somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুনর্জন্মের আকিদা একটি কুফরী আকিদা

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্ন

আসসালামুয়ালাইকুম, আমি মোঃ সুজন। ডেনমার্ক থেকে। দয়া করে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর কুরআন ও হাদিসের আলোকে দিলে খুবই উপকৃত হতামঃ

১। পৃথিবীতে মানুষের কি পুনর্জন্ম হয়?

২। এবং ঐ পুনর্জন্মা মানব দেহে কি দুই আত্মার সঞ্চালন হয়?

৩। ঐ মানব দেহ কি মৃত্যুর পরে খতম হয়ে যায় অর্থাৎ জান্নাত বা জাহান্নাম কিছুই কি তার নাই?

এই সব আমি এখানে এক বাংলাদেশী ভাইয়ের কাছে শুনেছি, এই গুলো কতটুকু সত্য কুরআন ও হাদিছের আলোকে উত্তর দিলে খুবই খুশি হইতাম।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

পৃথিবীতের মানুষের পুনর্জন্ম হওয়ার আক্বিদা হিন্দুদের ভ্রান্ত আক্বিদা। এটি কোন মুসলমানদের আক্বিদা নয়। যারা এ ভ্রান্ত আক্বিদা পোষণ করবে তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। কারণ এর দ্বারা কিয়ামত, কবর, হাশর, পুলসিরাত, জান্নাত ও জাহান্নামকে অস্বিকার করা হয়ে থাকে। অথচ কবরের আজাব সত্য। কিয়ামত সত্য। হাশরের ময়দান সত্য। হিসাব নিকাশ সত্য। জান্নাত জাহান্নাম সত্য।

একজন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার পর সে প্রথমে কবরের জগতে থাকে, তারপর তাকে কবরের জগতেই আবার শাস্তির জন্য জীবিত করা হবে। তারপর হাশরের ময়দানে সে দেহসহ উঠবে। তারপর হিসাব নিকাশ হবে। তারপর তার আমল অনুযায়ী সে হয়তো জান্নাতে যাবে নতুবা জাহান্নামে যাবে।

পুনর্জন্মের আক্বিদা ইসলাম বিরোধী আক্বিদা। কারণ-

কিয়ামত অস্বিকার করা হয়

যদি পুনর্জন্ম হওয়ার দ্বারাই বান্দার শাস্তি ও পুরস্কার নিহিত থাকে, তাহলে কিয়ামতের কোন প্রয়োজন নেই। বরং পৃথিবী টিকে থেকেই পাপ পূণ্যের ফলাফল প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। কারণ পুনর্জন্ম আকিদাপন্থীদের মতে ভাল কাজ করলে মৃত্যুর পর সে ভাল পরিবারে ভাল অবস্থায় জন্ম নিবে। আর খারাপ করলে পরজন্মে খারাপ প্রাণী বা নিম্ন পরিবারে জন্ম নিবে। এভাবে চলতে থাকলে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার কোন প্রয়োজনই। কারণ পৃথিবী ধ্বংসই হবে পাপ পূণ্যের পুরস্কার ও শাস্তি প্রদানের জন্য।

সুতরাং পুনর্জন্মের আকিদা কিয়ামতকে অস্বিকার করাকে আবশ্যক করে। অথব অসংখ্য আয়াত ও হাদীসে কিয়ামতের বর্ণনা এসেছে। যেমন-

فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ فَلَا أَنسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ [٢٣:١٠١]فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ [٢٣:١٠٢]

অতঃপর যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন তাদের পারস্পরিক আতœীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না। যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম, {সূরা মুমিনূন-১০১-১০২}

إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا [٩٩:١] وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا [٩٩:٢] وَقَالَ الْإِنسَانُ مَا لَهَا [٩٩:٣]يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا [٩٩:٤] بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَىٰ لَهَا [٩٩:٥] يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِّيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ [٩٩:٦] فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ [٩٩:٧] وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ [٩٩:٨]

যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে,যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে। এবং মানুষ বলবে, এর কি হল ? সেদিন সে তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে,কারণ, আপনার পালনকর্তা তাকে আদেশ করবেন। সেদিন মানুষ বিভিন্ন দলে প্রকাশ পাবে,যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হয়। অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। {সূরা যিলযাল-১-৮}

হাশর ময়দানকে অস্বিকার করা হয়

পুনর্জন্মের আকিদা দ্বারা হাশরের ময়দানকে অস্বিকার করা হয়। যদি শাস্তি কেবল পুনরায় জন্ম দেয়ার দ্বারাই হয়ে যেত, তাহলে হাশরের ময়দান কায়েমের কোন প্রয়োজনই হতো না। অথচ অসংখ্য আয়াতে হাশরের ময়দানের কথা এসেছে যেমন-

إِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ [٨١:١] وَإِذَا النُّجُومُ انكَدَرَتْ [٨١:٢] وَإِذَا الْجِبَالُ سُيِّرَتْ [٨١:٣] وَإِذَا الْعِشَارُ عُطِّلَتْ [٨١:٤] وَإِذَا الْوُحُوشُ حُشِرَتْ [٨١:٥] وَإِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ [٨١:٦] وَإِذَا النُّفُوسُ زُوِّجَتْ [٨١:٧] وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ [٨١:٨] بِأَيِّ ذَنبٍ قُتِلَتْ [٨١:٩] وَإِذَا الصُّحُفُ نُشِرَتْ [٨١:١٠] وَإِذَا السَّمَاءُ كُشِطَتْ [٨١:١١] وَإِذَا الْجَحِيمُ سُعِّرَتْ [٨١:١٢] وَإِذَا الْجَنَّةُ أُزْلِفَتْ [٨١:١٣] عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا أَحْضَرَتْ [٨١:١٤]

যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে,যখন নক্ষত্র মলিন হয়ে যাবে,যখন পর্বতমালা অপসারিত হবে,যখন দশ মাসের গর্ভবতী উষ্ট্রীসমূহ উপেক্ষিত হবে;যখন বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে,যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,যখন আত্মাসমূহকে যুগল করা হবে,যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে,কি অপরাধে তাকে হত্য করা হল? যখন আমলনামা খোলা হবে,যখন আকাশের আবরণ অপসারিত হবে,যখন জাহান্নামের অগ্নি প্রজ্বলিত করা হবে এবং যখন জান্নাত সন্নিকটবর্তী হবে, তখন প্রত্যেকেই জেনে নিবে সে কি উপস্থিত করেছে। {সূরা তাকয়ীর-১-১৪}

زَعَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَن لَّن يُبْعَثُوا ۚ قُلْ بَلَىٰ وَرَبِّي لَتُبْعَثُنَّ ثُمَّ لَتُنَبَّؤُنَّ بِمَا عَمِلْتُمْ ۚ وَذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ [٦٤:٧]

কাফেররা দাবী করে যে,তারা কখনও পুনরুত্থিত হবে না। বলুন, অবশ্যই হবে, আমার পালনকর্তার কসম, তোমরা নিশ্চয় পুরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমাদেরকে অবহিত করা হবে যা তোমরা করতে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। {তাগাবুন-৭}

কবরের জগত অস্বিকার

মৃত্যুর পর কবর জগতে সুওয়াল-জওয়াব হবে। সুওয়াল জওয়াবের পর নেককার বান্দার জন্য জান্নাতের পোশাক পরিধান করানো হবে, জান্নাতের বিছানা বিছানো হবে, জান্নাতের দিকে জানালা খুলে দেয়া হবে। আর পাপী বান্দা হলে জাহান্নামের পোশাক পরিধান করানো হবে। জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দেয়া হবে। জাহান্নামের দিকে জানালা খুলে দেয়া হবে।

এটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যে ব্যক্তি পুনর্জন্মের বিশ্বাস করে থাকে, তার ধারণা হল, পৃথিবীতে পাপী হলে পরবর্তীতে নিচু বংশে জন্ম লাভ করবে, কিংবা কুকুর শৃগাল বা কোন নিকৃষ্ট পশুর সুরতে পৃথিবীতে ফিরে আসবে। এর মানে কি? দুনিয়ার জগতে পাপের কারণে কবরের জগতে কোন শাস্তি হবে না। বরং তার শাস্তি আবার দুনিয়াতে ফিরিয়ে এনে অন্য কোন প্রাণী বানিয়ে দেয়া হবে। তাহলে এ আক্বিদা তথা বিশ্বাসের দ্বারা সরাসরি কবরের জগত সম্পর্কে হাদীসকে অস্বিকার করা হচ্ছে। অথচ কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদীস দ্বারা কবরের জগত প্রমানিত। যেমন-

حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ [٢٣:٩٩] لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ ۚ كَلَّا ۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا ۖ وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ [٢٣:١٠٠]

যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে,তখন সে বলেঃ হে আমার পালণকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে ) প্রেরণ করুন

যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি,যা আমি করিনি। কখনই নয়, এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে কবরের জগত আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। {সূরা মুমিনূন-৯৯-১০০

قَالَتْ عَائِشَةُ: «فَسَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بَعْدُ يَسْتَعِيذُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ»

হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ বলেন, আমি রাসূল সাঃ কে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাইতে শুনেছি। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১২৩, ৫৮৪}

জান্নাত জাহান্নামকে অস্বিকার করা হয়

কুরআনের অসংখ্য আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত জান্নাত ও জাহান্নামকে সম্পূর্ণরূপে অস্বিকার করা হয় পুনর্জন্মের ভ্রান্ত আকিদা দ্বারা। কারণ পুনর্জন্ম দিয়ে শাস্তি ও পুরস্কার হয়ে গেলে জান্নাত জাহান্নামের দরকার কি?

وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَ خَالِدُونَ [٢٣:١٠٣]تَلْفَحُ وُجُوهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَالِحُونَ [٢٣:١٠٤]

এবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতিসাধন করেছে,তারা দোযখেই চিরকাল বসবাস করবে। আগুন তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তাতে বীভৎস আকার ধারন করবে। {সূরা মুমিনূন-১০৩-১০৪}

هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ [٨٨:١] وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ خَاشِعَةٌ [٨٨:٢] عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ [٨٨:٣] تَصْلَىٰ نَارًا حَامِيَةً [٨٨:٤] تُسْقَىٰ مِنْ عَيْنٍ آنِيَةٍ [٨٨:٥]لَّيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِن ضَرِيعٍ [٨٨:٦] لَّا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِي مِن جُوعٍ [٨٨:٧] وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاعِمَةٌ [٨٨:٨] لِّسَعْيِهَا رَاضِيَةٌ [٨٨:٩] فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ [٨٨:١٠] لَّا تَسْمَعُ فِيهَا لَاغِيَةً [٨٨:١١] فِيهَا عَيْنٌ جَارِيَةٌ [٨٨:١٢] فِيهَا سُرُرٌ مَّرْفُوعَةٌ [٨٨:١٣] وَأَكْوَابٌ مَّوْضُوعَةٌ [٨٨:١٤] وَنَمَارِقُ مَصْفُوفَةٌ [٨٨:١٥] وَزَرَابِيُّ مَبْثُوثَةٌ [٨٨:١٦]

আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী শেষ দিবসের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত,ক্লিষ্ট, ক্লান্ত। তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে। তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে। কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই। এটা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধায়ও উপকার করবে না। অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে,সজীব,তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট। তারা থাকবে, সুউচ্চ জান্নাতে। তথায় শুনবে না কোন অসার কথাবার্তা। তথায় থাকবে প্রবাহিত ঝরণা। তথায় থাকবে উন্নত সুসজ্জিত আসন। এবং সংরক্ষিত পানপাত্র এবং সারি সারি গালিচা এবং বিস্তৃত বিছানো কার্পেট। {সূরা গাসিয়া-১-১৬}

হিসাব নিকাশকে অস্বিকার করা হয়

إِنَّ إِلَيْنَا إِيَابَهُمْ [٨٨:٢٥] ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُم [٨٨:٢٦]

নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট,অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব। {সূরা গাসিয়া-২৫-২৬}

يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِّيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ [٩٩:٦] فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ [٩٩:٧] وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ [٩٩:٨]

সেদিন মানুষ বিভিন্ন দলে প্রকাশ পাবে,যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখানো হয়। অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। {সূরা যিলযাল-৬-৮}

لَتَرَوُنَّ الْجَحِيمَ [١٠٢:٦] ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِينِ [١٠٢:٧] ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ [١٠٢:٨]

তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে,অতঃপর তোমরা তা অবশ্যই দেখবে দিব্য প্রত্যয়ে,এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। {সূরা তাকাসুর-৬-৮}

وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا [١٧:٣٦]

যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। {সূরা ইসরা-৩৬}

শুধু তাই নয়, পুনর্জন্মের ভ্রান্ত আকিদা দ্বারা পুলসিরাত, হাউজে কাউসার, রাসূল সাঃ এর সুপারিশসহ অসংখ্য আবশ্যকীয় আকিদাকে অস্বিকার করা হয়। তাই পুনর্জন্মের আকিদাপন্থী ব্যক্তি মুসলমান হতে পারে না। সে ব্যক্তি সুনিশ্চিতভাবে কাফের হয়ে যায়।

যুক্তির কাঠগড়ায় পুনর্জন্মের আকিদা

উপরে বর্ণিত কুরআনে কারীমের আয়াত ও হাদীসের আলোকে এ বিষয় পরিস্কার হয়ে গেছে যে, পুনর্জন্মের আকিদা একটি কুফরী আকিদা। যেহেতু যুক্তির উপর নির্ভর করে এর দাবিদাররা বলে থাকে যে, পুনর্জন্ম হয়ে থাকে, তাই যুক্তির নিরিখেও যাচাই করা দরকার কতটা অজ্ঞতাসূলভ এ ভ্রান্ত মতবাদটি।

যুক্তি নং-১

কাউকে শাস্তি দেয়া হল, কিন্তু সে জানতেই পারলো না, তাকে কেন শাস্তি দেয়া হল? কিংবা কাউকে পুরস্কার দেয়া হল, কিন্তু সে জানতেই পারলো না, তাকে কেন পুরস্কার দেয়া হল, তাহলে এটি একটি অযৌক্তিক সমাধান।

পূর্ব জন্মের পাপের কারণে যদি পরজন্মে কেউ কুকুর হয়ে জন্মে, তাহলে তার এ শাস্তি পাওয়াটি একটি অযৌক্তিক। কারণ তার ভুল শুধরানোর জন্যতো তাকে জানাতে হবে সে কেন কুকুর হল? কিন্তু সে তা জানতে পারবে না। তাহলে এ মতবাদ কি করে যৌক্তিক হতে পারে?

যুক্তি নং-২

শাস্তি ও পুরস্কার পূর্ণতা পায় দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে। যদি শুধু দেহ থাকে, তাহলে এতে শাস্তি দিলে বা পুরস্কার দিলে তাতে কোন লাভ নেই। কারণ তখন তা নির্জিব জড়পদার্থের মত।

আর যদি শুধুমাত্র আত্মার উপর শাস্তি দেয়া হয় বা পুরস্কার দেয়া হয়, তাহলেও তা যুক্তির নিরিখে অপূর্ণাঙ্গ। কারণ মানুষ গোনাহ বা সওয়াবের কাজ করে শুধু মন দিয়ে নয়, বরং শরীর দিয়ে, তাই শাস্তি ও পুরস্কার প্রাপ্য উভয় অংশ।

সুতরাং পুনর্জন্মের দ্বারা যেহেতু একজনের আত্মাকে পরজন্মে কুকুর বা শিয়ালে পরিবর্তিত করা হয়, বা কোন রাজা বাদশার শরীরে স্থানান্তর করা হয়, তখন এতে শাস্তি বা পুরস্কার পূর্ণতা পায় না। তাই এটি একটি অযৌক্তি মতবাদ।

যুক্তি নং-৩

যারা পুনর্জন্মের প্রবক্তা, তারা কি একথা বলতে পারবেন যে, একজন মহিলা যে এক জন্মে একজনের মা ছিল, পুনর্জন্মে সেই মহিলাই তার স্ত্রী হয়ে জন্ম নিবে নাউজুবিল্লাহ? কিংবা মেয়ে পরবর্তীতে নাতি হয়ে জন্ম নিবে?

এরকম উদ্ভট বিশ্বাস কেউ স্বপ্ন দেখেও বলে না, সেখানে এসব ভ্রান্ত আকিদাপন্থীরা দিবালোয় তা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন।

যুক্তি নং-৪

মানুষ হয়ে যে কাজ করেছিল, তার প্রায়শ্চিত্ব কিছুতেই কুকুর হয়ে হতে পারে না। কারণ মানুষের অনুভূতি আর পশুর অনুভূতি এক নয়। তাই মানুস হয়ে অপরাধ করার কারণে পরজন্মে পশু হয়ে গেলে পূর্ব জন্মের পাপের মৌলিকভাবে প্রায়শ্চিত্ব সম্ভব হতে পারে না। অনুভূতিশীল বিবেকবান প্রাণীর অপরাধের শাস্তির কথা একটি অনুভূতিহীন বিবেকহীন প্রাণী কি করে বুঝতে পারে?

যুক্তি নং-৫

আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে কেউ এর কোন নজীর দেখাতে পারবে না যে, পূর্ব জন্মে লোকটি এই অবস্থায় ছিল, আর বর্তমানে নতুন জন্মে কুকুর বা অন্য কোন পশু হয়ে জন্ম লাভ করেছে।

যদি পুনজন্মের আকিদাপন্থীদের দাবি সত্য হয়, তাহলে তাদের বলুন এমন একটি উপমা পেশ করতে, যিনি আগের জন্মে এক প্রাণী ছিলেন, তারপর পরজন্মে আরেক প্রাণী হয়ে জন্ম নিয়েছেন।

শেষ কথা

পুনর্জন্মের আকিদা একটি কুফরী আকিদা। কোন মুসলমান এ আকিদা পোষণ করলে তার ঈমান দোহরাতে হবে। পুনর্জন্মের আকিদা দ্বারা ঈমানের আবশ্যকীয় অনেকগুলো আকিদাকে অস্বিকার করা হয়। যার একটি অস্বিকারকরণই কাফের হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই এ ভ্রান্ত যদি কোন মুসলিম পোষণ করে থাকে, তাহলে তাকে পুনরায় কালিমা পড়ে ঈমান ঠিক করে সাচ্চা দিলে মুসলমান হতে হতে হবে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা

ইমেইল[email protected]

[email protected]
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×