ব্যবস্থাপনা যাচাই করুন। সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুন, ওজু করুন সঠিকভাবে, তবে পানি অপচয় থেকে বিরত থাকুন। ওয়াসার পানি সরবারহের উপর এই সময় চাপ বাড়ানো ঠিক হবে না।

ছ। সামর্থ আছে বলেই চাল ডাল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মজুতদারি বন্ধ করুন। সর্বোচ্চ ২ সপ্তাহের চাল ডাল মজুদ করুন, এর বেশি করলে সরবারহ ব্যবস্থার উপর অনিয়ন্ত্রিত চাপ পড়বে, যার ভুক্তোভোগী হবে সবাই। তাই দায়িত্বশীল হোন, প্লিজ।

তিন- স্কুল প্রোগ্রাম- স্কুল বন্ধ মানেই সব বন্ধ? 

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হ এক সপ্তাহ পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন শুরু করেছেন। কোচিং সেন্টারও বন্ধ করার নির্দেশ এসেছে। ছুটির এই সময় শিক্ষার্থীদের বাসায় থাকতে হবে। দেরিতে হলেও এটা ভালো সিদ্ধান্ত।

এখন কথা হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ মানেই শিক্ষা বন্ধ? ডিজিটালের নামে তো দেশে হাজার কোটি খরচ করা হয়েছে, কিন্তু অনলাইনে ক্লাস নেয়ার কোন পদক্ষেপ, আগের নেয়া ক্লাসের ভিডিও প্রেজেন্টেশনের ডেটাবেইজ, অনলাইন লার্নিং, ই লার্নিং এ কি অবকাঠামো তৈরি হয়েছে? দু একটা কম্পিউটার, প্রিন্টার আর ওয়াইফাই দিবার নাম করে এভাবে শত শত কোটি টাকা হাতানোর ডিজিটালাইজেশনের মানে কি? এগুলা নিয়েও ভাবতে হবে।

সাময়িকভাবে অনলাইনে ও টেলিফোন শিক্ষা নির্দেশনা চালিয়ে যাওয়া যায়। যেহেতু স্কুল ক্লাস শিক্ষা বাংলাদেশে উঠে গিয়ে কোচিং ব্যবসা প্রাধান্য পেয়েছে, তাই গোপনে যা কোচিং না চলে তার জন্য নাগরিক উদ্যোগ দরকার।

চার-সেবাকর্মী ও চিকিৎসক সুরক্ষা 
যদি সত্যই করোনা সংক্রমণ বিস্তার পায় বাংলাদেশে, আমার সবচেয়ে ভয় ডাক্তার ও জরুরী সেবা কর্মীদের জন্য। আমার কাছে মনে হচ্ছে এই দুই পেশাজীবি শ্রেণী খুব আনপ্রটেক্টেড অবস্থায় রয়েছেন। আল্লাহ না করুক অসচেতন রোগী হ্যান্ডেল করতে গিয়ে অনেক ডাক্তার ও সেবাকর্মী সংক্রমণের কবলে পড়লে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাবে।তাই সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডাক্তার নার্স ও সেবা কর্মীদের জন্য পারসোনাল প্রটেকশনের সারঞ্জামাদির ব্যবস্থা করতে হবে।

রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী আছেন-এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে তাঁর সঙ্গে ওই ওয়ার্ডে থাকা রোগী, হাসপাতালের কর্মচারীসহ সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, ডাক্তার ও নার্সগণ জরুরী মিটিং এ গেলে রোগী পালিয়ে যান।

চিকিৎসকদের সাথে আলাপে জানা গেছে, ১৫ মার্চ আগে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি হসপিটালে একটাও প্রটেক্টিভ মাস্ক, প্রটেক্টিভ ইকুইম্পমেন্ট বা পিপিই ইত্যাদি ছিল না।এমন কি ঢাকার বড় বড় হসপিটালে একটিও প্রটেক্টিভ মাস্ক ছিল না। ১৫ মার্চ অনেক গুলো বড় হসপিটালে এই গুলোর সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই গুলো কিভাবে পড়তে হবে তার কোন ট্রেনিং দেওয়া হয় নাই।(পিপিই কিভাবে পড়তে হয়, তা নিয়ে ট্রেনিং লাগে)। ফলে, ডাক্তার নার্স এবং হস্পিতালের কর্মীরা ভয় পাচ্ছেন সবার আগে তারা ইনফ্যাক্টেড হবেন। জরুরী ভিত্তিতে প্রটেক্টিভ মাস্ক, প্রটেক্টিভ ইকুইম্পমেন্ট বা পিপিই আমদানি করুন, শর্ট ট্রেনিং ভিডিও তৈরি ছড়িয়ে দিন।

পাঁচ-জরুরী প্রস্তু্তি
লকডাউনের ইউকোনোমিক ম্যাট্রিক্স এমতাবস্থায় আমার মনে হয়, স্কুল, ট্রান্সপোর্ট ও অফিস কোন্টা আগে পরে শাটডাউন করলে কি কি ইকোনমিক এবং হেলথ সেইফটি লস হবে তার এক্টা সম্ভাব্য ম্যাট্রিক্স তৈরি করে, সরকারি সিদ্ধান্তের সিকুয়েন্স তৈরি করা উচিৎ। যেভাবে করলে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কম হয়, সেভাবে।

অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রক সবার সাথে মিলে এগুলা ঠিক করে রাখা উচিৎ যে, পরিস্থিতি আরো খ্রাপ হলে কি করা হবে তার একটা একশন প্ল্যান। কিভাবে সংকটাপন্ন নাগরকিকে ফুড ও মেডিসিন সাপ্লাই দেয়া হবে তার একটা একশন প্ল্যান এখনই তৈরি করা চাই।


শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে আমাদের স্বস্তি ফিরেছে, তবে তৈরি পোশাক শিল্পের কি হবে? সেখানেও গাদাগাদি করে মেশিনারি বসিয়ে স্বল্প স্থানে বহু লোকের কাজের ব্যবস্থা করা হয়। গার্মেন্টসে কি কি প্রটেকশন ব্যবস্থা করা চাই, কিভাবে কর্মীদের শিফট বাই শিফট ছুটির ব্যবস্থা নেয়া যায় তার বিশদ পরিকল্পনার দরকার আছে। এমনকি ভাসমান শ্রমিকদের জন্য কিছু সামাজিক সুরক্ষা ভাতার ও ব্যবস্থা করা দরকার। কেননা বহু দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমিকরা কাজ হারাবেন।

ছয়-তথ্য সরবারহে  স্বচ্ছতা গুজব রোধে কার্যকরী
সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে, সরকারকে সঠিক তথ্য সরবারাহের জন্য আন্তরিক হতে হবে, তথ্য লুকাতে গিয়ে চেইন রিয়েকশন শুরু হবার চান্স আছে। রাষ্ট্রের উপরে যদি আস্থা না থাকে তবে এই ধরনের একটা ক্রাইসিস জনগণের উপরে ব্যাপক দুর্ভোগ নিয়ে আসতে পারে, করোনাভাইরাস থেকে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব আরো বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিপরীতে সরকারের উচিৎ সংক্রমণের সংখ্যা, স্থান, প্রস্তুতির তথ্য খলামেলা ভাবে প্রকাশ করা।এতে নাগরিক, স্থানীয় নেতৃত্ব, সেবা কর্মী চিকিৎসক গণ সেন্সিবল ব্যবস্থা, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আমাদের সব প্রস্তুতি আছে, হেন আছে তেন আছে, কিংবা প্রবাসীদের অসম্মান করার মত বক্তব্য থেকে সংযত থাকার পরামর্শ দিয়ে যাই। করোনা নিয়ে যে কোন নাগরিক প্যানিক অবশ্যই কাম্য নয়, ভীতি ছড়ানো সমস্যার আকারকে বাড়াবেই। তবে সচেতনতা তৈরির চেষ্টাকে প্যানিক তৈরির চেষ্টা থেকে আলাদা করতে জানতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতিহীনতা, প্রস্তুতি না নিয়েও প্রস্তুত থাকার মিথ্যা তথ্য, স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও কারিগরি অযোগ্যতা, সঠিক বিশেষজ্ঞদের পলিসি মেকিং এ না জড়িয়ে অযোগ্যদের দিয়ে ভুল পলিসি নেয়া কিংবা আক্রান্তের তথ্য আড়াল করার চেষ্টাগুলোর মাধ্যমে রাষ্ট্র নিজেই গুজবের কারখানা হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে কর্মরত এক আনসার সদস্য রেজাউল করিম সর্দি-কাশি ও জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে গত ৪ মার্চ ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি যান। পরে ১১ মার্চ তিনি মারা যান তার গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার কেবশপুর গ্রামে। এছাড়া অপর একজন আনসার সদস্যের একই লক্ষণ দেখা দিলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি ১২ মার্চ নিজ বাড়িতে চলে যান। নাগরিকের চিকিৎসার দায়িত্ব না নিয়ে, তার সংক্রমণের ধরণ না বুঝে, এভাবে ছুটি দিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে তাকে এবং অন্যদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে দায়িত্ব এড়াতে চাইলে, সরকার ও প্রশাসন নিজেই গুজব তৈরির কারখানা জিইয়ে রাখবে! তাই দায়িত্বশীলতাই এখানে মূখ্য! মৃত্যুর কিংবা সংক্রমণের তথ্য লুকানোর মধ্যে কোন ক্রেডিট নেই।

সাত-উষ্ণতা কিংবা খাদ্যাভ্যাস সমাধান নয়

অনেকেই বলছেন গরমে করোনা ছড়াবে না, আবার অনেকেই বলছেন আমিষ খেলে করোনা ছাড়ায়। আমিষ বা ডিম খেলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে এসব বিষয়ে কান না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এইমসের অধিকর্তা ড. রণদীপ গুলেরিয়া। তিনি জানান, সব ধরনের মাংস ভালো করে ধুয়ে ও সিদ্ধ করে খেতে হবে। ড. রণদীপবলেন, এই ভাইরাসের প্রভাব সিঙ্গাপুরের মতো উষ্ণ আবহাওয়া কিংবা ইউরোপের দেশগুলোর মতো শীতল আবহাওয়া উভয় ক্ষেত্রেই গুরুতর।অ্যালকোহল সেবন করোনা সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব এমন দাবিও সঠিক নয়। আর লবঙ্গ বা অন্য কোনো ওষুধ সেবন করলেও এই সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।করোনার থেকে বাঁচতে তিনি সবাইকে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সংক্রমণ এড়াতে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। সব ধরনের মাংসই আর সাবান না থাকলে স্যানিটাইজারও ব্যবহার করা যেতে পারে।

আট-ভালোবাসা দিয়ে পরিস্থিতিকে জয় করুন
প্রতিবেশী, নিকট ও দুর আত্মীয়দের খোঁজ নেয়া সব নাগরিক তথ্য প্রযুক্তির আওতায় নেই। এছাড়া আত্মীয় বা বন্ধুদের যারা চারিত্রিক বা স্বভাবগত ভাবে অসচেতন মনে করেন, তাঁদের কিছুটা সময় দিন। আর নাগরিকদের উচিৎ সেবাকর্মী ও চিকিৎসকদের উপদেশ মেনে চলা। বর্ধিত পরিবারের, গ্রামে ও শহরের আত্মীয়দের সবার খোজ খবর নেয়া, সবাইকে সংক্রমণের ব্যাপারে এডুকেইট করার কাজ করুন। সম্ভাব্য সংক্রমণে কি করতে হবে, তানিয়ে চিকিৎসক দের কথা শুনুন, বিশ্বসাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ শুনুন, নিজেরা কোন নতুন কথা চালু করে দিবেননা প্লিজ।আত্মীয়দের যাঁদের সাথে যোগাযোগ নেই,তাঁদেরও খোঁজ নিন, পরামর্শ দিন, আলোচনা করুন।অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে এই কাজ করলে ব্যাপারটা সরকার ও নাগরিক সবারই কাজে আসবে।   

নয়-অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা নয়
প্লিজ অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা থেকে সবাই নিজেদের কয়েক্টা দিন বিরত রাখি। কেউ গালি দিলেও ভাই হিসেবে তাকে ক্ষমা করে দেন। বিপদের সময় কলহ না করে, ঠান্ডা মাথায় নিজেকে এবং আশেপাশের সবাইকে নুয়ে ভাবুন। সরকার কি করবে না করবে, তার হিসেব নিকেশ ফেলে নিজেদের প্রস্তুতিও নিন। সবাই সবার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। সবাই সংযত থাকি।

পরিশেষে, অগ্রযাত্রার নামে, উন্নয়নের নামে, বিজ্ঞানের নির্বোধ প্রয়োগের নামে, অত্যাধুনিক কৃষির নামে, প্রকৃতি বিনাশ করে নির্বিচারে হাজারো লাখো অণুপ্রাণ হত্যার উপর দাঁড়ানো মানব সভ্যতা আজ মাত্র একটি অণুপ্রাণের আক্রমণেই থমকে গেছে। একের পর আরেক শক্তিমান সংক্রমিত ভাইরাসের এরকম আবির্ভাব হয়ত চলতেই থাকবে। নতুন নতুন ভাইরাসের পাশাপাশি ইতিমধ্যেই ব্যাকটেরিয়াল রেজিস্টেন্স আরেকটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মানব প্রজাতির জন্য। মানবজাতি এক ভয়ংকর উন্নয়ন মডেলে, প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশ প্রতিবেশ নষ্ট করেছে, এখন প্রাকৃতিক কিংবা মানবের অনিয়ন্ত্রিত হাত ধরেই প্রাকৃতিক প্রতিঘাত আসছে। তাই আমাদের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন মডেলকে সাস্টেইনেবল করার, প্রান ও পরিবেশ বান্ধব করার সময় হয়েছে, তা সে যতটুকই পারা যায়! বাংলাদেশের সর্বগ্রাসী পলিথিন, ধূলী, বাতাস পানি শব্দ নদী সাগর তরঙ্গ ও ভেজাল খাবারের অপ্রতিরোধ্য দূষন রোধে ব্যবস্থা নিবার সময় হয়েছে।করোনা বহু মানব প্রাণের ক্ষতি করলেও বিশ্বের অর্থনীতির কড়া মূল্যে পরিবেশ শোধনে ভূমিকা রাখছে। উন্নয়ন, সরকার পরিচালনা, নাগরিক সচেতনতা, পরিবেশ রক্ষা সবদিক থেকেই বোধ সেন্স ফিরুক। মহান সৃষ্টিকর্তা মানবজাতিকে সমূহ বিপদ ও কষ্ট থেকে রক্ষা করুন। ভালো থাকুক বিশ্ববাসী, ভাল থাকুক বাংলার মানুষ ও বাংলাদেশ।   

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৩
৩৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×