somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রান্সশিপমেন্টের নামে ভারত বলতে গেলে প্রায় 'করিডোর'ই নিয়ে নিল, কিন্তু নেপাল-ভূটানের সাথে স্থল ট্রানজিট কিংবা করিডোরের পুরানো দাবী টেবিলে উঠেনি কেন?

২০ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জাহাজ থেকে জাহাজে কন্টেইনার স্থানান্তর, পণ্য খালাস হবে না বলে কাস্টমস ছাড়াই বন্দর ব্যবহারের পরে ফ্রি বাংলাদেশী সড়ক ব্যবহারের পর ভারতের এক অংশ থেকে অন্য অংশে পৌঁছানোর যে আয়োজন সেটা প্রায় করিডোরই, শুধু পার্থক্য হচ্ছে ট্রাক বা ট্রেন বাংলাদেশী হবে। তবে ভারত সেখানেও বসে থাকেনি- ট্রাক ও মালবাহী ট্রেনও নিজস্ব করার চাপ দিয়েছিল। কাস্টমস চেক ও অডিট নিরীক্ষাহীন ফ্রি পণ্য পারাপারের আয়োজন প্রায় করিডোরই, কেননা এই নিশ্চয়তা নেই যে কনটেইনার গুলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্যারিয়ারেই পারপার করা হবে!

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভারতের চট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহারের চুক্তির প্রেক্ষিতে বলার জন্য আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগ নৃশংসভাবে হত্যা করে। আবরারের লাশের উপর আজ ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্ট চালু হয়ে গেল, বড়ই বৈষম্যপূর্ণভাবে। ৩৪ বছরের পুরানো ১৯৮৬ সালের নৌ প্রটোকলে নির্ধারিত হারেই চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার চার্জ ঠিক হল, যেখানে দেশীয় ব্যবসায়ীদের জন্য বন্দর ব্যবহারের চার্জ চারগুণ করার আলোচনা চলছে (লিংকে)। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ প্রতি টন পণ্যের জন্য ১০ টাকা হারে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি আদায়ের প্রস্তাব করেছিল, তবে খরচ অনেক বেড়ে যাবে বলে ওই প্রস্তাবে আপত্তি জানায় ভারত। এর পরিবর্তে প্রতি চালানে মাত্র ৩০ টাকা ডকুমেন্ট প্রসেসিং চার্জ নির্ধারণ করা হয়।



সুত্রমতে বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারের জন্য এখনও কোনো চার্জ নির্ধারণ করা হয়নি। খুব হতাশার বিষয় হচ্ছে, সড়ক ব্যবহার মাসুল বাংলাদেশ প্রথম প্রস্তাবই করে নাই। মিডিয়ায় সমালোচনার পর এক টাকা আট পয়সা প্রস্তাব করে সড়ক বিভাগ। কিন্তু আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ নিয়েও আপত্তি উঠে। পরবর্তীদে দুই টাকা ১০ পয়সা প্রস্তাব করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্ট পণ্য কোন কোন রুটে চলবে, ফি কত হতে পারে এর একটি ধারণাপত্র তৈরি করা হয়েছিল। এতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দর পর্যন্ত পথের জন্য ১৫ টনের একটি ট্রাককে ১৫ হাজার টাকা ফি দিতে হবে ভারতকে। তবে ভারতের সঙ্গে সচিব পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রস্তাবে সম্মত হয়নি দেশটি। এক্ষেত্রে যুক্তি দেওয়া হয়, বন্দর ব্যবহার ফি দেওয়া হলে আবার সড়ক ব্যবহার ফি কেন দিতে হবে! অর্থাৎ ভারত সড়ক ব্যবহার মাসুল দিবে না, বাংলাদেশ ভারতের জন্য বৈদেশিক ঋণ নিয়ে রাস্তা বানাবে, বছর বছর রাস্তা সংস্কার করবে, আর ভারত সেটা ফ্রি ফ্রি ব্যবহার করবে। কি আবদার!

জানা গেছে, বিভিন্ন দেশের তুলনা হিসাব করে ট্রানজিট ফি আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন বলে ড মজিবুর রহমানকে ট্যারিফ কমিশন থেকেই বদলিই করে দেয়া হয়। স্টেইট উইদিন কি স্টেইটের বিষয়ে কি আলাদা করে কিছু বলতে হবে!


২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনের অধীনে ২০১০ সালে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ‘ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিট পণ্যের কাস্টমস ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১০’ শীর্ষক ওই বিধিমালায় ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বিধিমালায় বলা হয়, সড়ক বা রেলপথে প্রতি টিইইউ কনটেইনারের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট ফি প্রযোজ্য হবে। সড়কপথে কাভার্ড ভ্যান বা কাভার্ড ট্রাকে পণ্য পরিবহনে প্রতি টনে ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট ফি হবে এক হাজার টাকা। আর নন-কনটেইনার জাহাজ বা রেলপথে পরিবহনের জন্য প্রতি টন বাল্ক পণ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট ফি হবে এক হাজার টাকা। এছাড়া ট্রান্সশিপমেন্ট বা ট্রানজিট পণ্যের জন্য বিমা কাভারেজ বাধ্যতামূলক বলা হয়। আর কনটেইনার স্ক্যানিং চার্জ শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত হবে। স্ক্যানিং ফির দেশীয় ব্যসায়ীদের সমান রেখে বর্তমান সরকার আগের সব ট্রানজিট ফি বাদ দিয়ে শুধু বন্দর ব্যবহারের কয়েকটা নামমাত্র ফি ধার্য করেছে।

একদিকে রাস্তা ব্যবহারের ফি নাই অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পণ্য খালাস না হওয়ায় কোনো কাস্টমস ফিও নেই, শুধু বন্দরের অপারেশনাল কিছু নামমাত্র চার্জ দিতে হবে। সেটাও বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ঘুষ যোগে প্রদত্ত ফির চেয়ে কম। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে নামমাত্র খরচ হবে দেশটির। এই পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন কবে নাগাদ নিয়মিত হবে, তা জানা যায়নি। মুনশী আবদুল মাননান লিখেছেন, ''‘পরীক্ষামূলক’ কথাটি শুনলে আমাদের অতীতের একটি বিষয় মনে পড়ে যায়। অনেকেই জানেন, ভারত ১৯৭৪ সালে ফারাক্কা বাঁধ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছিল। সেই যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছিল, এখনো চলছে। আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করার আর প্রয়োজন হয়নি।''

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'বন্দরে যদি একই সময়ে ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ ও বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ আসে তবে ভারতীয় জাহাজ অগ্রাধিকার পাবে।' দুই ঈদে, ঘুর্নীঝড়ের অচলাবস্থার পরে, ইউরোপীয় সামারের আগে বা ক্রিসমাসে যখন বন্দরের উপর চাপ পড়ে তখন ভারতীয়দের অগ্রাধিকার ভিত্তিক বন্দর ব্যবহারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবন তৈরি করবে সেটা ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলেছেন।

কথা হচ্ছে, আঞ্চলিক সংযোগ সম্পর্ক উন্নয়নের গলাভরা সব কথাবার্তা আর নৌ, স্থল, বন্দর- রেল ট্রানজিট/ট্রান্সশিপমেন্ট সব দিবার পরেও আপনি বাংলাদেশ-নেপাল এবং বাংলাদেশ-ভূটান স্থল ট্রানজিট কিংবা করিডোর আনতে পারলেন না কেন? বাংলাদেশ-নেপালের এরিয়াল কিরডোর মাত্র ১৫ কিমি'র, বাংলাদেশ ভুটানের মাত্র ৬৪ কিমি'র। দেশের গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মানে বাধাদানকারী পক্ষকে সব মাগনা সুবিধাই যখন দিলেন, নিজের ব্যবসায়িক অর্থনৈতিক অধিকার আনতে পারলেন না কেন?

উপরন্তু, ট্রান্সশিপমেন্টের আড়ালে যখন করিডোরই দিবেন তখন, মংলা কিংবা পায়রা বন্দর নয় কেন? কেন আমাদের অর্থনীতির প্রাণভোমরা চট্রগ্রামকেই নতুন ভারে ভারাক্রান্ত করতে হবে। ভারতকে মংলা-কুমিল্লা- ত্রিপুরা-আসাম কিংবা পায়রা-কুমিল্লা- ত্রিপুরা-আসাম সরাসরি রাস্তা নির্মাণে বিনিয়োগ অংশ নিয়ে, তার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ জুগিয়ে এই রুটেই করিডোরে দেয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য শ্রেয়তর, যেহেতু চট্রগ্রাম বন্দর নানবিধ ক্যাপাসিটি সংকটে বছর পার করে।



এত কাছে থাকার পরেও ভারতীয় অনীহায় স্থলবেষ্টিত দেশ নেপালের ভদ্রপুর বিমানবন্দরের সাথে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের মহানন্দার তীর কিংবা বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সংযোগ করা যায়নি। বর্তমানে যে সংকীর্ন রাস্তা আছে তাতে দুরুত্ব পড়ে মাত্র ৫০ থেকে ৬১ কিমি। বাংলাদেশ চাইলে সরাসরি নতুন রাস্তা বা এলিভেটেড এক্সপ্রেস নিজ খরচে নির্মাণ করতে পারে। আঞ্চলিক সংযোগের নামে গোলাম সরকারকে দিয়ে ভারত শুধু তার একপাক্ষিক স্বার্থই হাতিয়ে নিচ্ছে, কিন্তু পানির অধিকার সহ আন্তঃদেশীয় ট্রানজিট বা করিডোর কোনটাই দিচ্ছে না বাংলাদেশকে। এই বৈষম্যগুলোর অবসান নিশ্চয়ই একদিন হবে!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:৪৮
২৪টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×